“রাষ্ট্রপতিদের সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা বাঞ্ছনীয়”,আবদুল মান্নান,সাবেক উপাচার্য চবি, প্রথম আলো(০২-০৮-২০১১) বিষয় নিয়ে লিখতে গিয়ে-
কিছু প্রাসংগিক কথা ঃ
১৯৯১ সালে গৃহীত কেয়ারটেকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় সরকারের মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। এ সময় সরকারী ক্ষমতা নিয়ন্ত্রিত হয় নির্দলীয় নিরপেক্ষ উপদেষ্টামণ্ডলীর মাধ্যমে। সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন মর্মে সংবিধানে প্রবিধান রয়েছে।
সংসদীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। এর প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারকদেরকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন।
রাষ্ট্রপতি এদেশের "রাষ্ট্রপ্রধান", তবে তাঁর ক্ষমতা সীমিত। জাতীয় সংসদের সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন পাঁচ বছর পর পর। তবে সংসদ নির্বাচনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে রাষ্ট্রপতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। রাষ্ট্রযন্ত্রের মূল ক্ষমতার অধিকারী হলেন প্রধানমন্ত্রী, যিনি "সরকার প্রধান" হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই সংসদ সদস্য হতে হয়। মন্ত্রীসভার মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নির্ধারিত এবং রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।অর্থাৎ -প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকারে পারতঃপক্ষে রাষ্ট্রপতি স্বল্প ক্ষমতার ক্ষমতাহীন এক সাক্ষীগোপাল মাত্র, রাষ্ট্রের এক প্রতীকী পদমাত্র।কিন্তু তার রায়, নিয়োগ বা সুপারিশ সমালোচনার উর্ধ্বে নয়।কারণ তিনি জনগনের প্রতিনিধি এবং সেই সংগে অভিভাবক ও।
তিনি যদি স্বল্প-আলোচিত বা কমগুরুত্ত্বপূর্ণ কোন ঘটনায় সাংঘর্ষিক বিতর্কিত কোন মওকুফি রায় দেন তবে সেটা জনমনে তেমন প্রভাব ফেলে না কারণ এটি সংবাদপত্রের আলোচনা-সমালোচনার বিষয়বস্তু হয় না।
কিন্তু তিনি যদি এমন রায় দেন যেটা দীর্ঘদিন বিচার প্রক্রিয়াধীন হত্যাকান্ডের মামলার আসামীর পক্ষে আর হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয় দলীয় সংশ্লিষ্টতায় তবে সেটি জনমনে মওকুফি রায়ে অস্বচ্ছতা,পক্ষপাতদুষ্টতা এবং দলীয় স্বেচ্ছাচারিতার প্রমাণ প্রকট হয়ে উঠে।
তিনি যে দল্ বা গোষ্ঠির রাষ্ট্রপতি হন না কেন, তার দায় তিনি কোন ক্রমেই এড়াতে পারেন না আর তিনি যদি এমন পদে আসীন হয়েও সঠিক তথ্যের অনুধাবন সাপেক্ষে যথাযথ রায় দেয়ার সময়, সার্মথ্য বা ক্ষমতা না রাখেন- অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি যদি অথর্ব হন, তবে তার সে পদে আসীন থাকা দেশ ও জাতির জন্য অকল্যানকর বা তার মুর্খতাপূর্ণ রায় দেশের জন্য অকল্যাণ বৈ কল্যান বয়ে আনবে না। সেক্ষেত্রে দেশের স্বার্থে ক্ষমতাসীন দলটির(বোধ সাপেক্ষে) নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনতিবিলম্বে অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়।
সুত্রঃhttp://bn.wikipedia.org/wiki/বাংলাদেশ#.
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মোট ১৬ জন রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হয়েছেন(জিল্লুর রহমানসহ)। তন্মধ্যে – একজন অস্থায়ী আর বাকী ১৫ জন স্থায়ী।
তার মধ্যে স্বৈরশাসক এরশাদ ছিলেন দু’মেয়াদে ৭ বছরের অধিককাল আর বিচারপতি সাহাবুদ্দিন ছিলেন ৬ বছর। অর্থাৎ গণতান্ত্রিক সরকার প্রক্রিয়ায় বিচারপতি সাহাবুদ্দিন অনেক যোগ্য আর নিরপেক্ষ হিসেবে দীর্ঘকাল প্রেসিডেন্ট পদে আসীন ছিলেন।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সাহাবুদ্দিন ছাড়া আর অন্যরা তেমন দীর্ঘকাল আত্মমর্যাদা নিয়ে সমাসীন থাকতে পারেন নি।সাহাবুদ্দিন তেমনি উল্লেখযোগ্য কোন বিতর্কিত রায় দেননি কিংবা গণমাধ্যমে আলোচিত বা সমালোচিত হননি।পরে শেখ হাসিনার সাথে বনিবনা না হওয়ায়, হাসিনা তাকে বেঈমান পর্যন্ত বলেছিলেন।
[ কলামঃ “কিন্তু রাষ্ট্রপতিদের সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা বাঞ্ছনীয়”, আবদুল মান্নান ,দৈনিক প্রথম আলো(তারিখ: ০২-০৮-২০১১) ]
সূত্রঃhttp://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-08-02/news/174685
উপরোক্ত সূত্রে, আবদুল মান্নান সাহেব কোন গ্রহণযোগ্য রেফারেন্স ছাড়া সাহাবুদ্দিনকে ও বিতর্কিত করে ছেড়েছেন।আর অন্যদের দিকেও অভি্যোগ উত্থাপিত হয়েছেঃ
১।তার(সাহাবুদ্দিনের) বিরুদ্ধে অভি্যোগ-তিনি প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায়ে অভিযুক্ত ও বরখাস্ত হওয়া একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের (এক্ষেত্রে নাম ঠিকানাবিহীন, তথ্যসূত্রবিহীন)একজন সিনিয়র শিক্ষক এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে চাকুরিতে পুনঃনিয়োগ দান করেছিলেন যারা সত্যিকার অর্থেই ছিলেন অপরাধী।ধরলাম- তারা অপরাধী, এক্ষেত্রে সাহাবউদ্দিন কি ক্ষমার যোগ্য বা মেনে নেয়ার মত অপরাধ করেছেন ? ? ?
২।সাবেক রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ, একজন শিক্ষক ছিলেন,যেহেতু তিনি নিজেকে তত্ত্ববধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করে প্রচলিত আইন ভংগ করেছেন তাই মান্নান নিজেকে লজ্জিত বোধ করেন একজন শিক্ষক হিসেবে। এখানে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদও ক্ষমার যোগ্য অপরাধ করলেন !!!!
৩।আবার তার মতে সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে (এখানে ও কোন সুনির্দিষ্ট রেফারেন্স ছাড়া )সরাসরি পদোন্নতি দিয়ে ক্ষমার যোগ্য অপরাধ করলেন !!!!
৪।আবারও আবদুল মান্নানের মতে- পূর্বসুরীদের পথ ধরে আমাদের বর্তমান রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, খুনের মামলায় লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নেতা আবু তাহেরের ছেলে এ এইচ এম বিপ্লবের ফাঁসির দণ্ড মওকুফ করলেন। আবার আরেক ক্ষমার যোগ্য অপরাধ করলেন !!!!
এখানে মান্নানের মতে- প্রথম ব্যক্তি দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের পুনঃনিয়োগ দিয়ে নিজেই দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন, দ্বিতীয় ব্যক্তি স্বৈরাচারী মনোভাব প্রদর্শন করছেন, আর তৃতীয় ব্যক্তি তার পছন্দের ব্যক্তিকে নিয়ম বর্হিভুত পদোন্নতি দিয়েছেন,দুর্নীতি করেছেন। আর চতুর্থ ব্যক্তি ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে দন্ড মওকুফ করেছেন।তারা সবাই যা-ই করেছেন তা সবই বিতর্কের উর্দ্ধে, তা নিয়ে আলোচনা- সমালোচনা করা যাবে না বা কোনরুপ বিতর্ক সৃষ্টির অবকাশ এখানে থাকবে না।
এখানে চারটি কাজই করেছেন প্রেসিডেন্টরা, কিন্তু প্রথম আরে তৃতীয়টা একে অন্যের সাথে মেলে কিন্তু বাকীগুলো একটি আরেক্টির সাথে যায় না বরং চতুর্থটির প্রকৃতি অন্যগুলোর চেয়ে একেবারেই ভিন্ন এবং ভয়াবহ। উল্লেখ্য যে- ২১শে আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় বর্তমান রাষ্ট্রপতির স্ত্রী মারা যান এবং যেটি বিচার প্রক্রিয়াধীন।আর ২৩/০৭/২০১১ তে প্রথম আলোতে প্রকাশিত “ক্ষমাহীন ক্ষমা” নিবন্ধে এক পাঠেকের উক্তি ছিলঃ” এই ক্ষমার পর রাষ্ট্রপতি কি গ্রেনেড হামলায় নিহত তাঁর স্ত্রী হত্যার বিচার পাওয়ার নৈতিক অধিকার হারালেন না?’”। তাহলে সত্যিই তো আমাদের আরেকবার ভেবে দেখার বিষয়- রাষ্ট্রপতি স্ত্রী হত্যার বিচার পাওয়ার অধিকার রাখেন কিনা ।
সুত্রঃhttp://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-07-23/news/172312
তবে মোদ্দা কথা হল- কোনটাই বিতর্কের উর্ধ্বে নয়, প্রয়োজনীয়তার অনুকূলে যে কোনটিই পুনঃবিবেচনার উর্ধ্বে ছিলনা ।
তবে বাংলার জনগণ এ ক্ষমা মেনে নেয় নি, তাই এর নাম দিয়েছে “ক্ষমাহীন ক্ষমা”।
অবস্থা এমন দাঁডিয়েছে – রাষ্ট্রপতি যদি কোন ধর্ষন মামলার আসামি হন কিংবা খুনের মামলায় সংশ্লিষ্ট থাকেন মান্নানের মতে তারপর ও তিনি সব বিতর্কের উর্ধ্বে থাকবেন।কারণ তিনি বলতে চেয়েছেন –“রাষ্ট্রপতিদের সব বিতর্কের উর্ধ্বে রাখা বাঞ্জনীয়।“
সত্যিই সেলুকাস , কি বিচিত্র এ দেশ !
মান্নান সাহেব প্রয়োজনে- অপ্রয়োজনে বিভিন্ন ঘটনার অবতারণা করেছেন শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক প্রমাণের জন্য আমি আর সেদিকে গেলাম না। বার বার আংগুল তুলেছেন যারা ফাইলটা উত্থাপন করেছে তাদের দিকে।আইন মন্ত্রনালয়ের দিকে নয়, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের দিকেও নয়। অর্থাৎ সিদ্ধি অর্জনে তিনি অতিশয় পারংগম, মন্ত্রনালয়কে তিনি ঘাটাতে চাননা বরং কাছে ভিড়তে চান।
এখন প্রশ্ন জাগে -
কেন এই ক্ষমার যোগ্য অপরাধ ? কেনই বা এত ক্ষমা ?
কারণ দলীয় লেজুড়বৃত্তি, দলীয় পদলেহন,ব্যক্তিত্ত্বহীন চাটুকারিতা, আত্নমর্যাদাহীন স্তুতি এবং ক্ষমতাসীন দলের আনুকূল্য পাবার অসীম আগ্রহ মানুষের বিবেকবোধকে ব্যাধিগ্রস্থ করে তুলছে প্রতিনিয়ত। আর শিক্ষক সম্প্রদায়ের এমন মনগড়া, কান্ডজ্ঞানহীন ও অবিবেচনা প্রসূত মন্তব্যে- কাজে- প্রচারণায় মানুষের বিবেক ও প্রতারিত হবে অনেক বেশী কারণ জ্ঞানের সুতিকাগারে তাদের যে সদম্ভ পদচারণা। তাদের বিকৃত চিন্তা-চেতনা, অসুস্থ ভাবাবেগ, দুষ্ট-দর্শন অশুভ বার্তা পৌঁছে দেবে জাতির ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে।আর, বিকৃত বিবেক নিয়ে বিপন্ন এক জনপদে সদা বহমান থাকবে এই অশুভ চক্র, চলতে থাকবে জন্ম হতে জন্মান্তরে যতক্ষণ না রিপুবিনাশী বা লোভবিধ্বংসী কোন ঝড় আসে।
তবে কি এই চক্রের হাত থেকে আমাদের রেহাই নেই ???

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




