somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সালাউদ্দিন অপহরণ ঘটনার বিশ্লেষন

১৫ ই মে, ২০১৫ ভোর ৪:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমেই ফেইসবুক থেকে মেজর অব. মোঃ আখতারুজ্জামানের ষ্টাটাস শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারছিনা। কেননা, এই ভদ্রলোক সব সময় বিতর্কিত কথা বলায় ওস্তাদ। বিতর্কিত কথা বললেও নিজ দলের সমালোচনা করতে তিনি কখনও পিছ পা হন না। আসলে তার বেশীর ভাগ বক্তব্যই যায় দলের বিরুদ্ধে।বিএনপির বেশীর ভাগ নেতাকেই দেখেছি আখতারুজ্জামানের সমালোচনাকে আত্ন সমালোচনা না ভেবে তাকে আওয়ামীলীগের এজেন্ট বলতে। তবু তিনি নিজেকে বিএনপি নেতাই পরিচয় দিয়ে যান। আজ তার ফেইসবুকে লিখেন:
জীবিত সালাউদ্দিন ও চরম বাস্তবতা।
সালাউদ্দিনকে কে বা কারা অপহরণ করেছিল তা কাররই অজানা নয়। এটি একটি রাজনৈতিক অপহরণ ছিল এবং রাজনৈতিক ভাবেই এর সমাধান হয়েছে। সালাউদ্দিনের স্ত্রী পূর্বেই আবেদন করে ছিল জীবিত সালাউদ্দিনকে ফিরিয়ে দিলে তার পরিবার সব কিছু ভুলে যাবে এবং অপহরণ নিয়ে কোন কথা তুলবে না। সেদিনই অনেকে আশাবাদী হয়েছিল জীবিত সালাউদ্দিনকে পাওয়া যাবে।
জীবিত সালাউদ্দিনকে ফেরত দিতে হলে যে ভাবে দেওয়া দরকার সে ভাবেই দিতে অপহরণকারীরা কোন ত্রুটি করে নাই। অপহরণকারীদের যোগ্যতা ও দায়িত্ব পালনের সততা, নিষ্ঠা এবং দক্ষতা খুবই উচ্চমানের পেশাদারিতার পরিচয় নিসন্ধেহে প্রমাণিত হয়। রাজনৈতিক অপহরণে বাংলাদেশের দক্ষতা যে কোন আন্তর্জাতিক মানের চেয়ে কম নয় বলে সবাই স্বীকার করবে।
তবে এদেশের জনগণ সব চেয়ে বেশি অভিভূত এবং আনন্দিত হবে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আমাদের প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রের সাহায্যের অকৃতিম প্রসারিত হাত দেখে। আমাদের প্রতিরক্ষা বা সীমান্তের তো কোন সমস্যা নাইই, এখন থেকে দেখা যাচ্ছে আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি, আভ্যন্তরিন আইন শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা সব কিছুই নিরাপদ !
ভাব সাভে মনে হচ্ছে বিএনপি ও জামাত ছাড়া জনগণের আর কোন বিপদ নাই !!! আশা করি আমার বিএনপির বন্ধুরা বিষয়টি ভাল করে অনুধাপন করতে পারবেন !!!!
আমাদের রক্ষা করার জন্য আল্লাহ ছাড়া কেউ আর থাকল না। তবে আমরা ভীত বা ঘাবড়ায়ে যাই নাই। রাত যত অন্ধকার হবে আলোর প্রতাস্যা ততই বাড়বে।
কিন্তু শুধু অন্যকে দোষারোপ করে লাভ হবে না। নিজেদেরকেও সঠিক পথে নিজেদের মত করে হাঁটতে হবে। আমার কাজটা অন্য কেউ এসে করে দিয়ে যাবে না।
মেজর অব. মোঃ আখতারুজ্জামান, সাবেক সংসদ সদস্য।
১৪-৫-১৫ - ( ৩.৪৫ ঘটিকা )
এবার আমরা একটু বিশ্লেষনে যেতে পারি। আখতারুজ্জামান বলেছেন, সালাউদ্দিনের স্ত্রী বলেছে তাকে ফিরিয়ে দিলে অপহরণ নিয়ে কোন অভিযোগ তুলা হবে না। বিএনপি থেকে কোন অভিযোগও তুলা হয়নি। এতে মনে হওয়া স্বাভাবিক সরকারের সাথে বিএনপির গোপন চুক্তির মাধ্যমে সালাউদ্দিন ফিরে এসেছেন। কিন্তু, বাস্তবতা বোদহয় এতোটা সরল নয়।বিএনপি আওয়ামীলীগের যে সম্পর্ক, তাতে হঠাৎ কোন জাদুর বলে সালাউদ্দিনকে ফিরিয়ে দেওয়ার গোপন চুক্তি হবে এটা ভাবা অস্বাভাবিক।তাহলে কেন সালাউদ্দিনকে ফিরিয়ে দেওয়া হলো?
আসলে সালাউদ্দিনকে ফিরে পাওয়ার আশা সবাই ছেড়ে দিয়েছিল। তার ভাগ্যও ইলিয়াস আলীর মতো ধরে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, হঠাৎই সব উলট-পালট করে দেয় নিউ এইজ পত্রিকার একটি খবর। তারা স্পষ্ট প্রমাণ দেয় সালাউদ্দিনকে তুলে নিয়ে গেছে র্যাব। বিএনপি চ্যায়ারপারসন তখন দাবী করে সালাউদ্দিনকে র্যাব তুলে নিয়ে গেছে তার স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে্। তার এই বক্তব্যের তিন দিনের মাথায় সালাউদ্দিনকে পাওয়া গেল ভারতে।
এখন যদি সত্যি র্যাব সালউদ্দিনকে তুলে নিয়ে যায়, স্বাভাবিক ভাবেই নারায়নগঞ্জসহ নানা ঘটনায় বিতর্কিত র্যাব আবার বিতর্কে জড়ানোর সাহস পাবে না। সেক্ষেত্রে সালাউদ্দিনকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেওয়ার কথা তারা ভাবতে পারে।এক্ষেত্রে স্বাভাবিক ভাবে শর্ত হবে মুক্তির পর কে অপহরণ করেছে তা বলা যাবে না।কোন ভাবেই মুখ খুললে তাকে হত্যা করা হবে। আমরা দেখছি সালাউদ্দিন অপহরণকারীদের সম্পর্কে তেমন কিছুই বলছে না! আর সালাউদ্দিন যদি নিজেই নিজেকে লুকিয়ে রাখত এমন এক সময় প্রকাশ্যে আসার কোন কারণই নেই। কেননা, র্যাব ঠিক যেই মুহুর্তে প্রশ্নের সন্মুখিন, ঠিক সেই মুহুর্তে প্রকাশ্যে আসার কোন কারণই নেই।
সালাউদ্দিনকে পাওয়ার পর সরকারের অবস্থানও অনেকটা পরিষ্কার করে, সালাউদ্দিন অপহরণে সরকারের হয়তো হাত আছে। কেননা, সরকার বলছে সালাউদ্দিন আসার পরপরই তাকে গ্রেফতার করা হবে। এছাড়া্ও ভারতীয় আইনে তিনি অপরাধ করেছেন। তাই তাকে ভারতেও বিচারের সন্মুখিন করা হবে।এর মানে সালাউদ্দিনকে শুধু শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েই বিশ্বাস স্থাপন করতে পারছে না। বরং নানা ভাবে তিনি যাতে মুখ না খুলতে পারেন, তার ব্যবস্থা করছে।
এছাড়াও ভারত সরকারের ভূমিকাও এক্ষেত্রে বেশ রহস্যজনক। তারা সালাউদ্দিনের সাথে কোন সাংবাদিকের দেখা করতে দিচ্ছে না। তার আত্নীয়কে দেখা করার অনুমতি দিয়ে পরে তা পত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এর মানে উপর থেকে নির্দেশ এসেছে যাতে সালাউদ্দিনের
সাথে কাউকে দেখা করতে না দেওয়া হয়।তারপরও ভারতের পুলিশও মিথ্যাচার করছে। কেননা, তারা বলেছিল, অপ্রকৃতস্থ একজন সন্দেহভাজন ভাবে ঘুরা ফেরা করছে খবর পেয়ে তারা গ্রেফতার করে। কিন্তু কথা হলো, সব অপ্রকৃতস্থ লোককে কি ভারতীয় পুলিশ গ্রেফতার করে? তাহলে তো ভারতের রাস্থায় পাগল থাকারই কথা না। এছাড়া্ও সালাউদ্দিন নিজের মুখে বলেছেন, তিনি নিজে পুলিশ ষ্টেশনে গিয়েছেন।
সালাউদ্দিনের বক্তব্য অনুসারে তাকে চোখ বেধে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে নামিয়ে দেয়। তিনি এলাকাটা অপরিচিত মনে হওয়ার স্থানীয়দের কাছে জানতে পারেন, এটি ভারত। তিনি আরও জানান, তাকে এই স্থানে নামিয়ে দেওয়ার আগে কয়েকবার তার চোখ বাধা অবস্থায় গাড়ী পরিবর্তন করেন।
সবচেয়ে বড় অবাক বিষয়, সালাউদ্দিনের নামে ভারতের পুলিশ মামলা করেছে। কিন্তু, তিনি সুস্থ হওয়ার পরও তাকে আদালতে হাজির করা হচ্ছে না!
গত সোমবার আটকের পর সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে প্রথম বাবের মতো দেখা করার সুযোগ পান আইয়ুব আলী নামে তাঁর এক আত্মীয়। শিলংয়ের পুলিশ সুপার এন খার্কাং এ তথ্য জানিয়েছেন। কলকাতা থেকে আসা আতাহার আলীর বরাত নিয়ে খার্কাং বলেন, সালাহ উদ্দিন সুস্থ আছেন। তাঁর জন্য হাসপাতালে প্রয়োজনীয় পোশাক ও ফলমূল নেওয়া হয়েছে।
সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমেদের দেখা করার সুযোগ করে দিতে স্থানীয় মানবাধিকার কর্মীরা রাজ্য সরকারের সঙ্গে গতকাল আলোচনা করেছেন। যদিও হাসিনার এখনো ভিসা হয়নি।
ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি সাইদীর মামলার সাক্ষিকে কোর্টের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে তাকে পাওয়া যায় ভারতের একটি কারাগারে।
ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের নজর এড়িয়ে সালাহ উদ্দিন কীভাবে শিলংয়ে এলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, মেঘালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের ৪৪০ কিলোমিটার সীমান্ত আছে। এর মধ্যে ৬০ কিলোমিটারে কোনো কাঁটাতারের বেড়া নেই।
গত সোমবার শিলং পুলিশ সালাহ উদ্দিনকে অবৈধ প্রবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে।
সব দিক বিবেচনা করে এইটুকু নিশ্চিত বলা চলে, সালাউদ্দিনকে কে অপহরণ করেছে এবং কেন করেছে তা প্রায় সবার কাছে স্পষ্ট হলেও এই রহস্যের উদঘাটন বর্তমান সরকারের আমলে হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম। তিনি দেশে ফিরলেও তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হবে এই টুকু নিশ্চিত। তার মুখ বন্ধের জন্য যা যা করার করা হবে। তাই সালাউদ্দিন ঘটনা যতোটা রহস্য ছিল, তাই থেকে যাবে। অন্তত আওয়ামীলীগ সরকার যতদিন ক্ষমতায় আছে, এই রহস্য পরিষ্কার হওয়ার কোন সম্ভবনাই নেই। যদি কখনও আওয়ামীলীহ সরকার ক্ষমতা থেকে যায়, এবং সালাউদ্দিন জেল থেকে বেচে ফিরতে পারে, তবেই শুধুমাত্র এই রহস্যের কিনারা হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×