somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্য উইন্ড-আপ বার্ড ক্রনিকল : হারুকি মুরাকামি

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মঙ্গলবারের উইন্ড-আপ বার্ড
ছয়টি আঙ্গুল ও চারটি স্তন



এফএম রেডিওর গান শুনতে শুনতে স্প্যাগেটি রান্না করছি। এমন সময় ওই ঘরে ফোন বেজে উঠল। প্রথমে পাত্তা দিলাম না। একে তো স্প্যাগেটি প্রায় হয়ে এসেছে, এদিকে গানটাও উঠেছে জমে। রিং হচ্ছেই। একপর্যায়ে আমাকে যেতেই হলো। কারণ ভাবলাম, এমনও তো হতে পারে, নতুন চাকরিতে যোগদানের সুসংবাদ দিতে চায় কেউ। তাই চুলা কমিয়ে বসার ঘরে ঢুকলাম। টেলিফোনের রিসিভার হাতে তুলে নিলাম।
মাত্র দশ মিনিট, প্লিজ । অপরপ্রান্ত থেকে এক নারীকণ্ঠ বলল।
আমি পরিচিত মানুষের গলার স্বর মনে রাখতে পারি। গলা শুনে সহজেই মানুষটাকে শনাক্ত করতে পারার একটা ক্ষমতা আমার আছে, কিন্তু এই কণ্ঠস্বর অচেনা মনে হলো।
এক্সকিউজ মি? কার সঙ্গে কথা বলতে চান আপনি? জিজ্ঞেস করলাম সেই নারীকে।
কেন, আপনার সঙ্গেই তো। মাত্র দশ মিনিট, প্লিজ। আমাদের পরস্পরকে জানার জন্য মাত্র দশ মিনিট।
ওই কণ্ঠস্বর কোমল, নিচু গলায় কথা বলছে সে।
‘আমাদের দুজনের ভাবানুভূতি’
রান্নাঘরের দরোজার দিকে তাকালাম। স্প্যাগেটির পাত্র থেকে বাষ্প উড়ছে। গান তখনো বেজে চলছে।
ওই নারীকে বললাম, সরি, আমি আসলে চুলার ওপর স্প্যাগেটি তৈরি করছি। হয়ে এসেছে প্রায়। আপনি কি একটু পরে ফোন দেবেন?

স্প্যাগেটি? কী, সকাল সাড়ে দশটার সময় আপনি স্প্যাগেটি রান্না করছেন?
এ বিষয়ে আপনার না ভাবলেও চলবে, (দ্যাটস নান অব ইয়োর বিজনেস) বললাম তাকে। আমি কখন কী খাই না-খাই সেটা আমিই ঠিক করি।
যথার্থ বলেছেন। আমি বরং একটু পরে আপনাকে ফোন দিচ্ছি। এবার তার কণ্ঠস্বর অভিব্যক্তিহীন ও সোজা শোনাল।

কোনো মানুষের মুডের সামান্য পরিবর্তন হলে, তার কণ্ঠস্বরেও এর ছাপ পড়ে।
এক মিনিট, শুনুন, আপনার কথাবার্তা যদি কোনো নতুন পণ্য বিক্রি-সংক্রান্ত হয়ে থাকে, তাহলে আর এগোনোর দরকার নেই। এখানেই ইতি টানুন। কারণ আমি একজন বেকার। বললাম তাকে।
উত্তরে সেই নারী বলল, ‘চিন্তার কিচ্ছু নাই। আমি তা জানি।’
আপনি জানেন? কী জানেন?
ওই যে আপনার কোনো কাজ নাই, আপনি বেকার। আমি তা জানি। ঠিক আছে, পাকঘরে যান, আগে আপনার স্প্যাগেটি রান্না শেষ করুন।
আচ্ছা, বলুন তো কে আপনি...
ওপারে রিসিভার রেখে দেওয়ার শব্দ হলো। ফোন কেটে দিল সে।
আমি? আমার ভাবাবেগের পাত্তাই দিল না সে। বোকার মতো আমার হাতে ধরা রিসিভারের দিকে তাকিয়ে থাকি কিছুক্ষণ। এরপর চুলায় চাপানো স্প্যাগেটির কথা মনে পড়ে। রান্নাঘরে ঢুকে চুলা নিভিয়ে দিই। একটি থালায় স্প্যাগেটি ঢেলে রাখি। আরেকটু জ্বাল হলে, খাওয়া যেত না।
খেতে খেতে ওই ফোনকলের কথা চিন্তা করি। আমাদের পরস্পরকে জানা? দুজনের ভাবানুভূতি পাঠ করা, আর তাও মাত্র ১০ মিনিটে? এসব কী বলছিল সেই অচেনা রমণী?

হতেও পারে, স্রেফ মজা করছিল। কিংবা নতুন কোনো পণ্য গছানোর পাঁয়তারা। যাই হোক, এসবে আমার কোনো আগ্রহ নেই। স্প্যাগেটি খাওয়ার পর, বসার ঘরে যাই। সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে একটা উপন্যাস পড়তে থাকি। কিন্তু পড়ায় আমার মন বসে না, দৃষ্টি বারবার টেলিফোনের দিকে চলে যায়। ঘুরে ফিরে সেই কথাটাই মনে চক্কর দেয়, মাত্র ১০ মিনিটে পরস্পরকে জানার মানে কী? এই কয়েক মিনিটে দুজন মানুষ তাদের সম্পর্কে কী এমন জানতে পারে? কিন্তু ওই নারী এমন দৃঢ়তার সঙ্গে কথাগুলো বলছিল যে, মনে হচ্ছিল তা সম্ভব। ভাবছি, পরস্পরকে জানার জন্য নয় মিনিট কেন খুব কম কিংবা ১১ মিনিট খুব বেশি সময় হতে যাবে!

পড়ায় একদম মনযোগ দিতে পারছি না। তাই জামা ইস্ত্রির চিন্তা করি। কোনো কাজে আপসেট হয়ে পড়লে আমি বরাবরই কাপড়চোপড় ইস্ত্রি করি। এটা আমার অনেক দিনের পুরোনো অভ্যাস। জামা ইস্ত্রি করার কাজটাকে আমি ১২টি ভাগে ভাগ করি। শুরু করি জামার কলার থেকে শেষ হয় বাম হাতার কব্জির অংশ ইস্ত্রির মধ্য দিয়ে।

একটার পর একটা অংশ ইস্ত্রি করি। এক্ষেত্রে আমি গুনে গুনে ক্রম একদম ঠিক রাখি। একে একে তিনটি শার্ট ইস্ত্রি শেষ করি। চেক করে দেখি কোথাও কুঁচ রয়ে গেছে কিনা, এরপর হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখি। সুইচ অফ করে ইস্ত্রিটা রাখি বোর্ডে। ততক্ষণে আমার মন অনেকটা শান্ত হয়ে এসেছে। এক গ্লাস পানি পানের উদ্দেশে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াব, তখনই আবারও ফোন বেজে ওঠে।
দ্বিধা জাগল মনে, কিন্তু পরে ভাবলাম আচ্ছা ফোনটা রিসিভ করি। আমি তাকে বলে দেব, এখন জামা ইস্ত্রি করছি, একটু লাইনে থাকুন। কিন্তু এবার ফোন করেছে, কুমিকো। দেওয়াল ঘড়ির কাঁটা বলছে, বেলা সাড়ে ১১টা। কেমন আছ, জিজ্ঞেস করল সে।
ভালো, বলি ওকে। কুমিকো, আমার স্ত্রী। ওর কণ্ঠস্বর শোনার পর স্বস্তিবোধ করি।
কী করছ?
এই তো ইস্ত্রি দেওয়া শেষ করেছি।
কী সমস্যা? ওর কণ্ঠস্বরে চাপা উদ্বেগ। কারণ আমার ইস্ত্রি করার মানে সে জানে। আমি কোনো ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেই কেবল ইস্ত্রি করি।
না তেমন কিছুই না। স্রেফ কয়েকটা জামা ইস্ত্রি করছিলাম। রিসিভারটা বাম হাত থেকে ডান হাতে নিই। কী ব্যাপার?
তুমি কী কবিতা লিখতে পার? জিজ্ঞেস করে সে।
কবিতা!?, কবিতা? সত্যিই কি সে... কবিতা বোঝাচ্ছে?
মেয়েদের গল্পের সাময়িকীর একজন প্রকাশক আছেন, আমার পরিচিত। ওরা এমন একজনকে খুঁজছে যে, পাঠকদের পাঠানো কবিতা পড়ে দেখবে। এ ছাড়া সাময়িকীর প্রচ্ছদের জন্য প্রতি মাসে একটি নাতিদীর্ঘ কবিতা লিখবে। এমন সহজ একটা কাজের জন্য টাকা-পয়সাও খারাপ দেবে না। তবে কাজটা পার্ট টাইম। এই যা। অবশ্য ওরা মাঝেমাঝে সম্পাদকীয় লিখতে দিতে পারে, যদি ওই লোকটা...
সহজ কাজ? আমি মুষঢ়ে পড়ি। হেই, এক মিনিট। শোন, আমি আইন পেশা-সংক্রান্ত কিছু খুঁজছি, কবিতা নয়।
আমি আরও ভাবলাম, হবে হয়তো স্কুল বয়সে তোমার লেখার অভ্যাস ছিল।
ঠিকই ধরেছ, আমি স্কুল ম্যাগাজিনের জন্য লিখেছিলাম: ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন দল, কিংবা সিঁড়ি ভাঙতে গিয়ে আমাদের পদার্থবিদ্যার স্যারের চিৎপটাং হয়ে পড়ে যাওয়া, এরপর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, এসব বিষয় উপজীব্য করে কিছু পংক্তি তখন আমি রচনা করেছিলাম। না, কবিতা নয়। কবিতা লিখতে পারি না।
নিশ্চয়ই, আমি মহৎ ক্লাসিক কোনো কবিতা রচনার কথা বলছি না, উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রীদের উপযোগী রচনা। সাহিত্যের ইতিহাসে এই রচনাগুলোর স্থান করে নিতে হবে না। আমার বিশ্বাস, তুমি চোখ বন্ধ করেই এসব কবিতা লিখে দিতে পারবে, তাই নয় কি?
শোন, আমি কবিতা লিখতে পারি না। আমার চোখ বন্ধ কিংবা খোলা যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন। কবিতা লিখিনি কখনো, আর এখন হুট করে কবিতা রচনায় বসে যাব এমন সম্ভাবনাও নেই।
ঠিক আছে, বলল কুমিকো। ওর কণ্ঠস্বরে কিছুটা হতাশার ছাপ। কিন্তু আইন-সংক্রান্ত কাজ জোগাড় করাটা তো দুরূহ, বলল সে।
আমি জানি। কিন্তু এ সপ্তাহেই হয়তো কোথাও থেকে চাকরির ডাক আসতে পারে। যদি না-আসে, তাহলে অন্য কিছু করব।
আমিও তাই আশা করি। যাক্, আজ কী বার? সপ্তাহের কোন দিন এটি?
এক মুহূর্ত চিন্তা করে বলি, মঙ্গলবার।
গ্যাস ও টেলিফোন বিল পরিশোধ করতে তুমি কি আজ একটু ব্যাংকে যাবে?
নিশ্চয়ই, আমি ভাবছি, দুপুরের খাবার তৈরির জন্য কিছু কেনাকাটা করব।
কী রান্না করতে চাও?
এখনো ঠিক করিনি। কেনাকাটা করতে করতে ঠিক করে নেব।
খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে সিরিয়াসনেস এনে সে বলে, তাহলে চাকরি জোগাড়ের কোনো তাড়া তোমার নেই!
এ কথা কেন? জিজ্ঞাস করি ওকে। মনে মনে ভাবি, এই পৃথিবীর নারীরা কি আজ টেলিফোনে আমাকে সারপ্রাইজ দিয়েই যাবে? আজ কিংবা কাল হোক আমার বেকারত্ব ঘুচবে। চিরকাল তো আর বেকার বসে থাকব না আমি।
কথা সত্যি, কিন্তু আমার টুকটাক ও সাময়িক কাজ এবং সঞ্চয় দিয়ে, আমাদের ঠিক চলে যাবে। যদি আমরা একটু সতর্ক থাকি। প্রকৃতপক্ষে আমার কোনো তাড়াহুড়া নেই। তুমি কি এইরকম ঘর ও ঘরকন্যার কাজ ঘৃণা কর? বলছি যে, এই জীবন-যাপন প্রক্রিয়া কি তোমার কাছে ভুল বলে মনে হচ্ছে?
আমি জানি না।
আমি সততার সঙ্গে উত্তর দিলাম। সত্যি জানি না আমি।
আচ্ছা, সময় নাও, চিন্তা-ভাবনা কর। বলল সে। ওহ, বিড়ালটি কি ফিরেছে?
বিড়াল। সারা সকাল আমি বিড়াল নিয়ে ভাবিনি। না, ফেরেনি এখনো। বললাম ওকে।
এক সপ্তাহ হয়ে গেছে। হারানো বিড়াল ফিরে আসেনি। তুমি কি আশ-পাশে একটু খোঁজ করবে?’
আমি ভাবলেশহীন, কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে রিসিভারটা আবার বাম হাতে নিই। কুমিকো বলতে থাকে: ‘আমি মোটামুটি নিশ্চিত বিড়ালটি কানাগলির শূন্যবাড়িতে আটকে আছে। যে বাড়ির আঙ্গিনায় পাখির ভাষ্কর্য আছে। সেখানে এর আগেও বিড়ালটিকে অনেকবার ঘুরঘুর করতে দেখেছি।’
কানাগলি? তুমি কবে থেকে ওই কানাগলি যাও? এ ব্যাপারে আমাকে তো কখনো কিছুই বলনি-
ওহ্। আমাকে এখন ফোন রাখতে হচ্ছে। অনেক কাজ জমে গেছে। বিড়াল খুঁজতে যেতে ভুলো না যেন।
ফোন কেটে দিল সে। আমি এক দৃষ্টিতে রিসিভারের দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকি। এরপর রিসিভার জায়গা মতো রেখে দিই।

কুমিকো কেন ওই কানাগলি গিয়েছিল, এটা ভেবে আমি অবাক না হয়ে পারি না। আমাদের বাসা থেকে ওখানে যেতে হলে একটা দেওয়াল টপকাতে হয়। দেওয়াল টপকানো মোটেও সহজ নয়, অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়, পরিশ্রমের কাজ। এত জঞ্জাল সয়ে ও সেখানে কেন গিয়েছিল?
এক গ্লাস পানির জন্য রান্না ঘরে যাই, তখন বারান্দা থেকে বিড়ালের খাবারের থালার দিকে লক্ষ করি। রাতের খাবার যেমন দেওয়া হয়েছিল, ওমনি পড়ে রয়েছে। এর মানে বিড়ালটি ফিরে আসেনি।
ওখানে দাঁড়িয়ে আমাদের ছোট্ট বাগানের দিকে দৃষ্টি ফেরাই, আগাম গ্রীষ্মের ঝলমলে রোদ খেলা করছে সেখানে। বাগানটি আহামরি কিছু নয় যে, এর দিকে তাকালে আপনার মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি নেমে আসবে। প্রতিদিন খুব অল্প সময়ের জন্য সূর্যের আলো এসে পড়ে এই বাগানের ওপর। তাই বাগানের মাটি সব সময়ই কালো ও স্যাঁতস্যাতে থাকে। বাগানের এক কোনে রয়েছে সাদা ও নীল রঙের বড় বড় ফুলওয়ালা লতাগুল্ম--হাইড্রেনজ। এই লতাগুল্ম আমি অপছন্দ করি। অদূরেই গাছের একটা ছোট্ট স্ট্যান্ড, ওখান থেকে একটি পাখির কারিগরি ডাক আপনার কানে আসতে পারে, আপনার তখন মনে হতে পারে পাখিটি যেন বসন্তের বাতাস ছাড়ছে।
এই পাখিকে আমরা বলি উইন্ড-আপ বার্ড। এই নাম রেখেছে কুমিকো। সত্যি কথা বলতে কী, আমরা পাখিটির প্রকৃত নাম কিংবা দেখতে কেমন জানি না। তবে এতে আমাদের উইন্ড-আপ বার্ডের কিছু যায় আসে না। পাখিটি প্রায় প্রতিদিনই আসে। আমাদের প্রতিবেশীদের গাছে বসে। আমাদের নিরিবিলি বিশ্বকে বসন্তের হাওয়া দেয়। আমাকে এখন বেরুতে হবে, বিড়ালের খোঁজে। আমি বিড়াল পছন্দ করি। বিশেষ করে আমাদের এই পোষাটি বিড়ালকে অনেক অনেক পছন্দ করি। কিন্তু বিড়ালদের জীবন-যাপনের রয়েছে নিজস্ব পদ্ধতি। বিড়ালেরা স্টুপিড নয়। আপনি যেখানে চান, সেখানে যদি কোনো বিড়াল থাকা বন্ধ করে দেয়, তাহলে ধরে নিতে হবে, বিড়ালটি অন্য কোথাও চলে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। এরপর যদি সে ক্লান্ত হয়, ক্ষুধা অনুভব করে, আবার ফিরে আসবে। কিন্তু কুমিকোকে খুশি করার জন্য হলেও, এখন আমাকে বিড়ালের খোঁজে বেরুতে হবে।
অবশ্য এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ এই মুহূর্তে আমার হাতে নেই। আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর একটা চাকরিতে যোগ দিয়েছিলাম। এপ্রিলের শুরুর দিকে ওই চাকরি ছেড়ে দিই। এর পেছনে বিশেষ কোনো কারণ ছিল না।

কাজটা আমার অপছন্দের ছিল এমনও নয়। বরং এটা ছিল একটা থ্রিল। বেতন-ভাতাও ছিল ভালো, অফিসের কর্মপরিবেশও বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল।
আমি সাধারণ দ্রুত শিখতে পারি। নানা বিষয়ে ক্ষিপ্র গতিতে দক্ষতা লাভ করি। কখনো কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করি না। আমি বাস্তব বাদী। তাই যখন বললাম যে, চাকরিটা ছেড়ে দিচ্ছি তখন, জ্যেষ্ঠ পার্টনার (ফাদার অ্যান্ড সন ল ফারমের বাবা) আমার বেতন সামান্য বাড়ানোর একটা টোপ দিলেন। কিন্তু আমি তা আমলে না নিয়ে, চাকরিটা সত্যিই ছেড়ে দিই। এমন নয় যে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার এই ঘটনা আমাকে কোনো বিশেষ আশাবাদ কিংবা সফলতা অনুধাবনে সহায়তা দিয়েছে। চাকরি ছেড়ে আমি আসলে নিজেকে গৃহবন্দী করে বার পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে চেয়েছিলাম।
অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় আমি ওই সময় অনেক বেশি নিশ্চিত হয়েছিলাম যে, আর যাই হোক, আমি আইনজীবী হতে চাই না। বুঝে গিয়েছিলাম, ওই কর্মস্থলে আমার দিন শেষ।

মোটের ওপর আমার বয়স তখন ৩০ বছর। এক রাতে খাবার খেতে বসে কুমিকোকে বললাম, ‘আমি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করছি।’ সে শুধু বলল, ‘ও আচ্ছা।’ এতে সে কী বোঝাল আমি কিছুই ধরতে পারিনি, কয়েক মুহূর্ত আর কোনো কথা বলেনি সে। আমিও নীরব ছিলাম। যতক্ষণ না সে যোগ করে, তোমার মন যদি ছাড়তে বলে, তাহলে ছাড়াই উচিত। তোমার জীবন, তুমি যেমন করে চাও সেভাবেই যাপন করবে।
এসব কথা বলার পর মাছের কাঁটা বেছে বেছে নিজের থালার কিনারায় রাখে সে। কুমিকো স্বাস্থ্য ও খাদ্য বিষয়ক একটি সাময়িকীর সম্পাদক। ওর রোজগার বেশ ভালো। ওর কিছু বন্ধু আছে, তারাও অন্যান্য সাময়িকীর সম্পাদক। কুমিকো মাঝেমধ্যে ওই সম্পাদক বন্ধুদের কাছ থেকে অলংকরণের অ্যাসাইনমেন্ট পায়। এর বদৌলতে কিছু উপরি আয় হয়। (ও কলেজে ডিজাইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছে। ওর আশা, ফ্রিল্যান্স অলংকরণবিদ হবে।)
উপরন্তু, চাকরি ছাড়ার পর আমি বেকারত্ব ইনসুরেন্স থেকে কিছু ভাতা পাব। এর মানে, আমি যদি ঘরেও বসে থাকি, গৃহের পরিচর্যা করি, এতেও কিছু অর্থ বেঁচে যাবে যেমন, বাইরে খাওয়া লাগবে না, ঘরদোর পরিচ্ছন্নতার বিলও দিতে হবে না। আমি বেকার থাকলেও আমাদের লাইফ স্টাইলে এর তেমন কুপ্রভাব পড়বে না, তা মোটেও পাল্টে যাবে না। সাত-পাঁচ বিবেচনা করে চাকরিটা ছেড়ে দিলাম।
সুপারমার্কেট থেকে আনা বাজার-সদাই আমি রেফ্রিজারেটরে রাখছি, ফোন বেজে ওঠে। এ মুহূর্তে ফোনের রিংটোন অসহ্য লাগছে। বিরক্তি নিয়ে বসার ঘরে ঢুকে টেলিফোনের রিসিভার তুলি।
এতক্ষণে নিশ্চয়ই আপনার স্প্যাগেটি রান্না হয়ে গেছে। বলল সেই নারী।
ঠিক ধরেছেন। তবে এখন আমাকে বিড়ালের খুঁজে বেরুতে হবে।
তা দশ মিনিট পরে বেরুলেও এমন কোনো ক্ষতি হবে না। আমি নিশ্চিত। এটা তো আর স্প্যাগেটি রান্না করা নয়, যে পুড়ে যাবে।
কিছু কারণে আমি ওই নারীর সঙ্গে ফোনে বক বক করে যেতে পারি না। কিন্তু ওই কণ্ঠস্বরে এমন কিছু আছে যা আমার মনে ধরেছে।
আমি বলি, ঠিক আছে, কিন্তু মনে রাখবেন মাত্র ১০ মিনিটই।
এখন আমরা দুজনকে জানতে সমর্থ হব। ওই কণ্ঠস্বর দৃপ্ত। কল্পনার চোখে দেখি, চেয়ারে পায়ের ওপর তা তুলে আরাম করে বসে আছে সেই অচেনা নারী।
‘আমি বিষ্মিত’, বলি তাকে। মাত্র দশ মিনিটে আপনি কী জানতে পারবেন?
এমনও হতে পারে, আপনি যতটা চিন্তা করছেন, দশ মিনিট আসলে এর থেকে অনেক লম্বা সময়, বলল সে।
আচ্ছা, আপনি কী সত্যিই আমাকে চেনেন?
অবশ্যই। আপনাকে কত শত শতবার দেখেছি।
কোথায়? কখন?
কোথাও না কোথাও, কখনো কখনো। বলল সে। কিন্তু আমি যদি এখন সেই ফিরিস্তি দিতে থাকি, দশ মিনিটে কুলাবে না। আমাদের হাতে এখন যে সময় আছে, আমার কাছে এখন সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু বর্তমান। আপনি কি আমার সঙ্গে একমত?
হতে পারে। কিন্তু আপনি যে সত্যি আমাকে চেনেন এর পক্ষে কিছু প্রমাণ তো চাই।
কী ধরনের প্রমাণ?
আচ্ছা, বলুন তো আমার বয়স কত?
৩০, তাৎক্ষণিকভাবে বলে দিল সে। ৩০ বছর দুই মাস। কি যথেষ্ট?
আমার তো টাশকি খাওয়ার অবস্থা। সে নিশ্চয়ই আমাকে চেনে, কিন্তু তার কণ্ঠস্বর আমার স্মৃতিতে নেই।
এখন আপনার পালা, বলল সে। ওই কণ্ঠস্বও মুলায়েম, মনোহর। ‘আমার গলা শুনে কল্পনা করুন তো আমি দেখতে কেমন। আমার বয়স কত। এখন কোথায় আমি। কী ধরনের পোশাক পরে আছি। আরও আরও।’
আমার কোনো ধারণা নেই, জানাই তাকে।
ওহ! আসুন তো, চেষ্টা করে দেখুন, বলে সে।
ঘড়ির দিকে তাকাই। মাত্র এক মিনিট পাঁচ সেকেন্ড কথা বলেছি। ‘আমার কোনো ধারণা নেই, আবারও বলি।’
তাহলে আমি আপনাকে সহযোগিতা করি। আমি এখন বিছানায়। সবেমাত্র গোসল করে এসেছি, আমার অঙ্গে কোনো বস্ত্র জড়াইনি।
ওহ, বাহ! টেলিফোন সেক্স।
নাকি আপনি চান আমি কোনো কাপড় পরি? ফিতার মতো কিছু। কিংবা আঁটোসাঁটো কোনো পোশাক? তা কি আপনার জন্য সহায়ক হবে?
আমার কোনো পছন্দ নেই। আপনার যা খুশি করুন। বললাম তাকে। মন চাইলে ওই দেহ বস্ত্রে আবৃত করুন কিংবা নগ্নই থাকুন। সরি, কিন্তু টেলিফোনে এ ধরনের খেলায় আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। আমার হাতে এখন অনেক কাজ-
দশ মিনিটের বেশি তো নয়, বলল সে। এই দশ মিনিট আপনাকে খুন করবে না।
এইটুকু সময় আপনার জীবনে কোনো ফুটো তৈরি করবে না। জাস্ট আমার প্রশ্নের উত্তর দিন। আপনি কি আমাকে নগ্ন অবস্থায় চান, নাকি কোনো পোশাকে? আমার কাছে হরেক ধরনের পোশাক আছে। আপনি যেমনটি চাইবেন। কালো লেইসের অন্তর্বাস...
নগ্নতাই উত্তম।
বেশ। আপনি আমাকে নগ্ন অবস্থায় চান।
হ্যাঁ, নগ্ন থাকাই ভালো।
চার মিনিট পার।
আমার যৌনকেশ এখনো ভেজা, বলল সে। আমার শরীর ভালো করে মুছিনি। ওহ, আমার সর্বাঙ্গ এত ভেজা! উষ্ণ আর আদ্র। আর কোমল। অপূর্ব পেলব ও কৃষ্ণ বরণ। এবার ছুঁয়ে দেখুন।
শুনুন, সরি, কিন্তু...
আর আমার নি¤œাঙ্গও। নিচের সব অংশ। ওখানে এত উষ্ণতা, বাটার ক্রিমের মতো। এত উষ্ণ। এমম। আর আমার পা দুটো। কোনো ভঙ্গিতে রাখব? আমার ডান হাঁটু উঁচু করে রাখা আছে। বা পা অনেকটা ছড়িয়ে দিয়েছি। ঘড়েিত টেন-ও-ফাইভ ভঙ্গিতে।
ওই কণ্ঠ শুনে হলফ করে বলতে পারি, মিথ্যা বলছে না সে। সত্যি সত্যি পা দুটো টেন-ও-ফাইভ অবস্থানে রেখেছে,আর তার সেক্স উষ্ণ ও আদ্র।
আমার ঠোঁট স্পর্শ করুন, বলল সে, আলতোভাবে ছোঁয়ে দেখুন। এখন ওদের একটু ফাঁক করুন। হ্যাঁ। ধীরে, অতি ধীরে। আপনার আঙ্গুল আমার ঠোঁট নিয়ে খেলায় মেতে উঠুক। ওহ, সন্তর্পনে। এখন অন্য হাত দিয়ে আমার বাম স্তন স্পর্শ করুন। আলতো করে চাপ দিন। আরও যতœবান হয়ে উঠুন। ঊর্ধমুখী। এবং স্তনের বোঁটায় আস্তে করে চিমটি কাটুন। আবার চিমটি দিন। আবার। আবার। যতক্ষণ না আমার...।
কোনো কথা না বলে, আমি সিরিভারটা রেখে দিলাম। সোফায় লম্বা হয়ে শুয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে একটি দীর্ঘ হাই তুললাম। আমরা ছয় মিনিট কথা বলেছি। দশ মিনিট পর আবার ফোন বেজে উঠল। আমি রিসিভ করিনি। পর পর ১৫বার রিং হলো।
এরপর যখন থামল, সারা ঘরে কেমন গভীর নীরবতা নেমে এল।

বেলা দুইটার আগে আগে আমি সেই অঙ্গারের-ব্লক বসানো দেওয়াল টপকে কানাগলিতে নেমে আসি। আক্ষরিক অর্থে এটা কোনো ‘কানাগলি’ নয়। কিন্তু এই অংশটার জন্য যুৎসই কোনো শব্দ হয়তো আমাদের মাথায় আসেনি। এটা আদতে কোনো রাস্তা বা পথও নয়, কারণ পথ হলো এমন কিছু, যার প্রবেশ ও বাহির মুখ রয়েছে। যা ধরে আপনি কোথাও না কোথাও পৌঁছে যেতে পারবেন। কানাগলির তো অন্তত একটা মুখ খোলা থাকে অন্য প্রান্ত না হয় হলো রুদ্ধ।
এই কানাগলির দুটি মুখই বন্ধ। আশ-পাশের লোকজন এই জায়গাটিকে কানাগলি বলে ডাকে এই যা। প্রকৃতপক্ষে এই জায়গাটি লম্বায় প্রায় ২০০ গজ। প্রস্থে তিন ফুটের চেয়ে সামান্য বেশি। এটি এই এলাকার দুই সারি কয়েকটি বাড়ির পেছনের অংশ। এই কানাগলিতে আবার অনেকে ময়লা ছুড়ে মারে।
আমার এক চাচার মুখে শুনেছি, এক সময় এই এলাকার লোকজন দুটো বড় রাস্তার একটি থেকে অন্যটিতে যেতে-আসতে এই কোনাকোনি পথ ধরত। তখনও জায়গাটা বেশ চওড়া ছিল। কিন্তু মধ্য পঞ্চাশে জায়গার দাম বেড়ে যায়। আর নতুন নতুন ঘর-বাড়ি উঠতে থাকে। এই জায়গাটাও ক্রমে সরু হতে হতে এমন কানাগলিতে পরিণত হয়। বাড়ির কাছ ঘেঁষে পথচারীদের চলাফেরা বাড়িওয়ালাদেও অনেকে ভালো চোখে দেখত না। একপর্যায়ে স্থানীয় একজন ওই সুরু গলির একটা মুখ বন্ধ করে দিল। এর কয়েক বছর পর অন্য মুখেও অঙ্গারের দেওয়াল তুলে দিলেন অন্য এক বাড়িওয়ালা। অন্য মুখে তখন কাঁটাতারের বেড়া।
যাতে একটা কুকুরও ওই কানাগলিতে ঢুকতে না পারে। স্থানীয় লোকজন এ নিয়ে আপত্তি তোলেননি। কারণ তারা চাইছিল না, বাড়ির পেছন ঘেঁষা এই কানাগলিতে পথচারীরা রাত-দিন যাওয়া-আসা করুক। বরং গলির দুই মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বেশ খুশিই হয়েছিল।
এই কানাগলি পরিত্যক্ত খালের মতো, অব্যবহৃত, দুই সারি বাড়ির মাঝখানের বাফার জোনের মতো সেবা দিয়ে যাচ্ছে। মাকড়শারা জাল ও বংশবিস্তার করে চলেছে। কিন্তু এমন একটা জায়গায় কুমিকো কেন এসেছিল? আমি সব মিলিয়ে দুবারের বেশি এখানে আসিনি। কুমিকো তো মাকড়শা ভয় পায়। ওহ, কুমিকো না হয় আমাকে বলেছিল, যাও ওই কানাগলিতে গিয়ে বিড়াল খোঁজ। যা পরে এসেছে, তা পরে ভেবে দেখা যাবে।
এভাবে বাইরে হেঁটে বেড়ানো অন্তত ঘরে বসে ফোনের প্রতীক্ষা করার চেয়ে ভালো।
আমাদেও এই কানাগলিতে ছাতার মতো থাকা গাছের পাতার ফাঁক গলে নামছে গ্রীষ্মের সোনালী রুদ্দুর। বাতাস পড়ে গেছে। তাই গাছের ছায়াগুলোকে মনে হচ্ছে স্থিরচিত্র, যেন চিরকালীন। জায়গাটা কী নিরিবিলি। কোথাও কোনো শব্দ নেই। আমি যেন রৌদ্রে দাঁড়িয়ে থাকা ঘাসের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার শব্দ শুনতে পাচ্ছি। আকাশে এক খ- মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। মেঘের আদল স্পষ্ট আর কী নিপুণভাবে সাজানো। ঠিক যেন মধ্যযুগের খোদাই-চিত্রের মেঘ।
সবকিছু এমন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে, আমার শরীর আবছা, সীমাহীন ও বহমান... এবং উষ্ণ বলে অনুভব করছি।
আমার পরনে টি-শার্ট ও সুতির মোটা প্যান্ট ও টেনিস সু। গ্রীষ্মের এই রোদে হাঁটার কারণে আমার বগলের নিচে ও বুকে ঘাম জমছে। টি-শার্ট ও প্যান্ট দীর্ঘ দিন বক্সের ভেতর ছিল, আজ সকালেই এগুলোকে বের করেছি। এগুলো থেকে ন্যাপথলিনের উৎকট গন্ধ এসে আমার নাসারন্ধ্রকে সুরসুরানি দিচ্ছে।
কানাগলির দুই পাশের বাড়িগুলোর স্পষ্টত দুই ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে : কতগুলো পুরোনো ধাচের ও অন্যগুলো অতি সাম্প্রতিক সময়ের নির্মাণশৈলীর চিহ্ন বহন করছে। নতুন বাড়িগুলো আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট। এগুলোর সঙ্গে খাপ খাওয়াতেই যেন, ছোট ছোট আঙ্গিনা রয়েছে। আঙ্গিনায় রোদে শুকাতে দেওয়া কাপড় কানাগলির কিছুটা অংশের ওপর এসে পড়ে, এই পথে চলতে গিয়ে আমাকে প্রায়ই তোয়ালে, বিছানার চাদর ও অন্তর্বাস সরাতে হচ্ছে। কোনো কোনো বাড়ির পেছনের দেওয়াল টপকে ভেসে আসছে টেলিভিশনের আওয়াজ, টয়লেটের ফ্লাশ করার শব্দ। এছাড়া কোনো কোনো বাড়িতে রান্না হচ্ছে। তরকারীর ঝাঁঝ এসে নাকে লাগছে।
পুরোনো বাড়িগুলো তুলনামূলকভাবে, কম জীবন্ত। এগুলোর আঙ্গিনায় ফুলের বাগান রয়েছে, চারপাশে ঘনঝোঁপ। একটি বাগানের এক কোনোয় দাঁড়িয়ে আছে পুরোনো ও বাদামী রঙের খ্রিস্টমাস ট্রি।
অন্য একটি বাগানকে মনে হলো শিশুদের ব্যবহƒত খেলনা ফেলার আদর্শ স্থান। সেখানে পড়ে আছে তিন চাকাওয়ালা সাইকেল, টস রিং ও প্লাস্টিকের তলোয়ার এবং রাবারের বল ও কচ্ছপ পুতুল, আর বেসবল বেট। একটা বাগানে দেখা গেল বাস্কেট বল খেলার চক্রবলয়। অন্য একটিতে সিরামিকের টেবিল ও চারপাশে চেয়ার পাতা রয়েছে।
শাদা চেয়ারগুলোর গায়ে ময়লা জমে গেছে। মনে হয়, এগুলো বেশ কয়েক মাস, এমন কি কয়েক বছর ধরে কেউ ব্যবহার করেনি। টেবিলের ওপর নানা গাছের পাতা পড়ে রয়েছে। দরোজার ফাঁক দিয়ে আমি একটি বাড়ির বসার ঘর স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। ওই কক্ষে চামড়ার সোফা ও এর সঙ্গে মানানসই চেয়ার পাতা, একটা বড় টেলিভিশন ও নকশাখচিত ফ্লোর ল্যাম্পও আছে। এই কক্ষকে মনে হচ্ছে, টেলিভিশন নাটকের সেট।
অন্য একটি বাগানের এক কোনে কুকুর রাখার ঘর রয়েছে, ওই ঘরের দরোজা খোলা কিন্তু কোনো কুকুর নেই। কুকুরের ঘরের দরোজার পর্দা কেউ হয়তো কয়েক মাস আগে বাইরের দিকে সরিয়ে রেখেছিল। এখনও তেমনি রয়েছে। কুকুরবাড়ির পাশেই সেই শূন্যবাড়ি, যেটির কথা কুমিকো আমাকে আগে বলেছিল। মুহূর্তের মধ্যে আমি তাকিয়ে যতদূর বুঝতে পারি বাড়িটি এখনো ফাঁকাই রয়েছে। এটি একটি নতুন দুতলা বাড়ি, যদিও এর কাঠের ঝাপ (শাটার) দেখে মনে হয় বেশ পুরোনো।
দোতলার জানালাগুলোর বাইরের রেলিংয়ে জং ধরে গেছে। এই বাড়ির আঙিনায়ও একটি ছোট্ট বাগান রয়েছে। সেখানে পাথরে গড়া পাখির একটি ভাস্কর্য আছে। ভাস্কর্যটি বুক সমান উঁচু একটি ভিতের ওপর দাঁড়ানো। আর ওই ভিত আগাছাতে ছেয়ে গেছে। লতানো গাছ ওই পাখির পা ছোঁয় ছোঁয়।
এটা কি পাখি এ বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই। পাখিটির ডানা দুটি খোলা, যেন সে যত দ্রুত সম্ভব এই আনন্দহীন জায়গা ছেড়ে উড়াল দেবে।
ভাস্কর্যটি ছাড়া, বাগানটিতে সাজসজ্জার বালাই নেই। ঘরের দেওয়াল ঘেঁষে প্লাস্টিকের বেশ কিছু পুরোনো চেয়ার রাখা, এগুলোর পাশে আজেলিয়ার ঝোঁপ। সেখানে টকটকে লাল ফুল ফুটেছে। ফুলগুলোর রঙ অদ্ভুতভাবে অবস্তাব মনে হচ্ছে। অন্যত্র আগাছায় ভরা। বাগানটিকে ভালোভাবে নিরীক্ষা করি। এটি বিড়ালদের জন্য স্বর্গ না হয়ে পারেই না। কিন্তু এখন সেখানে কোনো বিড়ালের উপস্থিতি নেই।
বাড়িটির ছাদে টিভি অ্যান্টেনায় বসে একটি ঘুঘু রোদন করছে। আর পাথুরে পাখির ছায়া পড়েছে নিচে।
পকেট থেকে একটা লেবু লজেনচুস বের করলাম। মোড়ক খুলে তা মুখে পুরলাম। সিগারেট ছাড়ার সহায়ক হিসেবে লেবু লজেন্সের স্মরণাপন্ন হয়েছিলাম। কিন্তু এখন প্রতিদিন এক প্যাকেট লেবু লজেন্স ছাড়া আমার চলেই না।
কুমিকো বলেছিল, আমি লেবু-সুবাসিত এই লজেনচুসে আসক্ত হয়ে পড়ছি। শিগগিরই আমার মুখের ভেতরে ছিদ্র দেখা দেবে। যা হবার হবে, আমাকে লেবু লজেন্স খেতেই হয়। আমি যখন এখনে দাঁড়িয়ে বাগানের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছি, টিভি অ্যান্টেনায় বসা ঘুঘুটি তখনো অবিরাম ডেকে চলেছে। যেন কোনো কেরানি একটার পর একটা বিলের কাগজে সিল মেরে যাচ্ছে।
কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি মনে পড়ে না। আমার মুখ থেকে আধগলা লেবু-লজেন্স মাটিতে পড়ে যায়, এটি ততক্ষণে আমার মুখ মিষ্টিতে ভরে তুলেছিল। পাথুরে পাখির ছায়া থেকে দৃষ্টি সরিয়েছি, মনে হলো পেছন থেকে কেউ যেন আমাকে ডাকছে। কানাগলির অন্যপাশের বাগানে এক তরুণী।
মেয়েটি ছোটখাটো, ওর লম্বা চুলে খোঁপা বাঁধা। চোখে গাঢ় সানগ্লাস ও হালকা নীল রঙের আস্তিন ছাড়া টি-শার্ট। তরুণীর দুই বাহু সরু বাহু, মসৃণ ও তামাটে রঙের। ওর একটা হাত শর্ট প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে রেখেছে। ওপর হাতটি কোমর উঁচু বাঁশের গেইটের ওপর রাখা।
আমাদের মধ্যে তিন কী চার ফুট দূরত্ব।
গরম পড়েছে, বলল সে।
হ্যাঁ, ঠিক, উত্তরে বলি আমি। সামান্য ভাব মিনিময় শেষে সে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। এরপর প্যান্টের পকেট থেকে সিগারেটের পেকেট বের করে। একটা সিগারেট ওর দুই ঠোঁটের মাঝখানে গুঁজে দেয়। তার মুখ ছোট, ওপরের ঠোঁট ওপরের দিকে সামান্য টান করা।
দেশলাইয়ের কাঠি ঠুকে সিগারেটে আগুন ধরায় সে। মাথা এক দিকে কাঁত করার সময় ওর খোঁপা হেলে পড়ে। যেন ওর সৌন্দর্যময় কানের গঠন দেখাতেই এই ব্যবস্থা।
সে দেশলাইটি আবার পকেটে রাখে। দুই ঠোঁট গোল করে ধুয়া ছাড়ে। এরপর আমার দিকে এমন ভঙ্গিতে দৃষ্টি ফেরায় যে, আমি এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি এটা সে খেয়ালই করছে না। সানগ্লাস পরা থাকায় ওর চোখ আমি দেখতে পারিনি।
আপনি কি আশ-পাশে কোথাও থাকেন? জিজ্ঞেস করে সে।
ওহ, হ্যাঁ, আমাদের বাসাটা দেখাতে চাইলাম, কিন্তু এত বেশি দিকবদল করেছি যে, বাসাটা ঠিক কোন দিকে তাৎক্ষণিকভাবে ঠাহর করে উঠতে পারছি না। আমি আমাদের হারিয়ে যাওয়া একটা বিড়াল খুঁজতে এসেছি। হাতের তালুর ঘাম প্যান্টে মুছতে মুছতে তাকে এই কথা বলি। এক সপ্তাহ ধরে বিড়ালটি বাড়ি ফিরছে না। কেউ একজন বিড়ালটিকে এখানে দেখেছিল।
কী ধরনের বিড়াল?
বড় আকৃতির। বাদামি ডোরাকাটা। লেজের প্রান্ত সামান্য বাঁকা।
নাম?
নবোরু ওয়াতায়া।
না, আপনার নাম নয়, বিড়ালের।
এটাই আমাদের বিড়ালের নাম।
ওহ! ভারি মজার তো!
এটা আসলে, আমার শ্যালকে নাম। বিড়ালটি আমার শ্যালককে মনে করিয়ে দেয়। আমরা জাস্ট মজা করার জন্য বিড়ালকে ওই নামে ডাকি। বিড়াল কীভাবে আপনার শ্যালকের কথা মনে করিয়ে দেয়?
আমি জানি না। সরলীকরণ। বিড়ালের হাঁটার ভঙ্গি। এর শূন্য স্থির দৃষ্টি।
তরুণী মুচকি হাসে। আর এই হাসি তাকে প্রথম দেখায় যতটা না শিশুসুলভ মতো মনে হয়েছিল, এর চেয়েও শিশুসুলভ দেখাল। ওর বয়স ১৫ থেকে ১৬ বছরের বেশি হবে না। ওর ওপরের ঠোঁট ওপরের দিকে সামান্য বেঁকে অন্যরকম একটি কোন তৈরি করেছে। আমার মনে হলো, একটা কণ্ঠস্বর আমাকে বলছে, ‘ছোঁও আমাকে, ছুঁয়ে যাও-টেলিফোনের সেই নারী। হাতের তালুর উল্টো দিক দিয়ে আমার কপালের ঘাম মুছলাম।
ঈষৎ বাঁকা লেজওয়ালা বাদামী-ডোরাকাটা বিড়াল, তরুণী বলল। হুমম। এর কি গলাবন্ধনী কিংবা অন্য কিছু আছে?
গলায় কালো একটা বেল্ট পরানো আছে। সে দশ কিংবা ১৫ সেকেন্ড ভাবল, একটা হাত এখনো গেইটের ওপর রাখা। সিগেরেটের শেষ অংশ ফেলে, স্যান্ডেলে পিষে ফেলল।
আমি সম্ভবত এমন একটি বিড়াল দেখেছি, বলল সে। লেজ বাঁকা ছিল কি না মনে পড়ছে না, তবে বড়সড়, বাদামী ডোরাকাটা গলায়বন্ধনী রয়েছে এমন একটি বিড়াল আমি দেখেছি।
কখন দেখেছ?
কখন আমি দেখেছি? হুমম। তিন কিংবা চারদিন আগে। প্রতিবেশীদের বিড়ালগুলো চলাচলের জন্য আমাদের আঙ্গিনাটি মহাসড়ক হিসেবে ব্যবহার করে। এই পথ ধরেই ওরা তাকিতানি থেকে মিয়াওয়াকিস যাওয়া-আসা করে।
ওই শূন্য বাড়িটি দেখাল। যেখানে সেই পাথরে পাখিটি এখনো ওর ডানা মেলে আছে। লম্বা সোনালীরডে এখনো রুদ্দুর ঝলমল করছে, আর সেই টিভি অ্যান্টেনায় বসা ঘুঘুটি এখনো একঘেঁয়ে সুরে রোদন করে চলেছে।
আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে, বলল সে। আমরা কেন এখানেই আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি না? সাধারণত সব বিড়ালই মিয়াওয়াকিস যেতে এই পথ ধরে। আর কেউ যদি দেখে আপনি এভাবে এখানে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছেন তাহলে নির্ঘাত পুলিশে খবর দেবে।
আমি এখানে এই প্রথমবার আসিনি, আমি দ্বিধাবোধ করি।
চিন্তার কিছু নেই, বলল সে। আমি বাসায় একা। আমরা দুজন রোদে বসে বিড়ালের আগমনের প্রতীক্ষা করতে পারি। আপনাকে সঙ্গ দেব। আমার টুয়েন্টি-টুয়েন্টি ভিশন।
সন্ধ্যা নামার আগ পর্যন্ত আমার হাতেও তেমন কিছু করার নেই, লন্ড্রিতে যাওয়া ও রাতের খাবার ঠিক করা ছাড়া। গেট পার হয়ে লনে ঢুকি, তরুণীকে অনুসরণ করি। সে তার ডান পা সামান্য টেনে টেনে চলে। কয়েক কদম চলার থামে, ঘুরে আমার মুখের দিকে তাকায়। মোটরসাইকেলের পেছন থেকে পড়ে গিয়েছিলাম, বলে সে। আঙ্গিনার একপ্রান্তে একটা বড় ওক গাছ। ওই গাছের নিচে দুটি চেয়ার পাতা রয়েছে। এর একটিতে নীল তোয়ালে রাখা।
অন্যটিতে সিগারেটের নতুন একটি প্যাকেট, একটা অ্যাশট্রে ও লাইটার এবং একটি বড়সড় বুম বাক্স। সেখান থেকে কম ভলিয়ুমে হার্ড-রক সংগীত ভেসে আসছে। সে গান বন্ধ করে দিল এবং চেয়ারের ওপরের সব জিনিসপত্র সরিয়ে ঘাসের ওপর রাখল। চেয়ারে বসেও আমি ওই শূন্যবাড়ির আঙ্গিনা, পাথুরে পাখি, সোনালীরড, চেইন-লিংক বেড়া দেখতে পাচ্ছি।
এখন মনে হচ্ছে, আমি এখানে আসার পর থেকেই হয়তো এই তরুণী আমাকে অনুসরণ করেছে। এই বাড়ির আঙ্গিনাটা বেশ বড়। বেশ কিছু গাছপালা আছে। চেয়ারগুলোর বাম পাশে কংক্রিট বসানো একটি ডোবা। কিন্তু শুকনো।
গাছের সারির ফাঁক দিয়ে বাড়ি দেখা যায়। আমরা বাড়ির দিকে পিঠ দিয়ে বসেছি। বাড়িটি যে খুব বড় এমন নয়। কিন্তু এর আঙ্গিনা বড়সড়, আকর্ষণীয়। নিয়মিত এর পরিচর্যা করা হয়।
কত বড় আঙ্গিনা, চারপাশে তাকিয়ে বলি আমি। এটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে না জানি কত পরিশ্রম করতে হয়।
অবশ্যই। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন লন-পরিচর্যার একটি কোম্পানিতে কাজ করতাম।
ওহ? তরুণীর নির্বিকার গলা শুনে মনে হলো এই বিষয়ে ওর কোনো আগ্রহ নেই।
আপনি কি এখানে সব সময় একা থাকেন? জিজ্ঞেস করি।
হ্যাঁ, প্রায় সব সময়ই। সকালে ও সন্ধ্যায় একজন গৃহকর্মী আসে। এ ছাড়া সারা দিন শুধু আমি। একা। কোনো কোল্ড ড্রিংক? আমাদের বিয়ার আছে। পান করবেন?
নো, থ্যাংকস।
সত্যি? লজ্জিত বোধ করার কিছু নেই।
আমি মাথা নাড়ি। তুমি কি স্কুলে যাও না?
আপনি কাজে যান না?
আমার চাকরি নেই।
চাকরি চলে গেছে?
না কয়েক সপ্তাহ আগে নিজেই ছেড়ে দিয়েছি।
কী ধরনের চাকরি করতেন?
একজন উকিলের সহযোগী ছিলাম। সরকারি বিভিন্ন অফিসে গিয়ে নানা দলিল সংগ্রহ করতাম, সেগুলো গুছিয়ে রাখতাম। আদালতের নোটিশ পর্যবেক্ষণ করতাম। এসব আর কী।
চাকরিটা ছেড়ে দিলেন ?
হ্যাঁ।
আপনার স্ত্রী চাকরি করেন?
হ্যাঁ, করে। ঘুঘুটি রোদন থামিয়ে, অন্য কোথাও উড়ে গেছে। হঠাৎ চারপাশ অদ্ভুত নীরব মনে হয়।
ওখানে, তাকিতানিদের আঙ্গিনা লক্ষ্য করুন। বলল সে। আঙ্গিনার বেড়ার নিচ দিয়ে, ফটকের নিচ দিয়ে বিড়ালেরা যাওয়া-আসা করে। ওরা সব সময় একই নির্দিষ্ট পথ ধরে চলাফেরা করে।
সানগ্লাস কপালের ওপর তোলে আবার নিচে নামায়। এরপর একগাল ধোয়া ছাড়ে। তরুণীটির বাম চোখের নিচে একটা কাটা দাগ। দেখে মনে হলো সারা জীবনেও মিলাবে না। এই ক্ষত আড়াল করতেই হয়তো সে রোদচশমা পরে। তরুণীর মুখম-ল আহামরি সুন্দর নয়, এর পরও আকর্ষণ করে, হতে পারে ওর উজ্জ্বল দুটি চোখ কিংবা ঠোঁটের অদরকারী গঠন।
মিয়াওয়াকিস সম্পর্কে আপনার কি জানাশোনা আছে? শুধায় সে।
না, বলি আমি।
ওই শূন্য বাড়িতে থাকে। খুবই ভালো পরিবার। ওদের দুই মেয়ে। পড়ে প্রাইভেট স্কুলে। মিয়াওয়াকি পারিবারিক সূত্রে কয়েকটা রেস্তোরাঁর মালিক।
তাঁরা ওই বাড়িতে থাকেন না কেন? হবে হয়তো, ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছিলেন। যতদূর মনে পড়ে, বছর খানেক আগের ঘটনা। একরাতে বাড়ি ফেলে উধাও। বিড়ালেরা এখন ওখানে বাচ্চা দেয়। আমার মা তো সব সময় অভিযোগ করেন।
বাড়িটিতে কি অনেক বিড়াল থাকে? সিগারেট মুখে তরুণী আকাশের দিকে তাকায়।
হরেক রকমের বিড়াল। কোনটার লোম নেই, কোনো কোনোটির একটি চোখ... জানেন, আমার এক আত্মীয়ার দুই হাতে ছয়টি করে আঙ্গুল। তিনি আমার চেয়ে খুব বেশি দিনের বড় নন। বুড়ো আঙ্গুলের পাশে আরেকটা করে পুচকে আঙ্গুল ঝুলে আছে। সব সময় পুচকেগুলোকে কায়দা করে লুকিয়ে রাখেন। আমার ওই আত্মীয়া সুন্দরী।
আমি মাথা নাড়ি।
আপনার কি মনে হয়, অতিরিক্ত আঙ্গুল বংশগত কারণে গজায়?
এ বিষয়ে আমার খুব একটা জানা নেই। সে কথা বলা থামায়। আমি লেবু লজেন্স চুষি এবং বিড়ালের পথের দিকে দৃষ্টি রাখি। এ সময়ের মধ্যে একটা বিড়ালও চোখে পড়েনি।
আপনি সত্যি কোনো ড্রিংক করতে চান না? জিজ্ঞেস করে সে। আমি কোক আনতে যাচ্ছি।
আমি তো বলেছি, আমার কোনো ড্রিংক দরকার নেই।
এক পা টানতে টানতে গাছের সারির ভেতর দিয়ে অদৃশ্য হলো সে। ঘাসের ওপর রাখা ওর ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখি। অবাক হই, এটি পুরুষদের একটি মাসিক সাময়িকী। প্রচ্ছদে একটা নারীর প্রায় নগ্ন ছবি। নারী মডেল পা দুটে ছড়িয়ে টুলে বসেছে। পরনে পাতলা অন্তর্বাস, যৌন কেশগুলো প্রায় দেখা যাচ্ছে। ম্যাগাজিনটি আবার ঘাসের ওপর রেখে দিই। আমার দুই হাত বুকের ওপর রেখে বিড়ালের আসা-যাওয়ার পথে আবারও তাকিয়ে থাকি।
কোক হাতে তরুণী ফিরে আসার আগে অনেক সময় পার হলো। অসহ্য গরম। মনে হচ্ছে আমার ঘিলু গলে যাচ্ছে। নাক দিয়ে বেরিয়ে আসবে।
আচ্ছা, ধরুন আপনি কোনো মেয়ের প্রেমে পড়েছেন। কিন্তু মেয়েটির হাতে ছয়টা করে রয়েছে। তখন কী করবেন?
সার্কাস পার্টিতে বিক্রি করে দেব, বললাম ওকে।
মেয়েটিকে সত্যি বিক্রি করে দেবেন?
আরে না। মজা করছি। আমার মনে হয় না, এতে আমার কিছু যাবে আসবে।
আপনার সন্তানদেরও যদি এরকমটি হয়, তখন? আমি এক মুহূর্ত চিন্তা করি। এরপর বলি, সত্যি মনে করি, এতে আমার কিছু আসবে যাবে না।
আর যদি মেয়েটির চারটি স্তন থাকে, তখন কী হবে?
আমার জানা নেই। এক মেয়ের চার স্তন? আমি বিষয় পাল্টানোর সিদ্ধান্ত নিই।
তোমার বয়স কত? জিজ্ঞেস করি।
ষোল, বলে সে। এই তো কয়েক দিন আগে জš§দিন গেল।
তুমি কি অনেক দিন ধরে স্কুলে যাও না?
বেশি হাঁটাহাঁটি করলে আমার পা ব্যথা করে। চোখের নিচে ক্ষতচিহ্ন তৈরি হয়। আমাদেও স্কুল কর্তৃপক্ষ খুবই কড়া। মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে আমি আহত হয়েছি জানতে পারলে হয়তো আমাকে স্কল থেকে বের করে দেবে। তাই এক বছর ড্রপ দিয়েছি। এ গ্রেডে ওঠা নিয়ে আমার কোনো তাড়াহুড়া নেই। যাক্্ গে, আপনি একটু আগ বলছিলেন, ছয় আঙ্গুল ও চার স্তনওয়ালা কোনো মেয়েকে বিয়ে করতে আপনার আপত্তি নেই...।
এটা বলি নি। আমি বলেছি, এটা আমার জানা নেই।
জানা নেই কেন?
আমি সত্যি, জানি না, এমন ধরনের উদ্ভট কল্পনা আমার মাথায় আসে না।
আচ্ছা, আপনি কি কল্পনা করতে পারেন কারও হাতে ছয়টা আঙ্গুল রয়েছে?
তা তো পারিই।
তাহলে কারও বুকে চারটি স্তন রয়েছে এমন কল্পনা করতে পারেন না কেন? এই দুয়ের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়?
আমি আরেক মুহূর্ত ভাবি, কিন্তু কোনো উত্তর খুঁজে পাই না।
আমি বেশি বক বক করছি না তো?
তোমার পরিচিত লোকজন তোমাকে এসব কথা বলেছে?
হ্যাঁ, মাঝেমধ্যে বলে।
আমি আবারও বিড়ালের আসা-যাওয়ার সেই পথের দিকে দৃষ্টি ফেরাই। আর ভাবি, এখানে বসে বসে করছিটা কী? এতক্ষণে একটা বিড়ালও চোখে পড়েনি। দুহাত এখনো বুকের কাছে ভাঁজ করা। প্রায় ৩০ সেকেন্ড চোখ বন্ধ করে রাখি। টের পেলাম, আমার শরীরের বিভিন্ন অংশে ঘাম ঝরছে। সূর্যের উত্তাপ আমার গায়ে এসে একটু বেশিই লাগছে।
চাইলে ঘরে গিয়ে একটু ঘুমিয়ে নিতে পারেন, ফিসফিস করে বলল তরুণী। যদি কোনো বিড়াল চোখে পড়ে আমি না হয়, আপনাকে ডেকে তুলব।
চোখ বন্ধ রেখেই আমি মাথা নাড়ি।
বাতাস বইছে না। কোথাও কোনো শব্দ নেই। চারপাশে শুনসান। ঘুঘুটিও আর ফিরে আসেনি। আমি সেই নারী কণ্ঠস্বরের কথা ভাবছি। সত্যি ওই নারীকে চিনি? কিন্তু ওর কথা শুনে তা মনে হয়নি।
কিন্তু কেন যেন মনে হয়, ওই নারী আমাকে ঠিকই চেনে। চোখ বন্ধ করে আমি যেন দেখতে পাচ্ছি, সেই নারীর লম্বা ছায়া পড়েছে কোনো ফাঁকা রাস্তার ওপর, ওই ছায়া আমাকে স্পর্শ করতে চায়। আর সেই নারী রয়েছে আমার চেতনার বাইরে। আমার কানের কাছে টেলিফোন বেজেই চলেছে।
কী ঘুমিয়ে পড়েছেন? এমন মৃদুস্বরে তরুণী জিজ্ঞেস করল যে, আমি শুনতে পেয়েছি কিনা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হতে পারি না।
না, ঘুমুচ্ছি না, আমি বলি।
আমি কি আপনার আরেকটু কাছে আসব? তাহলে নিচুস্বরে কথা বললে আপনার শুনতে অসুবিধা হবে না...
আমি ভালই আছি। চোখ বন্ধ রেখেই উত্তর দিই। সে তার চেয়ার টেনে আনল। আমার চেয়ারের সঙ্গে টক্কর খেল ওর চেয়ার। মৃদু শব্দ হলো। কী অবাক ব্যাপার, মেয়েটা এখন একেবারে অচেনা স্বরে কথা বলছে।
আমি কি কথা বলতে পারি? তবে আপনাকে কোনো উত্তর দিতে হবে না। এমনকি আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে না।
ঠিক আছে। আমার কোনো আপত্তি নেই।
মানুষের মৃত্যু, কী পরিচ্ছন্ন উপায়ে। ওর মুখ আমার কানের খুব কাছে। ওর কথা আমার কানে ঢুকছে, ওর উষ্ণ নিঃশ্বাসও।
এ কথা কেন? জিজ্ঞেস করি তরুণীকে।
এবার ও আমার ঠোঁটের ওপর একটা আঙ্গুল রাখল, যেন সেগুলো সিল করে দিতে চায়। কোনো প্রশ্ন করা চলবে না, হুঁশিয়ার করে দিল সে। আর আপনার চোখ খোলা চলবে না। ঠিক আছে?
আমি আলতো মাথা নেড়ে সম্মতি জানাই। ঠোঁট থেকে আঙ্গুল সরিয়ে এবার সে আমার কব্জিতে রাখে।
আমার যদি একটি ছুরি থাকত, তাহলে এটা কেটে ভেতরের দিকে তাকাতাম। মৃতদেহ নয়.. . মৃত্যুর পি-ের দিকে। আমি নিশ্চিত এ রকম কিছু একটা পাওয়া যাবে। নরম বলের মতো গোলাকার কিছু। এর মধ্যে মৃত ¯œায়ু রয়েছে। মৃতদেহ থেকে এটি কেটে বের করতে চাই, এর ভেতরটা কেমন দেখতে চাই। আমি সব সময়ই ভেবে বিষ্মিত হই, এটি দেখতে কেমন। হয়তো, শক্তধরনের, কোনো টিউবের ভেতরে টুথপেস্ট শুকিয়ে গেলে যেরকম হয়, সেরকম কিছু। আপনারও কি তাই মনে হয় না? না, কোনো উত্তর দিতে হবে না।
বাইরের দিকটা কোমল কিন্তু যতই ভেতরে যাবেন শক্ত। চামড়া ছাড়িয়ে আমি ওই কোমল জিনিসপত্র বের করে আনতে চাই। কেন্দ্রের যত কাছাকাছি পৌঁছা যাবে ততই কোমল ও আদ্র সবকিছুর সন্ধান মিলবে। যতক্ষণ না সূক্ষè সব তন্তু...। অতি ক্ষুদ্র বল, আর তা সত্যি শক্ত। আপনিও কি তাই মনে করেন না?
বেশ কয়েকার খাকারি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে সে।
আজকাল সারা দিন আমি এসব ভাবি। কারণ নষ্ট করার মতো পর্যাপ্ত সময় আমার হাতে আছে।
আপনার যখন কিছুই করার থাকে না, তখন আপনার চিন্তা অনেক দূর গড়াবে। আজেবাজে চিন্তার তল খুঁজে পাবেন না তখন। কব্জি থেকে আঙ্গুল সরিয়ে নিল সে। অবশিষ্ট কোকাকোলা পান করল। বরফের শব্দ শুনে আমি তা আন্দাজ করেছি। বিড়ালের ব্যাপারে দুশ্চিন্তা করবেন না, আমি লক্ষ্য রাখছি।
নবোরু ওয়াতায়াকে দেখামাত্র আপনাকে জানাব। আমি নিশ্চিত নবোরু ওয়াতায়া কাছেই কোথাও হেঁটে বেড়াচ্ছে। যে কোনো সময় আবির্ভুত হবে। এই আসল বলে। জানি, বিড়ালটি ঘাস মাড়িয়ে বেড়ার নিচ দিয়ে আসছে। পথে পথে বুনোফুল শুঁকে শুঁকে এগিয়ে আসছে। ধীরে ধীরে এই দিকেই আসছে। মনে মনে ওর আগমন দৃশ্য কল্পনা করুন।
আমি মনে মনে বিড়ালটির চিত্র আঁকতে চাইলাম, কিন্তু কালো একটা মূর্তি গড়ে উঠল। চোখে সূর্যের আলো লাগছে। চোখের ভেতরের অন্ধকার ভাব নেই, যে বিড়ালের ছবি কল্পনা করতে পারব। বরং অদ্ভুত, বিকৃত ও অসম্পূর্ণ একটা পোট্রেট আঁকতে সমর্থ্য হলাম। প্রকৃত বিড়ালের সঙ্গে এর অমিল কতশত! এমন কি বিড়ালটি কেমন ভঙ্গি করে হাঁটত, তাও কল্পনায় আনতে পারছি না।
তরুণীটির আঙ্গুল আবার আমার হাতের কব্জিতে রাখল। এবার সে কিছু একটা আঁকার চেষ্টা করল। আমার চোখে অন্য ধরনের আঁধার অনুভ’ত হলো। আমি যেন ঘুমের কোলে ঢলে পড়ছি।
এ রকমটি চাইছিলাম না, আবার মেয়েটিকে প্রতিহতও করতে পারছিলাম না। মনে হলো, আমি শবদেহে পরিণত হয়েছি। অন্ধকারে নবোরুর চারটি পা ভেসে ওঠে। নিশব্দে আসছে। কিন্তু কোথায়?
সব মিলিয়ে মাত্র দশ মিনিট নেবে। টেলিফোনে বলেছিল সেই অচেনা নারী। না, তার ধারণা ভুল। মাঝেমধ্যে ১০ মিনিট শুধুমাত্র ১০ মিনিট নয়। এই সময় কখনো প্রলম্বিত কখনোবা সঙ্কুচিত। এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত।
ঘুম থেকে জেগে দেখি আমি একা। চেয়ারে তরুণী নেই। নীল তোয়ালে, সিগারেট ও ম্যাগাজিনটি আছে। গ্লাস কিংবা বুম বাক্স নেই। সূর্য পশ্চিমের আকাশে। ওকের একটা শাখার ছায়া আমার দুই হাঁটুর কাছে এসে পড়েছে। ঘড়ি বলছে, সোয়া চারটা বাজে। চারপাশে দৃষ্টি ফেরাই। প্রশস্ত লন, শুকনো ডোবা, বেড়া, পাখি ভাস্কর্য, সোনালীরড, টিভি অ্যান্টেনা দেখি। কিন্তু কোথাও বিড়ালের টিকিটিও নেই। তরুণীও উধাও।
আরও দশ মিনিট পার করি। কিন্তু না বিড়াল না তরুণী ফিরে আসে। কিছুই নড়ছে না। আমি অনুভব করি যেন, ঘুমের মধ্যে আমার বয়স বেড়ে গেছে।
ধীরে চেয়ার থেকে ওঠে দাঁড়াই। ওই ঘরের দিকে তাকাই। কিন্তু সেখানে জনমানুষের চিহ্ন নেই। এখানেই আজকের মতো বিড়ালের জন্য অপেক্ষার ইতি টানি। লন থেকে কানাগলিতে নেমে আসি। বাড়ির উদ্দেশে হাঁটা দিই। বিড়াল খুঁজে পাইনি। তবে এটা তো ঠিক, আমি চেষ্টার ত্রুটি করিনি।
বাড়ি ফিরে হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হই। এর পর রাতের রান্নার আয়োজন করি। সাড়ে পাঁচটার দিকে ফোন বেজে ওঠে। পর পর ১২ বার রিং হয়।
রিসিভ করিনি। ফোনের ক্রিং ক্রিং বন্ধ হয়। কিন্তু তা রুমের ভেতর প্রতিধনিত হতে থাকে। ধুলার মতো বাসাতে উড়ে বেড়াতে থাকে। উইন্ড-আপ বার্ড নিয়ে একটা কবিতা লিখেন না কেন? এই আইডিয়াটা আমার মনে ধরে, কিন্তু প্রথম পংক্তিটা মাথায় আসছে না।
হাইস্কুল পড়–য়া মেয়েরা কী করে উইন্ড-আপ বার্ড নিয়ে লেখা কবিতা উপভোগ করবে?
কুমিকো সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ঘরে ফিরে আসে। গত মাস থেকে সে দেরিতে বাড়ি ফিরছে। কখনো রাত আটটায় কখনোবা ১০টার পর ফিরছে। আমি বাড়িতে থাকি। তাই আজকাল রাতের খাবার আমিই তৈরি করি। রান্নাবান্না করতে হবে, এই ভেবে ওরও আর তাড়াহুড়া করে বাড়ি ফিরতে হয় না।
সরি, বলল কুমিকো। কাজ শেষ করতেই দেরি হয়ে গেল। যে মেয়েটা পার্ট-টাইম কাজ করে ও আসলে একটা অকর্মার ঢেকি।
আমি রান্না করি আর কুমিকো রান্নাঘরের টেবিল সাজায়। এর পর জিজ্ঞেস করে, সাড়ে পাঁচটার দিকে কোথায় ছিলে? আসতে দেরি হবে, একথা তোমাকে জানাতে চেয়েছিলাম।
ঘি ফুরিয়ে গিয়েছিল। তাই আমাকে দোকানে যেতে হলো। ওকে মিথ্যা বললাম।
ব্যাংকে গিয়েছিলে?
অবশ্যই।
বিড়াল খোঁজার কী হলো?
পাইনি। তোমার কথামতো ওই শূন্য বাড়ির কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওখানে সন্ধান পাইনি। আমি বাজি ধরতে পারি, বিড়ালটি দূরে কোথাও চলে গেছে। কোনো কথা বলল না কুমিকো।
নৈশভোজ শেষে আমি গোসল করি। বাতি নিয়ে দিয়ে কুমিকো বসার ঘরে ছিল।
পাশের ঘর থেকে আসা আবছা আলোয় ধূসর জামা পরা কুমিকোকে ভুল জায়গায় রাখা লাগেজের মতো দেখাচ্ছে। তোয়ালে দিয়ে মাথার চুল শুকিয়ে কুমিকোর মুখোমুখি সোফায় বসি। কুমিকো বলল, বিড়ালটি মারা গেছে। আমি নিশ্চিত।
ডোন্ট বি সিলি, বলি তাকে। আমি নিশ্চিত কোথাও আছে। এক সময় ক্ষুধায় কাতর হবে আর ঠিকই বাড়ি ফিরে আসবে। এর আগেও এমনটি হয়েছে। মনে করে দেখ। তখন আমরা কোয়েনজিতে থাকতাম...
কিন্তু এখন সময় ভিন্ন, বলল সে। এবার আমার সব ধারনাই ভুল প্রমাণিত হবে। আমার মন বলছে, বিড়ালটির মৃত্যু হয়েছে। ঘাসের ওপর পচে যাচ্ছে ওর শরীর। ওই ফাঁকাবাড়ির আঙ্গিনায় ঘাসের ওপর খোঁজ করেছিলে কি?
না, আমি লক্ষ্য করিনি। বাড়িটি এখন জনশূন্য হলেও, এর মালিক আছে। তাই যাইনি সেখানে।
তাহলে কোথায় খুঁজেছ তুমি? আমি বাজি ধরে বলতে পারি, তুমি চেষ্টাই করনি। আর এ কারণেই তুমি বিড়ালের খোঁজ পাওনি।
তোয়ালে দিয়ে আবারও চুল মুছি। কথা বলতে যাব, টের পাই কুমিকো কাঁদছে, থেমে যাই। বুঝতে পারি, কুমিকো বিড়ালটিকে কতটা পছন্দ করত। বিয়ের পর থেকে বিড়ালটি আমাদের সঙ্গে ছিল। তোয়ালে সরিয়ে রেখে ঠাণ্ঠা বিয়ার আনতে রান্না ঘরে ঢুকি। আজ দিনটা কী বাজে কাটল, এ মাসের, এ বছরের সবচেয়ে বাজে দিন।
নবোরু ওয়াতায়া কোথায় তুমি? উইন্ড-আপ বার্ড কি তোমার বসন্তে হাওয়া দিতে ভলে গেছে? কথাগুলো কবিতার মতো আমার মাথায় এলো। নবোরু ওয়াতায়া তুমি কোথায়? উইন্ড-আপ বার্ড তোমার বসন্তে হাওয়া ছাড়তে ভুলে গেছে কি?
বিয়ার নিয়ে বসার ঘরে ফিরছি। টেলিফোন বেজে উঠল। ফোনটা রিসিভ কর, চেচিয়ে বলি। কুমিকো বলে, না তুমি ধরো।
আমি চাই না। ফোন বেজেই চলে। আমরা দুজন চুপ করে আছি। কারও মুখে কোনো কথা নেই। আমি বিয়ার পান করছি। আর কুমিকো নিঃশব্দে অশ্রু ঝরাচ্ছে। ২০ বার রিং হলো। এরপর আর গুনে দেখিনি। (চলবে)
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×