somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিজিটাল আরব্য রজনীর গল্প। ( পর্ব-১ )

০২ রা জুন, ২০১৫ রাত ৯:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের কাহিনী বাদ। শুরু করি একেবারে ২০ নভেম্বর থেকে। হ্যা?

এদিনই আমার ফ্লাইট ছিলো। দুপুর দেড়টায়। জীবনের প্রথম যাত্রা। এক্সাইটেড ছিলাম।। ছোটকালে আকাশে বিমান দেখতাম। ভাবতাম কবে আমিও উড়বো এভাবে। উড়তে তো আর পারলাম না। বসেই ছিলাম।

সকালে সবার থেকে বিদায় নিলাম। সাথে দুজন বন্ধু,এক কাজিন, নানাজান আর আমার বাপজান আসিলো। এগারোটার মধ্যে সবার থেকে বিদায় নিলাম। ভেতরে প্রবেশ করলাম। ভেতরে বলতে বোর্ডিং পাস নিবো। প্রথমবারের মত কোন এয়ারপোর্টের ভেতরে প্রবেশ করলাম। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছিলাম। একদিকে তাকিয়ে আমার এয়ারওয়েজের বোর্ডিং পাস দেবার লাইন দেখলাম। আমার এয়ারওয়েজ ছিলো “জেট এয়ারওয়েজ”। কেমন
এয়ারওয়েজ সেটা নিয়ে পরের পোস্টে আলোচনা করবো।

যাই হোক আমার ট্রানজিট ছিলো মুম্বাইতে, তিন ঘন্টার। বোর্ডিং পাস নেবার জন্য সিরিয়ালে দাড়ালাম। যথাযথ কাগজ দিলাম। মালামাল বোর্ডিং এ দিলাম। আমার সামনে এক লোক ছিলো । জেট এয়ারওয়েজে মাল নেবার সীমা ছিলো জনপ্রতি ৩০ কেজী। ওই লোকের হয়েছিলো ৪৪ কেজী। দেখতে চাইলাম কি করে। দেখলাম বেল্টের সামনে যে লোক ছিলো তার হাতে দুটো এক হাজার টাকার নোট দিলো। ওনার মাল গেলো ৪৪ কিলোই বাট নিবন্ধিত হলে ৩০ কেজী বলে। ঘুষ দেয়াও এক প্রতিভা বটে।

বোর্ডিং পাস নিয়ে ইমিগ্রেশন গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ভাবছি আহারে ইমিগ্রেশন পার হলেই আমার আর বের হওয়া সম্ভব না।
এমন অময় দেখলাম আব্বু ফোন দিলো। বললো,”আব্বু তুমি কি ইমিগ্রেশন পার হইছো”।
বললাম এখনো না।
আব্বু বললো তুমি দাঁড়াও আমি আসতেছি।

আব্বু কিভাবে যেনো ম্যানেজ করে ভেতরে আসছে। বাবাকে বড় হবার পর কোনোদিন জড়িয়ে ধরিনি। সেখানে সবার সামনে আব্বুকে জড়িয়ে ধরলাম। আমি আবেগী নই। বাট চোখে পানি টলমল করছিলো। আব্বুকে বন্ধুর মত জড়িয়ে ধরলাম। আব্বুও বাচ্চার মত কাদতেছিলো। আব্বুর সাথে চেয়ারে বসলাম পাশাপাশি। বন্ধুর মত কিছুটা সময় গল্প করলাম। তারপর আমি
ইমিগ্রেশন গেটে ঢুকলাম। :||

আব্বুর বাহিরে যেতে হলো। ইমিগ্রেশনের লাইনে দাড়ালাম। ইমিগ্রেশনের রিসিপশনে থাকে পুলিশ। পুলিশেরা আমার পাসপোর্ট নিয়ে যাচাই করতে লাগলো। তারপর টুকটাক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলো।। সবার শেষে বলা হলো, ”আপনি এগুতে পারেন”।

একটা কথা বলে নেই। যারা কখনো এয়ারপোর্ট দিয়ে দেশ ছাড়েননি তাদের জন্য। কোন মানুষ যদি একশটা খুন ও করেন। এবং সে যদি কোনো না কোনভাবে একবার ইমিগ্রেশন গেট ক্রস করে ফেলে তাহলে তাকে আর কেঊ ধরতে পারবে ন। ইভেন পুলিশ, সরকার কেউ না। আর ইমিগ্রেশন ক্রস করবার পর একমাত্র মারা না গেলে আর ব্যাক করা পসিবল না।(আমার জানামতে )

ইমিগ্রেশন পার হয়েও এক ঘন্টা সময় আছে হাতে।। ভেতরের সাজসজ্জা দেখতে লাগলাম। আমি যেখানে বসেছিলাম, তার বাম দিকে দেখলাম মদের দোকান। লাইফে কখনো মদের দোকান দেখিনি।। চোখ গোলগোল করে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম। সারির পর সারি বোতল মদ। রাম, জিন, টাকিলা, হুইস্­কি, স্কচ, মিক্সড ককটেল ইত্যাদি নানা ধরনের মদ (নাম লেখা ছিলো টেবিলের
সামনে )। রিসিপশনে সোজা ভাষায় বলতে গেলে এক সেক্সি মেয়ে। যিনি টাইট ফিট প্যান্ট পড়ে আছেন আর টাইট টি-শার্ট। (এই না আবার কেউ বলে বসে চোখ সামলান মিয়া। একচুয়ালি পাহাড় তো এমনিতেই চোখে পড়ে! তাই না?!) =p~ ;) :P

চিন্তা করতে লাগলাম বাংলাদেশের মত একটা মুসলিম দেশের (কাগজে কলমে ) এয়ারপোর্টে মদের দোকান কেন? আমি বাচ্চা মানুষ।। তাই চিন্তা না এগিয়ে চুপচাপ বসে রইলাম।
এর থেকেও ভয়ানক ব্যাপার চিন্তা করেছিলাম কাতার এসে। সেটা পরের কোন পোস্টে। যাই হোক সময় হয়ে এলো। শেষবারের মত চেক করবে বিমানে উঠবার আগে। ইজিলি পার পেয়ে গেলাম। আমার সাথে এক ছেলেকে কিছু সময়ের জন্য আটকে রাখলো। কিছু সময় পর ছেলেটাকে ছেড়ে দিলো। ছেলেটাকে দেখলাম চোখ মুছছে। জিজ্ঞেস করলাম ভাই কান্না করেন কেন?
বললো, ”ভাই আমার আমের আচার খুব প্রিয়। বিদেশ আসছি আবার কবে না কবে খাই এই ভেবে আম্মা দুই কাচের বোতলে ভরে
আচার দিয়ে দিছিলো। চেক করবার সময় আমের আচার গুলো রেখে দিলোরে ভাই। ওরা বলে এটা এলাউড না। আমের আচার কি এমন ক্ষতিকারক জিনিষ ভাই?’ (চেক করবার সময় এক অল্পবয়স্ক মেয়ে আর এক বয়স্ক লোক ছিলো। )

উত্তর না দিয়া হিমুর মত একখান হাসি মাইরা সইরা আসলাম।

বিমান আসলো। বিমানে উঠবার সময় দেখা হয়ে গেলো বিখ্যাত পরিচালক মোস্তফা সরোয়ার ফারুকির সাথে । কথা না বইলা সবার আগে ছবি তুললাম । (শত হইলেও এইটা ফেসবুকের যুগ। একটা ভাব আছে না? হে হে। ) !:#P

তারপর আস্তে আস্তে পেলেনে উঠলাম। স্বাগত জানাইলো ছুডু ড্রেস পড়া এক মাইয়া। তহন শীতকাল আছিলো। শীতকালে উনি ছুডু ড্রেস কেন পড়লো এইটা মাথায় আসলো। যাই হোক আমি বাচ্চা মানুষ তাই আবারো চিন্তা করা বন্ধ কইরা লক্ষী ছেলের মত সিটে বইসা পড়লাম। মন খারাপ কিঞ্চিত। বাপে লাস্ট তিন ঘন্টা পঞ্চাশ বারের উপরে ফোন দিছে। আবারো দিলো। :#>

কইলাম, ”আব্বু যাই”।
প্রতিবারের মত সে আরো একবার বলিলো, ”যাই না আব্বু বলো আসি”।
ওকে আসি আব্বু। :||

এই বলে ফোন রাখলাম। স্পিকারে কইলো ফোন বন্ধ করতে। আমি বাংগালী মানুষ কথা শুনবার অভ্যাস কম। তাই ফোন টিপত্তেই লাগলাম। এমন সময় আসলো এক ফোন। মাহি ফোন দিলো। ধরবার পারি নাই। তার আগেই এক সুন্দরী ইন্ডিয়ান মেয়ে আসিলো। কোকিল কন্ঠে বলিলো, “স্যার দয়া কইরা ফোনডা বন্ধ করেন”।
আমারে কেউ স্যার কইলো। এই খুশিতে কইলাম “ওকে”। ;)

বাম দিকে নিকুঞ্জ এলাকা। এইখানে আমার বন্ধু শোভনের নানা বাড়ী। সাত তলা সেই বিল্ডিং এর ছাদে কত আড্ডা,কত কিছু করছি হিসাব নাই। আমার সিট জানালার পাশে পড়ে নাই। তবুও উকি মাইরা দেখতে লাগলাম। যদি সেই বিল্ডিংখান দেখা যায়। নিকুঞ্জতে
অধিকাংশ বাড়ীই একই রকমের। তাই একবার মনে হইলো বাড়ীটা দেখছি। কিন্তু আবার মনে হয় এইডা অন্য বাড়ী। আকাশে উঠলে
মানুষ মনে হয় কনফিউশনে পইড়া যায়। সিল্টবেল্ট বান্ধা অবস্থায় আবারো মোবাইল চালু কইরা কানে হেডফোন দিয়া leonard cohen সাহেবের Blue Raincoat শুনতে শুনতে পারি জমাইলাম অজানায়।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১৫ রাত ৯:১০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×