গতকাল জুনের এক তারিখ ছিল আমার জন্মদিন, তবে সেটা আমার আসল জন্মদিন না, সার্টিফিকেটের জন্মদিন. গতকাল আমি যখন অফিসে বসে আছি তখন আমার গ্রুপমেট হঠাৎ করে আমাকে বলল "হ্যাপি বার্থডে". আমার আশ্চর্য হওয়া দেখে ও জিজ্ঞাসা করলো আজ তোমার বার্থডে না? আমিতো মোটামুটি আকাশ থেকে পড়লাম. পরে মনে হলো ও আজতো আমার সার্টিফিকেট বার্থডে. আমি বললাম হ্যাঁ, আজ আমার বার্থডে কিন্তু সেটা আসলে আমার সার্টিফিকেট বার্থডে, সত্যিকার বার্থডে না. পরে আমি ওকে বুঝলাম যে আমাদের দেশে অনেক সময়ই সার্টিফিকেটে সত্যিকার জন্মদিন থাকে না, চাকুরীর সুবিধার জন্য অনেকেই বয়স কমিয়ে দেয়। আর আমার ক্ষেত্রে আমাদের ক্লাসটিচার নিজের ইচ্ছা মত একটা তারিখ বসিয়ে দিয়েছি। আমার রেজিস্ট্রেশনের দিন আমি দেখি যে আমার জন্মদিন জুনের এক তারি। আমি আর কি বলব তখন..
জন্মতারিখ নিয়ে এই ভজঘট আমার একার না, আমাদের দেশে অনেকেরই আছে কেননা আমাদের দেশে বাধ্যতামূলক জন্মনিবন্ধন নেই। বিশ্বের অনেক দেশেই জন্মের পরপরই জন্মনিবদ্ধন করতে হয়। বাংলাদেশেও নিয়মটা আছে কিন্তু সেভাবে মানা হয় বলে মনে হয় না। তবে গত কয়েকবছর ধরে মনে হয় জন্মনিবদ্ধন ভালই হচ্ছে, আর মানুষও আগের চেয়ে কিছুটা সচেতন হয়েছে। কিন্তু এটা আসলে শহর এলাকার চিত্র, গ্রামাঞ্চলে এখনো ব্যাপারটা তেমন প্রসার পায়নি। এব্যাপারে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরী করতে হবে যাতে সবাই জন্মনিবদ্ধনে আগ্রহী হয়, পাশাপাশি সারা দেশের সব এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাতে জন্মনিবন্ধন করে এব্যবস্থাও রাখতে হবে কেননা আমাদের দেশে অনেকেরই ঘরেই বাচ্চার জন্ম হয় তখন তারা আবার হাসপাতালে গিয়ে জন্মনিবন্ধনে আগ্রহী হয় না।
গ্রেডিং পদ্ধতি চালু হবার পরে যখন সরকার নিয়ম করলো যে যাদের বয়স বেশি তারা ভর্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে (সমযোগ্যতাসম্পন্ন হলে) তখন আমার যারা বয়স কমিয়েছে তাদের জন্য মায়া লেগেছিল। তারাতো আর এটা জানতো না যে বয়স কমানোর জন্য ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারবে না। এই নিয়মটা এখনো চালু আছে। আমার কাছে অবশ্য এটাকে কোন ভাল নিয়ম বলে মনে হয় না। সমযোগ্যতাসম্পন্ন হলে যাচাই করার জন্য অনেক পদ্ধতি রয়েছে, বয়সের বিচারে ভর্তি এটা সবচেয়ে বাজে পদ্ধতি। আমাদের সময় ছিল ভর্তি পরীক্ষা, যেটা ছিল খুবই যন্ত্রনাদায়ক। আর কোচিংসেন্টারগুলোর দৌরাত্বও তখন ছিল দেখার মত। সেটা থেকে ছাত্রছাত্রীরা এখন কিছুটা হলেও মুক্ত যেটা অবশ্য বেশ বড় একটা প্রাপ্তি।
এবারো বরাবরের মত বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রী জিপিএ ৫ পেয়েছে কিন্তু দেশে যথেষ্ট পরিমাণে ভালো কলেজ নেই যেখানে এরা ভর্তি হতে পারে।যদি ঢাকার কথাই চিন্তা করি তাহলে ক'টা ভালো কলেজ আছে এখানে? ছেলেদের ভালো কলেজের মধ্যে ঢাকা কলেজ, নটরডেম কলেজ, সিটি কলেজ (কো-এড), রাইফেলস পাবলিক কলেজ (কো-এড), কমার্স কলেজ (কো-এড), ইম্পেরিয়াল কলেজ (কো-এড) এরকম হাতেগোনা কয়েকটা কলেজ আছে আর মেয়েদের কলেজের মধ্যে ভিকারুন্নিসা, হলিক্রস, আইডিয়াল কলেজ ইত্যাদি। পত্রিকায় পড়লাম, বিভিন্ন স্কুলের প্রধানশিক্ষকরা বলেছেন যে শিক্ষার মান যদি আসলেই ভালো হতো তাহলে যারা এসএসসিতে ভালো করেছে তারা এইচএসসিতেও ভালো রেজাল্ট করতো। আমার মনে হয়েছে কথাটা পুরোপুরি সঠিক না কেননা স্কুল পর্যায়ে একজন স্টুডেন্ট যেরকম যত্ন পায়, ভালো কলেজ না হলে কলেজ পর্যায়ে সেরকম পরিচর্যা সে পায় না। ভালো রেজাল্ট করার জন্য স্টুডেন্টের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরও একটা ভূমিকা আছে। আমার কলেজ ছিল নটরডেম কলেজ, কলেজে প্রতি সপ্তাহে দুইদিন কুইজ ছিল যেটা বাধ্যতামূলক। তখন মনে হতো কি লাভ হচ্ছে এসব দিয়ে কিন্তু এখন বুঝি সেগুলো আসলে দরকার ছিল। কিন্তু ঢাকারই অনেক কলেজে এরকম কোন সাপ্তাহিক পরীক্ষাতো দূরের কথা ষান্মাসিক/বাৎসরিক পরীক্ষাটাও ঠিকমত হয়না, তাহলে সেখানকার স্টুডেন্টরা কিভাবে ভালো করবে?! এসএসসির ফলাফল এইচএসসিতেও পেতে হলে আগে যথেষ্ঠসংখ্যক ভালো কলেজ করতে হবে, ভালো শিক্ষক লাগবে। তারপরেও হয়তো এসএসসির মতো এত ভালো রেজাল্ট হবে না কেননা আমার মনে হয় এইচএসসির সিলেবাস এসএসসির তুলনায় অনেক বড় আর সময়ও তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
লেখাপড়ার মান বাড়ছে কিনা সেব্যাপারে আমার অবশ্য সন্দেহ আছে। দুই বছর আগে যখন আমি দেশে ছিলাম তখনই আমাদের স্কুলের স্যারের কাছে শুনেছি যে বোর্ডের থেকে নির্দেশ আছে খাতা উদারভাবে দেখতে হবে, আর ২৫ পেলেই সেটা ৩৩ করে দিতে হবে। এগুলো ছিল লিখিত আর মৌখিকভাবে বলা ছিল ২২-২৩ পেলেই যাতে পাশ করিয়ে দেয়। একইভাবে এ প্লাসের ক্ষেত্রেও ৫-৭ নম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে বলা হয়েছিল। সেদিন পত্রিকায় দেখলাম এব্যাপারে দুইজন পরীক্ষকের মধ্যকার টেলিফোন কথপোকথন দিয়ে দিয়েছে। এ ব্যাপারটা খুবই উদ্বেগজনক। এতে করে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ভালোভাবে পড়ার/জানার স্পৃহাটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। দেশে এখন বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রী ভালো রেজাল্ট করছে এটা অবশ্যই খুব ভালো একটা দিক কিন্তু এই ভালো রেজাল্টের যাচাই প্রক্রিয়াটা যাতে সন্দেহের তীরে বিদ্ধ না হয় সেজন্য সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে। তাহলেই আমরা বলতে পারবো যে আমাদের শিক্ষার মান ভালো হচ্ছে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




