বাসা থেকেই বের হয়েই বুঝলাম বিরাট ভুল করেছি। সকালের তাড়াহুড়ায় ওয়েদার চেক করতে ভুলে গেছি। আর কানাডায় ওয়েদার চেক না করে ঘর থেকে বের হওয়া মানে প্রথম শ্রেনীর বোকামী। সবই ঠিক আছে, কয়েক কেজি ওজনের উইন্টার প্রুফ জ্যাকেট, দুই প্রস্তর টাইটস্, হাত মোজা, মাইনাস ২০ এর স্নো বুট পড়েই এসেছি। কিন্তু মাইনাস ৪০ টা পড়ার দরকার ছিল। মোটা মাফলার বা চাদর সাথে দ্বিতীয় প্রস্তর হাত মোজা আনা দরকার ছিল। এখানে একে সিজনে একেক ড্রেস বা জুতা পড়তে হয়। সামারেতো এমন গরম যে ঢাকার কথা মনে হয় আবার ফলে হালকা শীত ঢাকার মতো কিন্তু ইউন্টারে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। একটা দিয়ে বছর পার করা অসম্ভব। এখন আবার বাসায় ফিরে যাওয়া মানে এই বাসটা মিস করা, তারমানে আরো ১৫ মিনিট অফিস লেইট। এমনিতেই সকাল টাইম এ থাকে কঠিন তাড়াহুড়া, প্রতিটি মিনিট গুনে বের হই। এক মিনিট এদিক সেদিক হবার জো নেই। নাহ্ কোনরকমে চালিয়ে নিবো বলে রওনা দিলাম। কিছুক্ষন পরেই বুঝলাম দ্বিতীয় ভুলটা করলাম। কারন বাসে উঠে ওয়েদার ফোরকাস্ট চেক করে দেখি এখন মাইনাস ৩০ এবং সন্ধ্যায় তা মাইনাস ৪০ এর উপর যাবে সাথে উইন্ড ও বৃষ্টি । এমনিতে মাইনাস ৪০ তেমন কিছু না কিন্তু উইন্ড ও বৃষ্টি থাকলে খবর আছে কারন তা প্রায় ফ্রিজিং রেইন তৈরী হয়। আর ফ্রিজিং রেইন যে কঠিন জিনিস তার মধ্যে না গেলে বোঝা যায় না। একটু উল্টা পাল্টা হলেই হাত পা পুরোপুরি অবশ, কোন সেন্স থাকে না।
কানাডার ওয়েদার এক্সট্রিম তা সবাই জানি কিন্তু এটাও সত্য যে আমরা যারা এখানে এ ওয়েদারে থাকি তাদের জন্য কোন বড় ব্যাপার না। যদিও দেশের প্লাস ৪০ ডিগ্রি গরমে অভ্যস্থ মাইনাস ৪০ শুনলে মাথা ঘুরে যায় কিন্তু সত্যিই আমাদের তেমন কোন সমস্যা হয় না। কারন বাইরে বের হলে প্রপার ড্রেস আপ করে বের হই আর ঘরে হিটিং সিস্টেম, বাড়ি ঘরে ইনসুলেশান এর কারনে কোন ঝামেলাই হয় না ঠান্ডায়। যাই হোক অফিসে কোনরকমে পৈাছে দিন পার করলাম কিন্তু অফিস থেকে বের হয়ে টের পেলাম কত ধানে কত চাল। সব কিছুই ঢেকে ও কাঁপতে কাঁপতে সাব ওয়েতে ঢুকলাম। জাস্ট বাসের জন্য দাঁড়ালাম ৪ মিনিট কিন্তু মনে হলো আমি অনন্ত কাল ধরে বাসের অপেক্ষায় আছি। হাতগুলো পকেটে ঢুকিয়ে ও রক্ষা নেই, পা কি সাথে আছে কি নেই বুঝতে পারছিলাম না। চোখগুলো শুধু খোলা ছিল, বাতাস আর বরফের ধাক্কায় ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, হাতড়ে আগে সানগ্লাস বের করলাম। এই যাত্রার পর আর ওয়েদার না দেখে বের হবো না, কান ধরছি দশবার......... কিন্তু এই ভুল প্রায়ই করে থাকি.......হাহাহাহাহা বিড়ম্বনা কাহাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি?
এইতো গেলো গাড়ি বের না করে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ইউজের সমস্যা। আর যদি সারা রাত স্নো হয় আর সকালে গাড়ি বের করে অফিস করার চিন্তা থাকে তাহলে আরেক দফা মরেছেন। কয়েক ইঞ্চি বরফ সরিয়ে গাড়ি পরিস্কার করলেন না হয় বুঝলাম কিন্তু গ্যারেজ থেকে রাস্তায় বের করা পর্যন্ত বরফটা আপনাকেই পরিস্কার করতে হবে। এটা বাংলাদেশ না যে ১০০ টাকা ধরাবেন আর ঝকঝকে বাড়ির রাস্তা পাবেন, তার কোন উপায়ই নেই। এরপর কানাডিয়ান ল যে আপনাকেই আপনার এরিয়া সহ ফুটপাথ পরিস্কার করতে হবে। তা না করলে সোজা টিকেট........। তবে রাস্তার দায়িত্ব সরকারের এবং সেটা তারা প্রতি মূহুর্তে করে। আপনার বাড়ির রাস্তা আপনাকেই ঠিক রাখতে হবে যাতে পথচারী কোন ঝামেলায় না পরে।
যাই হোক লিখাটা লিখলাম এ কারনে যে দেশে নাকি মারাত্বক শীত। কিন্তু কথা হলো দেশে ২-৫ তাপমাত্রায় সবার ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা কেন হয়? কারন খুব সোজা, যে কাপড় আমরা দেশে পড়ি তা দিয়ে ৮-১০ ডিগ্রি কাভার করে এর উপর না। যে বাসায় আমরা থাকি তাতে ঠান্ডা প্রটেকশানের কোনই ব্যবস্থা নেই। আর হিটিং তো স্বপ্নের কথা। অার যাদের এর মিনিমামটুকু ও নেই তাদের কষ্ট যে কি তা একমাত্র সে মানুষটিই বুঝে।
বাংলাদেশের মতো ও কানাডায় অনেক হোমলেস মানুষ থাকে যারা রাস্তায় ঘুমায়, আমারো প্রশ্ন ছিল তারা এ বরফে কি করে? হাঁ, তাদের কোন সমস্যাই হয় না কারন???? সরকার ও বিভিন্ন এনজিও তাদেরকে ধরে বিভিন্ন সেল্টার সেন্টারে রাখে। শীতকালীন সময়ে তাদের থাকা, খাওয়া সহ সব কিছুই সরকার বহন করে। আহ্ মনে হয় এমন কিছু যদি দেশে থাকতো, শুধু একটু উষ্নতা দেয়া যেত এই সময়ে।
-
-
-
--
আর যাবার আগে ইভানকা ট্রাম্পের তৈরী শীতের পোষাকের একটা নমুনা দেখে যান। কানাডা ইভানকার ড্রেস বয়কট করেছিল বহুদিন, এখন স্বল্প পরিসরে আনছে হার্ডসন বে, কানাডার দামী চেইন শপের একটি।
প্রথমেই ইভানকার ছবিটি দেখে যারা ভড়কে যেয়ে লিখার সাথে মিল খোঁজার চেস্টা করছেন তাদের জন্য নীচের দুটি ছবি সহ লিখার এ অংশটুকু।।
......... সবাই ভালো এবং সুস্থ থাকুন এ শীতে।
ছবি কৃতজ্ঞতা: অামার তোলা সাথে গুগল মামার.........
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ৮:৩৪