অফিসে রীতিমত দৈাড়রে উপর আছি এমন সময় মেসেন্জারে ফোন। সাধারনত মেসেন্জারে তার উপর অফিস টাইমে ফোন পেলে একটু টেনশানে ভুগী কারন দেশের সবাই রাতে বা উইকএন্ডে ফোন দেয়, দুপুরে অফিস টাইমে না। ভয়ে ভয়ে ফোন খুলে দেখি আমার বান্ধবী। হঠাৎ কি হলো খুব টেনশানে ফোন ধরতেই বললো, " এই শোন, অনেকগুলো ছবি পোস্ট করেছি। এখনি কমেন্টস্ কর আর লাইক দে.... ।"
কথা হচ্ছিল ফেইসবুক নিয়ে। মানে হাল আমলের জীবনের অবিচ্ছেদ অংশ ফেইসবুক নিয়ে। ফেইসবুক আমাদেরকে শিল্পী বানিয়েছে, কবি বানিয়েছে, গল্পকার বানিয়েছে, চিত্রশিল্পী বানিয়েছে.... কিছু না হলে একজন ফটোগ্রাফার বানিয়েছে! সহজ কথায় আমাদের যাবতীয় প্রতিভার প্রকাশের স্থান হিসেবে ফেইসবুক সবার মনে জায়গা করে নিয়েছে। তাই বলে নিজের প্রতিভা!!! উহু, নিজের ঘটে কিছু নাইতো কি হয়েছে!!!! অন্যের প্রতিভাও নিজের নামে চালিয়ে দেবার মহান স্থান হিসেবে ও জায়গা করে নিয়েছে বলে খবরে প্রকাশ। এমন কি কেউ কেউ কয়েক ধাপ এগিয়ে..... তারা অন্যের লিখা দিয়ে বই ও প্রকাশের খবর ইথারে বাতাসে জানা যায়।
শুধু তাই নয়, নিজের মনের দু:খ-কষ্ট-আনন্দ-হতাশা-নিজের ঢোল পিটানো-অন্যের ঢোল ফাঁটানো সব বন্দোবস্তই আমরা এখানে করার ব্যবস্থা করেছি। জুকারবাগ অব্যশই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্যতা রাখে, নতুবা আমাদের যে এতো প্রতিভা আছে তা কোনভাবে জানতেই পারতাম না। তবে এ ঢোল পিটানো বা ঢোল ফাঁটানোয় আমরা রীতিমত শিল্প গড়ে তুলছি। এবং এ চর্চায় আমরা পুরোপুরি ভুলে গেছি যে "প্রাইভেসী" নামক একটি শব্দ ডিকশেনারীর কোন এক কোনায় ঘুপচিতে বসে আছে ।
যখন তখন যেকোন স্থানের ছবি তুলে রীতিমত পোস্টের মহোৎসব চলে। ওই ছবিতে কে আসলো বা গেলো তাতে কারো কিছু যায় আসে না। এইতো সেদিন আমার বান্ধবীর সংসার রীতিমত ভাঙ্গার অবস্থা। ঘটনাটা এমন..... প্রতিদিনের মতো অফিসে করতে করতেই বউ এর ফোন এবং রীতিমত তর্জন গর্জন সহ জেরা। বান্ধবীতো হতভম্ব!! আরে কি হয়েছে সেটার কোন ব্যাখ্যা নেই কিন্তু স্বামীজীর বুলডোজার চলতেই থাকলো। ""কার সাথে পরকীয়া করো? অফিসের নাম করে কোথায় যাও? তোমার মতো এমন কুৎসিত চরিত্রহীনা মহিলার সাথে এতোটা বছর কাটিয়েছি, ছি: ভাবতেই নিজের উপর ঘৃনা হচ্ছে।"" আমার বান্ধবী বেচারীতো পড়ি কি মরি করি অফিস মিটিং সব ফেলে স্বামীর কাছে ছুট...।
কি হয়েছে জানতেই তার হার্টফেল করার অবস্থা। স্বামী তাকে দেখালো যে তার এক ফেইসবুক ফ্রেন্ড তার প্রেমিকা বলে তার স্ত্রীর ছবি পোস্ট করেছে। এ বলে তার স্বামী সে ছবি খুলে দেখালো। তা দেখে আমার বান্ধবীর হার্টে একসাথেই কয়েকটা ব্লক দেখা দিলো। তারপর সে ছবি কঠিন বিশ্লেষন করে দেখলো যে গত কয়েকদিন আগে ম্যারিজ ডে উপলক্ষে সেজেগুজে আশুলিয়া গিয়েছিল স্বামীর সাথে। সেখানেই কোন এক ফাকেঁ কেউ তার ছবি তুলেছে। তারপর স্বামীকে সে ব্যাখ্যা মানানো কত যে কঠিন তা একমাত্র শিব জানলেও জানতে পারে.....।
অনেকে শুধু ছবি পোস্ট করেই ক্ষান্ত নয়। কে লাইক দিলো, কে দিলো না, কেন দিলো না, কমেন্ট তা মনের মতো হলো না তা নিয়ে রীতিমত কঠিন গবেষনা ও পরিশেষে মনোমালিন্য। ফেইসবুকে সবাই নিজেকে প্রিয়ংকা চোপড়া ভাবে। যেন তার ছবি দেয়া মাত্রই সবাই নাওয়া খাওয়া ভুলে ঝাঁপিয়ে পড়বে, আহ উহ্ করে দিন পার করবে। ছবি পোস্ট করেছে আর সেখানে তাকে দেখা যাচ্ছে কাক তাঁড়ুয়ার মতো, কিন্তু না তোমাকে বলতে হবে আজ্ কি সুন্দর যে লাগছে আপুনি... । আর তা না করলে ব্লক খাবেন, মাইন্ড খাবে, ডিজিটাল হিংসা বলে বিশাল একখান পোস্ট দিবে........... ইত্যাদি ইত্যাদি ।
এতো গেল ছবির ব্যাখ্যা আরো আছে......। কাউকে পছন্দ নয় বা কারো সাথে মনোমালিন্য হয়েছে..... সোজা পোস্ট করে দাও সত্য মিথ্যা মিলিয়ে বিশাল এক পাবলিক পোস্ট। তারপর সে ব্যাক্তির বারোটা থেকে তেরোটা বাজতে বেশী বাকি থাকবে না। কারন অর্ধেক তোমাকে বিশ্বাস করবে বাকি অর্ধেক কিছুটা করবে আর বাকিরা পুরোপুরি না করলেও সে ব্যাক্তিকে ভবিষ্যত সন্দেহের তালিকায় রাখবে, এইটা নিশ্চিত। আর তােমার ফুলের মতো চরিত্রকে আবার ফিরিয়ে আনতে পারবে কিনা সেটা একটা বিরাট রহস্য কর্ম।
তারপর আরো আছে??? মনের সুখে নিজের মনের কথা বলবেন??? উহুঁ, হবে না। আমার পছন্দের পলিটিকেল চিন্তা ভাবনার বাইরে কোন কথায়ই বলা যাবে না। এইটা দেশের এখন স্বৈরাতান্ত্রিক অধিকার। তুমি কিছু বলেছো তো মরেছো.... সোজা টর্চার সেন্টারে। যদি বেচেঁ থাকো তাহলে জীবনেও ফেইসবুকের নাম নিবা না আর মরে গেলেতো লে হালুয়া। তোমর বাবা মাই শুধু জীবন ভর কাঁদবে এ ধাক্কায়। আর ওরা!!!!!!!!!!!! তখন রামলীলা ছবি দেখে নাচতে ব্যাস্ত থাকবে ... লাহু মে লাগগিয়া।
ওম শান্তি!
ছবি ক্রেডিট গুগল মামা!!!!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:২৪