বলেন তো, এই মূহুর্তে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা কি? একটু ভেবে বলুনতো?
দূর্নীতি? বিচারহীনতা? দ্রব্যমূল্য? জনসংখ্যা? বেকারত্ব?
না হয়নি, উপরের কোনটাই দেশের বর্তমান সময়ের প্রধান সমস্যা নয় আমার মতে। তাহলে? হাঁ, এই মূহুর্তে দেশের প্রধান সমস্যা হলো সঠিক শিক্ষা। তার মানে কি?? কিভাবে? আসুন তাহলে জেনে নেই একটু!
একটি সন্তান জন্মানের পরপরই মুখের কথার প্রথম বোল ফুটতেই বাবা মায়ের টেনশান শুরু হয় স্কুলে নিয়ে। কোথায় পড়বে, কোন স্কুলে চান্স পাবে। তারপর স্কুলে ভর্তি নামক যাঁতাকলে তাকে ঢুকানো হয়। মুখে বোল ফোটার আগেই এ বি সি ডি শিখতে শুরু করে। ইংরেজী বাংলা ছড়ার মুখস্থ করা সহ, যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ, ইতিহাস, ভুগোল, বিজ্ঞান, সাধারন জ্ঞান......... এমন কোন বিদ্যা নেই তাকে শেখানোর প্রতিযোগীতা শুরু করা হয় না। তারপর?
একটু আদটু হাটাচলা করে পিঠে বইয়ের বোঝা কাধেঁ নিয়ে স্কুলে ঢুকতে না ঢুকতেই ভর্তি করানো হয় কোচিং সেন্টার নামক টর্চার সেলে। বিশাল বিশাল অংক ইংরেজী বিজ্ঞান তাকে মুখস্থ করানো হয় দিনের পর দিন। খেলা কি জিনিস, শৈশব কি জিনিস, আনন্দ কি জিনিস শিশুটি জানে না।
এরপর? যদি ভাগ্যক্রমে কোন কাংখিত স্কুলে টিকে যায় তাহলে এক টর্চার সেল থেকে নতুন টর্চার সেলে ট্রান্সার হয়। আর যদি কোন স্কুলে না টিকে তাহলে কোন কোন বাব-মা দূর্নীতির আশ্রয় নেন ভর্তির করানোর জন্য। এ কোমলমতি শিশুটির মস্তিষ্কে প্রথম দূর্নীতির বিজটি বোপন হয়ে যায়। তারপর?
স্কুল নামক এ জেলখানায় শিশুটি দিন কাটায় যেখানে নাই কোন আনন্দ, নাই কোন ভালোলাগা, আর আছে কঠিন মুখের কিছু শিক্ষক শিক্ষিকা। যারা নিজেদের পরিবার পরিবেশ নিয়ে অসহনীয় অবস্থায় নিরানন্দ জীবন কাটায়। তাই এই নিরানন্দ জীবন থেকে কোন আনন্দ শিশুদের সাথে ভাগ করতে পারে না। তাদের জীবনেই কোন আনন্দ নেই সেখানে অন্যের জীবনে আনন্দ দিবে কিভাবে?
আর এভাবে শিশুটি এরকম নিরানান্দ পরিবেশে বেড়ে উঠে যেখানে মায়া, মমতা, ভালোবাসা বলে কোন কিছুই বলতে গেলে নেই। আরো আছে, পরিবারে? না সেখানে ও কোন আনন্দ নেই। কারন শিশুকাল থেকেই সে দেখে আসছে এ কঠিন বাস্তবতায়। বাবা মা যদি সৎ হয় তাহলে সে অভাব অনটনের রুপ দেখে দেখে বড় হবে। আর বড় হয়ে দস্যু বনহুর বা রবিনহুড হয়ে সকলের সম্পদ কেড়ে নেবার কথা ভাববে। আদর্শ, ভালোবাসা, স্নেহ, ন্যায়, সৎ... এসব শিক্ষা সে খুব কমই পাবে।
আর বাবা মা যদি অসৎ তাহলে শিশুটি জানবে এটাই নিয়ম। অন্যের সম্পদ কেড়ে নেয়াই ন্যায় নীতি, সেটাই সত্য......... মানবতা বলে কোন শব্দ সে শিখবে না। ক্ষমতার অপব্যববহার, হিংস্রতা, দূর্নীতিই সে শিখবে।
আচ্ছা বলুনতো, স্কুলে কি এখন সে বিদ্যাসাগরের আদর্শলিপি শিক্ষা দেয়া হয়? সেই যে আমরা ছোটবেলায় পড়তাম, সদা সত্য কথা বলবে, মিথা বলা মহা পাপ, গুরুজনে করোনতি, সৎ চরিত্র মূল্যবান সম্পদ। ...... শুনিনি যে কোথাও তা শেখানো হয়।
এখন বলুন, একটি বাচ্চাকে আপনি কোন শিক্ষা দিবেন না, কোন আনন্দা দিবেন না, ন্যায়-অন্যায় শেখাবেন না তাহলে কি সে সব কিছু ইউটিউব ঘেটে আদর্শমালা শিখবে নাকি ইশ্বর তাকে অটো শেখাবে!!! "যা বাছা তুই সব শিখে যা...."।
না তা হবার নয়, কোনভাবেই হবার নয়। আর সে কারনেইতো আজকের তরুন সমাজ এতো হিংস্র হয়ে উঠেছে। তারা জানে না মানবতা কি? ন্যায় কি? তারা শুধু জানে, জীবনকে ভোগ করতে লাগবে টাকা আর টাকা আসতে হবে যেকোন উপায়ে। আর সে কারনেই নিজের বন্ধুকে মেরে ফেলতে তাদের একটুও হাত কাপেঁ না। রড দিয়ে পিটানোতে তারা আরো গর্ববোধ করে। কারন তাদের মধ্যে মনুষত্ব পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। তারা মানুষ নামের দানবে পরিনত হয়েছে। শুধু একটি জায়গায়ই নয়, সবখানেই এ চিত্র।
এখনো সময় আছে, আমাদের সন্তানদের বাচাঁতে হবে। ওরাই আমাদের ভবিষ্যত, দেশকে পরিচালনা করবে, দেশের অর্থনীতির ভীত গড়বে, ভবিষ্যত নোবেল বিজয়ী হবে...........ওরাই সব কিছু।
উন্নত দেশের সাথে কোনভাবেই তুলনা করতে চাই না, কিন্তু উদাহরনগুলো কিছুটা হলেও দরকার বোঝার জন্য। ইউরোপ আমেরিকার মতো দেশে শিশুদেরকে কখনই কোন বই দেয়া হয় না। ওরা বাস্তব জীবন থেকে শিখে। ওদেরকে নিয়ে টিচার বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়ায়, প্রকৃতি শেখায়, ট্রেনে বাসে চড়ে শহর ঘুরে বেড়ায় আর যেতে যেতে অংক শেখায়, ভুগোল শেখায়, বিজ্ঞান শেখায়। বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশগ্রহন করে মানবতা শেখায়। একটা পোকা ও মারতে দেয় না, একটা ফুল ও ছিঁড়তে দেয় না। কোনটা ন্যায়, কোনটা অন্যায়, সত্য বলা, অপরকে সন্মান করা............। এসব নীতির শিক্ষা দেয়া হয়। ওরা বলে আগে মনুষত্ব তৈরী করতে হবে তারপর বই এর পড়া এমনিতেই শিখবে।
আবারো বলি, আমি কোনভাবেই দেশের সাথে তুলনা করি না। সে সম্পদ আমাদের নেই। কিন্তু স্কুল পাঠ্যক্রম থেকে মানুষ হবার সে মন্ত্রগুলো কেন দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে? কেন আমরা শিশুদের অমানুষ তৈরী পথে ঠেলে দিচ্ছি?
সকলে ভালো থাকুন। সত্যিকারের মানুষ হয়ে উঠুন।
পুরোনো একটা লিখা শেয়ার দিলাম।
একটি বিজ্ঞান বক্স, শিশু শিক্ষার সেতুবন্ধন- স্বদেশ এবং বিদেশ
ছবি: গুগল মামা।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২৩ ভোর ৫:১৫