somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সোহানী
হাজার হাজার অসাধারন লেখক+ব্লগারের মাঝে আমি এক ক্ষুদ্র ব্লগার। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া লেখালেখির গুণটা চালিয়ে যাচ্ছি ব্লগ লিখে। যখন যা দেখি, যা মনে দাগ কাটে তা লিখি এই ব্লগে। আমার ফেসবুক এড্রেস: https://www.facebook.com/sohani2018/

জীবন যেখানে যেমন.......... পথ চলতে চলতে

১১ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১০:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কানাডায় অফিস পাড়ায় পার্কিং এরিয়ায় গাড়ি রাখা মানে বিশাল ঝামেলা এবং কস্টলি। যেখানে মাত্র সাত ডলার দিয়ে আসা যাওয়া সহ সারা শহরের এ মাথা থেকে ও মাথা ঘোরা যায় ট্রেন বা বাসে সেখানে ডেইলি ১০-২০ ডলার শুধু পার্কিং কষ্ট দেয়াটা আমার কাছে বিলাশিতা মনে হয়। তাই পারতপক্ষে গাড়ি নিয়ে বের হতে পছন্দ করি না ডাইন টাউনের দিকে। আমার বরাবরেই পছন্দ ট্রেন জার্নি। বাসে বা ট্রেনে গেলে মানুষ সম্পর্কে জানা যায়, দেখা যায়.... নতুন কিছু বোঝা যায়। যা আমার খুব ভালো লাগে। মানুষের জীবন আমি যতবেশী দেখবো ততবেশী জানবো ও নিজেকে ততবেশী বুঝতে পারবো এবং আমার লিখালিখি ততবেশী পরিপক্কতা অর্জন করবে বলে বিশ্বাস করি।

সাধারনত ৫/৬ মিনিট লাগে আমার বাসা থেকে বাসে করে সাবওয়েতে যেতে। আমার বাসার ঠিক পরের স্টপেজেই একটা হাই স্কুল আছে। স্কুল ছুটির পর সবাই হুড়মুড় করে বাসে উঠে। কানাডায় গ্রেড নাইন থেকে টুয়েল্ভ পর্যন্ত হাই স্কুল। গ্রেড এইট পর্যন্ত সাধারনত বাসার পাশের হোম স্কুলে পড়ে বাচ্চারা এবং নাইন থেকে হাই স্কুল। একমাত্র হাই স্কুলেই স্কুলের নির্ধারিত পোষাক আছে তবে সব হাই স্কুলে নয়। প্রাইমারি বা মিডল স্কুলে তা নেই। এখানে কিন্তু হাই স্কুল মানে স্বাধীনতা, অনেকটা দেশের কলেজের মতো তেমন কড়াকড়ি নেই। যার ইচ্ছে ক্লাস করো না করলে নেই। তবে প্রতিদিনই পেরেন্টস্ এর কাছে রিপোর্ট যায় বাচ্চা স্কুলে অনুপস্থিত থাকলে। এই একটি নিয়মই কড়াকড়ি। মিডল স্কুলের কড়া শাসনের পর হাই স্কুল মানে স্বাধীনতা। স্কুল ছুটির পর হইচই করতে করতে টিন এইজ এর ছেলে মেয়েগুলো উঠে আসে বাসে, দেখতে খুব ভালো লাগে। বিশেষ করে এখানে কেউই তেমন রাস্তায় কথা বলে না কিন্তু বাচ্চাগুলো এমন কিচির মিচির করতে করতে পুরো বাসই গরম করে ফেলে। আমি সবসময়ই খুব আগ্রহ নিয়ে ওদেরকে দেখি, ওদের আচার আচরন দেখি, ওদের কথা বোঝার চেস্টা করি। যদিও খুব দূরহ কাজ কারন ওদের সে স্পিডি এ্যাক্সেন্ট বোঝা আমার জন্য কষ্টকর বটে।

এ সময়টুকুতে সাধারনত আমি দাড়িয়েই থাকি বাসে। কিন্তু আজ বাসে উঠেই সত্যিই মেজাজটা একটু খারাপই হলো। এখানে বাসের প্রথম দুই সারি বৃদ্ধ বা হুইল চেয়ারের জন্য বরাদ্ধ থাকে। কেউ বসলেও বৃদ্ধ-বৃদ্ধা দেখলে সীট ছেড়ে দেয়। পিক আওয়ার বলে অনেক ভীড় এবং সে হাই স্কুলেই স্কুলের ছেলে মেয়েগুলো বাসের সামনের পুরো জায়গাই দখল করে আছে ও সংরক্ষিত সীটগুলোও। কাউকে সীট ছাড়ার জন্য ও উঠে দাঁড়াতে দেখলাম না। যেটা কানাডায় বিরল কারন সাধারনত বৃদ্ধ-বৃদ্ধা দেখলে সবাই উঠে সীট ছেড়ে দেয়। ২/৩ জন বৃদ্ধকে দেখলাম অনেক কস্টে ভীড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। যাত্রীরা কেউই সামনের দরজা দিয়ে উঠতে পারছে না। ড্রাইভার বার বার মুভ বেক বলছে কিন্তু ওদের কারো কানে যাচ্ছে কিনা সন্দেহ। কিন্তু কেউই কিছুই বলছে না সে টিনএজ গ্রুপকে। এখানে সত্যিই কেউই কাউকে কিছু বলে না, যে যার মতো করে চলে।

আমি তাদেরকে অবজার্ভ করতে লাগলাম। শুধু হইচই না, একটি ছেলেকে দেখলাম সীটে বসা একটি মেয়েকে টেনে সরিয়ে নিজে বসলো ও তার কোলের উপর মেয়েটিকে বসালো। তারপর হইচই করতে করতে তিনজনের সীটে ছয়জন বসলো। মেয়েটির পড়নে ছিল সে রকম ছেঁড়া ফাঁড়া প্যান্ট (বেচারা !!। এই ছেঁড়া ফাড়া প্যান্ট এর ফ্যাশান যে কে আবিস্কার করেছে.... আল্লাহ মালুম। কি ধরনের সৈান্দর্য্য যে আছে এ ছেঁড়া ফাঁড়া প্যান্ট পড়াতে বা কি ধরনের উপকারিতা পাওয়া যায় এখনো বুঝতে পারি নাই। শুধু এতটুকু বলা যায় গরমকালে কিছু ফ্রেস এয়ার পায়ের বিভিন্ন অংশে লাগে এই যা!!!!) ;) :P । আর ছেলেটি বারবার মেয়েটির সে ছেড়া অংশে হাত বোলাতে লাগলো। একজন টিনএজ বয়সের ছেলের মা হিসেবে আমার কাছে যারপরনাই বিরক্তি লাগছিল। এবং আমি স্পষ্ট বিরক্ত হয়েই তাদের সামনে দাড়িঁয়েছিলাম। যদিও কানাডার মতো দেশে আমার এ আচরন সম্পূর্ণ অনৈতিক কিন্তু বাঙ্গালী মানসিকতা আমাকে বার বার ধাক্কা দিচ্ছিল। তরুন তরুনীরা এরকম আচরন পথে করলে আমি পাত্তা দেই না। ওরা পূর্ণ বয়স্ক, যা করছে তার দায়ভার তাদের। কিন্তু এরকম ১২/১৩ বছরের বাচ্চাদেরকে দেখলে মেজাজই খারাপ হয়ে যায়।

কিছুক্ষন পর খেয়াল করলাম ২/৩ টা ছেলে একটু ফিসফিস করে কথা বলছে ও আমার দিকে তাকাচ্ছে। হঠাৎ ই একটি ছেলে আমাকে জিজ্ঞেস করলো তোমার স্কার্ফটা কোথা থেকে কিনেছো? আমি তর প্রশ্ন শুনে অবাক হলেও উত্তর দিলাম, হাডসন বে থেকে। সাথে সাথে ওই গ্রুপের একটি কালো ছেলে আমার এ্যাক্সেন্ট শুনে বলে উঠলো, ফাকিং ইন্ডিয়ান। মাথায় রক্ত উঠে গেল, কি বলছো তুমি আবার বলো? এই বলে ফোনের ভিডিও অন করে দিলাম ও ছেলেটির মুখোমুখি দাড়াঁলাম। সাথে সাথে পাশের ছেলেটি আমাদের দু'জনের মাঝে এসে সরি বলে ছেলেটিকে ধাক্কা দিল ও ছেলেটিকে বলতে লাগলো, ও ভিডিও করছে। কিন্তু কিছু বলতে বলতেই আমার স্টপেজ এসে পড়লো আর ব্যাপারটা নিয়ে বেশী ঝামেলা না করে নেমে পড়লাম।

ছবি: গুগল মামা
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১০:১৮
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×