somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সোহানী
হাজার হাজার অসাধারন লেখক+ব্লগারের মাঝে আমি এক ক্ষুদ্র ব্লগার। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া লেখালেখির গুণটা চালিয়ে যাচ্ছি ব্লগ লিখে। যখন যা দেখি, যা মনে দাগ কাটে তা লিখি এই ব্লগে। আমার ফেসবুক এড্রেস: https://www.facebook.com/sohani2018/

বাচ্চা ভয়ংকর কাচ্চা ভয়ংকর......... পার্ট টু

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



করোনাতে সবাই গৃহবন্দী। তাই একটু ভিন্ন লিখা নিয়ে আসলাম সবার জন্য!!

আমার বোনের ৮/৯ বছরের ছেলে ছিল মহা বিজ্ঞানী। ওর এক একটা এক্সপেরিমেন্ট এর কাহিনীর মানে হলো নিজেরটা সহ সবার জীবনটা মোটামুটি অল্পের জন্য বেচেঁ যাওয়। ক্লাস ফোরএ পড়ে সে। ক্লাসে সবে মাত্র বিদ্যুৎ নিয়ে শেখাচ্ছে। পজিটিভ নেগেটিভ বিদ্যুৎ। যাহোক তার মাথায় কি খেলা করেছিল কে জানে, কিভাবে যেন দুটি তার জোগাড় করলো তারপর তা প্লাগ পয়েন্টে ঢুকিয়ে দিল সে। মূহর্তেই সে ছিটকে পড়ে বাসার ফিউজ কেটে গেল। সে কিভাবে বেচেঁ গেল সেটা একটা রহস্য।

তার দাদী একবার তার বাসায় এলো শীতের দিনে। এতো দুস্টুমি করে বলে তার দাদী মাঝে মাঝে একটু আকটু ধমক দিয়ে শাসনের চেস্টা করতো। আর সে ও চেস্টা করতো কিভাবে দাদীকে নাকানী চুবানী খাওয়াবে। প্রায় দাদী যখন নামাজে দাড়াঁতো তখন সে একগাদা বরফ এনে দাদীর মোটা সোয়েটারের মধ্যে ঢেলে দিতো কিংবা দাদীর সুপারীর সাথে পাথর মিশিয়ে দিতো। এরকম বহু যন্ত্রনায় অতীষ্ঠ হয়ে অবশেষে উনি পালাতেন।

আমার মায়ের বাসায় এলে তাকে মোটামুটি একজন এ্যাসিসটেন্টকে সার্বক্ষনিক পাহাড়ায় রাখা হতো। একবার কি হলো দুপুরে সে শুয়ে আছে দেখে সব এ্যাসিসটেন্টরা সবাই মিলে বাংলা ছবি দেখতে বসলো। হঠাৎ মা ঘুম থেকে উঠে কোথাও বর্ণ কে না দেখে খুঁজতে শুরু করলো। তখনই সবার টনক নড়লো ও বিছানায় নেই। সবার ছোটাছুটি শুরু হলো ও কোথায় কোথায়??? তারপর আবিষ্কৃত হলো সে ছাদের এক কোনায় আম্মুর ব্লেন্ডার, টোস্টার, জুসার নিয়ে ছাদে কোনায় পড়ে থাকা কাঠের যাবতীয় টুকরো ব্লেন্ডার/জুস/টোস্টারে ঢুকিয়ে কিছু একটা বানানোর চেস্টা করছে। এবং প্রথম দিকে সফল হলেও পরের দিকে সবগুলোর ব্লেড বাকাঁ হয়ে যাওয়াতে কাঠের জুস/টোস্ট তৈরী হচ্ছিল না। সে কারনে সে সেগুলো খুলে তা মেরামতের চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছিল B:-) B:-)

কক্সবাজারে যখন আমরা ছিলাম তখন আমার ভাইয়ের বয়স ছিল প্রায় তিন/চার বছর। দোতালা বিল্ডিং এর উপরে ছিল আমাদের বাসা আর নীচে ছিল বাবার অফিস। আমরা বোনরা সবাই স্কুলে চলে গেলে মা ও বাসার কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়তো। তাই ছোট ভাই সকালের নাস্তা খেয়েই চলে যেতো বাবার অফিসে। ওখানেই সারাদিন কাটাতো অফিসের লোকজনের সাথে। আমার ভাইটি ছিল সাক্ষাৎ গণেশ ঠাকুর, সেরকম নাদুস নুদুস ও খুব সুন্দর, দেখলেই গাল টিপে আদর করতে ইচ্ছে করতো যে কারো। আর সবার সাথে খুব সহজেই মিশে যেতো। তাই সবাই খুব আদর করতো ওকে। আর বাবার রুমের আশে পাশেই ঘুরে বেড়াতো। তাই যখনই বাবা বেল টিপে পিওনকে ডাকতো সেই সবার আগে দৈাড়ে যেতো। বাবা তাকে হয়তো বলতো যাও অমুক আংকেলকে ডেকে দাও, কিংবা কবির (পিওন) আংকেলকে বলো চা দিতে, বা এ্যাকাইনটেন্ট আংকেলকে বলো ওই ফাইলটা নিয়ে আসতে। এ ধরনের অফিসিয়াল ডিউটি সে কম বেশী পালন করতো। আর সবাই তাকে খুব উৎসাহ দিতো।

তো এভাবে কিছুদিন পর একদিন সবাই তাকে নিয়ে বসলো, বললো, অপু, এই যে তুমি অফিসে কাজ করো তুমি কি কোন বেতন পাও? আমরাতো সবাই বেতন পাই মাস শেষে। তুমি এক কাজ করো, বেতন চেয়ে একটা এ্যাপ্লিকেশান লিখো তোমার বাবার কাছে।

যাইহোক, সবার সাহায্যে সে তার ভাঙ্গা ভাঙ্গা হাতের লিখা দিয়ে একটা এ্যাপ্লিকেশান লিখলো বাবার কাছে। এ্যাপ্লিকেশান এরকম,
মাননীয় মহোদয়, পর সমাচার এই যে যে আমি দীর্ঘদিন যাবত অফিসের যাবতীয় কাজ সুষ্ঠভাবে সম্পাদন করিবার পরও অদ্যাবদি কোন বেতন পাইনি। বিষয়টির আশু সমাধনে নিমিত্তে মহোদয়ের কাছে আবেদন পেশ করিলাম। ইতি..... (এইরকম টাইপের ভাষা ছিল)

এরপর তা অফিসিয়াল ডাকের মাধ্যমে বাবার কাছে পাঠালো। বাবা তা পড়ে হাসতে হাসতে ছিঁড়ে ফেলে দিলো। আর তা দেখে তার সে কি কান্না। বাবা অবস্থা বেগতিক দেখে তাড়াতাড়ি তাকে একটা নোট হাতে ধরিয়ে বললো, এই যে তোমার বেতন।

সে নোট পেয়ে দৈাড়ে সবাইকে দেখাতে লাগলো। তারপর একজন একটা ছোট ব্যাগ দিয়ে বললো টাকাটা ব্যাগে রেখে দাও দেখবা সেটা ক'দিন পরে ডিম পাড়বে। B:-/

এরপর যায় কোথায়, সারাদিন একটু পর পর পার্স খুলে আর উকিঁ দেয় সেটা ডিম পেড়েছে কিনা। ঘুমুতে গেলে মাথার নীচে, বাথরুমে গেলে সাথে কমোডের পাশে। কিন্তু কিছুতেই ডিম পাড়ে না দেখ সে চিন্তিত হয়ে পড়ে। এ অবস্থা দেখে মা কি করলো চুপি চুপি কয়েকটা কয়েন ঢুকিয়ে দিল পার্সে। তারপর যখন সে দেখলো সেতো খুশিতে পুরো অফিসে দৈাড়ে বেড়াতে লাগলো তার টাকার ডিম দেখানোর জন্য। B:-/

আমার বাসায় সবসময়ই ছিল দুই গ্রুপ। এক গ্রুপে আমার ছেলে একা আর বাকি গ্রুপে আমার তিন এ্যাসিসটেন্ট আর তাদের লিডার আমার তিন বছরের মেয়ে। এ দলাদলির কারন আর কিছুই না টিভির রিমোটের দখল!!! আমার ছেলে দেখে এ্যাকশান হিরো কার্টুন আর মেয়েদের গ্রুপ দেখে স্টার জলসার দেব এর নাচ :D, সে বয়সে আমার মেয়ে দেব/কোয়েলের সব নাচ গান মুখস্থ ছিল। যেভাবে কোমড় দুলিয়ে ১০০% লাভ লাভ বলে নাচ দিতো সেটা মনে হয় কোয়েল মল্লিক ও ফেইল ;) !!

কঠিন গ্রুপ ফাইটিং চলতো দিনের পর দিন তাদের মধ্যে, একা আমার ছেলে বিপরিতে তিন এ্যাসিসটেন্ট সহ আমার মেয়ে। তাই অবস্থা যখন নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যেতো তখন আমার ছেলে সে তার রুমের দরজা বন্ধ করে দিত কারন টিভিটা তার রুমে ছিল। তখন আমার মেয়ের গ্রুপের শেষ অস্র হলো আমার কাছে বিচার দেয়া ভাইয়ের নামে কারন তখন আমি আমার ল্যাপটপটা ছেলেকে ছেড়ে দিতাম আর মেয়ে গ্রুপ রিমোটের দখল ফিরে পেত। এবং সে বিচার পর্বের প্রস্তুতিটা কিন্তু অসাধারন ছিল। আমার এ্যাসিসটেন্টরা আমার মেয়েকে পাকাঁ অভিনেত্রী বানিয়ে ছেড়েছিল। সে মোটামুটি কাঁদো কাঁদো স্বরে বিচার দিতে আসতো। যাহোক এভাবে একবার কাঁদো কাঁদো স্বরে আমার কাছে এসে বল্লো,

মাম্মি, ভাইয়া আমাকে অনেক মেয়েছে(মেরেছে), এই দেখো (পেটের জামা উচিঁয়ে) খাঁমচির দাগ! ( এ্যাসিসটেন্টরা যা শিখিয়ে দিয়েছে আর কি)

খুব আগ্রহ নিয়ে বল্লাম, কই, কিছুইতো দেখছি না।

তোমার নুমে (রুমে) নাইট (লাইট) কমতো, তাই দেখছো না।

(হাসি গোপন করে) গম্ভীর হয়ে বল্লাম, ওকে, ওর হাত দুটো কেটে দিবো।

ঘর থেকে ঘুরে বের হতেই আবার খুব চিন্তিত হয়ে ঘরে ঢুকলো সে, বললো (কারন এখনো রিমোটের দখল পায়নি),

মাম্মি, ভাইয়ার পা দু'টোও খুব দুট্টো (দুষ্ট) ওটাও কেটে দিয়ো কেমন!!!! :P

ভাইয়ের ছোটবেলার ছবি আবারো শেয়ার করলাম।



আমার আগের পার্ট ওয়ান যদি পড়তে চান:
বাচ্চা ভয়ংকর কাচ্চা ভয়ংকর...... পার্ট-১
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:২৭
৩২টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×