২০০৮, ওয়াশিংটন ডিসি। ১৮ বছরের ম্যারি এডলারের বান্ধবী সকালে ৯১১ এ কল দিয়ে জানায় তার বান্ধবীর রাতের বেলায় ধর্ষিত হয় এক আগুন্তুক দ্বারা তারই ঘরে। মেয়েটি এতটাই ভয় পেয়েছে যে কথা বলা কিংবা পুলিশকে কল দেবার মতো অবস্থায় ছিল না। পুলিশ কল পেয়েই সেখানে হাজির হয় কিন্তু কোথাও কোন ধর্ষনের আলামত পায় না শুধুমাত্র মারিয়ার বক্তব্য ছাড়া। মারিয়া জানায় যে ধর্ষক মাস্ক ও গ্লাভস্ পরেছিল পুরোটা সময় এবং ধর্ষন শেষে অস্রের মুখে মারিয়াকে গোসল করতে বাধ্য করে যাতে সব ডিএনএ ধুয়ে মুছে যায়।
এরপর থেকে একের পর এক জিজ্ঞাসাবাদ চলতে থাকে মারিয়ার। একবার পুলিশের কাছে, একবার গোয়েন্দাদের কাছে, একবার ডাক্তারদের কাছে..। এভাবে দফায় দফায় চলতে থাকে বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ। ধর্ষনের পর এমনিতেই মেয়েটি ছিল ট্রমাটাইজড্, তারপর একের পর এক জিজ্ঞাসাবাদে মেয়েটি দিশেহারা হয়ে যায়। প্রথম প্রথম পুরোটা ডিটেইলস বললেও এক সময় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে ও অতোটা ডিটেইলস না বলে সর্টকার্টে ঘটনার বর্ননা দেয়। বিভিন্ন জনের কাছে দেয়া বর্ননায় গোয়েন্দারা ঘটে যাওয়া ঘটনার অমিল খুঁজতে থাকে। এছাড়াও মেয়েটি ছিল খুবই দুখী, পরিবার পরিজনহীনভাবে ফস্টার কেয়ার আর সোস্যাল কাস্টডিতে বড় হয় সে। যার কারনে গোয়েন্দারা তার অতীতের সাথে বর্তমানকে মিলিয়ে তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটাকে বিশ্বাস করতে চায় না। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে এমন কিছু আদৈা ঘটেছে কিনা তা নিয়ে তাদের মনে যথেস্ট সন্দেহ দেখা দেয়।
এ ঘটনার পর বিভিন্নভাবে চাপ আসতে থাকে ঘটনার তদন্তে। সবকিছু বিবেচনা করে পুরুষ গোয়েন্দারা বিশ্বাসই করে না যে এমন কিছু গটেছে। এবং তাদের কাজকে সহজ করার জন্য মারিয়াকে চাপ দেয় যেন সে স্বীকার করে যে সে মিথ্যা বলেছে। এবং তাকে ভয় দেখায়, বিভিন্নভাবে হেনস্থা করে ও এ্যাটেনসানসিকার বলে ব্লেইম করে। চারপাশের এত সব চাপ সইতে না পেরে ধর্ষনার ঘটনা মিথ্যা বলেছের বলে সে জানায়। অতপর: পুলিশ তার ফাইলটি ক্লোজ করে দেয়। কিন্তু এরপর মারিয়ার জীবন দূর্বিসহ হয়ে উঠে। মানসিকভাবে যেমন ভেঙ্গে পড়ে তেমনি সামাজিকভাবেও মিথ্যেবাদী হিসেবে হেয় হতে থাকে সবখানে। হারায় তার চাকরী, আত্বীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব একে একে তার সাথে সম্পর্ক শেষ করে। মিথ্যা রিপোর্ট ও হয়রানীরর জন্য তার বিরুদ্ধে উল্টো মামলা করে সে পুরুষ গোয়েন্দা ও পুলিশ। সিটি তাকে ৫০০ ডলার ফাইন করে মিথ্যা রিপোর্ট এর জন্য। এভাবে কেটে যায় তিন বছর।
২০১১ কলোরোডো। মারি নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মেয়ে ৯১১ এ কল দিয়ে রিপোর্ট করে ধর্ষনের। রাতের বেলা তার ঘরে মাস্ক ও গ্লাভস্ পরা এক আগুন্তুক তাকে রাতভর ধর্ষন করে অস্রের মুখে। এবং আধা ঘন্টার বেশী গোসল করিয়ে সব ডিএনএ নষ্ট করে। এবারের ঘটনায় দায়িত্ব পায় একজন মহিলা গোয়েন্দা ডুভেল নামের। কিন্তু সে কোনভাবেই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু খুঁজে পায় না। কারন ধর্ষক খুবই ধুরন্ধর, সে পুলিশ বা গোয়েন্দাদের কাজের ব্যাপারে খুব ভালো জানে। যার কারনে কোন ক্লুই সে রাখেনি।
ঠিক এমন কঠিন অবস্থায় ডুভেলের স্বামী যিনি আরেকটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টে কাজ করে সে জানায় যে এরকম একটা ঘটনা তার এরিয়াতে বেশ ক'মাস আগে ঘটেছিল। ডুভেল সেখানে ছুটে যেয়ে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দাদের একসাথে কাজ করার অনুরোধ করেন। সকলে রাজি হয় এবং আরো এলাকায় এ ধরনের ঘটনাও খুজঁতে থাকে। আশ্চর্যজনকভাবে একই ধরনের রিপোর্টেড বেশ কিছু কেইস খুজেঁ পায় গোয়েন্দারা বিভিন্ন এলাকায়। যার কোনটার সমাধান নিয়ে তেমন কোন কাজ করেনি কেউ। কারন মেয়েদের এ রিপোর্ট পুরুষ গোয়েন্দারা বিশ্বাস করতে চায়নি বা চাইলেও এ নিয়ে গুড়ুত্ব দেয়নি।
এরপর ঘটনা খুব সংক্ষিপ্ত। ডুভেল ও অন্যান্য গোয়েন্দাদের চেস্টায় ধরা পরে সে সিরিয়াল রেপিস্ট মাইকেল। অন্তত ৩৫টি ধর্ষনের আলামত পায় পুলিশ তার বাসা থেকে কিন্তু এর মাঝে রিপোর্টেড মাত্র কয়েকটি। সেখানেই ম্যারি এডলারের ছবি দেখে গোয়েন্দারা আবারো তার ফাইলটি ওপেন করে। ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দাদের ভৎসনা করে। পরবর্তীতে ম্যারি এডলারকে ১৫০,০০০ ডলার ক্ষতিপূরন দেয়া হয় সিটি থেকে।
যাক, যা বলছিলাম। পাঠক নিশ্চয় অবাক হচ্ছেন, হঠাৎ করে কেন নেটফ্লিক্স এর সত্য ঘটনার উপর ভিত্তি করে নির্মিত "Unbelievable" ড্রামা সিরিজ নিয়ে কথা বলছি! বলছি কারন দু'দিন আগেই ২০১৭ সালে বনানীর রেইনট্রি হোটেল ঘটে যাওয়া ধর্ষণ মামলার বিচারে মামলার প্রধান আসামী সাফাতসহ সবাই বেকুসর খালাস পায়।
বাচ্চালোক তালিয়া বাজাও। সোনার ছেলেরা মুক্তি পেয়েছে। এবার ওই মেয়েগুলোরে বিচারের আওতায় আনা হোক যারা ওইসব সোনার ছেলেদের নামে আজে বাজে মামলা করে হয়রানী করেছে।
ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহার বৃহস্পতিবার দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন।রায়ের পর্যবেক্ষণে তিনি বলেন, “ঘটনার ৩৮ দিন পর মামলা হল, চিকিৎসক মেডিক্যাল রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত পাননি মর্মে মতামত দিলেন, ভুক্তভোগীদের পরিধেয় কাপড়ে কোনো পুরুষের সিমেন্সের কনা পাওয়া যায় নাই…। তারপরও তদন্ত চার্জশিট দাখিল করে আদালতের পাবলিক টাইম নষ্ট করেছেন। “এতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ রেইপ কেসের বিচার ব্যাহত হয়েছে। তিনি অন্য কোনো পক্ষ কর্তৃক প্রভাবিত হয়ে এই চার্জশিট দিয়ে মামলাটি বিচারের জন্য পাঠিয়েছেন। আজকের দিনসহ এই মামলায় ৯৪ কার্যদিবস ব্যয় হয়েছে।”
শুধু তাই নয়, মহামান্য বিচারক বলেছেন আক্ষেপ করে বলেছেন,৭২ ঘণ্টার পর মেডিকেল পরীক্ষা করা হলে যে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় না, সে কথা তুলে ধরে বিচারক পুলিশকে ওই সময়ের পরে কোনো মামলা না নিতে বলেছেন।
ব্রাভো, ব্রাভো...... এমন বেগম মোছা. কামরুন্নাহার এর মতো বিচারক দেশের অলিতে গলিতে চাই যাতে আমাদের দিলদার আহমেদের সোনার ছেলে সাফাতরা ঘরে ঘরে ধর্ষনের দূর্গ গড়তে পারে। তারপর তিনদিন ঘরে আটকে রেখে ছেড়ে দিবে এবং মহান পুলিশ বিচারকরে কথা মত কোন মামলা নিবে না।
জাতি সত্যিই ধন্য এমন বিচারক পেয়ে।
এখন আমার প্রশ্ন মাননীয় বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহার এর কাছে, মাল কি একটু বেশীই পেটে পড়েছে? সে মাল খেয়ে বিবেক বুদ্ধি কি সব লোপ পেয়েছে? আচ্ছা আপনার কি কোন মেয়ে আছে? বা কোন বোন? কিংবা বাসায় কাজের মেয়ে? তারা আপনার কাছে নিরাপদতো?
খবর ও ছবির সূত্র: রেইনট্রি হোটেলে ‘ধর্ষণ’ মামলায় সাফাতসহ সবাই খালাস
(প্রিয় পাঠক, আমার ১৪ বছরের সামহোয়ার ব্লগিং জীবনে এই প্রথম পর পর কোন পোস্ট দিলাম। আসলে মেজাজ ধরে রাখতে পারছিলাম না তাই লিখতে বসলাম। এছাড়া আমার হাতে কোন অস্র নেই। আমি ক্ষমাপ্রার্থী।)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০২২ সকাল ৮:৩৭