ব্লগে বহুদিন ব্লগে কোন ক্যাচাল নাই। আসল ক্যাচালবাজ ভুয়া মফিজ, আখেননাটেন, মা হাসান ব্রাদাররা নিখোঁজ। সাইড ক্যাচালবাজ করুণাধারা, জুন, শায়মা, মলাসইলমুইনা, মিরোরডডল, নীল আকাশ, ঢাবিয়ান, পদ্মপুকুর ভাই/বোনরাও প্রায়ই নিখোঁজ। এদিকে চাঁদগাজি ভাই ফিরিয়া আসিলেও নুরুভাই গায়েব। ক্যাচালবাজ লিডার অপু তানভীর আর নতুন কোন ক্যাচাল লাগাই নাই। আর সে কারনে রাজিব নুর একটু শান্তিতে ব্লগিং চালাইতাছে। তাই খেলা ঠিক জমে উঠছে না। সেই কারনে আমি নিজ দায়িত্বে নিয়ে আসলাম ক্যাচাল পোস্ট। আক্ষরিক অর্থেই এটা ক্যাচাল পোস্ট। তাই সবাই নিজ দায়িত্বে পড়বেন।
কয়েক বছর আগে যখন চারপাশ ধর্ম নিয়ে উত্তাল চলছিল, ব্লগে তখন ধর্ম নিয়ে মারাত্বক ক্যাচাল, সে সময়ে আমি একটা লিখা ড্রাফট করি কিন্তু পোস্ট করিনি ও পরে তা মুছে দেই কিন্তু। অনেকেই প্রশ্ন করে আমি সব বিষয়ে নাক গলালেও কেন ক'দিন আগে হিন্দুরা যখন আক্রান্ত হলো আমি কিছু বলিনি? কেন ভারতে যখন মুসলিমদেরকে একর পর হত্যা করতে লাগলো, অত্যাচার করতে লাগলো আমি কেন পোস্ট দেইনি? কেন ফ্রান্সের বয়কট আন্দোলনে আমি যোগ দেইনি? কেন কানাডার লন্ডন ও কুইবেকে মুসলিমদের হামলায় আমি কথা বলিনি? ফেসবুকে, ব্লগে, অনলাইনে যখন ধর্ম নিয়ে কোন হাউ-কাউ শুরু হয় আমি তাতে কোনভাবেই নাক গলাই না। কেন আমি এসব আলোচনায় ঝাঁপিয়ে পড়ি না, কেন এ নিয়ে আমি কখনই কোন লিখা লিখি নাই। এতো এতো প্রশ্নের মুখে এখন মনে হচ্ছে এরকম একটা লিখা থাকলে আমি আমার দিক থেকে স্বচ্ছ থাকবো। সবাই বুঝতে পারবে আমাকে কেন আমি এসব আলোচনা থেকে দূরে থাকার চেস্টা করি।
আমার কাছে তিনটি উত্তর আছে আত্মপক্ষ সমর্থনে। কেউ মানবেন, কেউ মানবেন না, সেটা যার যার ব্যাক্তিগত বিষয়।
প্রথমত: ধর্ম নিয়ে আমি আলোচনা করি না কারন ধর্ম মানেই আমার কাছে হলো একটি বিশ্বাস। আপনি বিশ্বাস করলে ধর্ম আছে আবার বিশ্বাস না করলে ধর্ম নেই। আর এ 'বিশ্বাস' কে কিভাবে পালন করবে সেটা তার একান্তই পছন্দের। কেউ মসজিদে যাবে, কেউ মন্দিরে, কেউ বা গীর্জায়। নামাজ পড়লো নাকি পূজা করলো নাকি প্রার্থনা করলো সেটা যার যার ব্যাক্তিগত বিশ্বাস।
কখনই কোন ধর্ম বলে নাই চুরি করো, মিথ্যে বলো, খুন করো, অন্যায় করো। সব ধর্মই বলেছে সাম্যবাদ, অন্যায় করো না, ঘুষ খেয়ো না, মিথ্যা বলো না, ওজনে কম দিও না, কাউকে ঠকীয় না, দুখীর পাশে দাঁড়াও, মানুষকে ভালোবাসো, আর সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করো। আর সে স্মরণ একক জনের কাছে একক রকমের, কিন্তু সবারই উদ্দেশ্য কিন্তু একই। সবারই উদ্দেশ্য একই যদি হয় তাহলে কেন সে উদ্দেশ্য আমি বাঁধা হয়ে দাঁড়াবো। আমি আমার কাজ করবো, আমার নিয়মে ধর্ম পালন করবো সেখানে বাঁধা দেবার কি আছে?
দ্বিতীয়ত: আমি সবসময়ই চণ্ডীদাস এর সে উত্তিতে বিশ্বাসী, "সবার আগে মানুষ সত্য, তাহার উপর নাই"।
আমি মনে করি, যারা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে এরা কোনভাবেই মানুষ নয়, এরা মানুষরুপী অমানুষ। আমার সামনের ক্ষুধায় তৃষ্ণায় কাতর অসহায় মানুষটি আগে নাকি সম্পূর্ন অদেখা কোন বিশ্বাস আগে! সে মানুষটি আমার পছন্দের ধর্মের হলে তার সেবা করবো আর ভিন্ন ধর্মের হলে তাকে মরতে দেবো, তার বাড়িতে আগুন দিবো, এমন বিশ্বাস আমি কোনভাবেই করি না। যারা এসব করে বা এমন কিছু বিশ্বাস করে তারাই আমার চোখে অমানুষ। সেটা মন্দির ভাঙ্গার ক্ষেত্রেই হোক আর মসজিদ ভাঙ্গার ক্ষেত্রেই হোক সবাই অমানুষ। এদের সত্যিকারের কোন ধর্ম পরিচয় থাকতে পারে না। কারন ধর্ম কখনই বলেনি অন্যায় করতে, মন্দির ভাঙ্গতে, মসজিদে গুলি চালাতে। কাজেই প্রতিবাদ যদি করতেই তাহলে ধর্মকে সামনে রেখে নয়, ওই অন্যাকারীর বিরুদ্ধে করা উচিত।
তৃতীয়ত: অতি ধার্মিকদেরকে আমার কাছে হিপোক্রেট মনে হয়। কিভাবে? কারন আমার দেখার ভুবনে খুব কম মানুষকে দেখেছি স্বার্থের উর্ধ্বে ধর্মকে ভাবতে। তাদের কাছে সবার আগে স্বার্থ তারপর ধর্ম। স্বার্থের প্রয়োজনে ধর্ম নিয়ে দারুনভাবে ব্যবসা করে। তাই এসব হিপোক্রেটদেরকে নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করে না।
একটা প্রশ্নের উত্তর দেন, দেশের এমন কোন কাজ আছে যা ঘুষ দেয়া ছাড়া আপনি করাতে পেরেছেন? সে সব ভদ্রলোক/ভদ্রমহিলাতো ধর্ম পালন করে সকাল বিকাল তাহলে একবারও কি তাদের মনে হয়নি এ ঘুষ তার জন্য হারাম? অন্যায়ভাবে কিছু করা ধর্মে বারন?
আপনি নামাজ পড়তে পড়তে কপালে দাগ ফেলেছেন, পারলে তাহাজ্জদের নামাজও মিস করেন না কিন্তু বাসায় সকাল বিকাল বউ পেটান, বউকে মানুষ হিসেবেই গণ্য করেন না, পরস্ত্রীর দিকে কুৎসিৎ দৃষ্টিতে তাকান, সুযোগ খুঁজতে থাকেন কখন গায়ে হাত দেয়া যায়, বাসার কাজের মেয়ে আপনার হাত থেকে নিরাপদ নয়, ছোট্ট ছোট্ট শিশুগুলোকে সুযোগ পেলেই বলাৎকার করেন, মা-বাবা সেবাকে বাড়াবাড়ি মনে করেন, ভাই-বোনদের হক বলে কিছুই মানেন না, পাশের রহমত মিয়ার জমি দখলের জন্য সব কুটকৈাশল ট্রাই করেন। তাহলে আপনার কাছে জিজ্ঞাসা, ধর্ম আপনাকে কি শিক্ষা দিয়েছে? নাকি ধর্মকে রেখেছেন মানুষের চোখে ধুলা দেয়ার জন্য?
দেশের বাইরে আসার পর দেখি লোকজন হারাম হালাল বলতে বলতে মুখের ফেনা তুলে ফেলে। কোন পার্টিতে গেলে ভদ্রলোক/ভদ্রমহিলাগণ হোস্টকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে খাবার হালালতো? রাত দিন গলা ফাটায় কোনটা হালাল কোনটা হালাল শিক্ষা দেয়, কোন দোকানে হালাল মাংস রাখে তার খোঁজ করতেই দিনের অর্ধেক সময় যায়, কোন ইনগ্রিডিয়েন্ট হালাল কি না তা বাঁছতে বাঁছতে জীবন দফারফা। এমন কি নেইলপলিশ/লিপিস্টিকে ও হালাল খোঁজে। আর আরেক দল হালালকে পুজিঁ করে ব্যবসা করে।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখেন হালাল খোজাঁ সে ভদ্রলোকটি হয়তো পার্টিতে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে পড়ে থাকে, মসজিদের টাকা চুরির হয়তো নতুন কোন ফর্মুলা বের করার ধান্ধায় থাকে, সারাক্ষনই অন্যকে ঠকানোর কাজে ব্যাস্ত থাকে, উপকারীর অপকার করে, বাসায় স্ত্রী সন্তানের হক কি তাই হয়তো জানে না, মানুষের বিপদে আরো বিপদে ফেলার চেস্টা করে।
ধর্মতো আপনাকে ভালো ভালো জিনিস কিছু শেখায়, অন্যায় করতে মানা করে কিন্তু সেগুলোর দিকে খোঁজ না করে কেবল গরু/মুরগী কেমনে জবাই হলো সেইটা নিয়া মাথা খারাপ অবস্থা। স্ত্রীর প্রতি হাজার হাজার কর্তব্য পালনের নির্দেশনা দেয়া আছে কিন্তু সেটা পালনের মতো কোন ইচ্ছে ধৈর্য্য কিছুই নেই। অথচ চার বিয়া লাফাইতে লাফাইতে জীবন পার করে। সন্তানকে মুক্ত আলোচনা, আধুনিক সাহিত্য, নতুন বৈজ্ঞানিক আবিস্কার না শিখিয়ে তার মনটা ধর্মের গোড়ামী দিয়ে বিষাক্ত করে তুলি।
এসব হিপোক্রেসী নয় কি!
বক্তৃতা শেষ। সবাই ভালো থাকেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:১৭