somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সোহানী
হাজার হাজার অসাধারন লেখক+ব্লগারের মাঝে আমি এক ক্ষুদ্র ব্লগার। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া লেখালেখির গুণটা চালিয়ে যাচ্ছি ব্লগ লিখে। যখন যা দেখি, যা মনে দাগ কাটে তা লিখি এই ব্লগে। আমার ফেসবুক এড্রেস: https://www.facebook.com/sohani2018/

একটি চ্যালেন্জ কিংবা সাফল্যের গল্প

২৩ শে এপ্রিল, ২০২২ সকাল ৯:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বি:দ্র: পাঠকদের কাছে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য। আসলে আমি গল্প থেকে অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পছন্দ করি। গল্প না হয় আরেকদিন বলবো।

আমার মেয়ের সময় আমি যখন সাত মাসের প্রেগনেন্ট তখন নতুন একটা চাকরীর ফাইনাল লেটার পাই। দীর্ঘদিন ধরে রিক্রুটমেন্ট প্রসেস চলার কারনে প্রেগনেন্সির বিষয়টি অনেকটা উহ্য ছিল। কিন্তু ফাইনাল লেটার হাতে পাওয়ার পর এ নিয়ে সরাসরি কথা বলতে চাইলাম আমি। কারন কোন কিছু নিয়ে রাখঢাক আমি পছন্দ করি না। আমার অনুরোধে এইচ আর মিটিং কল করেছিল অফিসের বিগ সব বসদের নিয়ে। সে ডিসিশান মিটিং এ চারজন পুরুষ ইন্টারভিউয়ারে সামনে আমি ক্লিয়ারকাট বলে নিলাম যে আমি এই মূহুর্তে সাত মাসের প্রেগনেন্ট, তোমাদের পলিসিতে কোন সমস্যা থাকলে আমি জয়েন করবো না।

সে রিক্রুটমেন্ট প্রসেসে আমিই সবচেয়ে ভালো ক্যান্ডিডেট ছিলাম এবং সম্ভবত: আমার আশে পাশে তেমন কোন প্রতিযোগী ছিল না বিধায় ওরা আমাকেই ফাইনাল সিলেক্ট করলো। কিন্তু একটা শর্ত দিলো, সেটা হলো যেহেতু পলিসিতে ছয় মাস জবের আগে ম্যাটার্নিটি লিভ নেই তাই আমাকে লিভ উইদাউট পে তে যেতে হবে। আমি সে শর্তে রজি হলাম কারন অফারটা ভালো ছিল।

খুশি মনে চাকরীতে জয়েন করার পরই বুঝলাম কত ধানে কত চাল। অফিসে রীতিমত উইক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ চলছে। গ্রুপাগুপি, দলাদলি, এ ওর নামে কম্পপ্লেইন, প্রজেক্টের বন্ধ করার জন্য ডোনারের কাছে চিঠি, ষড়যন্ত্র চালাচালি, এবং সব মিলিয়ে কঠিন এক অবস্থা। কেউ কাউকে মানে না কি সিনিয়র কি জুনিয়র। মাঝ থেকে এরকম কামড়া-কামড়ি দেখে ডোনার ফান্ড বন্ধ করে দিয়েছে অনেকদিন। বেতন-ভাতা চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। আর ডোনার এজেন্সি স্পেশাল এজেন্ট নিয়োগ দিয়েছে প্রজেক্টে ইনভেস্টিগেশানের জন্য। যারা আগামাী মাসের শেষেই আসবে সে টিম।

শুধু তাই নয়, কাজ শুরু করে দেখি বছর কয়েক এর কোন এ্যাকাউন্টস নেই। কোন খাতা-পত্র, বিল ভাউচারের কোন আগামাথা নেই। তারচেয়ে মজার তথ্য এসব হিসাব নিকাশ দেখার জন্য প্রায় ১০ লাখ টাকা বেতনের একজন বিদেশী কনসালটেন্ট আছেন যিনি আবার প্রতিবেশী দেশের। তাকে এসব নিয়ে বলতেই সে আকাশের দিকে তাকিয়ে উদাসীনভাবে বললো, আমার কন্ট্রাক্ট তিন বছরের জন্য। কাজ করলেও তিন বছর আর না করলেও তিন বছর। তাই যেভাবে চলছে চলুক না!!

ব্যাটা বলে কি!! মাস গেলেই ইনভেস্টিগেশান টিম আসবে। এ অবস্থা দেখলেতো জনমের তরে প্রজেক্ট বন্ধ করে দিবে। আমার না হয় সমস্যা নেই আরেক জায়গায় চাকরী খুঁজে নিবো কিন্তু কয়েক মিলিয়ন ডলারের এ প্রজেক্ট বন্ধ হয়ে গেলে দেশের বিশাল ক্ষতি। কয়েক হাজার পরিবার, হাসপাতাল, রোগী এর উপর ডিপেন্ড করে আছে। এদিক সেদিক হলেই ডোনার এ ফান্ড সোজা আফ্রিকায় পাঠিয়ে দিবে! এতে অবশ্য আমার বিদেশী কনসালটেন্ট মহা খুশী। তার কথা, ফান্ডটা পৃথিবীর অন্য যেকোন দেশে যাক অন্তত বাংলাদেশে না আসুক। তাহলে সে এ কন্ট্রাক্ট শেষ হলেই সে দেশে জবের একটা সম্ভাবনা আছে।

বুঝলাম, এ লোককে দিয়ে উপকারের পরিবর্তে অপকার হবে!! তাই নিজেই সে জন্জাল পরিস্কার শুরু করলাম। বছরের পর বছর ধরে চলা এরকম একটা আবর্জনার স্তুপকে লাইনে আনতে আমি পাগলের মতো ছুটাছুটি শুরু করলাম। অফিসার থেকে শুরু করে দাড়োয়ান পিওন কেউই কোন কাজ করে না। এমন কি ক্লিনারও অফিস ঝাড়ু দেয়নি বছর খানেক। সবাই বিশ্বাস করে ইনভেস্টিগেশান হলেই প্রজেক্ট বন্ধ হয়ে যাবে ও সবার চাকরী চলে যাবে। তাই সবাই কাজ করা ছেড়ে দিয়েছে।

সে রকম একটা পরিবেশকে সোজা করতে শুধু ঘাম না মাথার চুলও সব পড়ার অবস্থা।এরকম এডভান্স প্রেগনেন্ট অবস্থায় রাত ১০/১১ টা পর্যন্ত কাজ করতে লাগলাম। কখনো নিজের শরীরের দিকে তাকানোর সুযোগই পেতাম না। যাহোক, আমার ইন্সপিরেশান হোক বা ডান্ডাবাজিই হোক সবাই আমার কথামত কাজ শুরু করেছিল। অফিসে মোটামুটি একটা নিয়ম শৃঙ্খলায় নিয়ে আসতে পেরেছিলাম। আর এদিকে আমার ছুটি নেয়াতো দূরে থাক, যেদিন আমার ইডিডি ছিল সেদিনও ছুটি নিতে চাইলে আমার বিদেশী বস বললো, আরো কিছু কাজ গুছিয়ে তারপর যেয়ো। সেদিনও সকাল থেকে কাজ করে দুপুর বারোটায় অফিস থেকে সরাসরি হসপিটালে ভর্তি হই।

মেয়ের জন্মের পরদিন থেকেই বসের ফোন শুরু হলো। জয়েন করো তাড়াতাড়ি, ইনভেস্টিগেশান টিম কাজ শুরু করেছে কিন্তু কেউই কিছু করতে পারছে না। বাধ্য হয়ে মেয়ের জন্মের দুই সাপ্তাহ পরেই জয়েন করি অফিসে। ব্রেস্ট ফিডিং করাতাম বলে আমার ছোট্ট মেয়েটা আর তাকে দেখাশোনা করার জন্য মায়ের দেয়া ছোট একটা এ্যাসিসটেন্টকে নিয়ে অফিসে আসতাম। অফিসের নীচতলার ছোট একটা রুমে মেয়েকে রাখতাম। কাজের ফাঁকে ফাকেঁ মেয়েকে দেখে আসতাম ও ব্রেস্ট ফিড করায়ে আসতাম। আমার কোন রেস্ট ছিল না বলতে গেলে। যেহেতু ইউরোপে ডোনারের অফিস টাইম গ্যাপরে কারনে অফিসের পরেও বাসায় কাজ করতে হতো কমিউনিকেশানের স্বার্থে। কখনো মেয়েকে কোলে নিয়ে, কখনো মেয়ের পাশে বিছানায় আধা শুয়ে কাজ করতাম অনেক রাত পর্যন্ত কারন একটুতেই মেয়ের ঘুম ভেঙ্গে যেতো। তখন কান্না শুরুকরে দিতো।

ছেলে-মেয়ে, বাসা, অফিস, নিজের শরীর........ সব মিলিয়ে সে এক কঠিন অবস্থা ছিল তখন। তারপরেও দীর্ঘ পরিশ্রমের পর অনেক অনেক আনন্দিত ছিলাম যে আমার কঠোর পরিশ্রম স্বার্থক হয়েছিল। ডোনার এজেন্সি শুধু প্রজেক্ট চালুই করেনি আরো বাড়তি ৪০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছিল পূর্ব প্রতিশ্রত ১০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়াও। এছাড়া পরবর্তী প্রজেক্ট এর জন্য বাংলাদেশকে সিলেক্ট করেছিল। সে কষ্টের পুরস্কার স্বরুপ আমাদেরকে সুইজারল্যান্ডে ইনভাইট করেছিল। ভিআইপি মর্যাদার সে ভিজিট আমাদের জন্য বিশেষ স্মরণীয় ছিল কারন এতো রেসপেক্ট পেয়েছিলাম তাদের কাছ থেকে তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। শুধু তাই নয়, পরবর্তী প্রজেক্টে কয়েক'শ মিলিয়ন ডলারের যে বাজেট প্লান আমি দিয়েছিলাম, ডোনার এজেন্সি এক বাক্যে তা এ্যাক্সেপ্ট করে নিয়েছিল। কোথাও কোন অবজেকশান দেয়নি।

যা বলবো বলে লিখা শুরু করেছিলাম তা থেকে কোথায় যে চলে গেলাম!! ও আমার মেয়ের জন্ম। ওর জন্মের পর মারাত্বক দূশ্চিন্তায় ছিলাম আমি। কিভাবে কি করবো, কোথায় ওকে রাখবো, আদৈা চাকরী করতে পারবো কি না? কিন্তু চাকরী ছাড়তে ও ইচ্ছে হচ্ছিল না কারন এটা ছিল আমার জন্য একটা বিশাল চ্যালেন্জ ছিল। নিজের যোগ্যতা যাচাই করার চ্যালেন্জ। সহজে হার না মানার চ্যালেন্জ। সব ছাড়িয়ে ছোট্ট এ মেয়েটাকে কিভাবে বড় করবো সেটাই ছিল সবচেয়ে দূশ্চিন্তার বিষয়। কিন্তু আমার সে ছোট্ট মেয়েটি দেখতে দেখতে সত্যিই অনেক বড় হয়ে গেল একদিন। অসম্ভব ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখে প্রতিটা মূহুর্ত। এখনো সে আদুরে বিড়ালই রয়ে গেল।

আজ তার জন্মদিন। আর সে কারনেই এ লিখাটা লিখেছি। একদিন নিশ্চয় এ লিখাটা আমার মেয়ে পড়বে আর তার মা'কে নতুনভাবে জানবে।

শুভ জন্মদিন আমার ছোট্ট বিড়াল, অনেক অনেক ভালোবাসি তোমায়। তোমাকে ছাড়া আমার জীবন কখনই পূর্ণতা পেতো না।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০২২ সকাল ৯:৫২
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×