১৫ বছর !!!!!! দীর্ঘ সময়। কিভাবে যে দিন গড়িয়ে এতো বেলা হলো!!!! প্রতিবারেই বর্ষপূর্তিতে ভাবি কিছু লিখবো কিন্তু কখন যে সে দিনটা চলে যায় খেয়ালই থাকে না। এবার কোনভাবেই মিস করবো না বলে পণ করেছি। তাই এ্যালার্ম টেলার্ম সেট মেট করে বেশ আয়েশ করে বসেছিলাম। তাই মিস হয়নি! ১৫ বছর সাথে আরো কয়েক ঘন্টা প্লাস...... ব্লগে বয়োজ্যেষ্ঠ হিসাবে বিশেষ এওয়ার্ড ব্যবস্থা করবে জাদিদ এবার ব্লগ দিবসে..........হাহাহাহা।
যাহোক, এ দীর্ঘ ১৫ বছর মাটি কামড়ায়ে মানে ব্লগ কামড়ায়ে ধরে রাখা উপলক্ষ্যে কেউই আমার কোন সাক্ষাৎকারের আয়োজন করে নাই। কি আর করা, তাই নিজেই নিজের সাক্ষাৎকার এর আয়োজন করছি। চলুন তাইলে শুরু করি!
প্রশ্ন : কোন দুক্ষে ব্লগে?
উত্তর : কোন দুক্ষে বা সুখে ব্লগে আছি, কেন আসছিলাম, কিভাবে আসছিলাম তার বিশদ বিবরন দিয়েছিলাম আমার দশ বছর পূর্তির লিখায়। লিংক দিলাম আবারো। চাইলে ঢুঁ দিতে পারেন.......
সামুতে ১০ বছর....কিছু চাওয়া পাওয়ার ১০ বছরের হালখাতা!!!!!
প্রশ্ন : এতোদিন কেউ তেমন চিনতাম না আপনারে, হঠাৎই দেখি যত্রতত্র নিজ পরিচয়ে হাজির, কেন?
উত্তর : আমার দু'টো পরিচয়। এক, ব্লগার সোহানী, দুই, ব্যাক্তি সোহানী। এতোদিন আমি কখনই দুই স্বত্ত্বাকে এক করিনি। একজন ব্লগারের সাথে আমার সম্পর্ক শুধুই ব্লগার। সেখানে বড়/ছোট, জ্ঞানী/অজ্ঞানী, কেরানী/অফিসার, শিক্ষিত/অশিক্ষিত, এসবের কোন সম্পর্ক নেই। সবাই সমান। আমার কাছে সবার একটাই পরিচয় ব্লগার।
আর অপর দিকে আমার ব্যাক্তি পরিচয় সম্পূর্ন বিপরীত। সেখানে বড়/ছোট, জ্ঞানী/অজ্ঞানী, কেরানী/অফিসার, শিক্ষিত/অশিক্ষিত এর মাঝে বিশাল দূরত্ব। কোনভাবেই সবাইকে একই কাতারে বিচার করি নাই সেখানে। যেমন ধরুন, যদি আমি আমার আসল পরিচয় ব্লগে দিতাম তাহলে আমার অফিসের ক্লার্ক যে একজন ব্লগার, সে কি আমার লিখায় সহজে মন্তব্য করতে পারতো? কিংবা সে যদি ব্লগে আমার সাথে যে ভাষায় কথা বলে তা যদি অফিসে বলতো তাহলেতো পরদিনই আমি তার চাকরী খেতাম! কারন আমি অফিসে কখনই কোন তামাশা পছন্দ করি না। প্রফেশনালিজম আমার কাছে ১০০% গুড়ুত্বপূর্ন। কাজেই এ সব ঝামেলা এড়াতে দুই পরিচয়কে সবসময়ই আলাদা রেখেছি। ব্যাক্তি পরিচয়কে কখনই সামনে আনিনি।
হাঁ, এখন পরিচয় দিচ্ছি বা দেয়া শুরু করেছি কারন আমি দেশে নাই। কাউরে থাপড়া দিয়ে চাকরী খাওয়ার সুযোগ ও নাই। এছাড়াও গত বছর বই বের করা উপলক্ষ্যে পরিচয় দিতে বাধ্য হয়েছি। লুকোলুকির আর সুযোগ নেই।
প্রশ্ন : এতোদিনতো চেহারা দেখিনি ব্লগে বা অন্য কোথাও। হঠাৎ কেন নিজের ছবি দেয়া শুরু করলেন?
উত্তর : উপরের কারনতো আছেই ব্যাক্তি পরিচয় দিতে চাইনি। যার কারনে কখনই ছবি পোস্ট করিনি কোথাও। এছাড়াও আমি মনে করি আমিতো কোন নায়িকা নই। আমার লিখার সাথে ছবির কোথাও কোন সম্পৃক্ততা নেই। আর লিখার সাথে ছবি দিলে কেউই তেমন লিখাটা মনোযোগ দিয়ে পড়বে না। আমার লিখার মূল্যায়ন হবে আমার চেহারা দেখে, যা আমি কখনই পছন্দ করি না।
এখন দিচ্ছি কারন ব্যাক্তি, লেখক ও ব্লগার পরিচয় এক করতে চাচ্ছি। বয়স হচ্ছে, যে কোন সময় ধুম করে মরে যেতে পারি। তখন দেখা গেল ছ'মাস পরে কেউ জানলো যে আমি ওপারে। তাই ব্লগে যেমন ব্যাক্তি পরিচয় দিতে শুরু করেছি তেমনি ব্যাক্তি জীবনেও ব্লগ পরিচয় দিতে শুরু করেছি। ব্লগার বা লেখক বা ব্যাক্তিকে একই বিন্দুতে আনার চেস্ট করছি। তাই নিজের ছবি যোগ করছি।
প্রশ্ন : ব্লগে জেনারেল, কর্নেল বা ব্লকের রেকর্ড কেমন?
উত্তর : সত্যটা হলো আমি বরাবরেই ঝামেলা এড়িয়ে চলি বা বলা যায় ঝামেলা করার মতো যথেস্ট সময় হাতে নাই বিধায় সকল প্রকার ক্যাচাল পোস্ট থেকে দূরে থাকি। তাই জেনারেল বা কর্নেল হবার সুযোগ হয়নি। আর কাউকেই এ পর্যন্ত আমি ব্লক করিনি বা একটা ছাড়া কারো কোন মন্তব্য মুছিনি। একটা মন্তব্য মুছেছি স্পাটাকার্স ৭১ নামের একজনের। এতো যন্ত্রনা এ ব্যাক্তিটি শুরু করেছিল যে বাধ্য হয়ে বাজে একটা মন্তব্য মুছে তাকে সাবধান করেছিলাম আমার ব্লগে না আসতে। তারপরও ব্লক করিনি। তবে আমাকে একমাত্র ব্লক করেছে জনাব ঠাকুর সাহেব। কেন করেছে তা আমার জানা নেই। তবে ভালো হয়েছে উনার ব্লগে আর কখনই ঢুকিনি, সময় বেচেঁ গেছে।
আমি বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। তর্ক হবে তবে গালাগালি হবে না। যুক্তি দিয়ে তর্কে যাবো, তাই বলে কাউকে ব্লক করে তার মুখ বন্ধ করার পক্ষে আমি নই।
প্রশ্ন : ব্লগের বাইরে কি কারো সাথে পরিচয় আছে?
উত্তর : ব্যাক্তি পরিচয় যেহেতু দূরত্বে রাখতাম তাই তেমন করে কারো সাথে পরিচিত হয়ে উঠিনি। অল্প কিছুদিন হলো অল্প ক'জনের সাথেই সামান্যই কথা হয়েছে। অনেক ভালো লেগেছিল তাদের সাথে পরিচিত হতে পেরে। এর বাইরেও দু'এক জনের সাথে আলাপ আলোচনা হয়েছিল তবে তা খুব একটা সুখকর বিষয় ছিল না। তবে নিজেকে সাধু ডিক্লার করা একজনের কাজকর্মে আমি খুবই বিরক্ত হয়েছি। তার সাথে পরিচয় না হলেই ভালো হতো, তার প্রতি সন্মানটা থাকতো।
প্রশ্ন : ব্লগে দেখলাম দান খয়রাত জনিত বিষয়ে নমিনেশন এ নাম দেখছি, তো আপনি কি হাজি মহসিন নাকি গৈারী সেন?
উত্তর : আমি নিতান্ত ছাপোষা মানুষ, দিন আনি দিন খাই টাইপের, নিজের সামর্থ্য সামান্য। তেমন কিছুই করি নাই। তবে কিছু করার চেস্টা করি সবসময়ই, যদিও সেটা কোনভাবেই উল্লেখ করার মতো কোন বিষয় নয়। কিন্তু ইচ্ছে আছে বড় কিছু করার, জানি না ভবিষ্যত কোথায় পথ দেখায়। তবে আমার সমস্যা হলো, আমি এক টাকা দান করলেও তার পাই পয়সা হিসেব নেই। আমি ঢোল পিটাতে পছন্দ করি না কিন্তু দানের টাকাটা ঠিকমত পৈাছেছে কিনা তার খবর আমি ১০০% রাখি। হিসাব নিকাশের মানুষ বলুন আর যাই বলুন, হিসাব না পেলে সে দিকে আমি হাটি না। কথা সোজা।
প্রশ্ন : ফেসবুক বা স্যোসাল মিডিয়ার এ্যাকাউন্ট নিয়ে জানতে চাই। মানে এক নাম্বার দুই নাম্বার তিন নাম্বার.......... কয়টা এ্যাকাউন্ট আছে?
উত্তর : আমার দু'টো এ্যাকাউন্ট। একটা একান্ত ব্যাক্তিগত এ্যাকাউন্ট, আরেকটা পাবলিক এ্যাকাউন্ট। এতোদিন পর্যন্ত এভাবেই মেইনটেইন করতাম কিন্তু রিসেন্টেলি ব্যাক্তিগত এ্যাকাউন্ট এ ব্লগার সহ বেশ কিছু আননোন পারসন এড করেছি। কারনটা আগেই বলেছি, বয়স হয়েছে, নুরু ভাই বা আর সবার মতো হঠাৎ করে মরে গেলাম আর ব্লগে দু'মাস পর শায়মা ইনভেস্টিগেশান করে বের করবে। সেটা আমি চাই না। আজ মরলে যাতে সবাই আজকেই খবর জানতে পারে তাই এড করেছি অনেককেই। তবে তাই বলে গণহারে ব্যাক্তিগত এ্যাকাউন্টে সবাইকে এড করিনি। যাদেরকে আমি কিছুটা হলেও চিনি বা যাদের লিখা আমি পড়েছি তাদেরকে এড করেছি। তবে আস্তে আস্তে সবাইকে এড করার ইচ্ছে আছে।
প্রশ্ন : ব্লগের প্রতি কি কোন প্রত্যাশা আছে?
উত্তর : ব্লগের প্রতি প্রত্যাশা/আশা/ভরসা/নিরাশার ফিরিস্তি অনেকবার তুলে ধরেছি। তার ধার ব্লগ কর্তৃপক্ষ ধারবে কি না সেটা একান্ত ব্লগ পলিসির উপর ডিপেন্ড করে। তবে ব্যাক্তিগতভাবে আমি চাই ব্লগ যেন নিজের আলোতে আলোকিত থাকে সবসময়। তবে সত্যটা হলো ব্লগের আলো ব্লগাররা। তাদের আলোকে না জ্বালিয়ে নিভানো, ভালো কিছু বহন করে না। অর্থ্যাৎ আমি ব্যাক্তিগতভাবে চাই সবসময়ই ব্লগ ও ব্লগারদের প্রত্যেকের সাথে সর্ম্পকটা অনেক গভীর থাকবে, অনেকটা আপন বন্ধুর মতো। তাই কারো দু:খে, কষ্টে, সুখে ও আনন্দে যেন একজন আরেকজনকে পাশে পায়, একটা বৃহৎ পরিবার।
প্রশ্ন: ব্লগ কর্তৃপক্ষের নেয়া কোন ডিসিশান নিয়ে নিয়ে কি দ্বিমত বা ভিন্নমত আছে/ছিল?
উত্তর: হাঁ ছিল। যেমন, লিখালিখির প্লেজারিজম বা সূত্র উল্লেখ করা নিয়ে বেশ হাউকাউ হয়েছিল কিছুদিন। ব্যাক্তিগতভাবে আমি কোনভাবেই প্লেজারিজম এর পক্ষে না। এ্যাকাডেমিক রাইটিং এ প্লেজারিজম জিরো টলারেন্স। দেশের বাইরে গেলেতো খবরই হয়ে যায় এ নিয়ে। এমন কি ছাত্রত্ব বাতিল এর ঘটনাও আছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে ব্লগ বিশ্ববিদ্যালয় নয়। এটা একদল লেখালেখি পাগল মানুষদের খেরোখাতা। কেউ নিজের মনের কথাগুলো লিখে, কেউ অন্যের লিখা নিজের ভাষায় লিখে, কেউ কোন লিখা পছন্দ হলে সেটা সরাসরি কপি করে। কেউ লিখা কপি করে তার সূত্র উল্লেখ করে আবার কেউ এর ধার ধারে না।
এখন কথা হলো ব্লগ কর্তৃপক্ষ কি অবস্থানে যেতে পারে এ প্লেজারিজম নিয়ে। শক্ত, মাঝারি বা নরম অবস্থান। আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, তাহলে আমি বলবো, যেহেতু ব্লগ কোন বিশ্ববিদ্যালয় নয় সেখানে নরম থেকে মাঝারি অবস্থানে যাওয়া যেতে পারে। কপি পেস্ট করলো বা সূত্র উল্লেখ করলো না বলে চোর চোট্টা গালি দিয়ে, ট্যাগিং করে, বিশেষ বিশেষ লিস্ট টাঙ্গিয়ে ব্লগে থেকে বের করে দেয়া কোন ভাবেই কোন সমাধান হতে পারে না। তাকে জানাতে হবে বোঝাতে হবে, প্লেজারিজম একটা অপরাধ। আজ আমি বুঝলে তারপর আমার ছেলে-মেয়ে আমার কাছ থেকে শিখবে। আমাকে ব্লগ থেকে বের করে দিলে আমিও শিখতে পারলাম না আর কাউকে শেখাতেও পারলাম না।
যেমন, নুরু ভাই। বিভিন্ন জন্ম মৃত্যু দিবসে কোন সেলিব্রেটি নিয়ে লিখতেন। আমরা সে লিখা পড়ে উল্লেখিত সেলিব্রেটি নিয়ে জানতে পারতাম। উনি হয়তো বেশ কিছু লিখা ঘেটে লিখাটা সম্পাদনা করতেন। কিন্তু তাই বলে তাঁকে চোর বলতে পারি না। আমি এ ধরনের লিখা পছন্দ করি কারন অনেক অজানা বিষয় জানতে পারি। হয়তো উনার সূত্র উল্লেখ করা উচিত ছিল। কিন্তু আপনাকে বুঝতে হবে উনি হয়তো প্লেজারিজম সম্পর্কে তেমন কিছু জানতেন না। বা জানলেও এটা নিয়ে তেমন কোন গুড়ুত্ব দিতেন না। একজন বয়স্ক মানুষের কাছে এর চেয়ে কি আশা করতে পারি। উনিতো কোন নাম পয়সা বা কোন কিছুর আশায় ব্লগে আসতেন না। শুধুমাত্র লিখাকে ভালোবেসে ব্লগে পরে থাকতেন।
যাহোক, আমার মনে হয়েছে ব্লগ কর্তৃপক্ষ মাঝে মাঝে মিছে চিলের পিছে দৈাড়ায়। এরকম দৈাড়াদৈাড়ির আগে একটু ভাবনা চিন্তা করা উচিত বলে মনে করি।
প্রশ্ন : ব্লগে কি কোন দু:খ আছে?
উত্তর : আছে, নয়ন ও নুরু ভাই নিয়ে একরাশ কষ্ট আছে আমার। আমি নিজের অজান্তেই কেঁদেছি এ দু'জনের জন্য। নিজেকে অপরাধী মনে হয়, উনাদের জন্য কিছু না করতে পারার অপরাধবোধে ভুগি। বিশেষকরে নুরু ভাই এর কাছে ক্ষমা চাইতাম যদি কোন সুযোগ থাকতো।
প্রশ্ন : আর প্রশ্ন করা যাবে না। অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে লিখাটা। আর কি কিছু বলার আছে সাক্ষাতকার শেষের আগে?
উত্তর : হাঁ, ব্লগ আমাকে অন্য এক জগতের ঠিকানা দিয়েছে। যে জগতটি আমাকে আনন্দ দিয়েছে, ভালোলাগা দিয়েছে, নিজেকে সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করেছে। আর পৈাছে দিয়েছে এক দল চমৎকার মানুষের কাছাকাছি, যাদের সাথে কোথায় যেন একটা মিল আছে। সে মিলটা সাহায্য করেছে একটা আপন ভুবন তৈরী করতে।
সবাই ভালো থাকুক। হ্যাপি ব্লগিং।
সোহানী
জানুয়ারী ২০২৩
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৯:৪০