এক ছিল পরীদের কবিতার রাজ্য। সেখানে ছিল এক দল নারী পুরুষ কবির আনাগোনা। তারা দিন রাত কবিতার জাল বুনতো আর মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াতো বিভিন্ন কবিদের ডালে ডালে। সে কবি রাজ্যে ছিল এক ছড়াকার। কথায় কথায় ছড়া বানিয়ে সবাইকে অবাক করে দিতে তার তুলনা ছিল না। ধরে নেই পরী ছড়া কবির নাম অরুন কুমার। সে কবি অরুন কুমার ছিল খুব জনপ্রিয়, বিশেষকরে নারী পরীদের কাছে জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। নারী পরীদের সাথে এ ডালে ও ডালে উড়ে বেড়িয়ে ছন্দের যাদুতে মুগ্ধ করে রাখতো তাদের। সুন্দর সময় কেটে যেত তার।
সে পরী রাজ্যে বাস করতো এক সুন্দরী কবি। ধরে নেই তার নাম কিরন মালা। সে সুন্দরী পরী কবি কিরন মালা চাইতো সবাই তাকে ঘিরে থাকুক, নাচুক, মুগ্ধ হয়ে কবিতা লিখুক, তার পায়ের কাছে আঁছড়ে পড়ুক। অন্য কোন নারী কবিকে ঘিরে কেউ কবিতা লিখুক সে কোনভাবেই সহ্য করতে পারতো না। সে সারাক্ষনই চাইতো সব কবিরা তার চারপাশে মাছির মতো ভনভন করুক। যার কারনে কবি অরুন কুমারের নারী পরীদের চারপাশে ঘুরঘুর করা সে সহ্যই করতে পারতো না। তাই সে একটা ফন্দি আঁটলো, একদিন গোপনে কবি অরুন কুমারকে লিখে পাঠালো ,
"তোমাকে রেখেছি গোপন কুঠুরিতে
তুমি যে আমার প্রিয় আঁধার"
সে কবিতা পেয়ে কবি অরুন কুমার দিশেহারা অবস্খা। ধেই ধেই করে নাচতে লাগলো। মনে মনে ভাবলো, হায় হায় কবি কিরন মালার মতো সুন্দরী কবিতো দেখি আমার প্রেমে হাবুডুব খাচ্ছে। দিব্দিকশূণ্য হয়ে ছুটলো কবি কিরন মালার কাছে। কবিতার প্রতি উত্তরে সুন্দরী কবিকে বললো,
হেই আমার কাটুস কুটুস, দুস্টু মিস্ট প্রান ভোমরা
তুই না আমার "স্রেফ তোকে চাই" "স্রেফ তোমাকে চাই"
নয় কবিতায়, নয় বইমেলায়, ভোরের বুকে লেবুপাতা ওমে।।
তারপর, তারপর.............
সে পরী যুগল উড়ে বেড়ায় বন বাদাড়ে, ঘুরে বেড়ায় একা একা লোকালয় ছেড়ে অনেক দূরে ফেসবুকের ম্যাসেন্জারের অলিতে গলিতে। আর তাই সব পরীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল নিল কবি অরুন কুমার। গভীর প্রেমে হাবুডুবু খেতে লাগলো সুন্দরী কবির। আর যে কিছুই চাই না, তার তো আছে কবি কিরন মালা। সারাদিনময় শুধুমাত্র নাচে সুন্দরী পরী কবি কিরন মালা ঘিরে।
তারপর, তারপর কি হলো!!
তারপর, একদিন সুন্দরী পরী কবি কিরন মালা যখন বুঝতে পারলো কবি অরুন কুমারের চারপাশে আর কেউ নেই তখন তাকে টা টা বাই বাই বলে উড়ে চলে গেল অন্য কোন অরুন কুমারের খোঁজে।
............. নাহ্ গল্পটা জমলো না। আসেন আরো চমকপ্রদ কোন গল্প শুনি।
এবারের রাজ্য হলো গদ্যের। সেটা কেমন??
এক ছিল এক গদ্যের রাজ্য। সেখানে ছিল এক নারী গদ্য লেখিকা। যদিও সে ভালো লিখতো কিন্তু সে চাইতো সবাই শুধু তাকে নিয়েই ব্যাস্ত থাকুক, তাকে নিয়ে কথা বলুক, খবরের পাতাগুলো তার খবর নিয়েই ভরে থাকুক। যখন খবরের পাতাগুলোতে তার খবর আসতো না, সে উম্মাদ হয়ে যেত। নতুন খবরের জন্ম দিতে মরিয়া হয়ে যেত। কখনো উস্কানীমূলক কোন লিখা লিখতো অথবা কখনো নামী দামী কোন লেখকের সয্যাসঙ্গী হয়ে তা কথা ছাপিয়ে দিতো। তার বেশ নাম ডাক ছড়িয়ে গেল দেশে বিদেশে।
তারপর তারপর কি হলো........
তো সে লেখিকাকে দেখে হালের একজন গদ্য লেখিকা ভাবলো, আরে এতো দারুন ব্যাপার!! সর্টকাটেতো ভালোই নাম কামানো যায়, সেলিব্রেটি হওয়া যায়, এসাইলাম পাওয়া যায়......!!! তারপর সে শুরু করলো উল্টাপাল্টা সিক্সটি নাইন লিখালিখি। কখনো ধর্ম, কখনো রাজনীতি, কখনো পুরুষসমাজ নিয়ে উস্কানী মূলক লিখা। তারপরও যখন দেখলো খুব একটা কাজ হচ্ছে না তখন নামীদামী কারো সয্যাসঙ্গীনী হয়ে তার সুক্ষাতিসুক্ষ বিবরন নিয়ে বই ছাপিয়ে দিলেন। .............. আর যায় কোথায়, কঠিন সেলিব্রেটি। এরকম ফ্রিতে অন্যের বেডরুমের খবর পেতে সবাই খুব পছন্দ করে তাই এ ধরনের লেখক/লেখিকার খুব সহজেই সেলিব্রেটি হয়। সাক্ষাতকার, এসাইলাম, টক শো, অনলাইন, বই, ম্যাগাজিন, টিভি........ তার মুখ দেখানো আর বন্ধই হয় না আর।।।
তারপর, তারপর......... ধুর মুড শেষ। আজ আর নাহ্ .......।
সোহানী
মার্চ ২০২৩
ছবি সূত্র: গুগুল মামা
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০২৩ সকাল ১০:৫১