"আই হেইট পলিটিক্স" এর দলের সদস্য হয়েও এ লিখাটি লিখেছি কারন আন্দোলনে আমরা দেশের বাইরে থেকে কিভাবে সংশ্লিষ্ট হয়েছি তা বিশ্বাবাসীকে জানাতে। আজ থেকে ১০ বছর পর যখন কোন গবেষনা হবে তখন হয়তো আমার এ লিখাটা কেউ পড়বে।
সেই জুলাই এর মাঝ থেকেই যখন কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু হয় তখনো আমরা সাধারন মানুষ তা সমর্থন করলেও তেমন করে আন্দোলনে মাঠে নামিনি। কিন্তু যখন ছাত্রলীগ সাধারন ছাত্র-ছাত্রীদের উপর হামলা করে ও পরবর্তীতে পুলিশ সরাসরি হত্যা শুরু করে তখনই সাধারন মানুষগুলো আস্তে আস্তে প্রতিবাদ শুরু করে। টরোন্টোর বাংলা টাউন থেকেই মূলত সবাই প্রতিবাদ শুরু করলেও বাকি শহরগুলোতো তা দ্রুতই ছড়িয়ে পরে। ব্যানার নিয়ে, পতাকা হাতে নিয়ে কিংবা লাল/সবুজ গেন্জি গায়ে আমরা সাধারন মানুষরা ছাত্রদের আন্দোলনের সাথে একাত্বতা ঘোষনা করে বিভিন্ন প্রতিবাদ সভার যোগ দেই।
তবে এ আয়োজন বড় কোন ব্যানারে ছিল না, কোন দল বা গোষ্ঠীর উদ্যোগে ছিল না, আমার মতো সাধারন মানুষরাই এ আয়োজন শুরু করে। সোস্যাল মিডিয়ায় সরব হয়ে বিভিন্নভাবে সাপোর্ট দেয়, প্রোফাইল লাল করা বা সাঈদ/মুগ্ধ/ফারহানের ছবি শেয়ার করে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দেয় সমর্থনকারীরা। অনেকেই এরই মাঝে বিভিন্নভাবে ইন্টারন্যাশানাল লবিং শুরু করে। কানাডার বিভিন্ন নিউজ মিডিয়ায় তারা যোগাযোগ করে, সাংবাদিকদের সাথে কথা বলে বা মেইল দেয় ও সাধারন কানাডিয়ানদের মনোযোগ আকর্ষন করে। যার কারনে কানাডার বেশ বড় মাপের বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদ প্রচার শুরু করে।
জুলাই এর ২১ তারিখ আমি ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে একটা প্রতিবাদ সভার ডাক দেই। আমি যে এলাকায় থাকি সেখানে বাংলাদেশী খুব কম। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে মাত্র একদিনের নোটিশে শ'খানেক মানুষ সে সভায় জড়ো হয়। এবং অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে এসেছিল প্রতিবাদ সভায় যোগ দিতে। সে মানুষগুলোর মাঝে যে দেশের প্রতি ভালোবাসা দেখেছি, বুকে যে আগুন দেখেছি তা ছিল অবিশ্বাস্য।
এদিকে আরেক গ্রুপের সরাসরি মাঠে নেমেছিল ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে। এরা মূলত সোস্যাল মিডিয়ায় এ্যাক্টিভ ছিল ও বিভিন্নভাবে হত্যাকান্ডকে সাপোর্ট দিচ্ছিল। আর হাসিনার সাথে সাথে মেট্রোরেলের জন্য কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়ে ফেলছিল। তারপর ৫ই আগষ্টের পর ভারতীয় মিডিয়া যতরকমের গুজব ছিল তারা তা ঢালাও ভাবে সমর্থন করে, বিশ্বাস করে ও প্রচার করতে থাকে সর্বত্র। তারপর এক সময় "এমন স্বাধীনতাই কি চেয়েছিলাম" বলে হাউকাউ শুরু করা ছিল তাদের অন্যতম কাজ।
এখন আমার প্রশ্ন ছিল, এরা কারা যারা এতো এতো মৃত্যু দেখেও নির্বিকার ছিল, বরং উল্লসিত ছিল। তাদের মাঝে দু:খবোধতো দূরে থাক বরং হত্যাকান্ড বা হাজার কোটির লুটপাটের ঘটনায় তাদের কোন বিকার ছিল না বা এখনো নেই।
আমি ভাবার চেস্টা করলাম, এরা কারা? দেশের বাইরে এরা থাকে তাই হালুয়া রুটির ভাগ সরাসরি পাবার সুযোগ কম। তারপরও তারা কেন অন্ধের মতো সমর্থন করছে!!! তাই সম্ভাব্য উত্তরটা সাজানোর চেস্টা করছি .........
এক, এদের মাঝে বড় অংশই হলো ধান্ধাবাজ। এরাই হলো কানাডার বেগম পাড়া তৈরী করা গ্রুপ। বিগত স্বৈরাচার আমলে লুটপাটের টাকা পাচার করতে সাহায্য করা কিংবা কানাডায় বাড়ি, গাড়ি, ভিসা করতে চাচ্ছিল তাদেরকে প্রত্যক্ষ পরোক্ষ সাহায্য করছে এরা। দেশের লুটপাটের টাকায় এ ধান্ধাবাজ দালালরা এখানে মিলিয়ন ডলারের মালিক বনে যায় রাতারাতি। এবং ক্ষমতাসীনদের ছায়াতলে দেশেও এরা ছিল ব্যাপক ক্ষমতাবান। দাবার গুটি উল্টে যাবার কারনে তাদের এখন মাথা গরম। আয়ের উৎস বন্ধ হবার সম্ভাবনা। তাই তারা সমর্থক ছিল হত্যাকান্ডের, কোনভাবেই চায়নি হাসিনা সরকার ক্ষমতা থেকে চলে যাক।
দুই, একটা অংশ হলো সনাতনী ধর্মের লোকজন। কেন যেন এরা বরাবরেই নিজেদেরকে সর্ববঞ্চিত মনে করে। দেশে কিছু হলেই তারা নিজেদেরকে সংখ্যালঘু হিসাবে আক্রান্ত বলে হাউকাউ শুরু করে দেয়। পার্শ্ববর্তী দেশকে তারা ত্রাতা হিসেবে দেখে সবসময় আর তাদের উসকানী মূলক কর্মকান্ডে সর্বদা নিজেদেরকে উজ্জীবিত রাখে। দেশে আরো অন্য ধর্মের লোকজনক আছে কিন্তু তাদেরকে দেখিনি কিছু হলেই অন্য কোন দেশের কাছে কান্নাকাটি করতে। যাহোক, সনাতনী ধর্মের মানুষজনের সমস্যা হলো এরা এ দেশকে কখনই আপন করে নিতে পারে নাই, সবসময়ই নিজেদেরকে সংখ্যালঘুই মনে করে। পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে বিগত আওয়ামীর সুসম্পর্ক থাকার কারনে তারা হয়তো নিরাপদ ভাবতো, তাই দল ক্ষমতা হারানোর পর রাগে ক্ষোভে অন্ধ এখন। যে কোনভাবেই চায় আবার ক্ষমতায় আসুক হাসিনা সরকার।
তিন, আরেকটা অংশ হলো দলকানা গ্রুপ। এদের বুদ্ধি/বিবেচনা/আবেগ/মনুষত্ব সব দলের খাঁচায় বন্ধী। আপা আর দল ছাড়া এরা আর কিছুই ভাবতে পারে না। দলের বিভিন্ন চেয়ার দখলে ছিল এরা আর সেই চেয়ার দেখিয়ে ছড়ি ঘুরাতো সবখানে। এখন সে চেয়ার হারিয়ে তাদের মাথা খারাপ। তারা এখন উগ্রভাবে আফসোসলীগ হিসেবে সর্বত্র ক্যাচালে ব্যাস্ত। এমন কি কেউ কেউ আন্দোলন সমর্থনকারীদেরকে ব্যাক্তিগতভাবে বা স্যােসাল মিডিয়ায় আক্রমন করেই চলছে।
আমার কথা আমি বল্লাম, মানলে মানবেন নাকি মানবেন না সেটা একান্তই আপনার ইচ্ছে।
কিছু ছবি শেয়ার করলাম আমাদের প্রতিবাদের।
আরেকটা অনুরোধ করি, আন্দোলনের সময়কালীন যে সব লিখা পোস্ট হয়েছিল কেউ কি আছেন তার একটা সামারি করবেন? আমি কোনভাবেই সময় করতে পারছি না, তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
সবাই অনেক ভালো থাকেন।
সোহানী
সেপ্টেম্বর ২০২৪
বি:দ্র: পোস্টারগুলো আমি আমার মেয়ে তৈরী করেছি।