somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

★প্রসংগ পথশিশু ও শিশু যৌন হয়রানি★ (২য় পর্ব)

০৯ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

★প্রসংগ পথশিশু ও শিশু যৌন হয়রানি★ (১ম পর্ব)

বাংলাদেশে সামাজিকভাবেই ছেলে শিশুদের যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের বিষয়ে
একধরণের নিরবতা কিংবা এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা আছে।

"বাংলাদেশে ছেলেশিশুদের উপরও যে যৌন নির্যাতন হয়, সেটাই তো আমাদের সমাজ এখনো গ্রহণ করতে পারেনি।
এখানে পথশিশুরা নির্যাতনের শিকার হয়, আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এধরণের ঘটনা আমরা পেয়েছি।
তবে সবচেয়ে বেশি যৌন নির্যাতনের ঘটনা হয় পরিবারে। কারণ, সেখানে অপরাধীদের জন্য শিশুদের কাছে পাওয়াটা সহজ।
ছেলেশিশুদের কাছে পাওয়াটা আরো সহজ। আমরা এখনো শুধু মেয়েশিশুদের নিয়েই সচেতন, ছেলেশিশুর যৌন নিরাপত্তা আমাদের মাথাতেই নেই। এমনকি এরকম ঘটনা ঘটলেও সেটা গোপন করার প্রবণতা বেশি।"

পরিণত বয়সে আসার পর অনেকে পুরুষই এখন শিশু অবস্থায় তার উপর যৌন নির্যাতনের বিষয়ে মুখ খুলছেন।

প্রতিবেশির হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলো নয় বছর বয়সী রাকিব (ছদ্মনাম)।
এরপর থেকেই তার আচরণ অস্বাভাবিক হয়ে যায়। সারাদিন চুপচাপ থাকে।
অপরিচিত কাউকে দেখলেই ভয় পায়

রাকিবের বাবা বলছিলেন, তার আরেকটি কন্যা সন্তান আছে। যাকে নিয়ে তার পরিবার সবসময়ই সচেতন থাকতো।
কিন্তু তার ছেলেরও যে বিপদ হতে পারে সে বিষয়ে কোন ধারণাই ছিলো না তার।

"ঘটনার দিন আমার ছেলেটাকে এক প্রতিবেশি তার বাড়িতে ডাইকা নিয়া যায়। আমরা জানতাম না।
লোকটা তারে খাবারের লোভ দেখাইছিলো। সারাদিন ছেলেটার কোন খোঁজ পাই নাই। সন্ধ্যায় যখন ছেলেটা বাড়িতে আইলো তখন কেমন জানি করতেছিলো। চুপচাপ ছিলো। কিন্তু ওর প্যান্টের পিছনে রক্ত দেখে সন্দেহ হয় ওর নানির।" বলছিলেন রাকিবের বাবা।

"ওরে আমরা জিগাইছি কী হইছে? কোন কথা বলে না। পরে যখন মাইরের ভয় দেখাইছে, তখন সে নির্যাতনের কথা কইছে"।

"লোকটা ওরে মাইরা ফেলার ডর দেখাইছে। সেইজন্যে সে কথা কইতে চায় নাই। কিন্তু আমরা ওর প্যান্টে রক্ত দেইখ্যাই ঘটনা বুঝতে পারছিলাম।"

এই ঘটনায় রাকিবের পরিবার থানায় একটি মামলা করেছিলো। গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে।
কিন্তু এরকম অনেক যৌন নির্যাতন কিংবা ধর্ষণের ঘটনায় মামলা দায়ের হওয়া দূরে থাক অনেক সময় ঘটনা প্রকাশই হয় না।

এরকমই একজন সুমন আহমেদ (ছদ্মনাম)।
১৪ বছর বয়সে যৌন নির্যাতনের শিকার হলেও পরবর্তী ১৫ বছর ধরে সে ঘটনা তিনি গোপনেই রেখেছেন।

"আমার বয়স তখন ১৪ বছর। বেড়াতে গিয়েছিলাম কাজিনের বাসায়। সেখানে রাতে আমাকে থাকতে দেয়া হয় আমার চেয়ে ১৫ বছরের বড় একজনের সঙ্গে। রাতে হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়, দেখতে পাই ফিজিক্যালি আমি তার পুরো কন্ট্রোলে। সে প্রচণ্ড জোরে কিস করছিলো, শরীরের বিভিন্ন অংশে টাচ করছিলো। আমি চেষ্টা করেও তার কব্জা থেকে বের হতে পারছিলাম না। ভয়ে আমি কোন চিৎকারও করতে পারিনি।"

"এই ঘটনার কথা আমি কখনোই কাউকে বলিনি। আমার বা তার পরিবারকেও না। কারণ, পরিবারে তার একটা ভালো অবস্থান ছিলো। আর এ ধরণের ঘটনা যে ঘটতে পারে বা ঘটলে কি করতে হবে সে বিষয়েও আমার কোন ধারণা ছিলো না।"

বাংলাদেশে এরকম ছেলেশিশুর উপর যৌন র্নিযাতনের ঘটনা বিভিন্ন সময়ই শোনা যায়।

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ১১ জন ছেলেশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
২০১৮ সালে সংখ্যাটি ছিলো ১৮ জন। আর ২০১৯ সালে ১৫ জন।
কিন্তু বাস্তব চিত্র আরো ভয়াবহ বলেই মনে করে শিশু অধিকার সংগঠনগুলো।

বাংলাদেশে সামাজিকভাবেই ছেলে শিশুদের যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের বিষয়ে
একধরণের নিরবতা কিংবা এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা আছে।

"বাংলাদেশে ছেলেশিশুদের উপরও যে যৌন নির্যাতন হয়, সেটাই তো আমাদের সমাজ এখনো গ্রহণ করতে পারেনি। এখানে পথশিশুরা নির্যাতনের শিকার হয়, আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এধরণের ঘটনা আমরা পেয়েছি। তবে সবচেয়ে বেশি যৌন নির্যাতনের ঘটনা হয় পরিবারে। কারণ, সেখানে অপরাধীদের জন্য শিশুদের কাছে পাওয়াটা সহজ। ছেলেশিশুদের কাছে পাওয়াটা আরো সহজ। আমরা এখনো শুধু মেয়েশিশুদের নিয়েই সচেতন, ছেলেশিশুর যৌন নিরাপত্তা আমাদের মাথাতেই নেই। এমনকি এরকম ঘটনা ঘটলেও সেটা গোপন করার প্রবণতা বেশি।"

ছেলেশিশু ধর্ষণের মামলা কোন আইনে?


রাকিবের বাবা তার ছেলেশিশুর ধর্ষণের ঘটনায় থানায় যে মামলাটি করেছিলেন সে মামলাটি দায়ের হয়েছিলো দণ্ডবিধির-৩৭৭ ধারায়।
অথচ মামলাটি হওয়ার কথা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে।
কারণ ৩৭৭ ধারায় শিশুর উপর যৌন নির্যাতনের বিষয়ে কোন বক্তব্য নেই। ধারাটি মূলত: প্রাকৃতিক নিয়মের বাইরে স্বেচ্ছায় যৌন সঙ্গম বা সমকামিতার অপরাধ বিষয়ে।

এরকম আরো দুটি ছেলেশিশু ধর্ষণের ঘটনার কথা বলছি,
ঘটনার মামলা হয়েছিলো কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের দুটি থানায়


দেখা যায়, দুটি থানাতেই মামলা দায়ের হয়েছে দণ্ডবিধি'র ৩৭৭ ধারায়।

কিন্তু শিশু ধর্ষণের অপরাধের মামলা কিভাবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে না হয়ে দণ্ডবিধি'র ৩৭৭ ধারায় হচ্ছে এমন প্রশ্নে পুলিশ সদর দপ্তরের একজন মুখপাত্র বলছেন, অসাবধানতাবশতঃ এমনটা হচ্ছে। তবে এ ধরণের মামলার সংখ্যা খুবই কম।

তিনি বলছিলেন, "২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন হওয়ার আগে ছেলে শিশু ধর্ষণ বা নির্যাতনের ঘটনায় মামলা দায়ের হতো দণ্ডবিধিতে। দীর্ঘদিনের প্রচলিত রীতির কারণে কোন কোন পুলিশ কর্মকর্তা অসাবধানতাবশতঃ এখনো দণ্ডবিধিতেই মামলা নিচ্ছেন। তবে এ ধরণের ঘটনা খুবই কম। এবং অভিযোগপত্র তৈরির সময় এই ভুল সংশোধন করা হয়।"

ধর্ষণের সংজ্ঞা নিয়ে আইনে অস্পষ্টতা


ছেলেশিশু ধর্ষণের মামলা যে ভুল আইনে রজু হচ্ছে তার আরেকটা বড় কারণ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ছেলেশিশুর যৌন নির্যাতনের বিষয়টি স্পষ্ট নয়।
দণ্ডবিধি'র ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণের সংজ্ঞা দেয়া আছে। এই সংজ্ঞাটিই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে গ্রহণ করা হয়েছে।
সেই সংজ্ঞায় স্পষ্টভাবেই পুরুষের মাধ্যমে নারী'র ধর্ষণের শিকার হওয়ার কথা বলা হয়েছে।


তবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে 'শিশু'র কথা বলা হলেও সেটা যে ছেলেশিশুর নির্যাতনকেও অন্তর্ভূক্ত করছে সেটা বুঝতে পারেন না অনেকেই।

আইনে কিছু পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তা মনে করছি আমি।
"ধর্ষনের সংজ্ঞায় নারীর পাশাপাশি শিশুকেও অন্তর্ভূক্ত করা প্রয়োজন।
এবং একইসঙ্গে শিশুর সংজ্ঞাতেও ছেলেশিশুর বিষয়টি উল্লেখ করা যেতে পারে।
তাহলে ধর্ষণ মানেই যে সেটা নারী কিংবা মেয়ে শিশু ধর্ষণ, সে ধারণার অবলুপ্তি ঘটবে।"
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:০০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×