somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রিসের প্রারম্ভিক ইতিহাস

০৭ ই মার্চ, ২০১০ দুপুর ১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গ্রিসের মানচিত্র। যেনবা গ্রিসের ইতিহাস দিয়েই পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে আধুনিক মানুষের সত্যিকার অগ্রযাত্রাটি সূচিত হয়েছিল, কালক্রমে যে অগ্রযাত্রার যুক্ত হয়েছে শিক্ষাসংস্কৃতি ও ইতিহাস-দর্শনের এক আশ্চর্য অধ্যায়। ৫০৮ খ্রিস্টপূর্বে প্রাচীন গ্রিসের এথেন্স নগরটি মানবসভ্যতার প্রথম গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিত হয়। এ সময় মুক্ত স্বাধীন পুরুষেরা নগর পরিচালনার সিদ্ধান্তের জন্য ভোট দানের অনুমতি লাভ করে। গ্রিক শব্দ demos মানে জনগন। জনগনের শাসনের মানে হল democratia এবং এটিও একটি গ্রিক শব্দ ; এবং এই দেম্যোক্রাতিয়া শব্দটি থেকেই উদ্ভব হয়েছে ইংরেজি democracy শব্দটি।


গ্রিসের মানচিত্র।

এখন যে দেশটির নাম গ্রিস- সেখানে কয়েক হাজার বছর ধরেই মানুষ বসবাস করে আসছে। তবে সুপ্রাচীন প্রাগৈতিহাসিক গ্রিসের আদি অধিবাসীদের সম্বন্ধে সন্তোষজনক তেমন তথ্য এখনও জোটেনি। অবশ্যি প্রতœতাত্ত্বকগন ৬০০০ থেকে ৩০০০ খ্রিস্টপূর্ব প্রাগৈতিহাসিক গ্রিসের অধিবাসীদের সম্বন্ধে জরুরি তথ্যাদি উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছেন; পন্ডিতেরা মনে করেন আদি গ্রিকরা চাষবাস করত আর তারা বাস করত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রামীণ কমিউনিটিতে।


গ্রিস: হাজার বছর আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানব বসতি।

৩০০০ থেকে ১৬০০ খ্রিস্টপূর্ব-এই সময়কালকেই সাধারণভাবে গ্রিক সংস্কৃতি তথা পশ্চিমা সভ্যতার প্রারম্ভ মনে করা হয়। এই সময়কালে গ্রিসের মূলভূখন্ডে বসবাসকারী মানুষের দৈনিন্দন জীবনযাত্রা কিংবা আচার-প্রথা সম্বন্ধে তেমন কিছু জানা যায়নি। তাদের পূর্বপুরুষের মতন তারাও সম্ভবত চাষাবাদই করত। যা হোক, ঐ সময়ের ক্রিট দ্বীপের উন্নত সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। সে সম্পর্কে প্রচুর তথ্য জানা গিয়েছে। রাজা মিনোস ক্রিট দ্বীপ শাসন করতেন। তিনি কিংবদন্তী হলেও ঐতিহাসিক ব্যক্তি বলেই গবেষকদের ধারণা। ক্রিট দ্বীপের রাজধানী ছিল নসস।


ক্রিট দ্বীপের মানচিত্র

ক্রিট দ্বীপের অধিবাসীদের বলা হয় মিনোয়ান। ২২০০ খ্রিস্টপূর্বে সভ্যতাটির সূচনা হয়েছিল। মিনোয়ানরা আশ্চর্য সব প্রাসাদ নির্মাণ করেছিল। সে প্রাসাদে ছিল আধুনিক পয়ঃপ্রণালী। শক্ত হাতে তারা সমুদ্র শাসন করেছিল। ১৪৫০ খ্রিস্টপূর্ব নাগাদ ক্রিটসভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেলেও সভ্যতাটি ধর্ম শিল্পকলা ও সংস্কৃতিক দিক দিয়ে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল।



মিনোয়ান আর্ট



ক্রিট দ্বীপের প্রাসাদ। আজও টিকে রয়েছে।

১৬৫০ খ্রিস্টপূর্বে মাইসিনি পরিনত গ্রিসের সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দুতে। সমৃদ্ধশালী ও শক্তিশালী ওই নগরটির অবস্থান ছিল পেলোপেননেসাসে। পেলোপেননেসাসে-র লোকজন যে ভাষায় কথা বলত সে ভাষাই পরবর্তীকালে হয়ে উঠেছে আধুনিক গ্রিকভাষা।



পেলোপেননেসাস। পশ্চিমে আইয়োনিও সমুদ্র, দক্ষিণে ভূমধ্যসাগর; উত্তরে বিখ্যাত দেলফি, পুবে এথেন্স নগর।

যাই হোক। ১৬৫০ খ্রিস্টপূর্বের পর থেকে গ্রিসের মূলভূমিতে আরও অনেক নগর গড়ে উঠতে লাগল। মাইসিনি-র সমকালীন আরও তিনটি নগর হল থিবস, স্পার্টা এবং এথেন্স।
গ্রিক সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে নগরও প্রতিষ্ঠিত হচ্ছিল। এই নগরগুলি ছিল স্বাধীন ও স্বতন্ত্র। তবে দুটি বিষয় এদের ঐক্যবদ্ধ করেছিল। ১. ভাষা। ২. অভিন্ন ঐতিহ্য। তারা ভাবত তারা হেললেন- এর বংশধর । হেললেন ছিলেন গ্রিকজাতির কিংবদন্তী জনক। তারা নিজেদের বলত ‘হেলেনেস’। আজও আধুনিক গ্রিসের নাম হেল্লাস।



ট্রয়।

আজ আমরা যাদের গ্রিক বলে জানি, সেসময় তারা ঐকবদ্ধ ছিল না। সমগ্র গ্রিসের কোনও একক শাসক ছিল না। যুদ্ধও হত। ট্রয় নগর ছিল এশিয়া মাইনরের (বর্তমান তুরস্ক) পশ্চিমে। একাদশ খ্রিস্টপূর্বে ট্রয় নগরটি ধ্বংস করা হয়। এই নগরটি ধ্বংসে জন্য সর্বপ্রথম গ্রিকরা ঐকবদ্ধ হয়। হেলেন ছিলেন স্পাটার রাজা মেনেলাউসের স্ত্রী। সুন্দরী হেলেন কে উদ্ধারের জন্যেই এই ঐক্যবদ্ধ অভিযান পরিচলানা করা হয়।



স্পার্টা।

ট্রয় অভিযানের পর গ্রিক মূলভূমির অনেক নগর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। গ্রিকরা এই ধ্বংসলীলার জন্য দায়ি করে গ্রিকভাষী এক জাতিকে। সেই জাতির নাম ডোরিয়ান।



ডোরিয়ান অভিযান। মধ্য গ্রিসে ছোট এলাকার নাম ছিল ডোরিস। ডোরিয়ানদের উৎপত্তি সেখানেই মনে করা হয়। সম্ভবত এরা ক্রিটেও বাস করত। ঐতিহাসিক হেরোডোটাস এদের এথনোস। এই এথনোস শব্দ থেকেই উদ্ভব হয়ে ইংরেজি এথনিক শব্দটি।



গ্রিক বর্ণমালা।

৮০০ খ্রিস্টপূর্ব। এ সময়ে ফিনিশিয় বর্ণমালার আদর্শে গ্রিক বর্ণমালার উদ্ভব হয়। এর ফলে গ্রিসের মূলভূমি ও আশেপাশের দ্বীপসমূহে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নতি লক্ষ করা যায়। ঐ সময়ে গ্রিকরা ‘পলিস’ এ বাস করত। ‘পলিস’ অর্থ নগর রাষ্ট্র। এর পৃথক রাজনৈতিক সত্তা ছিল।


একটি গ্রিক পলিস এর কল্পচিত্র ; ৫০৮ খ্রিস্টপূর্বে প্রাচীন গ্রিসের এথেন্স নগরটি মানবসভ্যতার প্রথম গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিত হয়। এ সময় মুক্ত স্বাধীন পুরুষেরা নগর পরিচালনার সিদ্ধান্তের জন্য ভোট দানের অনুমতি লাভ করে। গ্রিক শব্দ demos মানে জনগন। জনগনের শাসনের মানে হল democratia এবং এটিও একটি গ্রিক শব্দ ; এবং এই দেম্যোক্রাতিয়া শব্দটি থেকেই উদ্ভব হয়েছে ইংরেজি democracy শব্দটি।

অবশ্য নাগরিকরাই ভোট দিতে পারত। যে কোনও এথেন্সবাসীই গ্রিক নাগরিক ছিল না। ওই সময়ে অনেক গ্রিক পরিবারে দাস ছিল। দাসরা আসলে ছিল যুদ্ধবন্দি। দাসেরা এথেন্সের নাগরিক ছিল না। তাদের ভোটাধিকার ছিল না। প্রাচীন গ্রিসের নগররাষ্ট্রে নারীদেরও ভোটদানের অধিকার ছিল না।



গ্রিক দাস।



গ্রিক নারী।

এথেনিয় গনতন্ত্রের উদ্ভবকালে অর্থাৎ ৫ম ও ৬ষ্ট শতকে -দর্শন ইতিহাস চিকিৎসাশাস্ত্র এবং শিল্পকলায় প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হয়। এই উন্নতি ছিল এথেন্সকেন্দ্রিক; ঐ সময়কার বিশ্বের জ্ঞানীগুণিরা এথেন্স নগরে এসে জড়ো হতেন। এই সময়কালকে গ্রিসের স্বর্ণযুগ বা প্লেরিক্লিয় স্বর্ণযুগ বলা হয়। পেরিক্লেস ছিলেন ঐ সময়ের শাসক।



পেরিক্লেস।

ম্যাসিডোনিয়া রাজ্যটি ছিল উত্তর গ্রিসে। ৩৩৮ খ্রিস্টপূর্বে ম্যাসিডোনিয়ার রাজা ২য় ফিলিপ গ্রিসের অধিকংশ স্থান দখল করেন। তার মৃত্যুর পর তার ছেলে আলেকজান্দার এই দখলদারিত্ব অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্যে সামরিক অভিযান পরিচালনা করেন।



আলেকজান্দার



আলেকজান্দার এর উন্নতির শিখরে তার সাম্রাজ্য পুবে ভারতবর্ষ অবধি বিস্তৃত ছিল।

খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকের দিকে রোমান সাম্রাজ্যের উত্থান ঘটে। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের মাঝামাঝি গ্রিকসাম্রাজ্যটি রোমান সাম্রাজ্যে নিয়ন্ত্রনে চলে যায়। তবে গ্রিকদের জীবনধারা, আচার- প্রথা ধর্মবিশ্বাস ও উপকথা রোমানরা গ্রহন করে।


সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১০ দুপুর ১:৪৪
২২টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×