somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আর্য জাতির পরিচয়

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ককেশীয় মহাজাতি গোষ্ঠীর একটি বৃহৎ নৃগোষ্ঠী।এদের আদি পুরুষ ১ লক্ষ ২৫ হাজার বৎসর আগে এরা আফ্রিকা থেকে বের হয়ে ইউরোপ,দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়া শুরু করে।৭৫ হাজার বৎসর আগে এদের একটি দল আরব উপদ্বীপে পৌঁছায়।আর ৬০ হাজার বৎসরের ভিতরে এরা এশিয়া সংলগ্ন ইউরোপে বসতি স্থাপন করে।৪০হাজার বৎসরে ভিতরে ইউরোপের রাইন নদী থেকে তুরস্ক পর্যন্ত
বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল।খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫ হাজার বৎসরের
দিকে এদের একটি দানিয়ুব নদীর তীরবর্তী বিশাল তৃণাঞ্চলে বসবাস করা শুরু করে।সে সময়ে বসবাস এদের ছিল মূল পেশা ছিল পশুপালন।জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং আন্তঃগোষ্ঠী . দ্বন্দ্বের সূত্রে এদের একটি দল এই অঞ্চল ত্যাগ করে দার্দেনেলিশ প্রণালী হয়ে এশিয়া মাইনরে প্রবেশ করে।
খ্রিষ্টপূর্ব ২৫ হাজার বৎসরের দিকে এরা ইউফ্রেটিস-টাইগ্রিস নদী পার হয়ে মধ্য এশিয়ার বিস্তৃর্ণঅঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।পরে এদের একটি দল চলে যায় ইউরোপের দিকে,অপর দলটি চলে আসে ইরানের দিকে।আর খ্রিষ্টপূর্ব ১৮০০অব্দের দিকে ইরানের পশ্চিমাঞ্চলের অধিবাসীরা ভারতে প্রবেশ করা। ইরানে যারা থেকে গিয়েছিল তাদেরকে বলা হয় ইন্দো-
ইরানীয়।আর ভারতে যারা প্রবেশ করেছিল, তাদেরকে বলা হয় আর্য।

ছোটো ছোটো দলে এরা এদের ভারতে প্রবেশের প্রক্রিয়াটি প্রায় ১৫০০ অব্দ পর্যন্ত চলেছিল।আর্যদের রচিত ঋগবেদের ভাষার সাথে জেন্দভেস্তা ভাষার অদ্ভুদ মিল রয়েছে।ধারণা করা হয়, ইরানের প্রাচীন ভাষা এবং আর্যদের ভাষা
একই ছিল। হাজার হাজার বৎসর অতিক্রম করে উভয় ভাষা স্বতন্ত্র রূপ লাভ করেছিল। এছাড়া উভয় ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত দেবদেবীদেরও অনেক মিল আছে। জেন্দভেস্তা
বরুণকে দেবরাজ ও ইন্দ্রকে মন্দ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ঋগবেদে বরুণ জল ও মেঘের দেবতা
আর ইন্দ্রকে দেবরাজ।কেউ কেউ এমনও বলছেন যে কশ্যপ মুণির নামানুসারে কাস্পিয়ান হ্রদের নাম করণ করা হয়েছে। কয়েকজন পশ্চিমা নৃবিজ্ঞানিও এ মতের সমর্থন করেছেন।এমতবাদ কে আউট অব ইন্ডিয়া(Out of India) হিসাবে অভিহিত করা হয।

আর্যরা ভারতের সিন্ধু নদীর অববাহিকা জুড়ে স্থানী. দ্রাবিড়দের বিতারিত করে আধিপত্য বিস্তার করতে সমর্থ হয়েছিল।ঋগ্বেদ থেকে জানা যায় আর্যরা আফগানিস্তান থেকে পাঞ্জাব পর্যন্ত আধিপত্য বিস্তার করেছিল।এই বেদে যমুনা, গঙ্গা নদীর নাম নেই। ঋগ্বেদের আমলে এরা হিমালয় পর্বতমালা সংলগ্ন উত্তরভারতের সাথে পরিচিত হয়েছিল। এই কারণে হিমালয় পর্বতের নাম পাওয়া যায় ঋগ্বেদে।কিন্তু বিন্ধ্যপর্বতের নাম পাওয়া যায় না।সেই বিচারে ধারণা করা যায়,ঋগ্বেদের আমলে বিন্ধ্যপর্বত পর্যন্ত আর্যরা পৌঁছাতে পারে নি।হিংস্র জীবজন্তুর মধ্যে ঋগ্বেদে বাঘের নাম নেই। কারণ,ভারতবর্ষের বাঘের দেখা পাওয়া যায় ভার্তবর্ষের
পূর্বাঞ্চলে। সে কারণেই বলা যায়, ভারতের পূর্বাঞ্চলের বঙ্গদেশ থেকে এরা অনেকদূরে ছিল।এই সময় পাঞ্চাব অঞ্চলের সিন্ধুসহ অন্যান্য নদী-তীরবর্তী অঞ্চলে
আর্যরা বসতি স্থাপন করেছিল।

ঋগ্বেদ খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ বা ১১০০ অব্দের দিকে রচিত।এই সূত্রে বলা যায়,আফগানিস্তান থেকে পাঞ্জাব অঞ্চলের ভিতরে আর্যদের বিচরণ ছিল।ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের
অধিবাসীদের উপর আর্যদের প্রভাব তখনো পড়ে নি।পাঞ্জাব এবং এর আশপাশের কিছু অংশে আর্যরা বসতি স্থাপন করে
নিজেদেরকে সুস্থির অবস্থায় আনতে সক্ষম হয়েছিল।এই সময় এরা পাথর, ব্রোঞ্জ এবং তামার তৈরি কুঠার কোদাল ইত্যাদি ব্যবহার করতো।এই সব অস্ত্রপাতি দিয়ে সেকালের বিশাল বনজঙ্গল পরিষ্কার করে করে গঙ্গানদী পর্যন্ত পৌঁছাতে অনেক সময় ব্যয় করেছিল।অবশ্য খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০ অব্দের দিকে আর্যরা লৌহের ব্যবহার শিখেছিল।
কিন্তু ব্যাপকভাবে লৌহের ব্যবহার করতে পেরেছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০অব্দের দিকে।এরপর থেকে এদের অগ্রযাত্রা দ্রুততর হতে থাকে।শক্ত এবং ধারালো অস্ত্র তৈরির জন্য লোহার আর্য সভ্যতাকে আরও সুস্থির করতে সহায়তা
করেছিল।এরা লোহার কুঠার ব্যবহার করে দ্রুত জঙ্গল পরিষ্কার করে, লোহার তৈরি লাঙ্গলের ফলার সাহায্য ব্যাপক কৃষি কাজ করতে সক্ষম হয়েছিল।সে কারণে, সে
সময়ে ঋষিরা নানা রকম বিষয় নিয়ে ভাববার সময় পেয়েছিল।খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০ অব্দের দিকে আর্য ঋষিরা রচনা করেছিল উপনিষদ।

এই সময় অনার্য গোষ্ঠীদের সাথে তাদের প্রায়ই সংঘাত হতো।আক্রমণপরায়ণ অনার্যদের এরা নাম দিয়েছিল দস্যু। একসময় আর্যদের ছোটো ছোটো গোষ্ঠী এইসব দস্যুদের দমন করে,ছোটো ছোটো রাজ্য স্থাপন করতে সক্ষম
হয়েছিল।পরবর্তী প্রায় ২০০ বৎসর এরা ক্রমান্বয়ে এই ভাবে গাঙ্গেয় উপত্যকা ধরে ধরে পূর্ব ভারতের
দিকে এগিয়ে চলেছিল।এই সময় স্থানীয় ভাষার সাথে
সংস্কৃত ভাষার সংমিশ্রণে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে, স্থানীয় ভাষাগুলো নতুন রূপ লাভ করেছিল।খ্রিষ্ট-পুর্ব ৫৬৭ অব্দের দিকে গৌতম বুদ্ধের জন্ম হয়। নেপালের
দক্ষিণাংশে এবং প্রাচীন ভারতবর্ষের যোধপুর রাজ্য নিয়ে
একটি রাজপুত রাজ্য ছিল।এই রাজ্যের রাজধানী ছিল কপিলাবস্তু।গৌতম বুদ্ধ ছিলেন সেই রাজ্যের
রাজপুত্র।গৌতম বুদ্ধের সূত্রে ভারতীয় আর্য দর্শনে নতুন মাত্রা
যুক্ত হয়েছিল।প্রথমদিকে আর্য রাজার বুদ্ধের দর্শনকে
আন্তরিকভাবেই গ্রহণ করেছিলেন।এবং আর্য ঋষিদের ভিতরে বৌদ্ধ দর্শনের চর্চা ছিল। মহাভারতে আদিপর্বে রাজা দুষ্মন্ত মৃগয়ায় গিয়ে হরিণের পিছু পিছু কণ্ব মুনিরআশ্রমে গিয়ে-বৌদ্ধমতালম্বী লোকেদের ধর্ম্মালোচনা দেখতে পেয়েছিলেন।
[মহাভারত আদিপর্ব ৭০ অধ্যায়]।মহাভারতের এই অধ্যায় অনুসরণে বলা যায় -রাজা দুষ্মন্তের পুত্র ভরত রাজ্য লাভ করেছিলেন খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০-৪০০ অব্দের ভিতরে।আর মহাভারত রচিত হয়েছিল সম্ভবত খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ অব্দের ভিতরে।

কোথাও বা শব্দ সংস্কারসম্পন্ন দ্বিজগণ বেদগান দ্বারা সেই
ব্রহ্মলোক-সদৃশ আশ্রমকে নিনাদিত করিতেছেন; কোন স্থলে
যজ্ঞানুষ্ঠানক্রম, পুরাণ, ন্যায়,তত্ত্ব, আত্মবিবেক, শব্দশাস্ত্র,
ছন্দঃ নিরুক্ত ও বেদবেদাঙ্গ প্রভৃতি নানা শাস্ত্রে পারদর্শী,
বিশেষ কার্য্যজ্ঞ,মোক্ষধর্ম্মপরায়ণ, উহাপোহ(তর্করহিত] সিদ্ধান্ত-কুশল, দ্রব্য-কর্ম্মের গুণজ্ঞ,কার্য্যকারণবেত্তা, পক্ষী ও বানর প্রভৃতি জীবগণের বাক্যার্থবোদ্ধা মহর্ষিগণ নানাশাস্ত্রের বিচার করিতেছেন এবং বৌদ্ধমতালম্বী লোকেরা নিজ ধর্ম্মের আলোচনাকরিতেছেন।

ধর্মীয় দর্শনের ধারায় আরও একটি ধর্মের আবির্ভাব ঘটলো মহাবীরের সূত্রে। মহাবীর জন্মগ্রহণ করেন খ্রিষ্টপূর্ব ৫৪০ অব্দের দিকে।এই ধর্মের ও সনাতন আর্যধর্মের প্রবল ধাক্কা লেগেছিল। মূলত বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের কারণে উত্তরভারতে আর্যদের সাথে অনার্যদের সম্মিলনকে ত্বরান্বিত করেছিল দ্রুত।কালক্রমে উত্তরভারতে আর্য নামক পৃথক জাতি সত্তা বিলীন হয়ে গিয়েছিল।

বর্তমানে ভারতবর্ষে আর্য নামে কোনো পৃথক নৃগোষ্ঠী নেই।কিন্তু ধর্ম,ভাষাসহ সাংস্কৃতিক নানা উপাদান ভারতবর্ষের বিভিন্ন ভাষভিত্তিক জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে
বিদ্যামান রয়েছে।

তথ্যসূত্রঃ বাংলাপিডিয়া , আর্যজন ও সিন্ধু সভ্যতা (শামসুদ্দোহা মানিক )
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×