somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশু তুহিন হত্যাকাণ্ড এবং আমাদের পশ্চাদপৎ পল্লী সমাজ

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে ৫ বছরের শিশু তুহিনকে নৃশংসভাবে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। হত্যাকারীরা শিশুর কান ও লিঙ্গ কেটে নিয়েছে। হত্যার পর লাশটি গাছের সাথে রশি দিয়ে বেঁধে রেখেছে। তাকে হত্যায় ব্যবহৃত দুটি ছুরি তার পেটের আটকে দিয়েছে।পুলিশী তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে শিশুটিকে ঘুমের মধ্যেই কোলে করে বাইরে নিয়ে গিয়েছিলো তার পিতা। আর কান ও লিঙ্গ কেটে হত্যা করেছিলো তার চাচা। আর এই নির্মম হত্যাকাণ্ডটি ঘটানোর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলো , নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করার জন্য প্রতিপক্ষকে মিথ্যা মামলায় ফাসিয়ে দেয়া। সেই উদ্দেশ্যে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি দুইটির হাতলে প্রতিপক্ষের দুজনের নাম লিখে শিশুটির পেটে ঢুকিয়ে দিয়েছিলো তারা!!

তুহিন হত্যাকাণ্ডের পরে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন একজন সহজ সরল গ্রামীণ পিতার হৃদয়ে এরকম পিশাচের বসবাস ছিলো কি করে?

তুহিনের বাবার মেন্টাল সাইকোলজি নিয়ে অনেক লেখাই লিখেছেন অনেকে। আমি সেদিকে যাচ্ছিনা। আমার কাছে আপত্তির বিষয় হলো গ্রামীণ সমাজকে একেবারে চোখ বন্ধ করে সহজ সরল সার্টিফাই করার বিষয়টি নিয়ে।

আমাদের পল্লী জনজীবনকে আমরা যে রকম সহজ সরল বলে বিবেচনা করে থাকি , বাস্তবিক পরিস্থিতি আসলে তেমনটা নয়। শহুরে জীবনে অর্গানাইজড ক্রাইম যেমন অপহরণ , গ্যাংওয়ার , ড্রাগ কার্টেল , ছিনতাই ইত্যাদির প্রাদুর্ভাব গ্রামের তুলনায় বেশী হলেও , খুন , ধর্ষণ , নারী নির্যাতন , ফতোয়াবাজী ইত্যাদি আদিম অপরাধসমূহ বেশীরভাগ সংগঠিত হয় গ্রামাঞ্চলেই। বিশেষ করে মারামারি দাঙ্গা হাঙ্গামার সময়ে গ্রামের বিবদমান পক্ষগুলো যে নানাধরণের অস্ত্রসহ কি নৃশংসভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে , তা আসলে বলে বোঝানো সম্ভব নয়।

আমার পেশাগত কারণে আমি দেখেছি , চট্টগ্রামের সাতকানিয়া , বাশখালী , ফটিকছড়ির মতো দাঙ্গার খনি অঞ্চলগুলোতে এলাকাভিত্তিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি শত শত মামলা হতে গ্রুপে গ্রুপে। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার খাগরিয়া এলাকার এরকম একটি গ্রুপের অর্ধশতাধিক মামলায় দাড়াতে হয়েছিলো আমাকে একসময়। সে ধরণের মামলাগুলোতে এখন আর যাইনা তেমন একটা , কিন্তু কদিন পরপর সেই পরিচিত মুখগুলোকে সারি বেধেঁ আদালতে উঠতে দেখলেই বোঝা যায় যে , দুই পক্ষের মধ্যে মামলার ঝামেলা কমেনি বিন্দুমাত্রও।

তার উপরে "গোদের বিষফোঁড়ার " মতোই এদেশের গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এক শ্রেণীর টাউট আর দালাল শ্রেণী। এদের কাজই হচ্ছে নানারকম ঝুটঝামেলায় লোকজনকে পরামর্শ প্রদান করা। আর জমিজমা নিয়ে ঝগড়া হলেও এদের মুখস্থ পরামর্শ হচ্ছে ,

"একটা নারী নির্যাতন মামলা করে দাও। একদম সোজা হয়ে যাবে। আদালতের সবকিছু আমি সামলাবো"

সামলান ঠিকই , কিন্তু খরচটা দিতে হয় বিবদমান পক্ষদেরকেই। আমার এক শ্রেণীর আইনজীবী বন্ধুরা আবার এসব গ্রাম্য টাউটদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন , কমিশনের ভিত্তিতে মামলা পাওয়ার আশায়। আর যেহেতু কালো কোট পড়া "স্যার" দের প্রতি একধরনের ভীতি আর অনাস্থা রয়েছে , প্রান্তিক জনগণের মাঝে , সেকারণে সরাসরি আইনজীবীদের কাছে যাওয়ার চেয়ে এসব টাউটদের কাছেই বেশী যায় তারা। আর ফুলে ফেপে ওঠে এদের পরের মাথায় কাঠাল ভেঙে খাওয়ার ব্যবসা।

তুহিনের হত্যাকাণ্ডের একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করলাম , পেটের মধ্যে যে দুটি ছুরি মারা হয়েছিলো , ছুরিগুলোর বাটে লেখা ছিলো প্রতিপক্ষের দুইজনের নাম। খুনী বাপ চাচা ভেবেছিলো , ছুরির বাটে নাম লেখা দেখলেই প্রতিপক্ষের লোকজনকে সন্দেহ করে ধরে নিয়ে যাবে পুলিশ। কিন্তু খুনী যে কখনো নিজের নাম লেখা ছুরি খুনের পরে ফেলে যেতে পারেনা , এটা তাদের অশিক্ষিত মস্তিষ্কে কখনোই আসেনি। আমার ধারণা কোন গ্রাম্য টাউটই এই বুদ্ধি দিয়েছে , আর তারা তা করেছেও প্রতিপক্ষকে ফাসাতে। অবশ্য তুহিনের বাবার যে পরিমাণ অতীত ক্রাইম রেকর্ড আছে , তাতে এই কুবুদ্ধিটা তার নিজের মাথাতেও আসা অস্বাভাবিক না।

এদেশের গ্রাম এবং শহরের মধ্যে এখনো অনেক দূরত্ব। এদেশের গ্রামের সিংহভাগ মানুষ এখনো অসুস্থ হলে ডাক্তারের চেয়ে বেশী বিশ্বাস রাখে মন্দিরের চরণামৃত বা মাজারের পানি পড়ায়। মৃগী রোগী বা মানসিক অপ্রকৃতস্থ মানুষকে দেখলেই তারা মনে করে জিনে বা ভূতে ধরেছে। আর শুরু হয় ওঝা ডেকে ঝাড়ু বা লাঠিপেটা। আইনগত জটিলতায় ও তেমনি তারা আজো বিশ্বাস করে ছুটে যায় পুলিশ বা আইনজীবীর পরিবর্তে এসব মেম্বার , মাতব্বর , টাউট , দালালদের কাছে।

শিক্ষার আলোর প্রসার অনেক হয়েছে। কিন্তু দরকার আরো অনেক অনেক বেশী। নাহলে এই অন্ধকারের অমানিসার অবসানে আশা রবে সুদুর পরাহত।
















সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৩৮
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×