যা কিছু সুন্দর তা-ই বেদনাময়; যেমন প্রেম, সম্পর্ক, স্মৃতি; যেমন লাবণ্যর মুখ। কিন্তু যা কিছু বেদনার, তার সবই সুন্দর নয়; যেমন প্রিয়জনের মৃত্যু। সারা রাত শুয়ে ছিলাম, ঘুম আসেনি। এ নতুন কিছু নয়, ঘুম আমার প্রায়ই আসে না। রাতভর ছটফট করি। ঘুমের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বিছানায় গিয়ে ঘুমহীন জেগে থাকা খুব কষ্টের। ‘এই বুঝি ঘুম এল’ বা ‘আরেকটু অপেক্ষা করলেই ঘুম আসবে’ ভাবতে-ভাবতে শুয়েই থাকা হয় শুধু, ওঠাও হয় না, কিছু করাও হয় না, কেবল বিছানা-বালিশের সঙ্গে অবিরাম অহেতুক যুদ্ধ!
সারা রাত ঘুম হয়নি বলে খুব ভোরেই উঠে পড়ি। মনে হয়, বাইরে থেকে ঘুরে আসি একটু। ভোরের হাওয়া গায়ে মাখার আনন্দই আলাদা। মনে পড়ে, আমার কোনো ব্যাপারে বাবার কোনো মাথাব্যথা ছিল না, শুধু প্রতিদিন ভোরে ডেকে বলতেন—‘ওঠ খোকা, সকাল হয়ে গেছে। একটু হাঁটাহাঁটি কর। ভোরের বাতাসে স্বাস্থ্য ভালো হয়।’ হায়, আমি কখনো স্বাস্থ্যসচেতন ছিলাম না। নানা রকম অসুখবিসুখ আমার নিত্যসঙ্গী। সেই ছোটবেলা থেকেই আমি ছিলাম রোগে ভোগা জীর্ণ-শীর্ণ দুর্বল বালক। শরীরে সহ্য হতো না বলে খেলাধুলাও করতে পারতাম না, অল্পে হাঁফিয়ে উঠতাম, জ্বর-টর এসে একাকার হয়ে যেত। বড় হয়েও অবস্থা পাল্টায়নি। আমার অসুস্থতা কমেনি, বরং পত্রপল্লবে বিকশিত হয়েছে। কত রকম সমস্যায় যে ভুগি আমি, তার ইয়ত্তা নেই। প্রতিদিন সকালে আমার ঘুম ভাঙে কোনো না কোনো যন্ত্রণা নিয়ে। হয় মাইগ্রেনের যন্ত্রণা, নইলে পায়ে তীব্র ব্যথা, পিঠ বা ঘাড়ে ব্যথা, আর এর কোনোটাই না হলে বুকে এক ধরনের অস্বস্তি—প্যালপিটিশন। ঢাকার সব ধরনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বার ঘোরা হয়ে গেছে আমার, কোনো লাভ হয়নি। চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্ভবত আমার এসব যন্ত্রণার সমাধান দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না।
আমি এসব নির্জনতা, নৈঃশব্দ্য, একাকীত্ব, অপ্রকাশিত প্রেম আর ভালো লাগা নিয়ে বেঁচে থাকি! মনে হয়, মৃত্যু-মুহূর্তের স্টেটমেন্ট-টা একটু বদলে দেওয়া যায়—‘টেল দেম, আই হ্যাভ হ্যাড এ পেইনফুল লাইফ, বাট আই হ্যাড এনজয়েড ইট!’