পরম্পরা-১ প্রথম অংশ
Click This Link
সেজদাকে তেমন ভয় লাগে না কনকের। অথচ সেজদা অনেক লম্বা চওড়া। সকাল বেলা ছোলা খেয়ে আখড়ায় যায়, লাঠি-কুস্তি খেলে, ডন বৈঠক করে। স্কুলের মাঠে বিকালে ছেলেরা বল খেলে, ওখানেও মাঝে মাঝে যায়। সেজদার হাতের লেখা খুব সুন্দর , মাঝে মাঝে গান করে বন্ধুদের সাথে । কিন্তু এত ব্যস্ত যে কনকের সাথে তেমন কথা বলে না আজকাল। আগে কিন্তু ডাকত, পদ্য শেখাত এমনকি স্কুলের পড়াও ধরত মাঝে মাঝে। দাদা এন্ট্রান্স পরীক্ষার পর কলেজে যাবে , পিসী বলেছে। দাদা কলকাতায় পড়বে। কলেজ দেখতে কেমন কনক জানে না । তবে নাম শুনলে কেমন বাক্স বাক্স মনে হয়। সেখানে সবাই খুব গম্ভীর , দিনরাত্তির পড়াশোনা চলছে । গেটে পাগড়ি পরা দুজন পাহারাদার । কনকদের মত ছেলেপিলেরা ঢুকতে পারে না নিশ্চয়ই।
সেজদা না থাকলে কনকের খুব বিপদ। পিসী বকা দিলে কেউ কিছু বলবে না। পিসী সেজদাকে খুব ভালবাসে । বলে বংশের বাতি। গায়ের রং গোরা, লেখাপড়ায় ভাল, ঠিক যেন নন্দ দুলাল। কনক কিন্তু কালো। আর মেয়ে হলে যে পিন্ড দিতে পারে না , তাই পিসী দাদাদের বেশি ভালবাসে। কনক জানে 'পুত' নামক নরক থেকে উদ্ধার করে পুত্র । পিসী তাকে বলেছে ঠাকুরকে ডাকতে যেন তার একটা ভাই হয়। তাহলে পিসীর কাছে যে ছোট মাকড়ি দুটো আছে কনককে দেবে। পিসীতো বিধবা তাই কানে মাকড়ি পরে না। পিসীর রান্না হয় সবার আগে, নিরামিষ সব হয়ে গেলে আমিষের কড়াই বসে। রাতে কোনদিন সাগু কোনদিন ছাতু। সারাদিন বকাঝকা করলেও রাতে পিসী কনককে রোজ একটু মেখে দেবেই । নারকোল দিয়ে মাখাটা কনকের বেশি প্রিয়।
কনক মন দিয়ে ঠাকুরকে ডাকে- ভগবান আমাকে একটা ভাই দাও। মাকড়ির জন্য বলে না , বলে পিসী খুশি হবে তাই। এবার ইতুপূজার সংক্রান্তিতেও এটাই চেয়েছে মনে মনে। কিন্তু মুখ ফুটে জানায়নি। জানালে পিসী অনেক আদর করত নিশ্চয়ই। ইতুঠাকুরের অনেক মহিমা। সেই যে ব্রাহ্মণ, মেয়েরা পিঠে খেতে চাওয়ায় জঙ্গলে রেখে এসেছিল রাগ করে । ইতুপূজো করেই তো মেয়েদুটো কত সুখি হল । তারা ভক্তিভরে ইতুর পূজো করে বর চাইল ---''মা আমাদের সকল দুঃখ দূর হোক, একশত ভাই হোক, রাজার ঘরে বিয়ে হোক ..." । কনক চোখ বুজে একমনে ডেকেছে 'আমার একটা ভাই হোক মা, বড় স্কুলে ভর্তি করে দাও মা ! '
বড় স্কুলের কথা শুনলে পিসী খুব রেগে যাবে। পিসী বলেছে মেয়েরা পড়লে পতির আয়ু কমে, সংসারের অকল্যাণ হয়। কনকের শুনে খুব কষ্ট হয়। সে চায় না সংসারের ক্ষতি হোক। পতিকে তো দেখেনি কনক , তবে তিনি গুরুজন। তাঁর আয়ু যেন অক্ষয় থাকে। সে যদি আরও পড়তে পারে পিসীকে ভাগবত পড়ে শোনাবে দাদার মত । সংস্কৃত পিসী বোঝে না , কনকও বোঝে না । কিন্তু ভাগবত শুনলে পূণ্য হয় । একমনে রোজ ঠাকুরকে ডাকে আমার পড়ায় যেন সংসারের অমঙ্গল না হয় .... পিসী যেন ভাইয়ের মুখ দেখে । বিড়বিড় করে জপে সন্ধ্যারতির পর --সেজদার মত বুদ্ধি দাও ঠাকুর, আমাকে উচু ক্লাশে ভর্তি করে দাও ......