Click This Link - পরম্পরা-১
ক্লাশ আওয়ারে একটা টিউটোরিয়াল নিল অজন্তা, একটা পঁয়ত্রিশেই শেষ। পরীক্ষা কমিটির কাজ ধরবে কি না ভাবছিল । সকালে আসার সময় ছোটটার গা গরম দেখেছে , মন ব্যস্ত। দোনামনা করে হাঁটা ধরলো। দুপুরের দিকে রিক্সা কম পাওয়া যায় । দূরত্বও বেশি না, মিনিট বার লাগে ঘড়ি ধরে হাঁটলে। একদিক দিয়ে ভাল, মাসে শখানেক টাকা বেঁচে যায় । আসার সময় তাড়া থাকে হয়ে ওঠে না । শ' দুয়েক ছাত্র এক সেকশনেই , হাঁপাতে হাঁপাতে এসে লেকচার দেয়া যায় না । দুটো ছোটবাচ্চা, ননদ, দেবর মিলে ৬ জনের রান্না। সুবিমল ঢাকার পোস্টিং হওয়ার পর থেকে রান্নার ঝামেলা কিছুটা কম। সকালে ভাত খেয়ে নেয় বাকিরা। অজন্তার চা দিয়ে দুটো টোস্ট কি মুড়ি খেলেই হয়। সুবিমল তিনবেলা ভাত খায় না । সকালে বাড়িশুদ্ধ রুটি বানান বেশ ঝক্কি, আবার আলাদা করে রুটির জন্য একটা কিছু ভাজা বা তরকারি করা লাগে। ভুষির উনুনের সামনে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না অজন্তা কিন্তু কিছু করার নেই। তাপসী মেয়ে ধরতে গেলে রান্নাঘরে পুরোটা ওরই থাকা লাগে। সাপ্লাইয়ের জল তুলে দিয়ে তাপসী দুধ আনতে বেরোয়। এর মধ্যে রমুর অফিসের সময় হয়ে যায়, নটার আগে দম ফেলার সময় থাকে না অজন্তার। রমু ততক্ষণ মেয়ে দুটোকে দেখে । তাপসী ফিরে এলে রমুকে বিদায় করে অজন্তা রেডি হয়। জিন্টু সকালে পড়তে যায় টিউটরের কাছে, একফাঁকে এসে সকালের খাবার খেয়ে যায়। জিন্টুর সময় থাকলে বড় মেয়েটাকে কিছু খাওয়াতে বসে অজন্তার আর সম্ভব হয়ে ওঠে না। ক্লাশে যাওয়ার আগে একবার চোখ বুলাতে হয়, দশবছর আগের পড়া, তারপর সিলেবাস পাল্টেছে ।
কলেজে জয়েন করেছে বছর দেড়েক, ছোটমেয়েটা হবার আগে। চাকরি পেয়ে হাঁফ ছেড়েছে দুজন। দেনাগুলো আস্তে আস্তে শোধ করতে হবে। গলা পর্যন্ত ডুবে আছে, তারপর সংসার বড় হয়ে গেল। রমুর জন্য এখনও অনেক টাকার ওষুধ লাগে প্রতিমাসে । ব্যাংকের বেতনের টাকা ওর দাদা ধরতে দেবে না , বলে বিয়ের জন্য রাখা থাক। ভাই বোনে এই নিয়ে কয়েকবার হয়ে গেছে। রমু দাদার জন্য খুব ফিল করে , অজন্তা জানে । অসুখ নিয়ে বেচারার মন খারাপ সব সময়। যেন ট্রিটমেন্ট হয়েই অনর্থক ঝামেলা বেড়েছে। অজন্তা যতটা পারে বোঝায় , সময় এমন থাকবে না সব ঠিক হয়ে যাবে ।
বাড়ির কাছাকাছি হতেই কে একজন বের হয়ে গেল মনে হয়। অজন্তা কড়া নেড়েই যাচ্ছে। কোন সাড়াশব্দ নেই। তাপসী খুব বেখেয়াল। মন উড়ু উড়ু সারাক্ষণ। পাড়াটা ভাল না, বিশেষ করে দুপুর বেলা চুরি ছ্যাঁচড়ামির আড্ডা। এই বয়সের মেয়ে ঘরে রাখা মুস্কিল । তার উপর সুবিমল নেই এই আটমাস । কোন কারণ নেই দেখবে দু তিনটে রিক্সা সারাক্ষণ রাস্তার উপর দাঁড়ানো। খানিকবাদে বেল বাজায়-কে গেল আসল বাসায় সারাক্ষণ নজর রাখছে। তাপসীকে বাইরে পাঠাতে ইচ্ছে করে না , কিন্তু মুদিদোকানের কাজ কে করবে। জিন্টু নিজে পড়ে আবার টিউশনি করে , ওকে তো সবসময় পাওয়া যায় না । আগে একবার একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। একটা নতুন মেয়ে দিন পনের ছিল, একদিন বাড়ি এসে দেখে হাওয়া সাথে বিছানার নিচে রাখা শ তিনেক টাকা, অজন্তার দুটো আটপৌরে শাড়ি --রান্নাঘরের টুকটাক কিছু মসলা। রক্ষে যে আর কাউকে ঢোকায়নি বাসার মধ্যে । হয়তো দুরভিসন্ধি কিছু ছিল না , বাড়ির জন্য খুব মন টানছিল তাই হাতের কাছে যা পেয়েছে নিয়ে বিদায়।
কিন্তু ব্যাপারটা তো সিরিয়াস। সন্ধ্যা হতেই মদের আসর বসে আলতাফ ডাক্তারের বাড়ির পেছনে । এই বয়সের ছেলেদের কিছু বলা যায় না , কেউ কেউ রীতিমত ভাল ঘরের সন্তান। এখন লেখাপড়া শিকেয় তুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। জিন্টুকে নিয়ে একসময় ভাবনা হত । এখন পর্যন্ত অবশ্য তেমন কিছু দেখেনি, তবে গানবাজনা আড্ডার দিকে নজর বেশি। অজন্তার ভরসা আছে ---ভাইবোন দুজনেই দাদাকে অসম্ভব মেনে চলে। ওর শাশুড়িকেও বলতে শুনেছে সে কথা । সুবিমল অসফল হবে না। ওরা বুঝবে , এমন কিছু করবে না যাতে দাদা বৌদির মাথা হেঁট হয়।
তাপসী দরজা খুলেই দুমদাম রান্নাঘরে চলে গেল। ঘরময় এলোবিলি । মামন ঘুমাচ্ছে, মাথার কাছে ফিডার উল্টে দুধে ভিজে গেছে বালিশ। গায়ে হাত দিয়ে ছ্যাৎ করে ওঠে অজন্তা, মাথায় জল দিতে হবে । বাবুনি ছুটে এসে জড়িয়ে ধরল 'মা তাপসিদি বোনুকে বকেছে-বোনু কাঁদছিল খুব '
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০০৯ সকাল ৭:৫৮