বাংলাদেশের ৪৭ বছরের হিসাব -নিকাশে আজ একটি প্রশ্ন আবারো করতে ইচ্ছে করে, এদেশের প্রচলিত গণতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র আর ২০১৪এর আওয়ামীলীগের নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র(অনেকের মতে ) হতে নিপীড়িত দেশবাসী তথা রাষ্ট্র তুলনামূলক ভাবে ভাল বা মন্দ কতটুকু কি পেলো??? আমার বিচারে, লুটতরাজ আর প্রতিহিংসার বর্ণনা দিতে হলে রচনার মত লিখেও সম্ভবত শেষ করা কঠিন হবে। তবে, উন্নয়ন একেবারেই হাতে গোনা বিধায় কোন তন্ত্র হতে কি পেলাম তা দেখা যেতে পারে । মনে হয়, এদেশের সব গণতান্ত্রিক সরকারই কমবেশি গণতন্ত্রকে অশ্রদ্ধা করেছে এবং জনগণ ও রাষ্ট্রের মান উন্নয়নে মনোনিবেশ করেনি বা করতে পারেনি। ফলে, এদেশের বিদ্যমান তথাকথিত গণতান্ত্রিক সব সরকারের নিকট হতেই রাষ্ট্র ও জনগণের মান উন্নয়নে মনোনিবেশ করার চেয়ে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা ও লুটতরাজে মগ্ন থাকার বিষয়টি জনতার বিবেকের আদালতে প্রতিভাত হয়েছে। এবার প্রশ্ন করা যাক, স্বৈরাচারের স্বৈরতন্ত্র থেকে জাতি কি পেলো ? যেখানে, এদেশের প্রচলিত গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে প্রত্যাশা অনুযায়ী দৃশ্যমান তেমন কিছু পাওয়া যায়নি, সেখানে স্বৈরাচারের স্বৈরতন্ত্র থেকে কিছু আশা করা বাতুলতা মাত্র। তবে,সত্য বলতে দ্বিধা নাই যে, এরশাদের স্বৈরতন্ত্র এদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যে অবদান রেখেছিল, আজো এর প্রশংসা শুনতে পাওয়া যায়। আজকের উপজেলা ব্যবস্থাও নাকি এরশাদেরই প্রবর্তিত । তাহলে, স্বৈরতন্ত্র তথাকথিত গণতন্ত্রের চেয়ে এদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই । এবার জানা যাক, ২০১৪ এর আওয়ামীলীগ সরকারের নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র হতে জাতি কি পেলো? ২০১৪ এর ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন এক কথায় অনাকাঙ্খিত । তবে, মুরব্বীগণ কথায় বলেন, সাপে বর হয়েছে । অর্থাৎ অভিশাপ আজ যেন জাতির জন্য বড় এক আশীর্বাদে পরিনত হয়েছে । এদেশের স্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোন দিন স্বপ্নেও কি ভেবেছে যে , তার কোন শত্রুও তাঁকে হত্যা করতে পারে? উল্টো ভাবে জনগণও কি এমনটি ভাবতে পেরেছে যে, জাতির জনকের হত্যার বিচার বাংলার মাটিতে আদৌ সম্ভব? কিন্তু প্রমানিত হলো যে, সত্যের জয় অনিবার্য । যুদ্ধাপরাধির বিচারে দেশ কলংকমুক্ত হবে , স্বপ্ন দেখেছে এমন বুকের পাটা ছিল কই কয়জনার? কিন্তু বাস্তবে বেঈমানদের অহংকার চুন্ন হল তো। সুখে আছে কি? জাতিয় চার নেতা ও বুদ্ধিজীবী হত্যার দম্ভকারীরা? ২১শে আগস্টের মত নির্লজ্জ নারকীয় হত্যাকাণ্ড ও জজমিঞার মিথ্যাচারের কসাইয়ের দল বিচারের মুখোমুখি হয়ে আজ জেলে ও পালিয়ে, এর অবদানও কী ২০১৪ এর নির্বাচিত সরকারের নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রের নয়? তাহলে প্রশ্ন আসে, এসব কিভাবে সম্ভব হলো? পূর্বেই বলেছিলাম, সাপে বর হয়েছে! সবই সৃষ্টিকর্তার ইঙ্গিতেই সম্ভব হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। ধরুন, ২০১৪ এর ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহণ করে ৭০/৮০টি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারলেও সরকারের একচ্ছত্র আধিপত্য বাধাগ্রস্ত হয়ে সংসদের ভেতর ও বাহিরে উত্তপ্ত হতে পারতো এবং এতে সরকারের মনোবলে ধাক্কা লেগে এতসব হত্যা কান্ডের বিচার নিশ্চিত করা ও রাষ্ট্র ও জনগণের মান উন্নয়নে সফলতা বাধাগ্রস্ত হতে পারতো । জানা যেতে পারে, ২০১৪ এর ৫ই জানুয়ারির সমালোচিত নির্বাচিত সরকারের নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র হতে জাতি আর কী পেলো? প্রথমেই এক কথায় উত্তর হবে, ডিজিটাল বাংলাদেশ । বিশ্ব ব্যাংককে অঙ্গুলি প্রদর্শন করে, ইতিহাসের বীর কন্যা শেখ হাসিনা এদেশের নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ করার অবদানও অনেকটাই ২০১৪ এর আওয়ামীলীগ সরকারের নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রের নয় কি? দেশী - বিদেশী দোসরদের ষড়যন্ত্র ও চাপ উপেক্ষা করে যুদ্ধাপরাধির বিচার বাস্তবায়ন ও বাংলাদেশের কুলশিত ইতিহাস কলংকমুক্ত করা কোন সময়ের অবদান? একবাক্যে বলা অত্যুক্তি নয় যে, তার কৃতিত্বও ২০১৪ এর ৫ই জানুয়ারির সমালোচিত নির্বাচিত সরকারের নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রেরই । সমুদ্র থেকে মহাশূন্য পর্যন্ত যে বিজয়, তাও ২০১৪ এর আওয়ামীলীগ সরকারের নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রের। দৃশ্যমান উন্নয়নের বিষয়টি জনগণ জ্ঞাত আছে বলে ২০১৪ এর উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে লিখাটিকে দীর্ঘায়িত করতে চাই না বলে, মেগা প্রকল্পের ব্যাপারে কিছু বলার সুযোগ কম। যা হউক, এমন সমালোচিত ২০১৪ এর ৫ই জানুয়ারি, গণতন্ত্রের জন্য অভিশাপ হলেও রাষ্ট্র ও এদেশের বঞ্চিত নিপীড়িত মানুষের জন্য অনেকাংশেই আশীর্বাদ বলে মনে করি । অনেকে বলেন, উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের জন্য নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র নাকি খারাপ নয় ।
তাহলে প্রশ্নটি এমন দাঁড়ালো কি? নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রই উওম, আর পূর্ণ গণতন্ত্রই অধমাধম। না, একেবারেই তা নয়। বরং,পূর্ণ গণতন্ত্রের পা দিয়ে উন্নয়নের পথচলা অধিকতর নিরাপদ, যা একটি রাষ্ট্র ও জাতিকে ঐক্য, শান্তি, সাম্য আর প্রগতির মহামিলনের বন্ধনকে সুদৃঢ় করে।তবে, ২০১৪ এর এত গুণ কীর্তন কেন? কারণ, জননেত্রী বা দেশনেত্রী কিংবা পল্লীবন্ধু কেউ কি সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে? তাহলে, মন্দের ভালো ২০১৪ এর ৫ই জানুয়ারি অন্তত বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ইতিহাসকে কলংকমুক্ত ও উন্নয়ন উপহার দিয়েছে । অনেকের ধারণা, উপযুক্ত সময়ে এদেশে যিনি পূর্ণ গনতন্ত্র উপহার দিবেন, তিনিও নাকি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা!