শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের একটি কথা খুবই মনে পড়ে । তিনি বলেছিলেন, রাজনীতিবিদদের জন্য আমি রাজনীতি কঠিন করে গেলাম! রাজনীতিতে সেনাবাহিনী, আমলা, ব্যবসায়ী আর বিশেষ করে ধর্মের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে সাম্প্রদায়িক শক্তি রাজাকার জামাত ও জঙ্গি গোষ্ঠীর মিশ্রনে সত্যিই ধ্বংসাত্মক ও নিন্দনীয় ভাবে রাজনীতিবীদদের জন্য রাজনীতি জটিল করে গেছেন। যার ফলে, আজ রাজাকার মন্ত্রী হয়, ২১শে আগস্ট যুদ্ধাস্ত্র গ্রেনেড হামলা হয়,অগ্নি সন্ত্রাস হয়, লুটতরাজ, গুম,খুন হয় ,আর নিজ স্ত্রী তিন বারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সাজা প্রাপ্ত হয়ে জেলে দিন কাটান । মুর্দা কথা,রাজনীতিকে জটিল করার কারনেই আজ বৃহত্তর দুই দলের মধ্যে প্রতিহিংসার কঠিন প্রাচীর । যা ভেদ করে ঐক্য প্রায় অসম্ভব । ফলে, সাম্প্রদায়িক মন্ত্রের যাদুকরী শক্তিশেল নিক্ষেপে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনাধারীদের আহত করে দূর্বল রাখা সম্ভব হয়েছিল । অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল সমূহকে,সহজেই এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি অংশের মুসলিম ভাইদের বীপরিতে দাঁড় করিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে আওয়ামীলীগকে কোণঠাসা করা ও রাজনীতি রাজনীতিবীদদের জন্য কঠিন করার নোংরা খেলায় ব্যক্তিগত ও দলিয় স্বার্থ বাজিমাত করা গেছে! লক্ষ্য করার বিষয়, শহীদ জিয়ার পর সম্ভবত বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ''২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত'' যে ভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করলেন, তাতে এদেশে রাজনীতিবীদদের জন্য রাজনীতি দ্বিতীয় বারের মত আবারো কঠিন হয়ে গেল। কারণ, ভবিষ্যত নির্বাচনে ভোটারের দ্বারস্হ
হয়ে পূর্বের মিথ্যা মন্ত্র পাঠে জনগণের মন জয় করা কঠিন হবে ।আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলে এদেশ ভারত হয়ে যাবে, ধর্ম থাকবে না, মসজিদে উলুধ্বনি হবে এমন কুকথা ভোটের রাজনীতিতে মিথ্যা কথা হিসেবে প্রমাণিত হওয়ায় কুসংস্কারাচ্ছন্ন পুরাতন ভাওতাবাজি মন্ত্র ভোট আদায়ে আজ বড় অসহায়। বরং ভোটারের প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ রাজনৈতিক দলের ব্যর্থ নেতারা অসহায়ত্ব বোধ করবেন। অন্তত আগামি সংসদ নির্বাচনে, ভোটারের সৃজনশীল প্রশ্নের, রাজনীতিবীদগণ তাদের কর্মকান্ডের সৃষ্টিশীল উত্তর দিতে না পারলে সরকার গঠনের জন্য যে নাম্বার দরকার, তা না দিয়ে ভোটারগণ ফেইল মার্ক দিয়ে দিবে । নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে রাজনৈতিক দল গুলোর প্রকাশিত নয়নাভিরাম ইশতেহার ও রূপরেখা দর্শনে জনগণ তাৎক্ষণিক মুগ্ধ হলেও সহসাই অতীত অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণে আতংকে আত্কে ওঠেন ! সব ইশতেহারেই মুখরোচক গণতন্ত্র, সুশাসন, উন্নয়ন, অসাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি শব্দ চয়নের বিষয়টি শোভা পায়। কিন্তু, এর সত্যি বাস্তবায়ন কি আমরা দেখতে পাই? তবে কেন শুধু মাত্র ক্ষমতার পালা বদলের অপরাজনীতির অপকৌশলের কাছে জনগণ বলির পাঁঠা হবে ? ইশতেহারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মৃত শব্দগুলো যদি জীবন্ত না হয়, তাহলে ৪৭ বছর পরেও শুধুমাত্র সরকার বদলের সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য জনগণ রাজপথের আন্দোলনে অংশ নিবে কোন স্বার্থে? আর যাই হোক, বর্তমান সরকার তো অন্তত যুদ্ধাপরাধি ও জাতির জনকের ঘাতকদের সমুচিত শায়েস্তা করে কলংকমুক্ত ইতিহাস ও উন্নয়ন উপহার দিয়েছে । পদ্মাসেতু, ফ্লাইওভার, পে-স্কেল, বৈশাখী ভাতা, হাতিরঝিল, চলমান মেট্রোরেল, সমুদ্র বিজয়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, ডিজিটাল বাংলাদেশ, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা, সবক্ষেত্রে নারী -পুরুষের সম মর্যাদা, প্রতিবন্ধীদের জীবন মানের উন্নয়নে ব্যবস্থা গ্রহণ, বিদ্যুত উৎপাদনে রেকর্ড, টকশো এবং পত্র -পত্রিকায় বাক স্বাধীনতা, আগামী একশত বছরের সার্বিক উন্নয়নের রুপকল্প গ্রহণ সহ অনেক না বলা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন নিশ্চয়ই রাজনীতিবীদদের জন্য রাজনীতি কঠিন করার গঠন মূলক সত্যিকারের প্রশংসনীয় চ্যালেঞ্জ! তবে, গণতন্ত্রের বেহাল দশা বরাবরের মতই! মনে হয়, ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের সু-স্বাস্হ্য রক্ষায় নির্বাচিত সকল সরকারই মনোযোগী হবে!কারণ, অগণতান্ত্রিক বেত্রাঘাতে প্রতিহিংসার আগুনে কম-বেশি সবাই দগ্ধ!
তাহলে কি বর্তমান সরকারই ক্ষমতায় থাকবে চিরকাল? না সেটা নয়, বরং গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সরকার পরিবর্তনে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়ে সুশাসন, উন্নয়ন আর পরমত সহিষ্ণু সম্প্রীতি নিশ্চিতকরণে প্রতিযোগীতার সৃষ্টি হয়। কিন্তু নির্বাচিত হলে গণতন্ত্রের কথা খুব বেশি না বললেও, বিরোধী দলে থাকলে গণতন্ত্রের স্লোগান দিতে দিতে প্রায় মূর্ছাবস্হা । জনগণ এসব অভিনয় দেখতে দেখতে এখন সত্যি সত্যি খুবই বিরক্ত । তাই, এসব মায়াকান্নায় কর্ণপাত না করে বরং দু-টাকা রোজগারে নিজের সুখ -শান্তি নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটায় । ফলে, জনতার অংশ গ্রহনে সেই উত্তাল হরতাল, অবরোধ আজ আর রাজপথে নেই । সুতরাং বলা অত্যুক্তি নয় যে, রাজনীতি কঠিন করা রাজনীতিবীদদের জন্য নিন্দনীয় নয়, যদি তা ধ্বংসাত্মক না হয়ে গঠনমূলক হয়।