somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের চিকিৎসক: অর্থ লোভ: রোগী থেকে আমরা বনে যাই ভিক্ষুক

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার এই লেখা ডাক্তারদের নিয়ে। তাদের নিয়ে আমার ক্ষোভ নিয়ে। এবং পরিশেষে তাদের জন্য একটি প্রেসক্রিপশন দিয়ে এই লেখার শেষ। ঘটনাটা বলি:

ঈদের আগের দিন। ২০ সেপ্টেম্বর। রাত সাড়ে নটা। আমার বাবা স্ট্রোক করলেন। আমি ছিলাম অফিসে। অফিস থেকে ফিরেই দেখি বাবার মুখ বাকা হয়ে গেছে। হাতে মালিশ করছেন মা। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। তবু মাথা ঠাণ্ডা রেখে ফোন করলাম পরিচিত ইন্টার্নি ডাক্তারদের। তারা আমার যথেষ্ট স্নেহের। লেখালেখি করেন। সেই সূত্রে আমার সঙ্গে পরিচয়। তারা বললেন হাসপাতালে এডমিট করাতে।

আমি তখনি বাবাকে নিয়ে বেরুলাম। পিতামাতার আমিই একমাত্র সন্তান। আমার ভাইও নেই বোনও নেই। যাহোক, মাকে বাসায় রেখে বাবাকে কোনো রকম ধরে নিয়ে গেলাম আল রাজি হাসপাতালে। ডিউটি ডাক্তার আছে। নিউরোলজিস্ট নাই। যাহোক, উনি প্রাথমিকভাবে দেখে বললেন, মাইল্ড স্ট্রোক। ঘুমের ওষুধ দিলেন। আমার মধ্যে তখন অদ্ভুত ধৈর্য কাজ করছে। মাথা বেশ ঠাণ্ডা করে চিন্তা করতে পারছিলাম। সেদিন রাতে বাবাকে বাসায় নিয়ে গেলেও চিন্তা হচ্ছিলো ঈদের ছুটি নিয়ে। ডাক্তার পাওয়া যাবে তো?

পরদিন। ঈদের দিন। ঢাকা ফাঁকা। আমি প্রথম সকালে অফিস গেলাম, ছুটি নিয়ে বেরোলাম ডাক্তার খুঁজতে। কোথায় নিওরোলজিস্ট পাওয়া যায়। ৫/৬ টি হাসপাতাল ঘুরলাম কোথাও নিউরোর ডাক্তার নাই। শেষমেষ আমার এক বন্ধুর কথা মনে পড়লো, তার চাচাতো ভাই নিউরোর ডাক্তার। বড় ডাক্তার। পিজির প্রফেসর। নাম আফজাল হোসেন।
বন্ধুর কাছ থেকে যোগাযোগের নাম্বার নিয়ে ফোন করলাম। তিনি জানালেন ঢাকার বাইরে আছেন তিনি। তবে তিনি মহাখালির মেট্রোপলিটন মেডিকেলে বসেন। সেখানে যেন নিয়ে যাই। তিনি ঢাকায় ফিরবেন পরদিন সকাল। অগত্যা সেখানেই গেলাম। এর আগে অবশ্য স্কয়ারে গিয়েছিলাম। সেখানে ডাক্তার আসবে দুদিন বাদে। কিন্তু তাদের ডাকাতি মানসিকতা দেখে আমি স্তব্ধ হয়ে যাই। প্রথমেই আমাকে স্কয়ারের এক ডাক্তার জিজ্ঞস করে, আমার সামর্থ আছে কিনা। আমি বলি, খরচের একটা ধারণা দিতে। স্কয়ারের ঐ কর্তব্যরত ডাক্তার বললেন, খরচ সঠিক বলা যাবে না। কারণ তিনি বললেন ১০ টাকা পরে সেটা ১০০ টাকা হলে??
কথা শুনে হজম করে বাসায় এসে, বাবাকে নিয়ে বেরোলাম। শমরিতায় সিটি স্ক্যান করালাম। কারণ ওরা আমাকে বলেছিলো ডাক্তার আসবে ঈদের পরদিন। সেখানে ভর্তি করাতে গেলে, বলে না ডাক্তার আসবে দুদিন পর। ঈদের ছুটি কাটাচ্ছেন তারা। বাধ্য হয়ে সেখানে শুধু সিটি স্ক্যান করাই।
এরমধ্যে বাবা টয়লেটে যাবেন। নিয়ে যাই। তিনি কাপড়েই প্রস্রাব করলেন। তাকে এই অসহয় অবস্থায় দেখে আমার ভীষণ কষ্ট হতে থাকে। নিজেকে শক্ত করি। মাসহ বাবাকে নিয়ে যাই সেই মেট্রোপলিটানে। বন্ধুর কাজিন ডাক্তার আফজালের পরামর্শে। সেখানে গিয়ে শুনি ডাক্তার আফজাল এই মাত্র বেরিয়ে গেলেন। তারমানে তিনি ঢাকার বাইরে নয়। ভিতরেই ছিলেন। আমাকে মিথ্যে বলেছেন। তা উনি বলতেই পারেন। উনার কাছে ঈদ উদযাপন অনেক বড়, অন্তত আমার বাবার স্ট্রোকের চেয়ে তো অবশ্যই।
সেখানে গিয়ে দেখি এক কমবয়সী ডিউটি ডাক্তার। তার আচরণ মাস্তানদের মতো। সে এমনভাবে কথা বলছে যেন জেরা করছে। বিরক্ত হলাম। কিন্তু কিছু বললাম না। এটা মাথা গরম করার সময় না।
প্রয়োজনীয় সব টেস্ট করতে দিয়ে ভর্তি করালাম বাবাকে। ৩০২ নম্বর কক্ষ। খাবার আনতে হবে। স্যুপ। বেরুলাম। ঢাকা শহরের কিছু খোলা নেই। যেন মৃতের শহর। কোথায় যাব, কোথায় গেলে খাবার পাবো? ডাক্তার বলেছেন, শক্ত খাবার দেয়া যাবে না। খুঁজতে খুঁজতে গেলাম ওয়ারলেসের পর্যটন রেস্টুরেন্টে। পেলাম। সেখান থেকে হেঁটে ফিরলাম।
পুরো রাত গেলো নির্ঘুম। রাত বারোটার পর ফোন পেলাম। জন্মদিনের শুভেচ্ছা। কারণ ঈদের পরদিন ২২ তারিখ ছিলো আমার জন্মদিন। শুভ নয় অশুভ। বলাই বাহুল্য।
পরদিন ভোরে বাবাকে টয়লেট করিয়ে ইনোসুলিন দেই। এরমধ্যেই মা আসেন নাস্তা নিয়ে। ডাক্তার আফজাল এলেন। মিনিট দুই দেখে চেম্বারে আসতে বলে চলে গেলেন। বলে গেলেন রোগী বাসায় চলে যেতে পারে। আমি বাসায় নিয়ে যাই বাবাকে।

পরদিন ড.আফজালকে ফোন দেই। তিনি ফোন ধরেন না। পরপর তিনদিন ফোন দিই। তিনি ফোস ধরেন না। ৪র্থ দিনে ম্যাসেজ পাঠাই। অনুনয়, বিনয় করে বলি ফোন ধরতে। উনারা বড় ডাক্তার। আমরা আম জনতা!!! উনি রিং ব্যাক করেন। শুরুতেই ঝারি। আমি কেন ফোন করে বিরক্ত করছি। আমি যেন আর ফোন না করি।
অথচ ফোন করেছিলাম জানার জন্য উনি কখন চেম্বারে বসেন। যাহোক, উনার খারাপ ব্যবহারে কষ্ট পাই। উনি বলতে পারতেন, আমার চ্যাম্বারে আসুন, আমি এতোটার সময় বসি। কিন্তু উনি বললেন, এজন্যই তিনি ফোন নাম্বার কাউকে দেন না। পেশেন্টরা বদার করে। আমি আর কী করবো? দুক্ষিত বলে ফোন রেখে দেই।

মনে মনে ভাবি, এই হচ্ছে আমাদের ডাক্তার। আমি তাদের কাছে ভিক্ষা চাই নি। চিকিৎসা চেয়েছি। মৌলিক অধিকার। তারপরও তাদের আচরণ এমন যেন আমাকে করুণা বা ভিক্ষা দিচ্ছে। আমাদের ডাক্তারদের আচরণ এতো খারাপ যা কল্পনা করা যায় না। এদের কাছে রোগীর চেয়ে ঈদের ছুটি গুরুত্বপূর্ণ। হাসপাতালে চিকিৎসার চেয়ে চেম্বারে ব্যক্তিগত অর্থ কামানোটা জরুরী। ডাক্তাররা আমাদের অনেক প্রেসক্রিপশন দেন। আমি এই লেখার মাধ্যমে তাদের একটা প্রেসক্রিপশন দিতে চাই। সেটা হলো:
দুটি চলচ্চিত্র দেখুন
১. রবিন উইলিয়ামস অভিনিত প‌্যাচ এ্যাডামস
২. সঞ্জয় দত্ত অভিনিত মুন্না ভাই এমবিবিএস

আশা করি ডাক্তারদের আচরণ পরিবর্তন হবে। ডাক্তারদের কর্তব্য যে কেবল অর্থ উপার্জ নয়, সেটা তাদের মর্মে উপলব্ধি করা প্রয়োজন।
১৭টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×