somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

করোনা: ঢাকার বাড়ি ভাড়া মওকুফ করা হোক

৩০ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও মানুষ আতঙ্কে আছে। দেশব্যাপী সাধারণ ছুটির নামে লকডাউন চললেও ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়াগুলো সরব পুরোদমে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা-সমালোচনা কিংবা খবর ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরমধ্যে গুজবও ছড়িয়ে পড়ছে। এতকিছুর মধ্যে প্রয়োজনীয় একটি লেখা দেখে চোখ আটকে গেল। তাই বিষয়টাকে আরও বড় আকারে প্রচার ও সচেতনতার জন্য এখানে সবার সাথে শেয়ার করা। এই লেখার লেখক ঢাকা জজকোর্টের একজন আইনজীবী। তিনি অত্যন্ত সাবলীল ভাবে যুক্তি দিয়ে প্রয়োজনীয় এই লেখাটি তুলে ধরেছেন।
======================================================

করোনা: ঢাকার বাড়ি ভাড়া মওকুফ করা হোক
হালিমা আক্তার এ্যানী


করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নজিরবিহীন লকডাউন চলছে। ইটালি, জার্মানি, স্পেন ইত্যাদি দেশের মতো আনুষ্ঠানিক লকডাউন ঘোষণা করা না হলেও দেশে সাধারণ ছুটির নামে তাই চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন: এটা আমাদের যুদ্ধ। এবারের যুদ্ধে জয়ী হতে হলে সবাইকে যার যার অবস্থানে ঘরে থাকতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর বলতে গেলে লকডাউন শুরু হয়। রাস্তাঘাট এখন পুরোই ফাঁকা। করোনা সংক্রমণ এড়াতে সবাই যার যার ঘরে অবস্থান করছেন। এমন অবস্থায় কাজ করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন আয়ের মানুষ।

আমার কথাই ধরা যাক। আমি একজন নবীন আইনজীবী। ঢাকা শহরে নিজের বাড়ি নেই। ঢাকায় আমি একজন ভাড়াটিয়া, তা বলতে কোনো লজ্জা নাই। এটাই বরং কঠিন বাস্তবতা। নবীন আইনজীবীদের যে উপার্জন তাদের বর্তমান প্রেক্ষাপটে করোনা ভাইরাসের কারণে পুরো বাড়ি ভাড়া দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কারণ, এখন সবকিছু বন্ধ। আমরা বেকার জীবন কাটাচ্ছি।

এখানে নবীন আইনজীবীদের কথা বলা হলেও শুধু তারাই নয়, কঠিন দুঃসময় পার করছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মধ্যবিত্তরা। তাদের পক্ষেও এখন বাড়ি ভাড়া দেয়া সম্ভব না। কিছু ক্ষেত্রে দু’য়েকজন বাড়িওয়ালা ভাড়া মওকুফ করেছেন এই দুর্যোগে। তারা ভাড়াটিয়াদের পাশে এসে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন বলে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। তবে এই সংখ্যা খুবই নগণ্য, হাতেগোণা।

এমন অবস্থায় চোখের সামনে দেখি মধ্যবিত্ত উচ্চশিক্ষিত সন্তানের বাবার চোখে হতাশা। তাদের হতাশা একটাই মাস শেষে বাড়ি ভাড়া কোথা থেকে আসবে? যেখানে অফিস-আদালত বন্ধ সেখানে টাকা আসার কথা নয়। কারণ, সবকিছুই বন্ধ। আর আমরা আইনজীবীরা তো চাকরিজীবী নই। মাস শেষে তাদের নির্ধারিত বেতনও নেই। তাদের ভরসা প্রতিদিনের কাজের ওপর, মামলার ওপর। কিন্তু বাড়িওয়ালারা মহানুভবতার পরিচয় দিয়ে দু’য়েকমাসের ভাড়া না নিয়ে যদি শুধু যাবতীয় বিল পরিশোধের খরচ নেন, তাহলে তারা না খেয়ে মারা যাবেন না। কিন্তু মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত ভাড়াটিয়াদের খুব সমস্যা হবে।



অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের জন্য। এটা অবশ্যই ভালো দিক। এতে অর্থনীতির চাকা স্থবির হয়ে পড়বে না। মুখ থুবড়ে পড়বে না নিম্নবিত্ত শ্রমিকদের মানবতা। তাদের না খেয়ে থাকার অনিশ্চয়তা কেটে যাবে এই প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে। কিন্তু শুধু রপ্তানিমুখী শ্রমিকরাই দেশের চালিকাশক্তি নন। সকল শ্রমিক, মধ্যবিত্ত, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী এবং স্বাধীন পেশাজীবীরাও দেশের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে, নিম্ন আয়ের মানুষদের খাবার এবং প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিতরণ করছেন অনেকেই। এমন দুর্যোগের দিনে মানবতার স্বার্থে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে জানাচ্ছি। তবে মধ্যবিত্তদের বড় সমস্যা হচ্ছে তারা কারও কাছ থেকে কিছু নিতে পারে না, ঘরে খাবার না থাকলেও। এমন অবস্থায় ঢাকায় থাকা মধ্যবিত্তদের মাথার বড় বোঝা বাড়ি ভাড়া না নিয়ে, প্রয়োজনে শুধু বিল বাবদ আসা টাকা নিয়ে এ বোঝা হালকা করার বিষয়টি বাড়িওয়ালা এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে দেখতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে সরকারি নির্দেশনাও দেয়া যেতে পারে। সরকার প্রয়োজনে বাড়িওয়ালাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পরবর্তীতে এই দু’য়েক মাসের ভাড়া সমন্বয় করে দিতে পারে। মেগা প্রজেক্টগুলোতে যে ব্যয় হয়, তার একটা প্রজেক্টের টাকাও ব্যয় হবে না এই মানবিক উদ্যোগে।

তবে এই বিষয়ে আমার আরও একটি প্রস্তাবনা রয়েছে। করোনা প্রতিরোধে সাধারণ ছুটি ঘোষণা হওয়ার পর যারা ঢাকায় যথাস্থানে অবস্থান না করে ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি নিয়ে গ্রামে চলে গেছেন, তারা এই মওকুফের আওতায় আসবেন না। তাদের এই উদ্যোগের আওতায় আনা ঠিকও হবে না। এটা তাদের জন্য শাস্তিস্বরুপ হতে পারে। যাতে এখান থেকে তারা শিক্ষাগ্রহণ করে। এজন্য সাধারণ ছুটির পরও যারা ঢাকায় নিজেদের বাসায় অবস্থান করছেন, এমন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের জন্য বাসা ভাড়া মওকুফ করা হোক।



এ লেখার কারণ হলো এপ্রিল মাস চলে আসছে। করোনার চিন্তায় ভাড়াটিয়াদের জীবন গেলেও বেশিরভাগ বাড়িওয়ালা তাদের ভাড়া মওকুফ করতে রাজি নন। এ শ্রেণির বাড়িয়ালাদের আচরণ অনেক ক্ষেত্রে ব্রিটিশ শাসনামলের মতো। তাদের চাপে মনে হয় যে, মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর করোনায় শেষ হওয়ার আগে বাড়ি ভাড়ার চাপে জীবন ওষ্ঠাগত হবে। তাই করোনা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো থেকে যেন বাড়িভাড়া থেকে মুক্তি পায় এজন্য প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ও নির্দেশনা কামনা করছি।

তবে সব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আশায় বসে না থেকে দুর্যোগের সময় বাড়িওয়ালারা যার যার অবস্থান থেকে মানবতার দিক বিবেচনা করে এ বিষয়ে এগিয়ে আসবেন বলে আশা করি। মানুষ মানুষের জন্য, এ বিষয়টি যদি আমরা এখনও প্রমাণ করতে না পারি তাহলে আর কখন পারবো?

লেখক: আইনজীবী, ঢাকা জজ কোর্ট।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×