“আপনা মাংসে হরিণা বৈরী”- চর্যাকার ভুসুকুপা
রচিত ৬নং চর্যা থেকে নেয়া হয়েছে উক্ত পদটি। যার
আধুনিক বাংলা অর্থ দাঁড়ায় -“নিজের মাংসের জন্যই হরিণ
নিজের শত্রু”। বাঘ হরিণ শিকার করে, কারণ হরিণের মাংস খুবই
সুস্বাদু। সে অর্থে চর্যাকার ভুসুকুপা হরিণের মৃত্যুর জন্য
নিজের সুস্বাদু মাংসকে দায়ী করেছেন। উপরে
উল্লেখিত চর্যার এ পদটির সাথে সমকালীন বিশ্বের
মানুষের মিল প্রত্যক্ষ। স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ। চিন্তা
করার সক্ষমতাও কেবল মানুষেরই আছে। আর আজকাল এ
শ্রেষ্ঠত্বই যেন মানুষের ধ্বংসের কারণ। হয়তো তাই,
পৃথিবীটা পরিণত হয়েচ্ছে মৃত্যুপুরীর সমার্থকক শব্দে।
চিন্তাশক্তি ব্যবহার করে মানুষ সৃষ্টি করছে নতুন নতুন ধ্বংস-
মৃত্যু পথ। এমনি এক নতুন সংস্করণ “জঙ্গিবাদ”।
“জঙ্গিবাদ” এখন
কেবল বাংলাদেশ নয়, সারা পৃথিবীতেই আতঙ্কের কারণ।
জঙ্গিবাদ দূর করে শান্তির কপোত উড়াতে ব্যস্ত সময়
কাটাচ্ছেন বিশ্বপতিগণ। কিন্তু কতটুকু দমন তারা করছেন বা করার
চেষ্টা করছেন ?
একসময় মনে হতো, ইসলাম প্রচারই জঙ্গিবাদের মূল
উদ্দেশ্য। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ইসলাম প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে উগ্র ধর্মপন্থীদের সমন্বয়ে গঠিত হতো এ
সংগঠনগুলো।কিন্তু অতিসম্প্রতি এ ধারণার কোন স্পষ্টতা
খুজে পাওয়া যায় না। গত কয়েকদিন আগে ফ্রান্সের লড়িতে
হামলা হয়েছে, বেশ কয়েকজন মারাও গিয়েছে। কিন্তু
তাদের মধ্যে এমন কেউ ছিলনা যারা ইসলাম বিদ্বেষী বা
ভিন্নমত প্রচার করে।
জার্মানির বায়ার্ন মিউনিখে একটি শপিং মলের সামনে হামলা
হয়েছে। সেখানে নিহতদেরও কেউ ইসলাম বিদ্বেষী
বা ভিন্নমত প্রচারকারী ছিলনা। বাংলাদেশের গুলশানে
রেস্টুরেন্টে হামলায় নিহতদের কাউকে হত্যার জন্য
ধর্মীয় কোন কারণ বা প্রতিহিংসার লেশমাত্র নেই। আর
জঙ্গি তথা আইএস যদি ইসলামের পক্ষের শক্তি হয় তবে
মসজিদে কেন হামলা চালায় ? ইসলামই কি একে সমর্থন
করে? তবে জঙ্গিবাদের উদ্দেশ্য কী ? আজকাল এ
প্রশ্নের উত্তর খুজতে খুজতে দিন কাটে বিশ্ববাসীর,
কিছুটা আমারও। ইসলামিক স্টেট (আইএস) এর পূর্বে
বোকো হারাম, আল শাবাব, আনসার আল শরিয়া, আল কায়েদা,
তালেবান ইত্যাদি জঙ্গি সংগঠনের নাম ব্যাপক আলোচিত ছিল।
এগুলোর মধ্যে তালেবান-আল কায়দার প্রতিষ্টাতা বা মদদ দাতা
হিসেবে আমেরিকার নাম উচ্চারিত হয়েছে অসংখ্যবার।
অনেক মিডিয়া এর প্রমাণও দিয়েছে। ওসামা বিন লাদেন যে
আমেরিকার সংস্করণ ছিল এটা বুঝতে খুব বেশি কষ্ট হওয়ার
কথা নয়। এমনকি বর্তমানকালেও আইএসের লালন কর্তা
হিসেবে ধারণা করা যায় আমেরিকার নাম। বিশ্বজুড়ে শান্তির
কপোত উড়ানোর অভিনয় করলেও আমেরিকাই লালন
করে পৃথিবীর বৃহৎ সন্ত্রাসী দেশ “ইসরাইল” ও তদের
গোয়েন্দা সংস্থা “মোসাদ"। অামেরিকা সিরিয়াতে ঢুকতেই
সেখানে নতুন জঙ্গিদের উত্থান ঘটল যার নাম ISIS।
যুক্তরাষ্ট্র ও এর সঙ্গীরা জঙ্গি দমনের নামে যে
দেশেই গিয়েছে সে দেশেই জঙ্গিবাদ দ্বিগুন উৎসাহে
মাথাচারা দিয়ে উঠেছে। ধরাযাক নাইজেরিয়ার কথা। ‘বোকো
হারাম’ সে দেশের সবচাইতে নিষ্ঠুর জঙ্গি সংগঠন। প্রতিদিন
এদের নিষ্ঠুরতারক খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। এদের
সহিংসতা বেড়েছে তখনই যখন অামেরিকা সে দেশে
জঙ্গি দমনের নামে প্রবেশ করেছে। শুধুই কি তাই,
ইরাকে ঢুকে কি কাজ করেছে অামেরিকা তা সবারই জানা।
ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র অাছে – এই বাহানায় ইরাকে ঢুকে, ৭
হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী দেশটির চেহারা কি করেছে
অামেরিকা? এমনকি বাংলাদেশে জঙ্গিদমনে মার্কিন সেনা
পাঠানোর ইচ্ছা প্রকাশ করার কয়েকদিনের মাথায় ঘটেগেল
কয়েকটি নরকীয় ঘটনা। এর দ্বারা হয়তো বাংলাদেশে জঙ্গি
আছে, বাংলাদেশ দমনে ব্যর্থ এবং আমেরিকান
সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা বুঝানোর চেষ্টা স্পষ্ট।
অতিপূর্ব থেকেই বিভিন্ন নামে, ইসলামের মোড়কে,
ইসলামের জ্ঞানে প্রসিদ্ধ হয়ে মধ্যপ্রচ্যে আস্তানা
গেড়েছে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। কারণ
সেখানে ছিল তেল, আর ধর্মীয় ইস্যুই মধ্যপ্রাচ্যের
মুসলিমদের প্রধান দূর্বলতা। স্বার্থ পূরণে বিশ্বগ্রামের
মাতুব্বররা বেছে নিয়েছে নিকৃষ্টতম কপটীয় পথ। কেবল
ধর্ম নয়, যেখানেই স্বার্থে আঘাত লাগে সেখানেই হামলা
করে আইএস। এমনকি বন্ধু রাষ্ট্রগুলোতেও হামলা করতে
পিছপা হয়না আধিপত্যবাদী সন্ত্রাসীরা। আধিপত্য বিস্তারের
নেশা মানুষের সহজাত। তবে অতিসম্প্রতি এ নেশা সহজাততা
ছাড়িয়ে বেড়ে গেছে বহুগুণে।
দখল করা, অধিনে রাখা সবকিছুই এখন চলছে আগের
চেয়ে অধিক এবং অভিনবত্বের সাথে। চিন্তাশীলতা,
সৃষ্টিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে মানুষকে দাস বানানো,
আধিপত্য বিস্তারে চলছে প্রতিযোগিতা। মানুষ মারার জন্য
ব্যবহার করা হচ্ছে মানুষের চিন্তাশক্তি ও সৃষ্টিশীল ক্ষমতা।
স্রষ্টা প্রদত্ত মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ও চিন্তাশক্তি ই যেন
মানুষকে রেখে আসছে মৃত্যুপুরীর দুয়ারে। আর মানুষ
মারতে মানুষের বুদ্ধি বিবেক ব্যবহারের নতুন মার্কিন সংস্করণ
“জঙ্গিবাদ”।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১৬ ভোর ৬:৩২