somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সময় কি সত্যিই আপেক্ষিক? (দ্বিতীয় পর্ব)

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের ব্লগ দেখার জন্য ক্লীক করুন
সময় কি সত্যিই আপেক্ষিক? (প্রথম পর্ব)

পূ্র্বের পর
এতটুকু আলোচনা করার পর আমরা স্পষ্টই ধারণা করতে পারি, কোনও বস্তুর স্থিতি, গতি সবটাই নির্দেশতন্ত্র সাপেক্ষ অর্থাৎ আপেক্ষিক। তাহলে স্থিতি ,গতির বর্ণনায় একমত হয়া যায়, এমন নির্দেশতন্ত্র পাই কোথা থেকে? এর তেমনটি যদি নাই পাওয়া যায় তবে গতিসূত্রই বা প্রয়োগ হবে কিই করে?

উপায় বার হল একটি, নির্দেশতন্ত্রের সংজ্ঞাকেই বদলে দেয়া হল। যে নির্দেশতন্ত্রে নিউটনের গতিসূত্র সত্য, সেই নির্দেশতন্ত্রকেই স্থির বা জড়ত্ত্বীয় নির্দেশতন্ত্র বলে আখ্যা দেয়া হল। আর কোনও স্থির নির্দেশতন্ত্রের সাপেক্ষে সমবেগে ধাবমান নির্দেশতন্ত্রও অভিহিত হল জড়ত্ত্বীয় নির্দেশতন্ত্ররূপে। অর্থাৎ ব্যাপারটি দাঁড়ালো এইরূপ – কোনও ঘটনা গতিসিটর দিয়ে ব্যাখ্যা করতে হলে সেই ঘটনাটি যে নির্দেশতন্ত্রের সাপেক্ষে ব্যাখ্যা করা হচেছ, সিটিকে ধরে নয়টি হবে স্থির বা ধ্রুবক। বিজ্ঞানী নিউটন তাই ঘোষনা করেছেন – বলবিদ্যার সূত্রগুলি সব জড় কাঠামোর দর্শকের কাছে তখনই অভিন্ন, যখন সেই সব কাঠামোগুলি ইকে অন্বয়ের সাপেক্ষে সমগতিতে ধাবমান হয়।
কিন্তু কোনও সমাধান এই সমস্যার জন্যয় হয়েও হলনা। প্রশ্ন এসেই গেল এক নির্দেশতন্ত্র থেকে আরেক নির্দেশতন্ত্রে যাওয়া যাবে কীভাবে?

এখন একটি পরীক্ষার সাহায্যে এতি বোঝানো যেতে পারি। তাই এর জন্য আসা যাক ট্রেনের গল্পে।

C ও D দুটি ট্রেন বাইরের দর্শকের সাপেক্ষে পরস্পরের বিপরীতে সমান্তরালে X কিমি/ঘন্টা এবং Y কিমি/ঘন্টা বেগে ধাবমান। এই বেগ তো বাইরের ভূপৃষ্ঠ নির্দেশতন্ত্র সাপেক্ষে। কিন্তু C ও D ট্রেনের যাত্রী ট্রেনের নির্দেশতন্ত্র সাপেক্ষে একই বেগ কী দেখবে? মোটেই না। C ও D এর মধ্যে থাকা যাত্রী একে অপরকে যে গতিবেগে দেখবেটা হল (X+Y) কিমি/ঘন্টা। যদি C ও D ট্রেন একই দিকে যেত তাহলে এই বেগ হত (X-Y) কিমি/ঘন্টা যা হল ট্রেন D এর সাপেক্ষে C এর বেগ। আবার C এর সাপেক্ষে D এর বেগ হত (Y-X) কিমি/ঘন্টা।

এভাবেই গড়ে উঠল গ্যালিলীয়ো রূপান্তর নীতি যার সাহায্যে এক নির্দেশতন্ত্র থেকে চলে যাওয়া সম্ভব হল অপর নির্দেশতন্ত্রে।

সমস্যার বন্ধুরতা কিন্তু সেই থেকেই গেল। ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে বিজ্ঞানী ম্যাক্সওয়েল আবিষ্কার করলেন তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গতত্ত্ব। পরীক্ষায় প্রমাণিত হল তার তত্ত্ব। কিন্তু গ্যালিলীয়ো রূপান্তর নীতির প্রয়োগে বিভিন্ন জড় কাঠামোয় সমীকরণগুলো আর রইল না এক। এর কিছুকাল পড়েই বিজ্ঞানী হার্ৎস আবিষ্কার করলেন তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের বেগ আলোর বেগের সমান অর্থাৎ শূন্য মাধ্যমে ৩X১০^৮ মিটার/সেকেন্ড। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে এই বেগ কর সাপেক্ষে?
যাবতীয় সমস্যার সমাধান রইল দুটি সম্ভাবনায় ----------

(ক) ম্যাক্সওয়েলের তরঙ্গতত্ত্ব কোনও একটি বিশেষ কাঠামোর সাপেক্ষেই ঠিক, যা কাঠামোর তরঙ্গের বেগ ৩X১০^৮ মিটার/সেকেন্ড গড়ে উঠল ইথার ধারণা।
(খ) ম্যাক্সওয়েলের তরঙ্গতত্ত্ব ভুল। এর সংশোধন প্রয়োজন।
(গ) নিউটনের গতিসূত্র ও গ্যালিলীয়ো রূপান্তর নীতির সংশোধন দরকার।

শুরু হল ইথার সন্ধান। কিন্তু মাইকেলস মোরলির পরীক্ষায় ধ্বংস হল ইথারের।

ইতিমধ্যে ১৮৯৩ স্মলে আইরিশ বিজ্ঞানী জর্জ ফিটজেরাল্ড বললেন, সমস্ত বস্তুর দৈর্ঘ্যই তার গতির অভিমুখে সংকুচিত হয় এবং সংকোচনের পরিমাণ বেগের সমানুপাতিক। ফিটজেরাল্ডের পথ অনুসরণ করেই ডাচ বিজ্ঞানী হেনড়িক লরেন্স বললেন ফিটজেরাল্ড সংকোচনে বৃদ্ধি পায় বস্তুর ভর। তৈরি হল লরেন্স-ফিটজেরাল্ড রূপান্তর সমীকরণ।

কিন্তু সমস্যার সমাধান কোথায়? সমাধানে এগিয়ে এলেন বিংশ শতকের প্রণাময় বিজ্ঞানী Albart Einstein। ১৯৫০ সালে প্রকাশিত ‘‘Special Theory of Relativity’’’। ম্যাক্সওয়েলের তড়িৎচুম্বকীয় তত্ত্বের অভিন্নতা ( পদার্থবিদদের ভাষায় Covrient ) প্রকাশের স্বার্থে চরম সময়ের ধারণা সম্পর্কে তিনি তুললেন প্রশ্ন। নিজ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে বললেন দুটি স্বীকার্যের কথা—

(ক) পদার্থবিদ্যার সকল নিয়ম সকল জড় কাঠামোতে অভিন্ন, বিশেষ কাঠামো বলে কিছুই নেই।
(খ) পদার্থ শূন্যস্থানে আলোর বেগ নির্দেশতন্ত্র নিরপেক্ষ তথা ধ্রুবক।
এই দুটি স্বীকার্যই প্রতিষ্ঠা করল তড়িৎচুম্বকীয় বলবিদ্যা। লরেন্জ রূপান্তরের সময় পরিণত নির্দেশতন্ত্র সাপেক্ষ, তথা আপেক্ষিক।

(চলবে)
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×