বাংলা সাহিত্য ও হুমায়ুন আহমেদ.................
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
রবীন্দ্র পরবর্তী যুগে আধুনিক বাংলা উপন্যাসকে টেনে নিয়ে গেছে মূলত: ওপার বাংলার লেখকগণ। আমাদের কিছু ভাল লেখা যে সেসময় হয়নি তা নয়, তবে সুনীল, শীর্ষেন্দু, সমরেশ, সন্জীব আর বুদ্ধদেবের মতো লেখক তৈরী হয়নি এইদেশে বহুদিন- সেটা বলাই বাহুল্য। স্কুলের পড়া ফাঁকি দিয়ে সেবা প্রকাশনীর অনুবাদের পাশাপাশি কত যে শীর্ষেন্দু, সুনীল মুগ্ধ হয়ে পড়েছি ঠিক নেই। এর পর তার আগমন, ধুমকেতুর মতো। তিনি হুমায়ুন আহমেদ। বাংলা সাহিত্যে পাঠককে উপন্যাসে টেনে রাখা লেখক তার মতো যে আর আসেনি সেটা পরিস্কার করে বলা যায়,সেটা তার উপন্যাসের হালকা ভাব নিয়ে যতো সমালোচনাই থাকুক তবুও। কলকাতা কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা বাংলা উপন্যাসকে তিনি একাই ঘুরিয়েছেন। এপার বাংলা ওপার বাংলায় প্রচুর পাঠক তৈরী করে তিনি ইতোমধ্যে বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে ফেলেছেন।
হুমায়ুন আহমেদ সবচেয়ে বড় অবদান সম্ভবত বাংলা সাহিত্যকে বিজ্ঞানমুখী করা। ইউরোপীয় সাহিত্য চর্চায় বিজ্ঞান আছে বহু আগে থেকেই। আঠারো শতকে জুলভার্ন, স্যার আর্থার কোনান ডয়েল, এইচ জি ওয়েলসের মতো লেখকরা চমকপ্রদ উপন্যাস লিখে তখন নেতৃত্ব দিয়েছেন সমাজের বিজ্ঞান মনস্কতাকে। আবিস্কারেরও বহু আগে জুলভার্নের উপন্যাসে কল্পনা করা সাবমেরিন বা উড়োজাহাজ যে ইউরোপ আমেরিকার সমাজ চিন্তা এবং বৈজ্ঞানিক ভাবনায় কি প্রভাব রেখেছে সেটা তাদের অগ্রগতি থেকেই পরিস্কার। দু:খজনক হলেও সত্য সেই সময় বাংলা সাহিত্যে কিছু শক্তিশালী লেখক থাকলেও তাদের লেখায় এর কোন ছাপ পাওয়া যায় না। এমনকি রবীন্দ্রনাথ এবং তারপরের লেখকগন এই জায়গাটায় কেন জানি কোন আগ্রহ দেখান নি। বাংলা সাহিত্যে আধুনিক বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা, কল্পনার আমদানী হুমায়ুন আহমেদের হাত ধরে। তার অনুজ মু:জাফর ইকবাল প্রথম সায়েন্স ফিকশন লিখলেও বাংলা সাহিত্যকে মহাকাশের যুগে প্রবেশ করিয়েছেন হুমায়ুন আহমেদ। আগে উচ্চ শিক্ষিত বাংগালী বিদেশী সাহিত্যে যে ভবিষ্যত বিজ্ঞানের স্বাদ নিতেন হুমায়ুন আহমেদ সেটাই ছড়িয়ে দিয়েছেন দেশের সকল পাঠকদের মাঝে। নী, কুহকের মতো অন্যজগতের লেখাও বাংলা সাহিত্যে হুমায়ুন আহমেদের হাত ধরেই। এই অবদানের কারনে হুমায়ুন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে চিরস্মরনীয় হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।
অন্যদিকে মিসির আলীর মতো বিশ্লেষণ নির্ভর লেখা অথবা হিমুর মতো রহস্য মেশানো চরিত্রও হুমায়ুনের অনন্য অবদান। হিমুতো গত কয়েকদশক ধরেই টিনএজের ক্রেজে পরিণত হয়ে আছে। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য ইতোমধ্যে তিনি অনেক পুরুস্কার পেয়েছেন। উল্লেখযোগ্য কিছু বাংলা একাডেমী পুরস্কার ১৯৮১ ,শিশু একাডেমী পুরস্কার,একুশে পদক ১৯৯৪,জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (শ্রেষ্ঠ কাহিনী ১৯৯৩, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ১৯৯৪, শ্রেষ্ঠ সংলাপ ১৯৯৪)
লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩),মাইকেল মধুসুদন পদক (১৯৮৭),বাকশাস পুরস্কার (১৯৮৮),হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০),জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদক। তবে সবচেয়ে বড় পুরুস্কারটি সম্ভবত অসংখ্য মানুষের ভালবাসা।
হুমায়ুন আহমেদ বাংলাদেশের অন্যান্য লেখক থেকে নানা কারনেই ভিন্ন, একটু অন্যরকম। তিনি বাংলাদেশের বিলুপ্তপ্রায় আস্তিক লেখকদের একজন(আজকের প্রথমআলোর ছুটিরদিনের সাক্ষাৎকার)। এই মুহূর্তের বাংলাদেশের বেশীরভাগ নাস্তিক লেখক/বুদ্ধিজীবীর মতো তিনি তার নাটক/উপন্যাসে একটা দাড়ি টুপিওয়ালা লোককে ভিলেন চরিত্রে দাড় করিয়ে দেন না। বরং তার বহু উপন্যাসে ধার্মিক লোককে সম্মানিত চরিত্র হিসাবে দেখান হয়েছে।
১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর জন্ম নেয়া এই অসামান্য মানুষটা আজ কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত। হার্টের সমস্যার কারনে রেগুলার চেকআপ করতে গিয়ে সিংগাপুরের মাউন্ট এলিজাবাথে ধরা পরে এটা। তবে সুখবর হচ্ছে নিউইয়র্কের ডাক্তাররা জানিয়েছেন এটা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে, অপারেশন করার প্রয়োজন নেই কেমোথেরাপিতেই সুস্থ্য হয়ে ওঠা যাবে।
পেটের গভীরে বেড়ে উঠা দুষ্ট কোষগুলোর দিকে শুধু হুমায়ুন আহমেদ না সারা বাংলাদেশের মানুষই তাকিয়ে আছে। তার কাছে যে বাংলা সাহিত্যের অনেক ঋণ।
প্রিয় লেখকের জন্য গভীর ভালবাসা। সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন আমাদের মাঝে এই কামনায়।
১২টি মন্তব্য ৭টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে
তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না
সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন
লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা
ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।
মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না
নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন