somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গরাদ

১২ ই মার্চ, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শাহবাগে ভিড়টা আজকে কম /সুড়ুত করে রাস্তাটা পাড় হতে পারল সমীক/চারুকলার সামনে এসে পড়ল আর একটু হেঁটেই/প্রদর্শনী হলটায় আজকেও আলো জ্বলছে/ কি প্রদর্শনী হচ্ছে ভাবতে ভাবতে সিগারেটের নেশাটা চাগিয়ে উঠল আবার/ওইপারের ছোট দোকানটা ছাড়া আশেপাশে কোন হকার চোখে পড়ছে না/বিড়বিড় করে গালি দিয়ে দোকানটার দিকেই হাঁটতে শুরু করল/আজকে পিচ্চিটা বসে আছে/
"কি রে /বেনসন দে দেখি একটা/"
"তোর বাপে কই?এইসময় তো তার থাকার কথা/তুই না সকালে বসছ?"সিগারেটটা হাতে নিতে নিতে বলল সমীক/
"বাপে হাসপাতালে/"
"কেন্ কি হইছে?"সুতায় ঝুলানো লাইটারটা টেনে ফস করে ধরিয়ে ফেলল সিগারেটটা/
"গুলি খাইছে/"
শুনে চমকে উঠল সমীক,"কী রে কি কস/কেমনে খাইছে?"
"দুপ্ রে দোকানের মাল লইয়া ভার্সিটির ভিত্ রে দিয়ে আসতাছিল/কইত্থাইকা গুলি আইসা বুকত্ লাগছে/ওইহানকার লোকজনে
ধইরা পি.জি ত নিয়া গেছে/"
শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল সমীকের/সিগারেটের স্বাদটা তিতা লাগছে এখন/
"এহন কি অবস্খা?ডাক্তারে কি কইছে?"
"অবস্তা মনে কয় খারাপ " মায়ে হুনছে ডাক্তারের কাছে "বাঁচা মরণ আল্লার হাতে/"
"তোর বাপে জানত না ভার্সিটিতে মারামারি হইতাছে?"
"মারামারি তো কতই হয়/মুইই তো কদ্দিন মারামারির সামনে দিয়া দৌড়ায়ে গেলাম/কিছুই তো অয় নাই/বাপের বেলাত যে গুলি আইসা লাগব
সেইডা কোন বেডায় জানে/"
"তোর বাপের লগে কেউ নাই হাসপাতালে?"
"পত্থম দুইদিন মায়ে ছিল/এহন মায়েও কাজোত্ গ্যাছে/আর মুই দোকানত্/বড় বইনে তো বিয়া কইরা পলায়ে গ্যাছে/"
"ভার্সিটির অবস্থা এখন কেমন জানোস্ ?"
"এহন ঠাণ্ডা হুন্ ছি /"
"শালার ছাত্রলীগ/"বিড়বিড় করে বলে উঠল সমীক/
"ছাত্রদলই কি এমন পীর আইছে/এক হাতে কি তালি বাজে নি?"
এতক্ষণে খেয়াল করল সমীক মোটা লোকটাকে/পিছনে দাঁড়িয়ে বিড়ি টানতে টানতে কথা শুনছিল নিশ্চয়ই/কথা শুনে বি.এন.পি করে বলে মনে
হল সমীকের/একটু সতর্ক হয়ে উঠল সে /যদিও নিজে সে কোন দল করে না/পরিস্খিতি যা হয়েছে দোষ লীগের ঘাড়েই যায়/দলও যে সাধু তাও ভাবে না/কিন্তু এখন এই লোকের সাথে রাজনৈতিক বিতর্কে নামতে চাচ্ছিল না সে/
"ওই আমারে দুইটা লীফ দিস/"হন্তদন্ত করে এসে লম্বামতন করে একটা ছেলে বলে উঠল পিচ্চিকে/
সমীক আগের জায়গাটা ছেড়ে দিল ছেলেটাকে/মোটা লোকটা এখনও চেয়ে আছে সমীকের দিকে/
"গোলাগুলি তো ওরাই শুরু করল/"একটু বিরক্ত হয়েই বলল সমীক/
"সেটাতো আপনি বলতে পারেন না-কে শুরু করছে ?আপনিও তো ঘটনার জায়গায় ছিলেন না/মিডিয়া তো ওদের হাতে/ দলের পোলাপান হলে লীগের ছাত্ররে না পিটাইলে তো এরকম হইত না/ "
"আর আপনার ওই লীগের পোলা যে ছাত্রীহলে গিয়া এক ছাত্রীরে টিজ্ করল সেইটা কি বলবেন/"সমীককে উত্তর দিতে হল না/লম্বামতন ছেলেটা
নিজেই প্রতিপক্ষের গন্ধ পেল মনে হয় /
"ওই মাইয়্যা দলের পোলাদের সাথে কি করে সেটাও আমরা জানি/"মোটা লোকটা গলা চড়িয়ে বলে উঠল /
"আপনেও তো দেখি ওই বদমাইশটার মতই কথা কইতাছেন/মুখ সামলায়ে কথা কন মিয়া/"ছেলেটাও পাল্টা জবাব দিল/
মোটা লোকটা এবার সত্যি সত্যি রেগে উঠল মনে হয়/সিগারেট মাটিতে ফেলে পা দিয়ে পিষতে পিষতে বলে উঠল,"কারে মুখ সামলাইতে কস্ তুই?"
সমীকের চোখের সামনেই মুহূর্তেই পরিস্থিতি কি রকম গরম হয়ে উঠল কিছু বোঝার আগেই/সমীক কিছুটা হকচকিয়ে গেল/দুজনে হাতাহাতি লেগে
যাওয়ার উপক্রম দেখে কিছু একটা করার তাগিদ অনুভব করল সে/কিরকম
ভয়ের শীতল স্রোত অনুভব করল হঠাৎ/
"আরে ভাই এই ছেলেটার বাবা মারা গেছে আপনাদের এইসব কাজিয়া ক্যাচালের জন্য আর আপনারা এখন আবার গ্যাঞ্জাম পাকাইতে চাচ্ছেন/"
হঠাৎ করেই মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেল কথাটা/বলার পর কথাটার ভুল
চিন্তা করে উল্টো নিজের অস্বস্তি লাগতে শুরু হল সমীকের/পিচ্চি মনে হয় বুঝতে পারে নি/হা মেলে তাকিয়ে দেখছিল দুজনকে /সমীকের কথাটায় কাজ হল মনে হয়/
মোটা লোকটা ঘাড় ফিরিয়ে গজরাতে গজরাতে চলে গেল/লম্বা লোকটাও
আর কিছু না বলে উল্টো পথ ধরল/
সমীক হাঁফ ছেড়ে বাঁচল/কিন্তু অস্বস্তিবোধটা এখনও গেল না তার/ফস করে
আর একটা সিগারেট ধরিয়ে ফেলল সে/ভূল করে বলে ফেললেও মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না এখনও নিজের কথাটা/
"কত সহজে ঝগড়া লাইগা যায় দেখছস?"সহজ হওয়ার জন্য পিচ্চির সাথে কথা বলতে চাইল সমীক/
"হ" পিচ্চি মনে হয় এখনও ধাতস্থ হতে পারে নি/"চা খাইবেন নাকি?"
"দে"একটু বিষণ্ণ উত্তর দিল সমীক/
কিরকম ঝিম মেরে বসে থাকতে লাগল/চা টা হাতে পেয়েই চুমুক দিল/গরম চা কিছুটা অবসাদ দূর করে দিল মনে হয়/
"তোর বাপের কথা ভাবস্?"একটা নির্দোষ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল সমীক/
"ওই বুড়ার কথা ভাবনের কি আছে/খালি পিডায়/"খুব তাচ্ছিল্য ভরা উত্তর
"অসুস্থ বাপেরে এমনে কেউ কয়?"গম্ভীর হয়ে বলল সমীক/
হঠাৎ করে আরেক লোকের উদয় হল/ প্রায় ছুটতে ছুটতেই এসে বলল"ওই তোর বাপে মরছে হুনছস/ হাসপাতাল থন এহনই হুইনা আইলাম/"
সমীকের বুক ধক করে উঠল/অস্বস্তিবোধটা এখন অনুতাপে রূপান্তর নিচ্ছে/
সমীক ভাবছিল পিচ্চি হয়ত হাউমাউ করে কেঁদে উঠবে/কিন্তু সমীক দেখল পিচ্চি ঠায় চুপচাপ বসে আছে/লোকটাও আর কিছু না বলে চলে গেল যেন এটাই স্বাভাবিক ছিল/পিচ্চি মাথা নিচু করল আরেকটু/
সমীক একটু ভয়ে ভয়েই জিজ্ঞেস করল "কি রে হাসপাতাল যাবি না?"
পিচ্চি কিছু বলল না/সমীক উঠে পিচ্চির কাঁধে হাত রাখল/
"বাপে তো মরলই/কালকে হাসপাতালে দেইখাই বুঝছিলাম যে আর দিন নাই/তয় এত তাড়াতাড়ি যাইব ভাবি নাই/মায়ের কাম শেষে এতক্ষণে যাউয়ার কথা/মায়েই সব করব/"ধীরে ধীরে বলল পিচ্চি/
"তুই যাবি না?তোর মা নিশ্চয়ই কাঁদতেছে/তুই গেলে সান্ত্বনা পাইব/"
"মায়ে কাঁদব?মায়ে তো নতুন নাঙর ধরছিল/এইজইন্যে বাপে মায়েরে পিডাইত/এহন মায়ে যাইব নতুন ভাতারের লগে/বাপে গুলি খাইছে বইলা মায়ে কতক সেবা করছে/আসলে মাবাপের মিল নাই/মা এহন আমারেও ছাইড়া যাইব/"
শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেল সমীক/
"তাই বলে যাবি না?"
"আইজ এমনিতেও যাওনের উপায় নাই/এই এলাকার পুলিশরে মাসিক
ট্যাকা দেওন লাগে/এইমাসে ট্যাকা দিতে দেরি হইতাছে বইলা আমগোরে উঠাই দিয়া নতুন মাইনষেরে দোকানি দিব বইলা হুমকি দিছে/রাইত ১০টার দিকে আইব/আইজ না দিলে দোকান ভাইঙ্গাই দিব/"
সমীক হতবিহ্বল হয়ে গেল/সে আর চিন্তা করতে পারছিল না/জীবনের কঠোরতা এমন করে হঠাৎ নগ্ন হতে দেখে সে আর স্থির থাকতে পারছে না/
সে উঠে দাঁড়াল/হনহন করে হাঁটতে লাগল বাড়ি ফেরার পথে কোন দিকে না তাকিয়েই /হঠাৎ করেই যেন মনে হচ্ছে সবকিছু অর্থহীন/অস্বস্তি আর অনুতাপবোধ এখন প্রবল খারাপ লাগায় পরিণত হচ্ছে/সমীকের খুব বমি পাচ্ছে/বিবশ হয়ে যাচ্ছে সে/
































২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×