সূরা বাকারা এর আয়াত ৪৭-৪৮ এ এসেছে-
"হে বনী ইসরাইলগণ! তোমরা স্মরণ কর আমার অনুগ্রহের কথা, যা আমি তোমাদের উপর করেছি এবং (স্মরণ কর) সে বিষয়টি যে, আমি তোমাদের উচ্চ মর্যাদা দান করেছি। আর সে দিনের ভয় কর, যখন কেউ কারও সামান্য উপকারেও আসবে না এবং তার পক্ষে কোন সুপারিশও কবুল হবে না, কারও কাছ থেকে ক্ষতিপূরণও নেয়া হবে না এবং তারা কোন রকম সাহায্যও পাবে না"
আল্লাহতায়ালার নিরন্তর অনুগ্রহ, দয়া এবং উপর্যুপরি অন্যায় করে ক্ষমা পেয়ে যাওয়ার পরও যুগে যুগে ইহুদি জাতি সর্বদাই পথভ্রষ্ট হয়েছে। বস্তুুত শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাদের বংশ হতে না আসায় তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, তাওরাতকে নিজেদের মত করে বিকৃত এবং ভুল ব্যাখ্যা করেছে। সময়ের সাথে নিজেদের জালিম আচরণ দুনিয়ার লোকদের দেখিয়েছে এবং এখনও দেখিয়ে যাচ্ছে।
তারা ছিল হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর বংশধর এবং এরা এক সময় মিশরে বসবাস করত যখন তারা ফেরাউনের শাসনামলে চরম অপমানকর এবং নিগৃহীত জীবন যাপন করত। এ সম্পর্কে সূরা বাকারয় এসেছে-
" আর স্মরণ কর সে সময়ের কথা, যখন আমি তোমাদের মুক্তি দান করেছি ফেরাউনের লোকদের কবল থেকে যারা তোমাদের কঠিন শাস্তি দান করত, তোমাদের পুত্র সন্তানদের হত্যা করত এবং তোমাদের কন্যা সন্তানদের জীবিত রাখত। বস্তুত তাতে পরীক্ষা ছিল তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে।"
ফেরাউন জানতে পেরেছিল তার রাজ্যে ইসরাইল বংশে এমন এক পুত্র সন্তান জন্ম নেবে যে কিনা তার পতন ঘটাবে, যে কারনে পুত্র সন্তান জন্ম নেয়ার সাথে সাথে মেরে ফেলার হুকুম দেয়া ছিল। এই রকম অমানবিকতার ভেতর দিয়ে ইসরাইলিরা দিন কাটাচ্ছিল ঠিক ততদিন পর্যন্ত যতদিন হযরত মুসা (আঃ) এবং হযরত হারুন (আঃ) এর আগমন ঘটে।
ফেরাউনের ওই ভয়ংকর শাসন থেকে মুসা (আঃ) তাদের রক্ষা করেছিলেন। এ সম্পর্কে বলা হয়েছে-
" আর যখন আমি তোমাদের জন্য সাগরকে দ্বিখন্ডিত করেছি, অতঃপর তোমাদেরকে বাঁচিয়ে দিয়েছি এবং ডুবিয়ে দিয়েছি ফেরাউনের লোকদের যা তোমরা দেখেছিলে।আর যখন আমি মুসার সাথে ওয়াদা করেছি চল্লিশ রাত্রির, অতঃপর তোমরা গোবৎস বানিয়ে নিয়েছ মুসার অনুপস্থিতে।বস্তুত তোমরা ছিলে জালেম।"
এই ঘটনার অবতারনা হয়েছিল ফেরাউনের ডুবে যাওয়ার পর যখন ইসরাইলিরা পুনরায় মিশর অথবা অন্য কোথাও (স্থান সম্পর্কে স্পষ্ট বলা নেই) বসবাস করতে শুরু করেছিল। তখন তারা মুসা (আঃ) কে বলেছিল যেহেতু তারা এখন নিরাপদ ও নিশ্চিত তাই তারা নিজেদের জীবন যাপন সম্পর্কে কোন শরীয়ত/ কিতাব/ বিধান আশা করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহতায়ালা তূর পর্বতে ৪০ দিন অতিবাহিত করার পর মুসা (আঃ) কে তাওরাত প্রদান করলেন। অথচ যাদের জন্য এই জীবন বিধান আনতে মুসা (আঃ) ৪০ দিন তূর পর্বতে একা অবস্থান করলেন, সেখান থেকে এসে দেখলেন তারা, সামেরী নামক এক ব্যক্তির প্ররোচনায় সোনা রুপা দিয়ে একটি গো বৎস বানিয়ে এর অারাধনায় লিপ্ত হয়ে পড়েছে। এহেন অন্যায় কাজে নিয়োজিত হওয়ার পরও আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন- " অতঃপর আমি তাতেও তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতঞ্জতা স্বীকার করে নাও"
বনী ইসরাইল সম্প্রদায় যে কতটা হঠকারি সম্প্রদায় ছিল তার প্রমান হিসেবে তারা মুসা (আঃ) আনীত তাওরাতকে প্রশ্নবিদ্ধ করল। বলল এই কিতাব আল্লাহ প্রদত্ত এটা তারা তখনই বিশ্বাস করবে যখন আল্লাহ নিজে প্রকাশ্যে এসে এ কথা তাদেরকে বলবেন। মুসা (আঃ) তখন নিরুপায় হয়ে তাদের থেকে মনোনীত ৭০ জনকে নিয়ে পুনরায় তূর পর্বতে গেলেন, সেখানে তারা আল্লাহর বাণী শুনল, অথচ তারপর তারা বলল শুধু শুনলে হবে না তারা আল্লাহকে দেখতে চায়। যেহেতু এ মরজগতে আল্লাহকে দেখার ক্ষমতা কারো নেই কাজেই এই ধৃষ্টতার শাস্তিস্বরুপ তাদেরকে বজ্রাঘাতে ধ্বংস করে দেয়া হল। (চলবে)