জন্ডিস শব্দটি ইংরেজি। তবে আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে একে নানা নামে ডাকা হয়ে থাকে।
জন্ডিস কি?
মানুষের রক্তে বিলিরুবিন নামক এক প্রকার রঞ্জক পদার্থ আছে। রক্তে এই পদার্থের পরিমান বেড়ে গেলে মানুষ জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
জন্ডিসের প্রকারভেদ:
জন্ডিসকে তিনভাগে ভাগ করা যায়-
১. হিমোলাইটিক এমোনিয়া
- রক্তের লোহিত কণিকা কোন কারণে বেশি বেশি ভাঙলে যেমন: হেপার্টিক –প্রি
- ম্যালিরিয়া, গথ্যালাসেমিয়া
২. লিভারের মধ্যে কোন সমস্যা থাকলে। অধিকাংশ জন্ডিস এ কারনেই হয়ে থাকে। যেমন: ভাইরাল হেপটিক, হাপাটাইটিস, অতিরিক্ত মদ্য পানের ফলে, লিভার ক্যান্সার হলে।
৩. পোস্ট হাপার্টিক পিত্ত লিভারে তৈরি হবার পর লিভার থেকে বের হবার রাস্তায় কোন সমস্যা থাকলে। যেমন: পিত্তনালীয় রাস্তায় পাথর, পিত্তনালীর ক্যান্সার।
লক্ষন:
১. গায়ের রঙ বা প্রস্রাব হলুদ হওয়া
২. ক্ষুধা কমে যাবে
৩. বমির ভাব বা বমি হওয়া
৪. অনেক সময় পাতলা পায়খানা হতে পারে ও এর সাথে পেটে ব্যাথা হতে পারে
৫. অল্প জ্বরও থাকতে পারে
কারণ:
বয়সভেদে এই রোগের কারণ আলাদা হয়ে থাকে।
· ভাইরাল হেপাটাইটিস আমাদের দেশে বেশ প্রচলিত- খাদ্য ও পানি বাহিত
· লিভার সুস্থ থেকেও জন্ডিস হতে পারে। কারো যদি রক্ত ভাঙার অসুখ থাকে, যেমন থেলাসেমিয়া একটা অসুখ, এটি থাকলে জন্ডিস হতে পারে
· আবার কারো লিভার ভালো, থেলাসেমিয়া নেই, তারও জন্ডিস হতে পারে। যেমন বাধাজনিত বা অবসট্রাকটিভ জন্ডিস। সেই ক্ষেত্রে পিত্তনালিতে পাথর হলেও হতে পারে বা পিত্তথলির ক্যানসার হলে হতে পারে।
· পেনক্রিয়াস নামের আমাদের শরীরে যে অঙ্গ, তার মাথায় যদি ক্যানসার বা কোনো অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হয় তাহলেও জন্ডিস হতে পারে।
করনীয়:
· প্রচুর পানি পান করা
· পর্যাপ্ত পরিমানে বিশ্রাম করা
প্রতিরোধ:
· জন্ডিসের জন্য হেপাটাইটিস একটা কারণ এবং অন্যতম কারণ, আমাদের দেশে যেখানে সানিটেশন ব্যবস্থা তেমন উন্নত নয়। এখন বৃষ্টির দিন আমরা যদি দূষিত পানি পান করি তাহলে জন্ডিস হতে পারে। এই বর্ষাকালেই এই রোগ আমাদের দেশে বেশি হয়। অতএব বিশুদ্ধ পানি পানের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে।
· বাইরের পানি, ফল, খোলা জায়গায় যেগুলো বিক্রি করে সেগুলোও খেতে গেলে সতর্ক হতে হবে।
· হেপাটাইটিস বি, এর প্রতিরোধক টিকা রয়েছে এগুলো নেওয়া উচিত। আর হেপাটাইটিস সি কে প্রতিরোধ করতে রক্ত নেওয়ার আগে স্ক্রিনিং করে নিতে হবে।
সাবধানতা:
আমাদের দেশের অনেকেই হারবাল ঔষধ-এর উপরে নির্ভর করে থাকেন কিন্তু অনেক সময় এই নির্ভরতা লিভার আক্রান্ত করতে পারে। এছাড়াও তেল-ভাজা পোড়া ও অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবার পরিহার করে চলতে হবে।
নিয়ন্ত্রণের ভেতর থাকলে এবং নিয়মকানুন মেনে চললে জন্ডিস খুব তাড়াতাড়ি সেরে যেতে পারে। তবে বিলিরুবিনের মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে লিভারের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির সমূহ সম্ভাবনা থাকে। তাই যতদ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:০৯