somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাছ চাই না বড়শি চাই? প্রডাক্ট না টেকনোলজি?

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এটা একটা জনপ্রিয় চাইনিজ ছোট গল্প।
ছেলে মাছ খেতে চাইলো।
সরাসরি মাছ দিলে, সে একবারই মাছ খাবে। সাময়িকভাবে খুশি হবে। গদ গদ হয়ে বাবার গলায় ধরে বলবে উঅ আই নি (আই লাভ য়ু)। তুমি এত্তো গুলো ভাল কেন?
বাবা তাকে সেই সুযোগ দিলেন না। মাছ না দিয়ে ধরিয়ে দিলেন একটা বড়শি। মাছ ধরা শিখিয়ে দিলেন।
ছেলের প্রথম কয়েকটা দিন কষ্টে কাটলো। কিন্তু মাছ ধরার টেকনিক টা জানার কারণে সে সারা জীবন মাছ খেতে পারলো।
আপনি কি চাইবেন? মাছ? নাকি মাছ ধরার কৌশল?

(১)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের হাতে কী ছিল? আমেরিকানদের লক্ষ লক্ষ বোমার আঘাতে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া ৪৭ টা বিভাগীয় শহর ছিল। যোগাযোগ, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি কোন অবকাঠামোই তো অবশিষ্ট ছিল না। ছিল না তেমন কোন প্রাকৃতিক সম্পদ।
তাহলে? দেশটা গড়ে উঠলো কিভাবে?
বিশ্বব্যাঙ্ক থেকে টাকা ধার নিল। সেই টাকা দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, চিকিৎসার অবকাঠামো তৈরি করলো। শিনকানসেন (পৃথিবীর দ্রুততম ট্রেন) টানলো, বড় বড় শহর গুলোকে হাই ওয়ে দিয়ে কানেক্ট করলো। শত শত ফ্লাই ওভার তৈরি হলো, পাহাড়ের ভেতরে সমুদ্রের নীচে টানেল তৈরি হল। মজার ব্যাপারটি হলো - বিদেশ থেকে কোন শ্রমিক আমদানি করলো না। কোম্পানি গুলোর ম্যানেজার বাইরে থেকে আনলো না।
তয়োতা, হোন্দা, তোসিবা, সনি, হিতাচি এমন শত শত কোম্পানি কাজ করে দিল নিজেদের লোক দিয়ে। সি,ই, ও থেকে শুরু করে ম্যানেজার, শ্রমিক সবই জাপানি। নিজেদের কর্মদক্ষতা বাড়লো, অভিজ্ঞতা বাড়লো। এই কোম্পানি গুলো কোথাও টেন্ডারে অংশগ্রহণ করলে বা কোন কর্মচারি চাকুরীতে আবেদন করলে কেউ বলতে পারবেনা- যাহ তোদের অভিজ্ঞতা নেই, আগে অভিজ্ঞতা নিয়ে আয়, তারপর প্রজেক্ট/চাকুরী।
জি,ডি,পি হু হু করে বাড়তে লাগলো।
ধারের টাকা ফেরত দিয়ে ২০ বছরের মাথায় আমেরিকাকে, বিশ্বব্যাঙ্ককে উল্টা ঋণী করে ফেললো। শুরু থেকেই জাপান বাইরে থেকে কোন প্রডাক্ট কেনে নি। টেকনোলজি আমদানি করেছে।
ধরুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যকলাপ ধারণ করার জন্য ক্যামেরা লাগবে। ওনারা তিনজন নয় ছয়জন লোক পাঠাবেন। ক্যামেরা যাচাই বাছাই করার জন্য নয়। ক্যামেরা কিভাবে বানাতে হয় সেই টেকনোলজি শিখে মগজে ভরে আনার জন্য। যেন দেশে এসে শুধু প্রধানমন্ত্রীর জন্যই নয়, সাধারণ জনগণ ও এফোর্ড করতে পারে এমন ক্যামেরা বানাতে পারেন। নিজ দেশে কাজে লাগলে অন্য দেশেও কাজে লাগবে। রফতানি করো, আরো বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করো। জিডিপি বাড়াও।
মাছ চাইলেই মাছ নয়, মাছ ধরার কৌশলটা শিখিয়ে দাও।
(২)
মালয়েশিয়ার মাহাতির মুহম্মদ জাপানে পড়াশুনা করেছেন। ক্যাপাসিটি বিল্ড করার জাপানিদের এই কৌশলটি শিখে গেলেন। আশির দশকে নব্বই দশকে স্ট্রাটিজিক্যালি দলে দলে মালয় গোস্টি কে বিদেশে পাঠালেন। পড়াশুনার জন্য। স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর জন্য। আমেরিকা, ইউরোপ আর জাপান। বিদেশ থেকে ফেরার সাথে সাথেই সেই বিদ্যা কাজে লাগানোর মত জায়গায় সেট করে দিলেন। প্রোডাক্টিভিটি বাড়ল, আয় বাড়ল। ম্যানেজার শ্রেণীর লোক তৈরি হল। বিদেশ থেকে যা আমদানি করলো তা হল শ্রমিক শ্রেণীর লোক। যোগাযোগ, শিক্ষা, চিকিৎসার অবকাঠামো তৈরি হল। নিজের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ালেন।
এখন আর মালয় ছাত্রদের তেমন বিদেশে যেতে হচ্ছে না। বরং বাইরে থেকে মালয়েশিয়াতে বিদেশি ছাত্র আসা শুরু করেছে।
চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে হচ্ছে না। মাহাতির মুহম্মদ নিজের চিকিৎসার জন্য বাইরে না গিয়ে নিজ দেশে হাসপাতাল বানানোর কিচ্ছা সবার জানা।
জাপানি কোম্পানি গুলোকে ইনভেস্ট করার উইন উইন সিচুয়েশন তৈরি করে দিলেন। জাপানিরা ইনভেস্ট করলেন। গাড়ি কোম্পানি, হোম ইলেক্ট্রনিক্স কোম্পানি। মাহাতির এর দল স্ট্রাটিজিটা এমনভাবে করলেন যাতে টেকনোলজিটা ট্রান্সফার হয়। স্কিল ডেভেলপমেন্ট হয়। ৫০ বছরে জাপান যা টেকনোলজি ডেভেলপ করেছে তা যেন ৫ বছরে ট্রান্সফার হয়।
তার ফলাফল দেখেন। ৮৫ এর দিকে মালয়েশিয়ান ব্র্যান্ড এর প্রোটন সাগা (মিতসুবিশি জয়েন্ট ভেঞ্চার) গাড়ি বাজারে এলো।
আর আমরা আমাদের মন্ত্রী, এমপি দের জন্য বিনা ট্যাক্সে কিভাবে গাড়ি আমদানি করতে পারি সেই পলিসি বানিয়ে দিলাম। অথচ আমাদের প্রগতি, র‌্যাংগস বা সদ্য ওঠা ওয়াল্টন দিয়ে গাড়ির ১০% জিনিস ও তৈরি করে শুরুটা করলে কেমন হতো? ইতিমধ্যে মেইড ইন বাংলাদেশ একটা ব্র্যান্ড বেরিয়ে আসতো না? কয়েক হাজার লোকের কর্মসংস্থান হতো না? টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট, স্কিল ডেভেলপমেন্ট হতো না? সেই শুরুটা আজো সম্ভব। বেটার লেইট দ্যান নেভার।

ক্যামেরা থেকে শুরু করে হোম-ইলেক্ট্রনিক্স এর এমন কোন জাপানি প্রোডাক্ট নেই যাতে মেইড ইন মালয়েশিয়া লেখা নেই। গত সপ্তাহে ম্যানচেষ্টার থেকে জাপানি ফ্লাইটে করে জাপান ফিরছি। মুসলিম হালাল ফুড অর্ডার দিয়ে রেখেছিলাম। দেখি বাক্সে হালাল একটা সিল দেয়া। লেখা Certified by MHCTA (Malaysian Halal Consultation and Training Agency)। কত জায়গায় এদের বিচরণ।

(৩)
গত জুন মাসে তাইওয়ানে গিয়েছিলাম। একটা Social Business Entrepreneurship Contest এর বিচারক হয়ে। ইংল্যান্ড থেকে এসেছিলেন আরেকজন বিচারক। কন্টেস্ট শেষে ডিনার টেবিলে বিচারকদের মধ্যে একটা আড্ডা হচ্ছিল।
কথা হচ্ছিল- একটা দেশে সরকারের ভূমিকা কি হতে পারে সে নিয়ে। ওনার কথা হলো সরকারের কাজ হবে তিনটি - (ক) ট্যাক্স কালেক্ট করবে (খ) পলিসি তৈরি ও মনিটর করবে আর (গ) রাস্তাঘাট পরিষ্কার রাখবে।
একটা গণতান্ত্রিক সরকার এই তিনটি কাজই ভাল করবে। অন্য কোন কাজে হাত দিতে গেলেই ব্যর্থতা আসবে। দেশের স্বার্থের চেয়ে স্বীয় স্বার্থ অথবা দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে। রামপাল নিয়ে এতো চিল্লাচিল্লি কেন?

(৪)
২০১০ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে যাবার সুযোগ হয়েছিল। বাংলাদেশের একজন নামকরা অর্থনিতিবিদ গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। জেমস ওয়াট নামের যে বৈজ্ঞানিক স্টিম ইঞ্জিন আবিষ্কার করেছিলেন, তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন ইন্সট্রুমেন্ট মেকার ছিলেন। গ্লাসগো শহরটা ঘুরিয়ে দেখালেন। শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা, ওয়াটার সাপ্লাই, পার্ক, টাউন হল ইত্যাদি। গ্লাসগো সেন্ট্রাল রেলওয়ে স্টেশন টা তৈরি হয়েছে ১৮৭৯ সালে। অন্যান্য অবকাঠামো গুলোও একই সময়ের তৈরি। বৃটিশ সরকার আমাদের দেশ গুলো থেকে ট্যাক্স কালেক্ট করেছেন আর ব্যয় করেছেন জনস্বার্থে। অর্থনিতিবিদ বললেন, আর আমাদের অবস্থা দেখেন- শাহজাহান সাহেব আমাদের অবকাঠামোতে মনোযোগ না দিয়ে বানালেন তাজমহল, নিজের জন্য। জনগণের জন্য নয়। সায়েস্তা খা টাকায় আটমন চাল খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন। যারা কিনল তাদের উপকার হলো, কিন্তু যে চাল তৈরি করলো সেই কৃষকের বারোটা বাজলো। আটমন চাল মানে ১৪ মন ধান। ১৪ মন ধান বিক্রি করে মাত্র এক টাকা আয় হতো। গরিব কৃষক গরিবই রয়ে গেল।

(৫)
১৯৯৬ সালের কথা। ভারতে আইটি সেক্টরে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বেড়েই চলছে। ভারতের সরকার বড় তিনটি কোম্পানির প্রধান দের ডাকলেন। ইনফোসিস, টাটা আর আজিম প্রেমজির উইপ্রো কে। ডেকে বললেন, দেশের উন্নতির জন্য আপনাদের কন্ট্রিবিউশন অনেক। সরকারের কাছে কি আপনাদের কিছু চাওয়ার আছে? তিন কোম্পানিই অবাক হলেন। বললেন, আমাদের একমাস সময় দেন। আমরা একটা লিস্ট দেবো। ওনারা এক সপ্তাহ পরেই একটা উইশ লিস্ট দিলেন। তিন কোম্পানির তিন দাবি- (ক) Stay away from us (খ) Stay away from us (গ) Stay away from us।
আইটি সেক্টরে আমাদের দেশের সরকারের ভূমিকা কি হওয়া উচিত? এ নিয়ে নিশ্চয়ই অনেক গবেষণা হচ্ছে। কোন লিঙ্ক আছে?

জাপানের জাইকা আমাদের অনেক সাহায্য করেন। আমরা খুশি। এই খুশিটাকে স্বল্পমেয়াদী না করে দীর্ঘ মেয়াদী করা চাই। শুনে থাকবেন বছর দুই আগে জাপানি সরকারের সাথে আমাদের ৬০ বিলিয়ন ইয়েন এর একটা চুক্তি সই হয়েছে। বলেন তো দেখি এই টাকা কি সাহায্য? নাকি ধার? ধার নিচ্ছে কে ফেরত দিচ্ছে কে? আমরা যদি ধারই নিয়ে থাকি, তাহলে এই টাকাটা কন্ট্রোল করছে কে? প্ল্যান করছে কে, ইমপ্লিমেন্ট করছে কে? কতটাকার প্রোডাক্ট কিনছি? কত টাকার টেকনোলজি কিনছি? কতটাকার স্কিল ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে? টাকাটা ফেরত দিচ্ছি কবে?

জাপান আমাদের একটা বন্ধু দেশ। প্রোডাক্ট না চেয়ে টেকনোলজি চাইলে ওনারা "না" করবেন না। আমরা মাছ চাচ্ছি নাকি মাছ ধরার টেকনোলজি চাচ্ছি, এই সিদ্ধান্ত দেয়ার দায়িত্ব আমাদের।
এটা একটা জনপ্রিয় চাইনিজ ছোট গল্প।
ছেলে মাছ খেতে চাইলো।
সরাসরি মাছ দিলে, সে একবারই মাছ খাবে। সাময়িকভাবে খুশি হবে। গদ গদ হয়ে বাবার গলায় ধরে বলবে উঅ আই নি (আই লাভ য়ু)। তুমি এত্তো গুলো ভাল কেন?
বাবা তাকে সেই সুযোগ দিলেন না। মাছ না দিয়ে ধরিয়ে দিলেন একটা বড়শি। মাছ ধরা শিখিয়ে দিলেন।
ছেলের প্রথম কয়েকটা দিন কষ্টে কাটলো। কিন্তু মাছ ধরার টেকনিক টা জানার কারণে সে সারা জীবন মাছ খেতে পারলো।
আপনি কি চাইবেন? মাছ? নাকি মাছ ধরার কৌশল?

(১)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের হাতে কী ছিল? আমেরিকানদের লক্ষ লক্ষ বোমার আঘাতে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া ৪৭ টা বিভাগীয় শহর ছিল। যোগাযোগ, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি কোন অবকাঠামোই তো অবশিষ্ট ছিল না। ছিল না তেমন কোন প্রাকৃতিক সম্পদ।
তাহলে? দেশটা গড়ে উঠলো কিভাবে?
বিশ্বব্যাঙ্ক থেকে টাকা ধার নিল। সেই টাকা দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, চিকিৎসার অবকাঠামো তৈরি করলো। শিনকানসেন (পৃথিবীর দ্রুততম ট্রেন) টানলো, বড় বড় শহর গুলোকে হাই ওয়ে দিয়ে কানেক্ট করলো। শত শত ফ্লাই ওভার তৈরি হলো, পাহাড়ের ভেতরে সমুদ্রের নীচে টানেল তৈরি হল। মজার ব্যাপারটি হলো - বিদেশ থেকে কোন শ্রমিক আমদানি করলো না। কোম্পানি গুলোর ম্যানেজার বাইরে থেকে আনলো না।
তয়োতা, হোন্দা, তোসিবা, সনি, হিতাচি এমন শত শত কোম্পানি কাজ করে দিল নিজেদের লোক দিয়ে। সি,ই, ও থেকে শুরু করে ম্যানেজার, শ্রমিক সবই জাপানি। নিজেদের কর্মদক্ষতা বাড়লো, অভিজ্ঞতা বাড়লো। এই কোম্পানি গুলো কোথাও টেন্ডারে অংশগ্রহণ করলে বা কোন কর্মচারি চাকুরীতে আবেদন করলে কেউ বলতে পারবেনা- যাহ তোদের অভিজ্ঞতা নেই, আগে অভিজ্ঞতা নিয়ে আয়, তারপর প্রজেক্ট/চাকুরী।
জি,ডি,পি হু হু করে বাড়তে লাগলো।
ধারের টাকা ফেরত দিয়ে ২০ বছরের মাথায় আমেরিকাকে, বিশ্বব্যাঙ্ককে উল্টা ঋণী করে ফেললো। শুরু থেকেই জাপান বাইরে থেকে কোন প্রডাক্ট কেনে নি। টেকনোলজি আমদানি করেছে।
ধরুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যকলাপ ধারণ করার জন্য ক্যামেরা লাগবে। ওনারা তিনজন নয় ছয়জন লোক পাঠাবেন। ক্যামেরা যাচাই বাছাই করার জন্য নয়। ক্যামেরা কিভাবে বানাতে হয় সেই টেকনোলজি শিখে মগজে ভরে আনার জন্য। যেন দেশে এসে শুধু প্রধানমন্ত্রীর জন্যই নয়, সাধারণ জনগণ ও এফোর্ড করতে পারে এমন ক্যামেরা বানাতে পারেন। নিজ দেশে কাজে লাগলে অন্য দেশেও কাজে লাগবে। রফতানি করো, আরো বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করো। জিডিপি বাড়াও।
মাছ চাইলেই মাছ নয়, মাছ ধরার কৌশলটা শিখিয়ে দাও।
(২)
মালয়েশিয়ার মাহাতির মুহম্মদ জাপানে পড়াশুনা করেছেন। ক্যাপাসিটি বিল্ড করার জাপানিদের এই কৌশলটি শিখে গেলেন। আশির দশকে নব্বই দশকে স্ট্রাটিজিক্যালি দলে দলে মালয় গোস্টি কে বিদেশে পাঠালেন। পড়াশুনার জন্য। স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর জন্য। আমেরিকা, ইউরোপ আর জাপান। বিদেশ থেকে ফেরার সাথে সাথেই সেই বিদ্যা কাজে লাগানোর মত জায়গায় সেট করে দিলেন। প্রোডাক্টিভিটি বাড়ল, আয় বাড়ল। ম্যানেজার শ্রেণীর লোক তৈরি হল। বিদেশ থেকে যা আমদানি করলো তা হল শ্রমিক শ্রেণীর লোক। যোগাযোগ, শিক্ষা, চিকিৎসার অবকাঠামো তৈরি হল। নিজের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ালেন।
এখন আর মালয় ছাত্রদের তেমন বিদেশে যেতে হচ্ছে না। বরং বাইরে থেকে মালয়েশিয়াতে বিদেশি ছাত্র আসা শুরু করেছে।
চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে হচ্ছে না। মাহাতির মুহম্মদ নিজের চিকিৎসার জন্য বাইরে না গিয়ে নিজ দেশে হাসপাতাল বানানোর কিচ্ছা সবার জানা।
জাপানি কোম্পানি গুলোকে ইনভেস্ট করার উইন উইন সিচুয়েশন তৈরি করে দিলেন। জাপানিরা ইনভেস্ট করলেন। গাড়ি কোম্পানি, হোম ইলেক্ট্রনিক্স কোম্পানি। মাহাতির এর দল স্ট্রাটিজিটা এমনভাবে করলেন যাতে টেকনোলজিটা ট্রান্সফার হয়। স্কিল ডেভেলপমেন্ট হয়। ৫০ বছরে জাপান যা টেকনোলজি ডেভেলপ করেছে তা যেন ৫ বছরে ট্রান্সফার হয়।
তার ফলাফল দেখেন। ৮৫ এর দিকে মালয়েশিয়ান ব্র্যান্ড এর প্রোটন সাগা (মিতসুবিশি জয়েন্ট ভেঞ্চার) গাড়ি বাজারে এলো।
আর আমরা আমাদের মন্ত্রী, এমপি দের জন্য বিনা ট্যাক্সে কিভাবে গাড়ি আমদানি করতে পারি সেই পলিসি বানিয়ে দিলাম। অথচ আমাদের প্রগতি, র‌্যাংগস বা সদ্য ওঠা ওয়াল্টন দিয়ে গাড়ির ১০% জিনিস ও তৈরি করে শুরুটা করলে কেমন হতো? ইতিমধ্যে মেইড ইন বাংলাদেশ একটা ব্র্যান্ড বেরিয়ে আসতো না? কয়েক হাজার লোকের কর্মসংস্থান হতো না? টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট, স্কিল ডেভেলপমেন্ট হতো না? সেই শুরুটা আজো সম্ভব। বেটার লেইট দ্যান নেভার।

ক্যামেরা থেকে শুরু করে হোম-ইলেক্ট্রনিক্স এর এমন কোন জাপানি প্রোডাক্ট নেই যাতে মেইড ইন মালয়েশিয়া লেখা নেই। গত সপ্তাহে ম্যানচেষ্টার থেকে জাপানি ফ্লাইটে করে জাপান ফিরছি। মুসলিম হালাল ফুড অর্ডার দিয়ে রেখেছিলাম। দেখি বাক্সে হালাল একটা সিল দেয়া। লেখা Certified by MHCTA (Malaysian Halal Consultation and Training Agency)। কত জায়গায় এদের বিচরণ।

(৩)
গত জুন মাসে তাইওয়ানে গিয়েছিলাম। একটা Social Business Entrepreneurship Contest এর বিচারক হয়ে। ইংল্যান্ড থেকে এসেছিলেন আরেকজন বিচারক। কন্টেস্ট শেষে ডিনার টেবিলে বিচারকদের মধ্যে একটা আড্ডা হচ্ছিল।
কথা হচ্ছিল- একটা দেশে সরকারের ভূমিকা কি হতে পারে সে নিয়ে। ওনার কথা হলো সরকারের কাজ হবে তিনটি - (ক) ট্যাক্স কালেক্ট করবে (খ) পলিসি তৈরি ও মনিটর করবে আর (গ) রাস্তাঘাট পরিষ্কার রাখবে।
একটা গণতান্ত্রিক সরকার এই তিনটি কাজই ভাল করবে। অন্য কোন কাজে হাত দিতে গেলেই ব্যর্থতা আসবে। দেশের স্বার্থের চেয়ে স্বীয় স্বার্থ অথবা দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে। রামপাল নিয়ে এতো চিল্লাচিল্লি কেন?

(৪)
২০১০ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে যাবার সুযোগ হয়েছিল। বাংলাদেশের একজন নামকরা অর্থনিতিবিদ গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। জেমস ওয়াট নামের যে বৈজ্ঞানিক স্টিম ইঞ্জিন আবিষ্কার করেছিলেন, তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন ইন্সট্রুমেন্ট মেকার ছিলেন। গ্লাসগো শহরটা ঘুরিয়ে দেখালেন। শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা, ওয়াটার সাপ্লাই, পার্ক, টাউন হল ইত্যাদি। গ্লাসগো সেন্ট্রাল রেলওয়ে স্টেশন টা তৈরি হয়েছে ১৮৭৯ সালে। অন্যান্য অবকাঠামো গুলোও একই সময়ের তৈরি। বৃটিশ সরকার আমাদের দেশ গুলো থেকে ট্যাক্স কালেক্ট করেছেন আর ব্যয় করেছেন জনস্বার্থে। অর্থনিতিবিদ বললেন, আর আমাদের অবস্থা দেখেন- শাহজাহান সাহেব আমাদের অবকাঠামোতে মনোযোগ না দিয়ে বানালেন তাজমহল, নিজের জন্য। জনগণের জন্য নয়। সায়েস্তা খা টাকায় আটমন চাল খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন। যারা কিনল তাদের উপকার হলো, কিন্তু যে চাল তৈরি করলো সেই কৃষকের বারোটা বাজলো। আটমন চাল মানে ১৪ মন ধান। ১৪ মন ধান বিক্রি করে মাত্র এক টাকা আয় হতো। গরিব কৃষক গরিবই রয়ে গেল।

(৫)
১৯৯৬ সালের কথা। ভারতে আইটি সেক্টরে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বেড়েই চলছে। ভারতের সরকার বড় তিনটি কোম্পানির প্রধান দের ডাকলেন। ইনফোসিস, টাটা আর আজিম প্রেমজির উইপ্রো কে। ডেকে বললেন, দেশের উন্নতির জন্য আপনাদের কন্ট্রিবিউশন অনেক। সরকারের কাছে কি আপনাদের কিছু চাওয়ার আছে? তিন কোম্পানিই অবাক হলেন। বললেন, আমাদের একমাস সময় দেন। আমরা একটা লিস্ট দেবো। ওনারা এক সপ্তাহ পরেই একটা উইশ লিস্ট দিলেন। তিন কোম্পানির তিন দাবি- (ক) Stay away from us (খ) Stay away from us (গ) Stay away from us।
আইটি সেক্টরে আমাদের দেশের সরকারের ভূমিকা কি হওয়া উচিত? এ নিয়ে নিশ্চয়ই অনেক গবেষণা হচ্ছে। কোন লিঙ্ক আছে?

জাপানের জাইকা আমাদের অনেক সাহায্য করেন। আমরা খুশি। এই খুশিটাকে স্বল্পমেয়াদী না করে দীর্ঘ মেয়াদী করা চাই। শুনে থাকবেন বছর দুই আগে জাপানি সরকারের সাথে আমাদের ৬০ বিলিয়ন ইয়েন এর একটা চুক্তি সই হয়েছে। বলেন তো দেখি এই টাকা কি সাহায্য? নাকি ধার? ধার নিচ্ছে কে ফেরত দিচ্ছে কে? আমরা যদি ধারই নিয়ে থাকি, তাহলে এই টাকাটা কন্ট্রোল করছে কে? প্ল্যান করছে কে, ইমপ্লিমেন্ট করছে কে? কতটাকার প্রোডাক্ট কিনছি? কত টাকার টেকনোলজি কিনছি? কতটাকার স্কিল ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে? টাকাটা ফেরত দিচ্ছি কবে?

জাপান আমাদের একটা বন্ধু দেশ। প্রোডাক্ট না চেয়ে টেকনোলজি চাইলে ওনারা "না" করবেন না। আমরা মাছ চাচ্ছি নাকি মাছ ধরার টেকনোলজি চাচ্ছি, এই সিদ্ধান্ত দেয়ার দায়িত্ব আমাদের।

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৫০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×