somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেস জোকস-৩ =p~

১৯ শে জুন, ২০০৯ বিকাল ৪:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রেস জোকস-১ Click This Link
প্রেস জোকস-২ Click This Link
গণমাধ্যমে প্রায়ই মজার মজার কিছু সত্যি ঘটনা ঘটে। এ সব কখনো কখনো প্রচলিত হাস্য কৌতুককে হার মানিয়ে দেয়। আবার এসব প্রেস জোকসের নেপথ্যে থাকে কষ্টকর সাংবাদিকতা পেশাটির অনেক অব্যক্ত কথা। এমনই কিছু বাস্তব ঘটনা নিয়ে এই 'প্রেস জোকস' পর্ব।

আমি বাংলার, বাংলা আমার

১৯৯৩-৯৪ সালের কথা। দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকার চিত্রশিল্পী সেনবাবু পান-প্রিয়তার জন্য বিখ্যাত। পকেটে ৫০ টাকা থাকলে উনি বাংলা, ৫০০ টাকা থাকলে কেরু আর ৫,০০০ টাকা থাকলে ফরেন লিকার টানতেন। আমাদের এই দাদাটি অবশ্য প্রতিদিন পান করতেন না; সপ্তাহে শুধু দুদিন তিনি মদ খেতেন; যেদিন বৃষ্টি হতো, আর যেদিন বৃষ্টি না হতো।

আর খুব মুডে থাকলে উনি গুনগুন করে গান করতেন, আমি বাংলার, বাংলা আমার, ওতোপ্রোত মেশামেশি, আমি বাংলা ভালবাসি।...

আমরা ক্ষুদে সাংবাদিকরা তখন একটু মুচকি হেসে বলতাম, হ’ দাদা, কবিয়াল রমেশ শীল এই গানটি আপনার জন্যেই লিখেছিলেন!

সে সময় মোবাইল টেলিফোনের এতো চল হয়নি; অ্যানালগ ল্যান্ড ফোনই ভরসা। একদিন সন্ধ্যার পর কী কাজে যেনো ফোন করেছি, বাংলাবাজার পত্রিকায়। বন্ধু-বান্ধব কাউকে না পেয়ে সেনবাবুকে খুঁজলাম।

ওপাশে ফোন কে ধরেছিলেন, জানি না। রসিকজন বললেন, দাদা তো এখন ‘বাংলাবাজারে’ নেই। ওনাকে এখন পাওয়া যাবে ‘বাংলার বাজারে’!

আবারো সেনবাবু সমাচার

এক গ্রীষ্মে আমরা কয়েকজন ক্ষুদে সাংবাদিক সেনবাবুর সঙ্গে পান করতে বসেছি। ফরেন লিকার, পান-অনুপান, কোনোটারই অভাব নেই।

তো মদ গিলতে গিলতে অনেক রাত হলো। দাদাবাবু এক সময় মাতাল হয়ে পড়লেন। হঠাৎ শুরু হলো তার অঝোর ধারায় কান্না। আমরা কিছুতেই তার কান্না থামাতে পারি না।

আমরা সেনবাবুর চোখে-মুখে পানি ছিটিয়ে আদুরে গলায় জানতে চাই, কী হয়েছে দাদা, আমাদের বলুন।

দাদা ভেউ ভেউ করে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, আর বলিস না, কাল রাতে আমি কাঁঠাল খাইসিলাম।....এইটুকু বলে আবার তার ভ্যাঁএএএএএ শুরু হলো।....

--তারপর? কাঁঠাল খেয়েছেন তো কী হয়েছে? এ নিয়ে কান্নার কী হলো?
দাদা আবারো কাঁদতে কাঁদতে বললেন, আর বলিস না, কাঁঠাল একটা জাতীয় ফল; আর আমি কী না এইটা বইসা বইসা খাইলাম!...

প্রিজন্স সমীপে

এক-এগারোর পরে রাজনৈতিক রথি-মহারথিরা গণহারে গ্রেফতার হতে শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে দুই নেত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনা-খালেদাও আছেন। আর এই দুই নেত্রীকে রাখা হয়েছে শেরে বাংলা নগরের বিশেষ কারাগারে।

তো প্রায় প্রতিদিনই তাদের মামলা ও জেলখানার বন্দি জীবনের নানা দিক নিয়ে কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি-প্রিজন্স) মেজর শামসুল হায়দার সিদ্দিকী সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।

সেদিনও প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ২০-২৫ জন সাংবাদিক মেজর সিদ্দিকীকে ঘিরে ধরেছেন। ব্রিফিং চলছে...সবাই মন দিয়ে নোট নিচ্ছেন, বক্তব্য রেকর্ড করছেন। ব্রিফিং শেষে ২৪ ঘন্টার টিভি চ্যানেল সিএসবি-নিউজের (আধুনা লুপ্ত) এক ক্ষুদে সাংবাদিক হঠাৎ মেজর সিদ্দিকীর পুরো নাম জানতে চাইলেন।

উনি একটু থতমত খেলেন। কারণ ততদিনে তিনি মিডিয়ায় খুব পরিচিত একটি নাম। তবু অমায়িক একটি হাসি দিয়ে তিনি বলেলেন, আমি মেজর শামসুল হায়দার সিদ্দিকী, ডিআইজি-প্রিজন্স।

ওই সাংবাদিকের পরের প্রশ্ন, মেজর শামসুল হায়দার সিদ্দিকী তো আপনার নাম; তো ‘প্রিজন্স’ কী আপনার ডাক নাম?

বুঝুন অবস্থা!

আমি সাংবাদিক!

কয়েক বছর আগের কথা। কাওরান বাজারের একটি শীর্ষ দৈনিক পত্রিকার একজন সিনিয়র রিপোর্টার। খুব খ্যাতনামা সাংবাদিক হলেও চালচলনে উনি খুব সাদাসিদে।
একদিন অফিস যাওয়ার জন্য তিনি প্রেসক্লাব থেকে লোকাল বাসে উঠলেন। সামনের কয়েকটি আসন ফাঁকা থাকলেও তিনি একেবারে পেছনের একটি সিটে গিয়ে বসলেন।

একটু পরে ওই একই অফিসের পিয়ন কালাম মিয়াও উঠলো একই বাসে; সে-ও অফিসে যাচ্ছে। কালাম মিয়া বসেছে সামনের দিকের একটি সিটে। সে অবশ্য ওই রিপোর্টারকে খেয়াল করেনি।

একটু পরে বাস ছাড়তে না ছাড়তেই ওপাশ থেকে আসতে শুরু করলো একটি বিশাল মিছিল। তো কালাম মিয়া লাফিয়ে উঠে ড্রাইভারকে বললো, এই ড্রাইভার, জলদি গাড়ি থামাও। আমি অমুক পত্রিকার সাংবাদিক। এটা কিসের মিছিল, তা আমাকে জানতে হবে!

ড্রাইভার বাস থামালেন। শীর্ষ পত্রিকার নাম শুনে ভরা-বাসের যাত্রীরা সকলে সশ্রদ্ধায় উঁকি-ঝুঁকি মেরে দেখতে শুরু করলেন পিয়ন কালামকে। আর কালামও খুব স্মার্টলি পকেট থেকে একটি নোট প্যাড ও বল পয়েন্ট বের করে জানালা দিয়ে মিছিলটি দেখে নিয়ে কী যেনো টোকাটুকি করলো। এর পর সে বেশ ডাঁটের সঙ্গে বললো, এই ড্রাউভার! গাড়ি চালাও!

এদিকে ওই সিনিয়র রিপোর্টার তো লজ্জায় পারলে সিটের নীচে মাথা লুকান।...

সাংবাদিক না ছাই!

১৯৭২-৭৩ সালের কথা। সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশে দৈনিক 'পাকিস্তান অবজার্ভার’ নাম বদলে হয়েছে ‘বাংলাদেশ অবজার্ভার’। সে সময় এটি খুবই নামকরা একটি ইংরেজী কাগজ। আর ভাষাশৈলীও ছিলো চমৎকার। মদ্যবিত্ত বাবা-মা বাসায় অবজার্ভার রাখতেন, যেনো ছেলে-মেয়েরা পত্রিকাটি পড়ে কিছু ইংরেজী শেখে।

সে সময় অফিস-আদালতে কম্পিউটার চালু হয়নি। কাজ-কর্মে টাইপরাইটারই ছিলো ভরসা। দৈনিক পত্রিকায় সাংবাদিকরাও সংবাদটি প্রথমে টাইপরাইটারে লিখতেন। পরে এটি সম্পাদনার পর ছাপা হতো প্রেসে।

তো অবজার্ভারের এক সাংবাদিক বিয়ে করবেন; পাত্রী পক্ষ এক সন্ধ্যায় গোপনে অবজার্ভার অফিসে গিয়ে সাংবাদিকের কাজ-কর্ম দেখেও গেলেন। তারপর তারা আর বিয়েতে কোনোভাবেই রাজী নয়।

পাত্র কাম সাংবাদিক দেখা করলেন মেয়ের বাবার সঙ্গে। মেয়ের বাবা তো মুখ খিঁচিয়ে উঠলেন, আমরা তোমার অফিসে গোপনে খোঁজ নিয়েছি। তুমি সাংবাদিক না ছাই; তুমি তো সেখানে টাইপিস্ট!

সাংবাদিকের বিয়ের তিন বছর

সংবাদিকদের প্রায়ই কাজ সেরে বাসায় ফিরতে ফিরতে গভীর রাত হয়ে যায়। কখনো কখনো ভোররাত।

তো মিডিয়া পাড়ায় সদ্য বিবাহিত সাংবাদিকদের নিয়ে একটি গল্প খুব চালু আছে। গল্পটি এ রকম:

বিবাহিত সাংবাদিক নাকী বিয়ের প্রথম বছরে অনেক রাতে বাসায় ফিরে দেখে টেবিলে ঢাকা দেয়া ভাত গরম; আর বউও গরম।

বিয়ের দ্বিতীয় বছরে তারা অনেক রাতে বাসায় ফিরে দেখে টেবিলের ভাত গরম; কিন্তু বউ ঠাণ্ডা।

বিয়ের তৃতীয় বছরে সাংবাদিক গভীর রাতে বাসায় ফিরে দেখে টেবিলের ভাত ঠাণ্ডা; আর বউও ঠাণ্ডা!!

(চলবে)


সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০০৯ বিকাল ৪:১৩
২১টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×