somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রিক্তের রোদন
কিছু শোক ভিতরটাকে দুমড়ে মুচড়ে ফেলে,কিন্তু হৃদয়ের কান্না কেউ শুনতে পায়না ৷ কিছু যন্ত্রণা আছে ধুঁকে ধুঁকে মারে, কিন্তু কারো কাছে তা ব্যক্ত করা যায় না ৷তবে আমার শোক আত্মীয় বিয়োগের কারণে নয় ৷ আমার এ বেদনা স্বজন হারানোর বেদনা নয় ৷ তাহলে কিসের?

কেন ইসলাম গ্রহণ করেছেন সাবেক পপতারকা ক্যাট স্টিভেন্স?

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাবেক পপ-তারকা ক্যাট স্টিভেন্স একজন বিখ্যাত নও-মুসলিম। তার জন্ম হয়েছিল ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের এক খ্রিস্টান পরিবারে। তার বাবা ছিলেন একজন গ্রিক অর্থোডক্স খ্রিস্টান ও মা ছিলেন সুইডিশ ক্যাথলিক। অথচ স্টিভেন্স ব্রিটেনের প্রোটেস্টান্ট খ্রিস্টান সমাজে বসবাস করতে প্রোটেস্টান্ট ধর্মমত অনুযায়ী। মায়ের উৎসাহ পেয়ে স্টিভেন্স গান শেখেন। ফলে ২০ বছর বয়স হওয়ার আগেই তার ৮টি অ্যালবাম প্রকাশিত হয় এবং ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন।

স্টিভেন্স ১৯৬৯ সালে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হন। তার শারীরিক অবস্থা এতই খারাপ হয়ে পড়েছিল যে চিকিৎসকরা তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছিলেন। প্রায় এক বছর ধরে হাসপাতালে থাকার পর তার মধ্যে বড় রকমের মানসিক পরিবর্তন ঘটে। এ সময় তিনি গভীর আগ্রহ নিয়ে প্রাচ্যের নানা ধর্ম সম্পর্কে পড়াশুনা শুরু করেন। এরপর থেকে তার গানের ভাবধারা ও পরিবেশ বদলে যেতে থাকে এবং সেগুলো হয়ে উঠতে থাকে আধ্যাত্মিক অর্থবহ।

স্টিভেন্স মরক্কো সফরে গেলে সেখানে আযানের সুমিষ্ট ধ্বনি তাকে বেশ আকৃষ্ট করে।  এ সময় তার মনে যে ভাবনার উদয় হয়েছিল তা শোনা যাক তারই কথায়:

মনে মনে ভাবলাম,আল্লাহর জন্য সঙ্গীত? এমন বিষয় তো আর কখনও শুনিনি। অর্থের জন্য সঙ্গীত, খ্যাতির জন্য সঙ্গীত এবং ব্যক্তির গায়ের জোর বা শক্তির জন্য সঙ্গীত—এ ধরনের কথা তো শুনেছি;কিন্তু আল্লাহর জন্য সঙ্গীতের কথা কখনও শুনিনি।

স্টিভেন্স-এর পরবর্তী গানের ক্যাসেটগুলো আরো বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ক্যাট স্টিভেন্সের ভাই ডেভিড জানতেন ক্যাট বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে পড়াশুনা করতে খুব ভালবাসেন। তাই মধ্যপ্রাচ্য সফরের সময় ডেভিড তার ভাইয়ের জন্য ইংরেজি ভাষায় অনুদিত পবিত্র কুরআনের একটি কপি সংগ্রহ করেন এবং দেশে ফিরে এসে ওই কপিটি তার ভাইকে উপহার দেন।

পবিত্র কুরআন পড়ে ক্যাট স্টিভেন্স এত অভিভূত হন যে তিনি ইসলাম সম্পর্কে সার্বিক গবেষণা ও পড়াশুনা করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন: “পবিত্র কুরআনের যে দিকটি সব কিছুর আগে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল তা হল এ মহাগ্রন্থের কভারের ওপর লেখকের কোনো নাম ছিল না। এ উপহার ছিল এমনই মূল্যবান সম্পদ যে তা আমার জীবনকে বদলে দিয়েছে।

যাই হোক,শুরু করলাম কুরআন অধ্যয়ন । যতবারই এ মহাগ্রন্থ পড়তাম ততবারই প্রশান্তি অনুভব করতাম । মনে হত এ কুরআন যেন আমার জন্যই লেখা হয়েছে, তাই বার বার পড়েও তৃষ্ণা মিটত না।  পবিত্র কুরআন পড়ে বুঝতে পারলাম যে ইসলামই হল সেই ধর্ম যার সন্ধান আমি করছিলাম। কারণ, আমার মনের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছি এ মহান ধর্মে।

পবিত্র কুরআন আমার ওপর  প্রভাব ফেলেছে কল্পনার চেয়েও অনেক গুণ বেশি। আমি বুঝতে পারলাম যে কুরআনের শাশ্বত বাণী নাজেল হয়েছে গোটা মানব জাতির চিরন্তন সৌভাগ্যের জন্যই। এ মহাগ্রন্থের বাণী খুবই সহজ ও স্পষ্ট। কুরআনের শব্দগুলো আমাকে খুবই বিস্মিত করে । এ পর্যন্ত জীবনে যত বই পড়েছি তার চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা বা ব্যতিক্রমধর্মী লেগেছে এ মহাগ্রন্থ।

পবিত্র কুরআন পড়ার আগে পার্থিব জীবনকে আমার কাছে এক দুর্বোধ্য রহস্য বা ধাঁধা বলে মনে হত ।এ বিশ্ব জগতের যে একজন স্রস্টা রয়েছেন তা বিশ্বাস করতাম। কিন্তু জানতাম না এই যে স্রস্টা যাকে চোখে দেখা সম্ভব নয় তিনি কে। এটা জানার জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু কোনো ফল পাইনি। ঠিক যেন এমন এক নৌকার অবস্থায় ছিলাম যা উত্তাল ঢেউয়ের মধ্যে সুনির্দিষ্ট কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছিল না। কিন্তু যখন পবিত্র কুরআন অধ্যয়ন করলাম তখন অনুভব করলাম যে এ বই যেন আমার সঙ্গে কথা বলছে। এভাবে এ মহাগ্রন্থের বাণীর মধ্যে পুরোপুরি ডুবে পড়েছিলাম।”

পবিত্র কুরআন অধ্যয়নের পর ধীরে ধীরে ইসলামী মূল্যবোধগুলোকে নিজ জীবনের ওপর প্রয়োগ করছিলেন ক্যাট স্টিভেন্স। মশগুল হতে থাকেন আল্লাহর ইবাদতে। মদ, ক্লাব ও পার্টি—এসব পাপপুণ্য অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলছিলেন। অবশেষে গ্রহণ করেন পবিত্র ইসলাম ধর্ম। এভাবে ক্যাট স্টিভেন্স পরিণত হন ইউসুফ ইসলামে।

সাবেক পপ তারকা ইউসুফ ইসলাম বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে নিয়ে  সঙ্গীতের একটি অ্যালবাম রচনা করেছেন। তার কাছে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে সব সময়ই শান্তির প্রতীক বা আদর্শ বলে মনে হয়। নওমুসলিম ইউসুফ ইসলাম মনে করেন ইসলাম এমন এক ধর্ম যা অন্য সব ধর্মের কাছেও শান্তি ও সমঝোতার প্রচার-প্রসার ঘটাচ্ছে। তিনি বলেছেন, “বিশ্বনবী (সা.) নিয়ে রচিত সঙ্গীতের (সিডি) অ্যালবামটিতে আমি গোলাপ ফুলের সুঘ্রাণ দিয়েছি। তাই সিডিটি খোলার সাথে সাথেই শ্রোতা সুগন্ধ পান। এটা করার কারণ, গোলাপ ফুল বিশ্বনবী  হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র অস্তিত্বের প্রতীক। আমি চাই শ্রোতারা যখন এই অ্যালবামের গান শুনবেন তখন যেন তারা এ মহামানবের প্রতীকী সুঘ্রাণ অনুভব করেন”

নও-মুসলিম ইউসুফ ইসলাম এখন ইসলামী জীবনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য কঠোর প্রয়াস চালাচ্ছেন। মুসলমান হওয়ার পর তিনি কিছু দিন গান গাওয়া ও রেকর্ড করা ছেড়ে দিয়েছিলেন। বিয়ে করার পর তিনি ব্রিটিশ মুসলিম সমাজের সেবায় নিয়োজিত হয়েছেন। পপ তারকা হিসেবে তার বার্ষিক আয় ছিল দেড় মিলিয়ন ডলার। তার জমানো সেইসব অর্থ ও ভবিষ্যৎ আয়কে লন্ডন ও অন্যান্য অঞ্চলের মুসলমানদের শিক্ষার কাজে ও অন্যান্য দাতব্য খাতে ব্যয় করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। মানব-দরদি শান্তি মিশন নিয়েও দেশে দেশে সফর করছেন সাবেক ক্যাট স্টিভেন্স। পৃথিবীর উত্তর থেকে দক্ষিণে এবং পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিস্তৃত হয়েছে তার সফর।

এটা সত্য মুসলমান হওয়ার কারণে পাশ্চাত্যের শীর্ষস্থানীয় পপ তারকার পদটি এখন আর তার দখলে নেই, কিন্তু যা তিনি পেয়েছেন তা হল  সবচেয়ে বড় সম্পদ তথা ঈমান ও আধ্যাত্মিক প্রশান্তি। সুত্র ইন্টারনেট ৷
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৮
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×