ব্লগার হত্যাকারী বিচারে সরকারের নির্লিপ্ততার কারণ কোনটি? - (১) অক্ষমতা (২) আল কায়েদা ভীতি (৩) ধার্মিক মুসলমানদের সহানুভূতি অর্জনের চেষ্টা (৪) শাহবাগী আন্দোলনের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়া ৷
(১) অক্ষমতা:
-ব্লগার অভিজিৎ হত্যায় সরাসরি ব্লগার অভিজিৎ হত্যায় সরাসরি জড়িত কাউকে এখনও পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ৷ হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে শফিউর রহমান ফারাবি নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও, তার কাছ থেকে কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি৷ আদালতেও কোনো স্বীকারোক্তি দেয়নি ফারাবি৷
তবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন যে, তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত সাতজনকে চিহ্নিত করেছেন, গ্রেপ্তারেরএ চেষ্টা চলছে৷ তিনি বলেন, ‘‘অভিজিৎ হত্যার দিন সেই এলাকায় থাকা পুলিশের ভিডিও ফুটেজ দেখে সাতজনকে শনাক্ত করে তাদের ছবি সংগ্রহ করা হয়েছে৷''
-ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যার পর পর জনতার হাতে জিকরুল্লাহ ও আরিফুল নামে দুই মাদ্রাসা ছাত্র ধরা পড়লেও, পুলিশ তাদের কাছ থেকে বাড়তি কোনো তথ্য আদায় করতে ব্যর্থ হয়৷ ওই দু'জনের সঙ্গে থাকা পলাতক আবু তাহের ও মাসুমকেও গ্রেপ্তার করা যায়নি৷
-এছাড়া সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস হত্যার ঘটনায় ইদ্রিস আলী (২৪) নামে এক আলোকচিত্র সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে সাতদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও, অপরাধীদের চিহ্নিত বা আটকের কোনো খবর নেই৷ প্রসঙ্গত, ইদ্রিস আলী হত্যাকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলের কাছ থেকে ছবি তোলায় তাঁকে আটক করা হয়৷
-সর্বশেেষ নিলয় নীল হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে পুলিশ অন্ধকারে হাতড়াচ্ছে ৷ প্রকৃত হত্যাকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে ৷ অথচ পুলিশ পরপর দুইবার রিমান্ডে দিয়েছে ব্লগার আসিফ মহীউদ্দিন হত্যা চেষ্টা মামলার আসামি কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়া
রানা এবং নািহনকে ৷
*** এখানে প্রশ্ন উঠে, বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা কি এতই দূর্বল ও অক্ষম?
নাকি হত্যাকারীরা এতই সংগঠিত, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং কৌশলী যে গোয়েন্দা বিভাগকে তাদের কাছ থেকে দীক্ষা--- ৷
একজনের হত্যারহস্যের তদন্ত শেষ করতে না করতেই যদি আরেকজন খুন হয়, তখন স্বভাবতঃই পূর্বের হত্যাকান্ডটি গৌণ হয়ে যায় ৷
(২) আল কায়েদা ভীতি:
২০১৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আলকায়েদা প্রধান আইমান আল-জাওয়াহিরি এক অনলাইন ভিডিও বার্তায় ভারতীয় উপমহাদেশে নতুন শাখা খুলে আল কায়েদার কার্যক্রম শুরু ঘোষণা দেন ৷ যা আসিম ওমরের নেতৃত্বে পরিচালিত হবে। ভিডিওটিতে আলকায়েদার নতুন এই শাখার টার্গেট হিসেবে ঘোষণা করা হয় বাংলাদেশ, মায়ানমার ও ভারতের আসাম, গুজরাট, কাশ্মির রাজ্যের কথা। ভিডিওতে উপমহাদেশীয় মুসলিমদের প্রতি আলকায়েদার যোদ্ধাদের সহায়তার আহ্বান জানান ৷ ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দেশী-বিদেশী বহু পত্রিকায় এ সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছিল ৷
এরপরই, ব্লগার অভিজিৎ রায়কে হত্যার দায় স্বীকার করেছে আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশের শাখা।
৩ মে ২০১৫ ইং - কালেরকণ্ঠ পত্রিকায় এ সংবাদ উল্লেখ করা হয় ৷ এতে বলা হয়, "গতকাল শনিবার জিহাদি ফোরামে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে এ দাবি করেন আল-কায়েদার ভারতীয় শাখা আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্ট (একিউআইএস)-এর নেতা অসীম উমর।
এসআইটিই জানায়, ভিডিওতে একিউআইএসের নেতা অসীম উমর বলেছেন, তাঁর সংগঠনই অভিজিতের ওপর হামলা চালিয়েছে। তিনি অন্য ধর্মদ্রোহীদের হত্যার কথাও বলেছেন ৷ "
যদিও বাংলাদেশ এবং আমেরিকান সরকার আলকায়দার সংশ্লিষ্টার বিষয়টি এড়ানোর বা অস্বীকার করার চেষ্টা করেছিল ৷
অন্যদিকে, ব্লগার নিলয় খুন হওয়ার কিছুক্ষণ পরই ansar.al.islam.bd @gmail. com ইমেইল ঠিকানা থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে আল কায়েদা ৷
৭আগষ্ট, ২০১৫ ইং 'বাংলা ট্রিবিউন' এ 'নিলয় হত্যার দায় স্বীকার আল কায়েদার' শিরোনামে সংবাদটি প্রচারিত হয় ৷ মেইলটিতে বলা হয়, “আনসার আল ইসলাম (আল কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশ, বাংলাদেশ শাখা) এর মুজাহিদিনরা হামলা চালিয়ে আল্লাহ তা'আলা ও তার রাসুলের দুশমন নিলয় চৌধুরীকে হত্যা করেছেন। শুক্রবার দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে ওই অপারেশন সম্পন্ন হয়।”
এতে আরও বলা হয়, 'আল্লাহর রাসুলের সম্মান রক্ষার্থে প্রতিশোধমূলক ওই হামলা চালানো হয়েছে।' বিবৃতিতে হুমকি দিয়ে বলা হয়, ' আমরা আল্লাহ ও তার রাসুলের নিকৃষ্টতম দুশমনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছি। আমরা এদের ও তাদের সঙ্গীদের ধ্বংস করতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করবো। হে মুসলিম উম্মাহ আমরা আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি যতক্ষণ পর্যন্ত এই সন্তানদের ধমনীতের রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ ও তার রাসুলের শত্রুদের ওপর হামলা চলতেই থাকবে।’
বিবৃতিতের শেষে বলা হয়, 'যদি তোমাদের বাক স্বাধীনতা কোনও সীমানা না মানতে প্রস্তুত থাকে, তবে তোমাদের হৃদয় যেন আমাদের চাপাতির স্বাধীনতার জন্য উন্মুক্ত থাকে।'
*** সরকার কেন আল কায়দার বিষয়টি চেপে যাচ্ছে তা বোধগম্য নয় ৷***
(৩) ধার্মিক মুসমানদের সহানুভূতি অর্জনের চেষ্টা :
নিলয় হত্যাকাণ্ডের পর সংবাদ সম্মেলনে ব্লগারদের উদ্দেশ্যে পুলিশের আইজিপি বলেছেন, ‘যাঁরা মুক্তমনা লেখক, তাঁদের কাছে অনুরোধ, আমরা যেন সীমা লঙ্ঘন না করি। এমন কিছু লেখা উচিত নয়, যেখানে কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে, বিশ্বাসে আঘাত হানে।’ পাশাপাশি আওয়ামী ওলামা লীগ নামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়েছে, ‘ধর্ম অবমাননাকারীদের’ মৃত্যুদণ্ড প্রদানের বিধান রেখে আইন প্রণয়ন করতে হবে ৷
ঢাকায় বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন, "ব্লগার হত্যাকারীদের ধরার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যর্থ হয়েছে।"
অধ্যাপক জিয়া বলেন, “একের পর এক ব্লগার খুন হচ্ছে। একটি হত্যারও বিচার হয়নি। বিচারহীনতার সংস্কৃতি মানুষকে অপরাধ করতে নতুনভাবে উৎসাহিত করে।”
অধ্যাপক জিয়া বলেন, "ব্লগার হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি বাংলাদেশে এখন বেশ স্পর্শকাতর। কারণ এর সাথে ধর্মের বিষয়টি জড়িত।
বাংলাদেশে অনেকেই মনে করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের প্রতিপক্ষ বিএনপি রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার করে। সে কারণে ব্লগার হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আওয়ামীলীগকে অনেক ‘কম্প্রোমাইজ’ করতে হচ্ছে।"
(৪) শাহবাগী আন্দোলনের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়াঃ
২০১৩ সালে রাজনৈতিক দাবায় বিজয়ী হওয়ার জন্য আওয়ামী লিগের
প্রয়োজন ছিল 'গণজাগরণ মঞ্চ' নামক এ শক্তিশালী গুটিটির ৷
তেমনি বি এন পি-জামাতের হাতে ছিল ' হেফাজতে ইসলাম' নামক আরেক শক্তিশালী গুটি ৷ কিন্তু 'প্রহসনের নির্বাচনে' পুনঃক্ষমতা লাভের পর এ গুটির তেমন প্রয়োজন রইল না
৷