somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তেল ভূখন্ড মধ্যপ্রাচ্য

১৭ ই এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৪:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





তেল ভূখন্ড মধ্যপ্রাচ্য। বিক্ষোভ বিদ্রোহ বিপ্লব। মধ্যপ্রাচ্যে এই মুহূর্তে যাই ঘটুক। টার্গেট তেল। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সমূহের জনতা যদি স্বত:স্ফুর্তভাবে এসব ঘটায় তবে তারা বিদেশীদের হাত থেকে এই তেল সম্পদ রক্ষার্থেই তা করবে। আর যদি বিদেশীদের প্ররোচনায় এসব ঘটে তবে তারা এই তেল সম্পদ স্থায়ীভাবে কুক্ষিগত করার জন্যই এসব করাচ্ছে।

আশংকার ব্যাপার হচ্ছে যদি অচিরে মধ্যপ্রাচ্য সংকট না থামে তবে এই তেল ভূখন্ড স্থায়ীভাবেই খন্ড বিখন্ডিত হতে পারে।

তিউনিসিয়া, মিশর, বাইরাইন, ওমান অথবা লিবিয়ায় যা ঘটছে তা বিক্ষোভের আদলে ভূমিকম্প। ভূমিকম্প নয়। আসলে ‘তেলকম্প’, ‘অয়েলকোয়েক’। ভূমিকম্পে নির্দিষ্ট ভৌগলিক এলাকা কাঁপে। বড় আকারের ভূমিকম্প হলে সেই এলাকা বিধ্ধস্থ হয়। ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়। প্রাণহানি ঘটে। আর এই তেলকম্পে নড়ে উঠবে সমগ্র বিশ্ব।

ফিরে দেখা:

পারস্য অঞ্চলে তেল সম্পদ আবিস্কারের গোড়ার ইতিহাসে যেতে হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যের দক্ষিণ পারস্য অঞ্চলে বিপুল তেল সম্পদ আবিস্কৃত হয়। পশ্চিমা বিশ্বের নজর সেই থেকে গেঁথে আছে ঐ অঞ্চলে। খনি থেকে কাঁচা তেল উত্তোলন, প্রক্রিয়াকরন, শোধন, ইত্যাদির মাধ্যমে পেট্রোলিয়ামে রূপান্তর, সকল প্রক্রিয়ায় পশ্চিমা বিশ্ব উপযাচক হয়ে সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে যায়। বিনিময়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে পশ্চিমারা সহজে সুলভে তেলসম্পদ আনার পথ পদ্ধতি দলিল দস্তাবেজ সব কিছুই করে। ঐ অঞ্চলের শাষকদেরকে করে রাখে নিজেদের হাতের পুতুল। বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের বুলি আউড়ে যারা জনপ্রিয়তা অর্জনে সচেষ্ট, সেই পশ্চিমারাই শতাব্দী ধরে ঐ অঞ্চলে জিইয়ে রাখে রাজতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র। নিজেদের স্বার্থে। মধ্যপ্রাচ্যের তেলসম্পদের ছোঁয়া না পেলে পশ্চিমাদের শিল্পায়ন হত না। আসত না অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি।

পেট্রোলিয়াম যুগের অবসান:

কি আছে তেল সম্পদ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের সাথে পশ্চিমা বিশ্বের বর্তমান দলিলে? অপেক্ষাকৃত সস্তা কয়লা অবশ্য তেল সম্পদের বিকল্প হিসাবে উঠে এসেছে। শিল্প কারখানা, রেলরোড, স্টিম জাহাজ, ফ্যাক্টরী যদিও কয়লায় চলছে, অটোমোবাইল, এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রী, কৃষি সহ বিশ্বের অধিকাংশ যন্ত্রনির্ভর সেক্টর চলছে তেল সম্পদের কল্যানে। অর্থনীতির বিশ্বায়ন হয়েছে এর ওপরই ভর করে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মেক্সিকো, ভেনেজুয়েলা, রোমানিয়া, সেভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমান রাশিয়া), ডাচ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এরাই মূলত শুরু করেছে পেট্রোলিয়াম যুগ। আর এদের সর্বরাহকারী হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য।

বিশ্বের প্রধান তেল কোম্পানী বিপি অয়েলের মতে বিশ্ব পেট্রোলিয়াম অর্থনীতিতে মধ্যপ্রাচ্যই সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় দৈনিক ২৯ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎেপন্ন হয়। যুক্তরাস্ট্র, চীন, জাপান ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের সব তেল আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। রাশিয়ায় উৎপন্ন হয় সাত মিলিয়ন ব্যারেল, আফ্রিকায় ছয় মিলিয়ন ব্যারেল এবং দক্ষিণ আমেরিকায় এক মিলিযন ব্যারেল। সেই তুলনায় মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার ২৯ মিলিয়ন ব্যারেল বিরাট সংখ্যা।

পশ্চিমারা মধ্যপ্রাচ্যের তেলসম্পদের উৎপাদন নিয়ে আগাম কিছু হিসাব কষেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জী’র পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩৫ সাল নাগাদ মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা যৌথভাবে বিশ্বের অর্ধেক রপ্তানীযোগ্য তেল উৎপাদন করার কথা। তেলের চাহিদা বাড়ছে। আগামী দিনগুলোতে যে প্রচুর পরিমান পেট্রোলিয়াম লাগবে তার যোগান সঠিকভাবে পাওয়ার জন্যই মূলত মধ্যপ্রাচ্যে রাজতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্র সমর্থন করে আসছিল পশ্চিমারা। খনি থেকে তেল সম্পদ উত্তোলন, শোধন, প্রক্রিয়াজাতকরন সংকান্ত সব ধরনের কণ্ট্রাক্ট এমনকি সাধারন কর্মীদের প্রশিক্ষন দেয়ার জন্য পশ্চিমা বিশ্ব থেকে নিয়মিত প্রশিক্ষক ও ঐ সরকারগুলির সহায়তার জন্য নিরাপত্তা কর্মীদের প্রশিক্ষনও ছিল পশ্চিমাদের। এতেই খুশী রাজতন্ত্রের শাষকরা। কিন্তু পশ্চিমাদের হিসাবে ভুল ছিল। বিশ্ব অর্থনীতির জন্য মধ্যপ্রাচ্যে যে পরিমান তেল মজুদ থাকার ধারণা করেছিল তা সঠিক নয়।

পশ্চিমাদের টার্গেট:

মধ্যপ্রাচ্যের তেল সম্পদের ওপর পশ্চিমাদের নজর গত শতাব্দীর শুরু থেকেই। প্রথমে বৃটিশ এবং পরে আমেরিকাসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দখলদারদের আগমন। এ প্রসঙ্গে পেছনের কিছু কথা জানা দরকার।

এ্যাংলো-পার্শিয়ান অয়েল কোম্পানী ((এপিওসি) ১৯০৮ সালে পারস্য অঞ্চলে (বর্তমান ইরান) তেল সম্পদ আবিস্কারের পর বৃটিশ সরকার পার্শিয়ান রাজ্যের নিয়ন্ত্রন নেয়ার চেষ্টা করে। ফার্ষ্ট লর্ড অব দ্যা এ্যাডমিরাল্টি উইনষ্টন চার্চিল ছিলেন এর পেছনের অন্যতম প্রধান মানুষ। পারস্যের তেল খনি পেয়ে তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগেই বৃটিশ যুদ্ধ জাহাজ কয়লার পরিবর্তে তেল ইঞ্জিনে রূপান্তরিত করেন। এই অজুহাত ধরেই এপিওসি’র মাধ্যমে পারস্যের তেল খনির নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেয় লন্ডন। ধুর্ত চার্চিল এপিওসি’কে ১৯১৪ সালে জাতীয়করন করায়। ঐ সময় পারস্যের শাষনকর্তা শাহ রেজা পাহলভী ছিলেন জার্মান সমর্থক। তার সাথে অনেক বিষয় নিয়ে বনাবনি হচ্ছিল না। এই কারনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী চার্চিল শাহ রেজা পাহলভীকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র করে তারই মাত্র ২১ বছর বয়সী পুত্র মোহাম্মেদ রেজা পাহলভীকে ক্ষমতায় বসান। সে ছিল বৃটিশদের হাতের পুতুল। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে মস্তিস্কের পরিপক্কতা বাড়ার সাথে সাথে পরিবর্তন ঘটে শাহ পাহলভীর। জাতীয়তাবোধ জাগ্রহ হতে থাকে। বৃটিশদের স্বার্থে আঘাত লাগতে শুরু করে।

১৯৫১ সালে ইরানের গনতান্ত্রিক নির্বাচনে মোহাম্মেদ মোসাদেক প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। শাহ পাহলভী রোমে নির্বাসিত হন। এপিওসি’র নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় এ্যংলো-ইরানিয়ান অয়েল কোম্পানী (এআইওসি)। লন্ডন এটাকে ভালভাবে নেয় না। তেল বানিজ্যে প্রবল বাধার সম্মুখীন হয় বৃটিশ কর্তৃপক্ষ। ইরানের তেল সম্পদের কর্তৃত্ব হাতছাড়া হয়ে যায় বৃটিশদের। কতৃত্ব পুনরুদ্ধারে আমেরিকার সহায়তা নেয় তারা। ১৯৫৩ সালে বৃটিশ নেতৃবৃন্দ তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ারের প্রশাসনের যোগসাজসে সিআইএর সহায়তায় ষড়যন্ত্র করে মোসাদ্দেক’কে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং শাহ পাহলভীকে আবারো ইরানের ক্ষমতায় বসায়। বৃটিশদের সাথে তেল রাজনীতিতে যুক্ত হয় আমেরিকা।

বৃটিশ এবং আমেরিকান মদদে শাহ পাহলভী হয়ে ওঠেন ইরানের ক্ষমতাধর স্বৈরশাষক। তবে ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত ইরানের তেল উৎপাদন সর্বকালের রেকর্ড ভাঙ্গে। দৈনিক ছয় মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করা হয় তখন। ১৯৫৩ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত শাহ পাহলভীর একচ্ছত্র স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ফুঁসতে থাকে আমজনতা। এরপর আয়াতোল্লাহ খোমেনীর নেতৃত্বে ১৯৭৯ সালের ইরান বিপ্লব সংঘঠিত হয়। অবসান ঘটে শাহ পাহলভী অধ্যায়ের। সেই থেকে ইরান-ওয়াশিংটন সম্পর্কেরও অবনতি ঘটতে থাকে যা এখনো পর্যন্ত বিদ্যমান। চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় ইরানের তেল বানিজ্য। খোমেনী ক্ষমতা নেয়ার পর এআইওসি’র নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বৃটিশ পেট্রোলিয়াম (বিপি)। দ্বিতীয়বার প্রতিষ্ঠানটির জাতীয়করনও করা হয়। খোমেনী প্রশাসনকে শাস্তি দিতে ওয়াশিংটন বানিজ্য নিষেধাজ্ঞা জারি করে। বিপি থেকে বিদেশী প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষক তুলে নেয়া হয়। ইরানের তেল উৎপাদন কমতে কমতে ছয় তেকে দুই মিলিয়ন ব্যারেলে দাড়ায়। এরপর টানা তিন দশক নানা চেষ্টা তদবিরের পর ইরানের তেল উৎপাদন বর্তমানে চার মিলিয়ন ব্যারেলে উন্নীত হয়েছে।

ইরাক দখল: টার্গেট তেল:

ইরাকেও মোটামুটিভাবে একই কাহিনী। সাদ্দাম হুসেইসেনর শাষনামলে সরকার নিয়ন্ত্রিত ইরাক পেট্রোলিয়াম কোম্পানী (আইপিসি) তখন দৈনিক তেল উৎপাদন করত ২.৮ মিলিয়ন ব্যারেল। ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রথম গাল্ফ যুদ্ধ শুরুর পূর্ব পর্যন্ত চলে এই উৎপাদন। গাল্ফ যুদ্ধের সময় ইরাকের ওপর আরোপিত বানিজ্য নিষেধাজ্ঞার কারনে তেল উৎপাদন করে যায় দৈনিক আধা মিলিয়ন ব্যারেলে। তবে ২০১১ সাল থেকে উৎপাদন আবারো ২.৫ মিলিয়ন ব্যারেল উন্নীত হয়।

ইরাকের তেলই মূল লক্ষ ছিল বুশ প্রশাসনের। কারন অনেকেরই হয়ত মনে আছে মানব বিধ্বংসী অস্ত্রের বিরুদ্ধে অভিযানের নাম করে ইরাক আগ্রাসনের সময় আমেরিকান আর্মি ট্রুপ সর্বপ্রথম দখলে নেয় বাগদাদের ইরাকী তেমন্ত্রণালয় ভবনটি। পরবর্তীতে বুশ প্রশাসনের কতৃত্বে ইরাকের নতুন প্রশাসন সৃষ্টি, আমেরিকান তেল বিশেষজ্ঞদের দ্বারা ইরাকী তেল ইন্ডাষ্ট্রির প্রাইভেটাইজেশন করা এবং ২০০৩ সালের মে মাসে দেয়া ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জীর ইরাকী তেল উৎপাদনের রিপোর্ট ছিল অতিরঞ্জিত। বলা হয়েছিল ২০১০ সাল নাগাদ ইরাকের তেল উৎপাদন বাড়বে দৈনিক ৪.১ মিলিয়ন ব্যারেল এবং ২০২০ সাল নাগাদ হবে দৈনিক ৫.৬ মিলিয়ন ব্যারেল। এসব কিছুই হয়নি। অগ্রাসনে কোন অস্ত্র মেলেনি। টানা ৮ বছরের যুদ্ধে ইরাকের অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। লক্ষ লক্স মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ঘরবাড়ী ছাড়া হয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। আর তেল উৎপাদন কমেছে অর্ধেকেরও বেশী। বর্তমানে ইরাকে তেল উৎপাদন হচ্ছে দৈনিক প্রায় ২ মিলিয়ন ব্যারেল।

মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমাদের নজর:

তেল তেল এবং তেল। মধ্যপ্রাচ্যে ইউরোপ আমেরিকার বারবার নানা অজুহাতে ঘুরে ঘুরে যাওয়ার মানে একটাই। তেল উৎপাদন বাড়ানো এবং সুলভে তা নিজেদের স্বার্থে ব্যাবহার নিশ্চিত করা। মধ্যপ্রাচ্যে জনতার বিক্ষোভ, বিপ্লবে ইউরোপ আমেরিকার ভীত হওয়ার কথা। কারণ এসব অঞ্চলে গনতন্ত্র আসলে তা পশ্চিমাদের জন্য ভাল হবে না। যে তেলের প্রতি তাদের নজর, গনতন্ত্র আসলে ঐসব অঞ্চলের মানুষ তার দখল নেবে। বিদেশীদের হস্তক্ষেপ তারা বরদাশত করবে না। এজন্যই পশ্চিমাদের চেষ্টা ঐ অঞ্চলে স্বৈরতন্ত্র আর রাজতন্ত্র জিইয়ে রাখা।

ইরান এবং ইরাকের অভিজ্ঞতা পশ্চিমাদের জন্য এক রকম। সেই অভিজ্ঞতায় আলজেরিয়া, বাহরাইন, মিশর, জর্ডান, লিবিয়া, ওমান, মরোক্কো, সউদী আরব, সুদান, তিউনিসিয়া এবং ইয়েমেনকে বিচার করা ঠিক নয়। আলজেরিয়া, মিশর, ইরাক, লিবিয়া, ওমান এবং সুদান তেল উৎপাদনকারী দেশ। মিশর এবং জর্ডান তেল পাইপলাইনের নিরাপত্তা রক্ষায় রত। মিশরের ওপর দিয়ে রয়েছে তেল পরিবহনকারী গুরুত্বপূর্ন ক্যানাল। বাহরাইন, ইয়েমেন এবং ওমান’ও তেল পরিবহন সমুদ্র পথের মালিকানার অংশ। এসবের নিরাপত্তার জন্য সবগুলি দেশেরই গুরুত্বপূর্ন স্থানে রয়েছে মার্কিন মিলিটারী ঘাটি। আর সবগুলি দেশের শাষকরা ক্ষমতায় রয়েচেন ইউরো-আমেরিকান শক্তির মদদে। অথচ এই সমস্ত দেশেই এখন চলছে সরকার বিরোধি বিপ্লব। ইতিমধ্যেই তিউনিসিয়া এবং মিশরের শাষকদের পতন ঘটেছে। লিবিয়া যে কোন সময় জনতার দখলে যাচ্ছে। অন্যন্য দেশগুলির অবস্থাও নড়বড়ে। ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি থেকে ক্রুড অয়েলের দাম বাড়তে শুরু হয়েছে। বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে সর্ববৃহৎ একক তেল উৎপাদনকারী দেশ সৌদী আরবের দিকে।

তেল সৌদী আরব এবং পশ্চিমা বিশ্ব:

মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ও বড় তেল উৎপাদনকারী হচ্ছে সৌদী আরব। পাশ্ববর্তী দেশ বাহরাইনে সুন্নী পন্থী স্বৈরশাষক বাদশা হামাদ ইবনে ইসা আল খলিফার বিরেুদ্ধে শিয়া মুসলমানদের আন্দোলন চললেও সৌদীর অবস্থা এখন পর্যন্ত স্থিতিশীলই মনে হচ্ছে। তবে সুন্নী শাষিত সৌদী আরবেও শিয়া মুসলমানরা নির্যাতিত হয়েছে এবং হচ্ছে। বাহরাইনের আগুন পূর্ব সৌদী আরবে যে কোন সময় এ আগুন ছড়াতে পারে। কোন রকম যুব আন্দোলন থেকে সেইফ সাইডে থাকার জন্য ৮৭ বছর বয়সী সৌদী বাদশা আব্দুল্লাহ সৌদী যুবকদের বিয়ে ও বাড়ী কিংবা এ্যাপার্টমেন্ট ক্রয়ে সহায়তা দেযার জন্য ১০ বিলিয়ন ডলার অনুদান ঘোষণা করেছেন। সৌদীতে আন্দোলন বিক্ষোভ না হলেও মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান ও নিকট ভবিষ্যতের অবস্থান পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমা বিশ্বের সাথে আগের তেল চুক্তির শর্ত পরিবর্তিত হবে।

উপসংহার:

লিবিয়ার দৈনিক ১.৭ মিলিযন ব্যারেল রপ্তানীযোগ্য তেল এখন বন্ধ আছে। কতদিন পর্যন্ত এ অবস্থা থাকবে বলা যায় না। মিশর ও তিউনিসিয়ায় বিপ্লব শেস হলেও এখনো স্থিতাবস্থা ফিরে আসেনি। কবে আসবে কেউ জানে না। ইরাকের সর্ববৃহৎ অয়েল রিফাইনারী গত সপ্তাহের সন্ত্রাসী হামলায় মারাত্মকভাবে বিধ্বস্ত। ইরানে আগের মত তেল উৎপাদন হচ্ছে না। এই মুহুর্তের এমাত্র ভরসা সৌদী আরব। বিশ্ব চাহিদার সামান্য অংশই তারা পূরণ করতে সমর্থ। তাও যদি স্থিতি অবস্থা বজায় থাকে। সৌদী রয়্যাল কর্তৃপক্ষ ঘোষনা দিয়েছে সর্বোচ্চ দৈনিক ১০ মিলিয়ন ব্যারেল তারা উত্তলন করবে। ভবিষ্যৎ রিজার্ভের সংকটের কথা চিন্তা করে কোন অবস্থাতেই এর বেশী তেল তারা বাজারে ছাড়বে না। কারণ গত বছর এপ্রিলে দেশের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত প্রধান তেল কোম্পানী আরামকো’র প্রধান নির্বাহী অফিসার খালিদ আল ফালিহ ঘোষনা দেন ২০২৮ সাল নাগাদ সৌদী আরবের ডোমেষ্টিক অয়েল কনজাম্পশন বেড়ে দাড়াবে দৈনিক ৮.৩ মিলিযন ব্যারেল। তখন পর্যন্ত বিশ্বে তেলের বিকল্প এনার্জী না আবিস্কৃত হলে এবং মধ্যপ্রাচ্যের তেল সম্পদে পূর্ন দেশগুলিতে স্থিতিশীলতা না অসলে বিপদে পড়বে পুরো বিশ্ব।

মধ্রপ্রাচ্যে সম্প্রতি চলমান অবস্তায় তেলের বাজারের লম্ফ ঝম্প দেখে আন্দাজ করা সহজ বিশ্বেরর ভবিষ্যত কি হতে চলেছে। ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে জ্বালানী শক্তি হিসাবে তেলের বিকল্প নাই। ফলে তেল মার্কেটে থাকতেই হবে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য সংকটের কারনে বর্তমানে যে অভাব সৃষ্টি হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরো হবে তাতে অচিরেই মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে তেল। বিকল্প জ্বালানী না আসলে তেল সংকট কাঁপিয়ে দেবে পুরো বিশ্ব।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×