somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কারে আমি আমার বলব

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অঞ্জন দত্তের একটা গান শুনতেসিলাম, বাসে আসতে আসতে। গানটাতে বারবার ঘুরেফিরে কলকাতা আর ঢাকার প্রতিতুলনা। ঢাকার বেইলি রোডের সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে কলকাতার বউবাজারকে কত সাবলীলভাবে তিনি বলতেছেন, ‘আমার বউবাজার’। আমি এইভাবে বলতে পারব মনে হয় এখন। ‘আমার পলাশী, আমার টিএসসি, আমার শাহবাগ...।’ হয়তো শিকাগোর শনের সঙ্গে টেবিলটেনিস খেলতে খেলতে তারে বলে বসব, তোমার ডাউনটাউন আর আমার ফার্মগেট। এমনভাবে বলা, যেন আমি পুরা ফার্মগেটের মালিক! অথচ ফার্মগেট দিয়া যতবার আমি হাঁটসি বারবার মনে হইসে জায়গাটার মালিক বিবিধ ব্যবসায়ীবৃন্দ। টিএসসিরেও আপন ভাবার মতো সাহসী হইতে পারি নাই। পলাশিকেও উঠান উঠান লাগে নাই তেমন। মনে হইসে, এইসব অন্য মানুষদের জায়গা। নিজেকে কোথায় দাঁড়া করানো যায় সেটা ভাইবা বিব্রত হইসি। এই ইতস্তত ভাব থিকা অতি আত্মবিশ্বাস উৎসারিত হইসে মাঝে সাঝে। কারে আমি ‘আমার’ বলব? রংপুরের কাচারিবাজাররে? চেনাজানা মানুষ, প্রিয় সব মানুষ আড্ডা দেয় সেখানে। তাদের সঙ্গে আমারও ঘণ্টা ঘণ্টা মুখর সময় কাটসে। কিন্তু তারপরও, কেমনে বলি ‘আমার কাচারিবাজার’? কাচারিবাজার আসলে বিশ-পঁচিশজন ফটোকপির দোকানদারদের, উকিলদের, শক্ত পেশীর রিকশাঅলাদের, একজন ট্রাফিক পুলিশের। আমি যখন প্রতি বছর এক-দুইবার গিয়া তাদের সঙ্গে মিশে যাবার চেষ্টা চালাতাম, তারা আসলে আমারে নিল কি নিল না--এই সন্দেহ আমার যাইত না। ক্যামনে বলি--‘আমার কাচারিবাজার’? অথচ এখন আমি অবলীলায় নিজেরে পুরা দেশটারই মালিকের জায়গায় বসায়া দেই--‘আমার দেশ’। মাই কান্ট্রি। আমার ল্যাবে দুইজন ইন্ডিয়ান আছে। তাদের একজন আবার বাঙালিও। তবে সে উড়িষ্যার দিকে বড় হইসে। বাংলা বলতে পারলেও লিখতে জানে না। এরা আমারে বলে, ওই যে একটা বোলার আছে না তোমাদের, খুব রাগী আর খুব তেজ? দাদারে বোল্ড কইরা দিসিল? আমি বলি, হ, মাশরাফি। তো চেনে না। বলে, না, কী জানি নামটা। আমি বুঝি, সে খেলা খুব একটা দেখে না। বিশ্বকাপের ম্যাচটাই খালি দেখসে। বলি, মাশরাফি বিন মুর্তজা। সে লাফায়--ইয়া ইয়া মুর্তাজা...কী তেজ রে বাবা! আমি বুঝি, এদের কাছে আমি মাশরাফির খালাতো ভাই-ই! বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ককে কোনোদিন এত নিজের লোক-নিজের লোক লাগে নাই!

শিকাগোতে এখন তুমুল স্নো পড়তেসে। রাস্তা-ফুটপাত-গাড়ি সব সাদায় সাদা। এত সাদা যে মনে হয় এই রঙটা এইভাবে আগে চেনা হয় নাই। এর আগে কোথায় দেখসিলাম এই রঙটা? প্রজেক্টরের মধ্যে খটখট খটখট করে ছবি পাল্টায়। দাদাবাড়ির কথা মনে আসে। হলুদ পোয়ালের পুন্জ। আমাদের ওখানে ‘পুন্জ’ই বলে। শব্দটা ‘পুঞ্জ’ থেকে অপভ্রংশ হইসে। তো হলুদ পোয়ালের পুন্জের পাশে মফিজলের ছোটভাই আজিজল গাইয়ের দুধ দোয়াইত। একটা অ্যালুমিনিয়ামের ছোট্ট বালতিতে সাদা সাদা ফ্যানা আর ফটফট শব্দ করতে থাকা গরম দুধ। একটু দূরে বান্ধা থাকত বাছুর। শোষকশ্রেণীর বঞ্ছনার কৌশল তার কিছুই শেখা হয় নাই তখনো। তো সেই সাদা দুধ দেখসিলাম, আর দেখলাম এই সাদা স্নো। সাদা এত সাদা হইতে পারে! আর কী তার চেষ্টা! সবকিছুর রঙ সে একরঙা কইরা দিতে চায়! মাইনাস টেম্পারেচারে কালো আর বাদামি মানুষদের ঠাণ্ডা লাগে বেশি। কালো আর বাদামি মানুষদের পিঠে-ঘাড়ে সাদা সাদা তুষার জমতে থাকে। কালো আর বাদামি মানুষদের কাছে এই প্রথম এই রঙটার অন্য মানে দাঁড়ায়া যায়...

শিকাগো
১৪ ডিসেম্বর, ২০০৯

(আরো লেখার ইচ্ছা আছে। এই লেখায় ক্রিয়াপদের বিকৃতি আলাপের সুবিধার জন্য ইচ্ছাকৃত।)
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×