somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিপীড়ন, কল্পনিপীড়ন

১২ ই জুলাই, ২০১১ বিকাল ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকার একটি স্কুলের একজন শিক্ষক তার এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন। আজকের পত্রিকায় দেখলাম এই যৌন নিপীড়ক তার কৃতকর্মের দায়স্বীকার করেছে। এই ঘটনা নিয়ে গত কয়েকদিন ব্লগ এবং ফেসবুকে অনেক মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখলাম। এক ধরনের প্রতিক্রিয়ায় এই ধর্ষকের ধর্ম-পরিচয় নিয়ে টানাটানি করা হয়েছে। এই ধর্ষক শিক্ষকের ধর্ম-পরিচয়টাকে বড় করে দেখছেন এমন লোকের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। বলা হচ্ছে, সরকারের শক্তিশালী মানুষদের সঙ্গে এই শিক্ষকের খাতির আছে। তার পৈতৃক নিবাস প্রধানমন্ত্রীর জেলায়। এটা তাকে অনেক সুবিধা দিয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, শক্তিধর মন্ত্রী-এমপির সঙ্গে খাতির-অলা, গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসা কোনো মুসলমান শিক্ষক যদি এই একই অপরাধ করতো, তখন প্রতিক্রিয়াটা কেমন হতো? আমার ধারণা, প্রতিক্রিয়া তখনও হতো। সেটা ধর্ষণের ভয়াবহতার কারণেই হতো। মানববন্ধন, ক্লাস-বর্জনও হতো। এখন যারা 'হিন্দু' ধর্ষককে গালি দিচ্ছেন, তারা একজন 'ধর্ষক'কে গালি দিতেন। ধর্ষণ ধর্ষণই। এবং ধর্ষক ধর্ষকই। ধর্ষণকে ঘৃণা করার জন্য ধর্ষকের জাতিভেদ জানা লাগে না। কিন্তু তারপরও পরিমলের হিন্দুত্ব সামনে আসছে কেন? আমার মনে হয়, হিন্দুত্ব নিয়ে যারা টানাহ্যঁাচড়া করছেন, তারা একটা সুযোগ পেয়েছেন। '**উন' শব্দটাকে যায়েজ করার মতো এত ভালো সুযোগ তারা আর কীভাবে পাবেন?

এবং আমরা এ-ও দেখলাম, অপরাধেরও জাতপাত থাকে। সবল দর্ুবলকে অপরাধী হিসাবে আবিষ্কার করলে দুইদফা ঘৃণা করে। একবার সে ঘৃণা করে অপরাধকে, আরেকবার অপরাধীর আত্মপরিচয়কে। এবং অনেকসময় দ্বিতীয় ঘৃণাটা প্রথম ঘৃণাটাকে ঢেকে ফেলে।

এই ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের অনলাইন এবং অফলাইন পত্রিকাগুলোর ট্রিটমেন্ট নিয়েও কিছু কথা বলা দরকার। বাংলাদেশের পত্রিকাগুলো এ ধরনের সংবেদনশীল ঘটনাকে খুব বাজেভাবে ট্রিট করে। ঘটনাগুলোকে খবর বানিয়ে বিক্রি করাই থাকে অন্যতম উদ্দেশ্য। ঘটনার বর্ণনায় তাই ডিটেইলের প্রতি আগ্রহ দেখা যায়। অর্থাৎ পত্রিকা পাঠককে (ধরে নেওয়া হয় পাঠক পুরুষ) ঘটনার মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করিয়ে আনার ব্যবস্থা করে দিতে চায়। ফলে একবার ধর্ষিত মেয়েটিকে অগণিত পাঠক মানসিকভাবে ধষর্ণ করে। আমাদের অনেক সংবাদপত্রই এই সুবিধাটা করে দেয়। আমি পরিমল সংক্রান্ত যুগান্তরের একটা রিপোর্ট পড়েছি। ‘আমাদের সময়', ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ পড়ার সাহস করে উঠতে পারিনি।

...অধ্যক্ষ হোসনে আরা অর্বাচীনের মতো কথা বলেছেন। অথবা পদ অঁাকড়ে থাকার জন্য অপরাধীর পাশে দঁাড়াতে চেয়েছেন। এটা নিয়ে প্রতিবাদ হচ্ছে। তঁার পদত্যাগ চাওয়া হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত প্রধানের নিজ থেকেই পদত্যাগ করা উচিত। বাংলাদেশে অবশ্য তেমন দৃষ্টান্ত বিরল। হোসনে আরাকে নিয়েও অনেক অনলাইন কর্মকাণ্ড হচ্ছে। এই কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্য এই মহিলার পদত্যাগের জন্য চাপ তৈরি করা। কিন্তু এটা করতে গিয়ে এমন কিছু করা হচ্ছে যা বিস্ময়কর। তাকে সম্বোধন করা হচ্ছে ‘নষ্টা’ প্রিন্সিপাল হিসাবে। একজন তাকে কাজের বুয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। কেউ কেউ করছেন বেশ্যার সঙ্গে তুলনা। তুলনা করার সময় তুলনাকারীর সামাজিক শ্রেণীবোধের নিদারুণ প্রকাশ ঘটছে। আজকে আমি একটা পোস্ট দেখেছি যেখানে হোসনে আরার পরিবারের সবার ছবি ফেসবুকে প্রচার করার আহ্বান জানানো হয়েছে। হোসনে আরার যৌনতা নিয়ে মন্তব্য করা হচ্ছে। তাকে কীভাবে শাস্তি দেওয়া যায়—সম্মিলতভাবে তা ভাবতে ভাবেত কল্পনাশক্তির বিবিধ প্রকাশ ঘটানো হচ্ছে।
প্রশ্ন হলো, এটা কি একটা ধর্ষণকে উপলক্ষ করে আরেকটা ভার্চুয়াল গ্যাংরেপ নয়?
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

লিখেছেন আবু ছােলহ, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৮

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

গুগল থেকে নেয়া ছবি।

সামুতে মাল্টি নিক নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। অনেকের কাছে মাল্টি যন্ত্রণারও কারণ। শুধু যন্ত্রণা নয়, নরক যন্ত্রণাও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×