somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবীর পথে বিপ্রতীপ (কবি)

০৯ ই জুন, ২০০৮ রাত ১১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[বেশ পুরাতন লেখা...এই সিরিজটি বুয়েটে লাইফে লেখা]
তারাশঙ্করের ‘কবি’ পড়লে কার না কবি হবার সাধ জাগে ! তার উপর চারপাশে এত কবি …এই বাজারে কয়েকটা ভাবের কবিতা না লিখলে চলবে কিভাবে? না হয় তারাশঙ্করের ‘কবি’র মতো কোন ঠাকুরঝির সন্ধান পাইনি ,তাই বলে কি কবিতা লেখা যাবে না? নাহ্… আর দেরি করা যায় না…এক আধটা কবিতা এবার লিখতেই হবে । কিন্তু শুধু ইচ্ছে করলেই কি কবিতা লেখা যায়? অনেকেই বলেন ,কবিতা লেখার পেছনে নাকি কারণ থাকে। বাঙ্গালী ছেলেদের জীবনে নাকি এমন একটা সময় আসে ( বিশেষ করে প্রেম এবং ছ্যাঁকা ) ,যখন তারা এক-দু’খানা কবিতা লিখে বা লিখার অপচেষ্টা করে। তবে কি আমার জীবনে সেই সময় এসেছে? না…সেরকম কিছু হয়নি আমার, হবার সম্ভাবনাও নেই। কারণ, আমি মেয়েদের দেখলে সাধারণত ১০০ হাত দূরে থাকি সবসময়। শুধু শুধু প্রেমে-টেমে পড়ে মানিব্যাগের তেরোটা বাজিয়ে কি লাভ ? এমনিতেই বুয়েটের জনপ্রিয় টিউশনি বানিজ্যে সুবিধা করতে পারিনি কোনভাবেই…এখনও তাই বাবার হোটেলে খাই। বাবার টাকা দিয়ে আর যাই হোক প্রেম করা যায় না। তাই প্রেম আমার কাছ থেকে ১০০ হাত দূরের ঘটনা আর ছ্যাঁকা তো কয়েক আলোকবর্ষ দূরের…। তাই কবিতা লেখার কারণ অন্য। বুয়েটে এসে বেশ কয়েকবার ম্যাগাজিন নামক কিছু বস্তুর সম্পাদক ( অন্য কেউ রাজি না হওয়াতে অবশ্য…) সাজবার সৌভাগ্য হয়েছিল। এই সম্পাদক নামক বলির পাঁঠার অনেকগুলো কাজের মাঝে একটি হচ্ছে লেখা সংগ্রহ করা। ব্যাপারটা মোটেও সুখকর নয়। যদিও বুয়েট ছাত্রদের বেশির ভাগেরই একটা সাহিত্যিক মন আছে। কবিতা,গল্প,উপন্যাস,সায়েন্স ফিকশন সহ সাহিত্যের আনাচে কানাচে বুয়েট ছাত্রদের এখন আনাগোনা। তবে সমস্যা হচ্ছে ,সবাই নিজেকে প্রকাশ করতে চায় না। এখানে অনেকে আবার নিজেকে আন্ডারগ্রাউন্ড কবি বলে দাবি করে। এই সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে অনেক বার বন্ধুদের ডায়েরি থেকে জোড় করে কবিতা আদায় করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে, একবার দেখা উচিত কবিতা কি জিনিস…। এ কথা শুনে আঁতেল বন্ধু তপু বলল, এ যুগের বেশির ভাগ আধুনিক কবিতা দেখলে আমার মনে হয় না এগুলো কবিতা। আমরা অনেকে জানি না কবিতা কি জিনিস,তবু কবিতা লিখি। এ জন্যই আজ কবিতার এই দুর্দিন!ফেকলু টাইপের কবিদের ভিড়ে আজ আসল কবিদের খুঁজে পাওয়া দুস্কর।এই অবস্থা কোন ভাবেই কাম্য নয়। না জেনে শুনে আমাদের কোন কাজ করা ঠিক নয়…। গরম কড়াইয়ে এক ফোঁটা পানি ফেললে যেমন এক নিমিষে মিলিয়ে যায় , আঁতেল তপুর এরকম ফ্রয়েডিয় কথাবার্তায় আমার কবি হবার বাসনাও তেমনি মিলিয়ে গেল।
কিন্তু,প্রেম কি আর বুড়ো হয়,দেখলেই মনে হয়…। কবিতার প্রতি প্রেম জাগলো আবার। এতদিন শুধুমাত্র হাতেগোনা প্রিয় কিছু কবিতা পড়ে এসেছি। এবার সেগুলোই আবার কিছু অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে পড়লাম। বোঝার চেষ্টা করলাম,কবিতা কি বস্তু? কিন্তু তেমন কিছু উদ্ঘাটন করা সম্ভব হলো না। অনেক বলল,আধুনিক কবিতা খুবই সহজ ব্যাপার,ছন্দের কোন প্রয়োজন নেই এখানে। একের পর এক ভাবের কিছু লাইন লিখতে পারলেই তাকে কবিতা বলা যায়।‘প্রথম আলো’র আলপিনের কার্টুনে আবার একদিন জনৈক আধুনিক কবির একখানা কবিতা পড়লাম। এই কবিতা পড়ার পর বহুদিন কবিতা লেখার চেষ্টা করিনি আর। কবিতাটি ছিল এরকম-

‘বাঁধিয়াছি সাম্পান মরুভূমি তটে
ভাঁপা পিঠা রাখিয়াছি পাকস্থলি জটে
তলপেটে ঝড় ,ভয় হয় কি ঘটে
একফোঁটাও জল নাই যে পটে…’

এর বেশ কিছুদিন পর এক দুপুরবেলা..। সবেমাত্র জঘন্য একটা ক্লাস টেষ্ট দিয়ে রুমে ফিরেছি। মন ভালো নেই…। দুপুরে সাধারনত ঘুমাই না। তাই, গণক যন্ত্রের সামনে বসে আছি। ইন্টারনেটের লাইন চলে গেছে কোন কারণে। হাতে তেমন কোন কাজও নেই। মাথায় কিছু লাইন ঘুরে ফিরে আসছে,ভাবলাম লিখে রাখি। লিখলাম -

সাদা-কালো ,লাল-নীল
স্বপ্ন দেখি রাত দিন
কখনো আকাশ ছোঁয়ার
কখনো নদী হবার
কিংবা এক টুকরো মেঘ হয়ে
নীল আকাশে ভেসে বেড়ানোর
না হয় এক টুকরো কুয়াশা হয়ে
সব কষ্ট ঢেকে দেয়ার
কিন্তু হয়না স্বপ্ন সত্যি
রোদ উঠে…ঘুম ভাঙ্গে, জেগে দেখি
এই আমি এই আছি
একদম আগের মতন…
তবুও কেন স্বপ্ন দেখি?
আবার ঘুম ভাঙ্গে ,আবার জেগে উঠি…

লেখার পর মনে হলো কেমন কবিতা কবিতা গন্ধ বের হচ্ছে । তাই একটা নাম দিয়ে দিলাম- ‘স্বপ্ন’। আমার প্রথম পরীক্ষামূলক কবিতা…স্বপ্ন। সাহস করে ইয়াহু ৩৬০-ব্লগে দেয়ার পর অনেকেই বললেন,ভালো…। অতীব আনন্দের বিষয় হচ্ছে, এখানে জঘন্য কিছু লিখলেও কেউ কোন খারাপ মন্তব্য করেন না। তাই আত্ববিশ্বাস বেড়ে যায় অনেকগুন। না হলে আমার এই কবি সাজার চেষ্টা কবে মাঠে মারা যেতো। বাঁদরকে প্রশ্রয় দিলে মাথায় উঠে ‘ইয়ে’ করে দেয় । গুজব আছে,এই প্রাণী থেকেই বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষের সৃষ্টি। সেই কারণেই হয়তো আমিও প্রশ্রয় পেয়ে মাথায় উঠে গেলাম। কবিতার নামে একের পর এক উল্টাপাল্টা জিনিস লিখতে লাগলাম। কিছুদিন পর আমার সেই আঁতেল বন্ধু তপুর নজরে পড়লো এই কবিতা নামক বস্তুগুলো। প্রথম কবিতা ‘স্বপ্ন’ পড়ে গম্ভীর মুখে বলল,ভাষা খুব দুর্বল…বোঝা যাচ্ছে কাঁচা হাতের লেখা …। তবে তৃতীয় কবিতা ‘জানালা’ পড়ে বলল,এইটা খারাপ না…চলে। একটু আশার আলো দেখলাম। কারন আমি জানি,তপু খুশি করার জন্য কাউকে কিছু বলে না। তবে সেদিন তপু সাবধান করে দিয়ে গেল, কবিতা লিখেছ ভালো কথা ,তবে বেশি লিখো না…খুব বেশি হলে ডজন খানেক…। ওর কথা শুনে ‘শেষের কবিতা’র একটা লাইন মনে পড়ে গেল,কবি মাত্রেরই উচিত একটি নির্দিষ্ট মেয়াদি কবিত্ব করা। যাই হোক,আমি ভেবে দেখলাম আমি যা লিখি সবই তো পরীক্ষামূলক কবিতা,তাই এক-আধখানা বেশি লিখলে ক্ষতি কি। তাই একের পর এক কবিতা প্রসব করে চললাম…। নিজেকে কবি ভাবতেও বেশ ভালোই লাগছিল ! কিন্তু, কিছুদিন আগে আবার তুরস্কের কবি নাজিম হিকমতের একটা লেখা পড়লাম- ‘…কবিরা তো আকাশ থেকে পড়েননি যে তাঁরা মেঘের রাজ্যে পাখা মেলবার স্বপ্ন দেখবেন;কবিরা হলেন সমাজের একজন-জীবনের সঙ্গে যুক্ত,জীবনের সংগঠক…’। ভেবে দেখলাম, আমি তো স্বপ্ন দেখি…আকাশে ভেসে বেড়ানোর স্বপ্ন দেখেছি আমার প্রথম পরীক্ষামূলক কবিতা ‘স্বপ্ন’-তে। স্বপ্ন দিয়েই তো আমার জীবনে কবিতার শুরু। আমি স্বপ্ন দেখতে ভীষণ ভালোবাসি।তাই, আমার কবিতাতেও ঘুরে ফিরে আসে স্বপ্নের কথা…স্বপ্ন ভঙ্গের কথা। কিন্তু, আকাশে উড়বার স্বপ্ন দেখলে কি কবি হওয়া যায় না? তবে কি আমি কবি হতে পারবো না কোনদিন?
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×