আমি নরেন।বারাসাত একটি কৃষি অফিসে চাকরি করি। বেশি বড় পোষ্ট নয়,ঐ মোটামুটি একটা কাজ।প্রতিদিন সকালে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরোই আর বাড়ি ফিরতে ফিরতে সেই সন্ধা হয়।এমনই একদিন বাড়ি ফিরছিলাম সন্ধার ট্রেনে করে।ট্রেনে উঠেই একটা বুড়োগোছের লোককে দেখে সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম।বুড়োগোছের লোক বলা ভুল লোকটা বুড়ো। পরিচয় আমার জীববিদ্যা শিক্ষক। আমি যখন দ্বাদশ শ্রেনীতে পড়ি তখন ওনি আমাদের জীববিদ্যা পড়াতেন। আমার ছোটবেলা থেকে মুখস্থ বিদ্যা একটু কম তাই জীববিদ্যা আমার ভাল লাগত না। আর যখন স্কুলে জীববিদ্যা পড়া পারগাম না তখন ঐ বুড়ো লোকটি আমাকে মেয়েদের সামনে দাড় করিয়ে রাখত।তাই ঐ স্যারকে আমার ভাল লাগত না।
কিন্তু ট্রেনে ঐ দিন যখন দেখলাম তখন কিসের একটা টানে স্যারের কাছে চলে গেলাম।গিয়ে আলাপ করলাম। স্যার কেমন আছেন।স্যার দেখেই চিনতে পারল এবং বলল "আরে নরেন কেমন আছিস "। আমি বললাম ভাল। বললাম স্যার এখন কোথায় যাচ্ছেন। বলল বাড়ি যাচ্ছি।তারপর বিভিন্ন কথা হল।
স্যার খুব ভাল, আমার জীববিদ্যা ভাল লাগত না তাতে কি হয়েছে কিন্তু আমি জানি স্যারের কৃপায় আনেক ছাত্র ছাত্রী মেডিকেল পড়ার সুযোগ পেয়েছে ও তারা আজ নাম করা ডাক্তার ও বটে।
আমি স্যারকে জিজ্ঞেস করলাম, স্যার এখন কোথা থেকে আসছেন।স্যার বলল আমি গেছিলাম শিয়ালদা, একটা ছাত্র পড়াতে।আমি বললাম এই বুড়ো বয়সে ভিড় ট্রেনে চেপে সেই শিয়ালদা যান ছাএ পড়াতে?স্যার বলল কি করব এখন আর আগের মত ব্যস করে পড়াতে পারি না, আবার গ্রামে এক দু জনকে পড়ালে বেশি টাকাও পাওয়া যায় না।তাই একটু কষ্ট হলেও আসতে হয়।কিন্তু আর আসা লাগবে না স্যার বলল।আমি বললাম কেন? স্যার বলল ছাত্রটি আজকে আমাকে এই মাসের মাইনে দিয়ে বিদায় দিয়ে দিয়েছে।আমি কললাম কেন?স্যার বলল,আমি নাকি বুড়ো হয়ে গেছি তাই আর ভাল পড়াতে পারছি না তাই।
তারপর স্যার আমাকে একটি কথা বলল যা মনে করলে মন এখনও কেদে ওঠে, কথাটি হল, "গাছ বুড়ো হলে কিছু না হোক কাঠ হয় কিন্তু মানুষ বুড়ো হলে কি হয়""।
প্রশ্ন টা এখনও আমাকে ভাবায় কিন্তু কোন উত্তর খুজে পাই না।
গল্পের সমস্ত চরিত্র ও ঘটনা কাল্পনিক।