somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুমি একটা মিঁয়াও পুলিশ

০৯ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ৯:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কিছুদিন আগে এক পরিচিত গোয়েন্দা পুলিশ অফিসার, যে আমার বিশ্ববিদ্যালয়্কার সহপাঠি ছিল, এরপর বিসিএস দিয়ে পুলিশে গিয়ে এখন ডিবিতে আছে, তার সাথে বিভিন্নরকম হচ্ছিল, নানারকম লোমহর্ষক কাহিনী শোনাচ্ছিল তার গোয়েন্দা জীবনের। এক বন্ধের দিনে বন্ধু-বান্ধবদের গেট টুগেদারে চুটিয়ে আড্ডা দেয়ার ফাঁকে ফাঁকে তার বলা গল্পগুলোই ছিল প্রধান আকর্ষণ, মাঝে মাঝে তার বাহাদুরি সাফল্যে সবাই তার পিঠ চাপড়িয়ে প্রশংসা করছিল। এর মাঝে একটি গল্প বলার শুরুটা ছিল এরকম...নারায়ণগঞ্জের টানবাজারে পতিতালয়ের পাশে একবার...আরো কিছু বলে যাচ্ছিল...কিন্তু আমার কানে ঐটুকুই আটকে থাকলো, টানবাজারের পতিতালয়...গল্পের মাঝপথেই প্রশ্ন করে বসলাম, তুমি শিউর সেটি এখনো আছে? বন্ধুটি থামলো এবং খুব স্বাভাবিকভাবেই জবাব দিল, হ্যা আছেই তো. বহাল তবিয়তেই আছে. সে আমার চাহনি দেখেই বুঝলো আমি কি বলতে চাইছি। খোঁচা মেরেই বললো, তোমাদের নারী অধিকার নেত্রীরাই তো, পতিতাদের সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা চায়, লাইসেন্স চায়, তো আমার দিকে এমন কইরা তাকাও ক্যান? যাও মানববন্ধন কর গিয়া পতিতাদের অধিকার চাই. আমিও তার নাম বিকৃত করে ডেকে বলে উঠলাম, ইউ আর এ ব্যাড পুলিশ! তোমার সামনে অন্যায় ঘটে, তুমি খুব স্বাভাবিকভাবে সেইটার নাম উচ্চারণ কর, তার আশেপাশে গিয়ে অপরাধী দমন করার নামে বাহাদুরি লও, অথচ সমাজের নিকৃষ্ট কিছু কীট তোমার সামনে নির্বিঘ্নে অনৈতিক ব্যবসা করে যাচ্ছে, সেখানে তুমি মিঁয়াও ক্যান। বিল্লী কা আওয়াজ ছেড়ে শের কো হুঙ্কার কবে দেখাইবে বল?



আহহারে তুমি চেত ক্যান, বহুত হোমরাচোমড়া এর সাথে জড়িত, এলাকার এমপিও, থানার বড় পুলিশও, বখরা খায় সবাই, আমি শের কা হুন্কার তুইলা চাকরিখান হারায় আর কি! বিসিএস পড়ার কষ্ট কি, হেইডা তুমি বুঝবা কি? তুমি পেঁয়াজদি লইয়াই মর!

সবাই মিলে এবার তার পিঠে দুমদুম কিল দিয়ে, তুমি একটা মিঁয়াও পুলিশ, তুমি একটা মিঁয়াও পুলিশ। হইছে আর বাহাদুরি গপ্প মারা লাগিবে না, এইবার আমরা অন্য টপিকে যাই. বেচারা খুবই চুপসে গেল, নানাভাবে নিজেকে ডিফেন্ড করার চেষ্টা করলো, এরপর আরেক বান্ধবীর দয়ায় সে মার খাওয়ার হাত থেকে বাঁচলো, চল সবাই আইসক্রিম খাই.

বন্ধুদের আড্ডা তো একসময়ে ফুরিয়ে আসলো, কিন্তু মনের ভিতরে সেই খচখচানি থেকেই গেল, টানবাজারের পতিতালয়-এর ব্যবসা নিরাপদেই চলে... ভিতরে ভিতরে মনটা দমেই রইলো। এই ভার্চুয়াল জগতে, বা বাস্তবের আশেপাশে বিভিন্ন অসহায় নারীদের জীবন দেখি, রঙিন মোড়কেই হোক, বা পেটের দায়েই হোক, এরকম নারীত্বের অবমাননামূলক পেশার বিলুপ্তি হবে কিভাবে? যেখানে আইনের প্রয়োগও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতায় চলে? পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা কেবল পুরুষ নয়, নারীরাও ধারণ করেন। অনেক নারী নিজস্ব স্বার্থ উদ্ধারের এরকম অমানবিক পেশায় পুরুষের সহযোগী হন, কোন মধ্যবিত্ত পরিবারের নারী এরকম কোন প্রতারণার শিকার হলে মান ওয় সম্মান হারানোর ভয় দেখিয়ে চুপ থাকতে বলেন, আবার ভিতরে ভিতরে অত্যন্ত গোপনে পুরুষগুলোরই সহায়ক হিসেবে কাজ করেন। যাতে অপেক্ষাকৃত সামাজিকভাবে দুর্বল নারীদের এ পেশায় আনা যায়. এর মাঝে তারা অবিবাহিত তরুণী যুবতী নারী ছাড়াও ডিভোর্সী বা বিধবা নারীদেরকেও টেনে আনার চেষ্টা করেন এ পেশায়। নানারকম ফন্দিফিকির করে, ছলচাতুরী করে একা নারীদের সাথে খাতির জমিয়ে শুভাকাংখী সাজার চেষ্টা করেন, তারপরই কোলে ধীরে ধীরে টোপ দেয়া। প্রথমে ছল সফল না হলে নানারকম হুমকি ধমকি দিয়ে বলপ্রয়োগ করে, ভয় ভীতি দেখিয়ে এ পেশায় আনার চেষ্টা করেন। আমি দেখেছি বাইরের উল্লেখ করার মত কিছু দেশে এ পেশাটিকে সরকারীভাবেই ঘৃণিত পেশা হিসেবে দেখা হয়, পুলিশ জানা মাত্রই এ পেশার সাথে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসে. তারা কোন মুসলিম দেশ নয়. অথচ আমাদের এই দেশে 'বিসমিল্লাহ' দিয়ে শুরু হওয়া সংবিধানের আওতায়, পুলিশেরা এবং আইনসভার লোকেরাই এসব পেশাকে গোপনে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। এ দেশে বহু আইন আছে, কিন্তু সবই লোকদেখানো, আইনের লোকেরাই হয় সবচেয়ে অনির্ভরযোগ্য। খুবই দু:খজনক সেটি।

নারীর অধিকার নিয়ে টিভিতে, পত্রিকায় নানান কথা হয়, গার্মেন্টস কর্মীদের, গৃহকর্মীদের নানান অধিকারের বিষয়ে কথা হয়, এরকম মানবেতর পেশাজীবিদের বা এর সাথে সংশ্লিস্ট সবাইকে কঠোর আইনের আওতায় আনা হয় খুব কম, তাদেরকে পর্যাপ্ত কাউন্সেলিং, বিকল্প পেশায় পুনর্বাসন -এসব উদ্যোগ চলে খুবই যত্সামান্য।মাঝে মাঝে অতি উত্সাহী কেউ কেউ এসব এলাকা পুড়িয়ে দেন, কিন্তু এতে করে পতিতারা আরো ভাসমান হয়ে পড়ে, তাদের সুস্থ জীবন ধারণের কোন ব্যবস্থা হয় না. এরপর হয়তো তারা বিনে পয়সাতেই বিক্রি হয়ে চলে যান আরো ক্ষমতাধর কারো পতিতালয়ে। যাদের বাহ্যিক পরিচয় খুব চটকদার, ভেতরতা ঘুণে ধরা. টুপাইস উপরি কমানোর জন্যে এদের চারপাশে নানান মেকি সততার বা আইনি ভয় দেখিয়ে চলেন আরো কিছু বাচ্চা মিঁয়াও পুলিশ, যারা টাকার বিনিময়ে হোমড়াদের রক্ষা করে চলেন, নানারকম বুদ্ধি-পরামর্শ দেন কেমন করে দিনের আলোতে ভদ্রলোকের মতো মানবকল্যাণমুখী জীবন যাপন করা যায়.
৬টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×