পিরামিডের গঠনকৌশল নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। বর্তমান সময়ে এটি একটি নিয়মিত বিতর্কের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। পিরামিড নির্মাণ পদ্ধতির কোনো নকশা বা দলিল যেহেতু আজও পাওয়া যায়নি তাই কেউই সঠিক ভাবে জানে না যে, কিভাবে নির্মিত হয়েছিল এসব পিরামিড। অবশ্য অনেক প্রতœতত্ত্ববিদ, ইতিহাসবিদ এবং ইঞ্জিনিয়াররা এ সম্পর্কে অনেক তথ্যই দিয়েছেন। চলুন তবে দেখা যাক এ সম্পর্কে তাদের ধারণা কি।
মিশরের ফারাও রাজবংশই হচ্ছে পিরামিডের মূল নির্মাতা। ধারণা করা হয়, পিরামিডের প্রথম নির্মাণ কাজ শুরু হয় জোসার শাসনামলে। পিরামিড নির্মাণের কাজে নিযুক্ত করা হয়েছিল বিপুল সংখ্যক দাস। গ্রিক ইতিহাসবিদ হেরোডেটাসের মতে, প্রায় এক লাখ লোকের দীর্ঘ বিশ বছরের পরিশ্রমে নির্মিত হয়েছিল পিরামিড। তবে পোলিশ স্থপতি ওয়েসলো কোজিনস্কির ধারণাটা একটু ভিন্ন। তার মতে, পিরামিডের মূল ক্ষেত্রেই লোক লেগেছিল প্রায় ৩ লাখ। আর অফসাইডে প্রয়োজন পড়েছিল আরও ৬০ হাজার মানুষ। বিশিষ্ট গণিতবিদ কুর্ট মেন্ডেলসনের ধারণা এই দু’জনের ধারণা চেয়ে আরও একটু ভিন্ন। তার ধারণা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৫০ হাজার লোকের ১০ বছর সময় লেগেছিল পিরামিড নির্মাণের কাজে। বিখ্যাত প্রতœতত্ত্ববিদ মার্ক লেহনারের মতে, পিরামিড নির্মাণের কাজে মোটেই দাসদেরকে নিয়োগ করা হয়নি বরং মিশরীয়রাই এটি নির্মাণের জন্য শ্রম দেয়। তিনি তার গবেষণায় পিরামিডের পাশে শ্রমিকদের থাকার একটা জায়গাও খুঁজে পেয়েছেন। পিরামিড নির্মাণের জন্য বিপুল সংখ্যক পাথরের প্রয়োজন পড়েছিল। সর্ববৃহৎ পিরামিডটি নির্মাণের জন্য প্রয়োজন পড়েছিল প্রায় ২- ২.৮ মিলিয়ন পাথরের ব্লক। আর কোনো কোনো পাথরের ওজন ছিল কয়েকটন পর্যন্ত। ধারণা করা হয়ে থাকে, মিশরীয়রা পিরামিড তৈরির পূর্বে এর নকশা এবং ছোট একটি মডেল তৈরি করে নিয়েছিল এবং তারপর সেই নকশা বা মডেল অনুযায়ী নির্মাণ করা হয় পিরামিড। কি করে এতো ভারী পাথর উপরে টেনে তুলে পিরামিড নির্মাণ করা হয়েছিল তা ভাবলে বিস্ময় লাগাটা স্বাভাবিক। অধিকাংশ লোকের ধারণা, ব্লকগুলোকে ঢালু পথে উপরে টেনে তুলে নির্মাণ করা হয় পিরামিড। আবার গ্রিক ইতিহাসবিদ হেরোডেটাস এ সম্পর্কে বলেছেন, পিরামিড নির্মাণ করা হয়েছিল সিঁড়ির মতো করে। অনেকটা স্টেডিয়ামের সিঁড়ির মতো ক্রমশ উঁচু এবং সমান্তরাল ভাবে। প্রথম ধাপ সম্পন্ন হবার পরে পাথর এবং বিভিন্ন উপাদান টেনে তার উপরে ওঠানো হতো এবং তারপর দ্বিতীয় ধাপ নির্মাণের কাজে হাত দেয়া হতো। আর এভাবেই ধাপে ধাপে নির্মাণ করা হয় পিরামিড। আবার অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, পিরামিড হচ্ছে বহির্জাগতিক কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর তৈরি। তারাই এসে নির্মাণ করে গেছে এই পিরামিড, কিন্তু সে যুক্তি ধোপে টেকেনি। সত্য হলো- পিরামিড আমাদের এই পৃথিবীর মানুষের হাতেই তৈরি, তারাই বছরের পর বছর পরিশ্রম করে নির্মাণ করেছে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বিশালাকৃতির এসব পিরামিড। এ তো জানলেন পিরামিড নির্মাণের পেছনের কথা, এবার আসুন তবে জেনে নেই পিরামিড সম্পর্কে আরও কিছু মজার এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
মিশরের সাকারায় প্রথম পিরামিডটি নির্মিত হয় ২৬২০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে
জোসার শাসনকালে নির্মিত হয় এই পিরামিড।
মিশরের সর্ববৃহৎ পিরামিডটি নির্মিত হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৪,৫০০ বছরেরও বেশি সময় পূর্বে।
খুফুর সমাধি হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছিল এটি।
মিশরের সর্ববৃহৎ পিরামিডটি তার কাছাকাছি দুটি পিরামিডের কাছে অবস্থিত।
খাফ্রের পিরামিডটি দুটি পিরামিডের মাঝে অবস্থিত।
যদিও এই পিরামিডটিকে দেখতে সবচেয়ে বেশি বড় বলে মনে হয়, আসলে সেটি কিন্তু গ্রেট পিরামিড নয়।
এই পিরামিডটি একটু উচুঁ ভূমিতে নির্মাণ করা হয়েছিল, আর এ জন্যই এ রকম বড় দেখা যায়।
এই পিরামিডগুলোর প্রত্যেকটিই নির্মিত হয়েছিল শুধুমাত্র মিশরীয় রাজাদের সমাধি হিসেবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০০৮ রাত ১১:২০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




