মুনা আপা,
আমার শালিক পাখিটা কেমন আছে?
পাখিটার সাথে আমার দিবারাতের বসত ছিল,
সুখদুঃখের কতকথা ছিল,
কেন তোমরা ওই সংসার ভেঙে দিলে?
আমার কিশোরী জীবন গাছের ডালে চড়ে বেরিয়েছি অনিয়ত,
আম কাঁঠালের বাগানে আমার অবাধ বিচরণ ছিল,
পুকুরে উদ্যাম সাতার ছিল,
খোলা চুলে ধানের ক্ষেতে উদাসী সংসার ছিল,
অসীম আকাশে উড়ন্ত ঘুড়ি ছিল,
মনের কোণে একটুকরো অলিখিত ভালোবাসা ছিল,
নকশীকাঁথায় লিখা স্বপ্ন ছিল।
কেন তোমরা ওই সংসার ভেঙে দিলে?
আমার শালিক পাখিটা কি আজকাল ভালো আছে?
মুনা আপা,আমি না ভালো নেই,
আমার এক জনমের দুঃখ জেনো,
আমার সংসার ভেঙে দিলে,আমি অনেক সুখি হবো বলে,
সুখ আমার হল না,
সুখ আমার শালিক পাখির কাছে রয়ে গেল,
তোমরা বুঝলে না।
আমার এই নিয়মের সংসার ভাল্লাগে না,
রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘর উঠোন সাজানো,
এতগুলো মানুষের রুটি মাখানো,
হাসিমুখে সব কিছুতেই সম্মতি আমার আমি মেনে নেয় না,
অজানা পুরুষের হুকুম তামিল আমার মন সয়ে না,
আমার ভাল্লাগে না অতশত সংবিধান।
এতো এতো নিয়মের খাঁচা আমার ভাল্লাগে না,
এই চার দেয়ালের শীতাতপের নিয়ন্ত্রণে আমার মন অনিয়ন্ত্রিত হয় নিয়মিত,
মন রক্ষার ধর্ম টানতে গিয়ে আমার মন পচে গেছে,আপা।
আমার এক টুকরো ভালোলাগা ছিল,তুই তো জানতি?
তবুও,কেন তোমরা ওই সংসার ভেঙে দিলে?
প্রতি রাতে ব্লাউজের হুক খুলতে খুলতে বড় বেশী ক্লান্ত আমি,
রাতের আঁধারে অজানা হাতের নিয়মিত আক্রোশে আমি বড় বেশী অনুভূতিহীন,
আজকাল গা গিনগিন করে,ঘিন্যে হয়,ঘিন্যে।
মুনা আপা,কেন তোমরা আমার সংসার ভেঙে দিলে?
আমিতো এতো আলিশান সংসার চাই নি।
চেয়েছিলাম শালিক পাখির সাথে নিয়ত বসত,
গাঁয়ের মাঝে উচ্ছ্বসিত সকাল,দুপুর,বিকেল,
ক্লান্ত,শ্রান্ত এক পুরুষের বুকে জড়িয়ে গল্প শুনতে চেয়েছিলাম,
আমার এক টুকরো ভালোলাগা,
এক রাতের দুঃখগাথার শ্রোতা।
এই সংসারে আমি আর থাকবো না,
নিয়মের যাঁতাকলে আমি পিষ্ট,
পুরুষের লোলুপে আমি অতিষ্ঠ,
আমার দেহে কালশিরে পড়ে গেছে,
আমার এক শালিক দেখে রেখো,
বিদায়, সুখে থেকো,সংসারী হইয়ো না কখনও,
সংসারীরা বড় বেশী দুঃখী।
ইতি
পরিচয় মুছে গেছে