অনিয়মিত ক্লাসরুমে নিয়মিত শেষ বেঞ্চে বসে উদাস চোখে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে থাকতো একটি উষ্কখুষ্ক চুলের কিশোর,
খাতার পাতায় গনিত না লিখে পেন্সিলের খোঁচায় একটি মায়াবতী মুখ আঁকার চেষ্টা করতো ছেলেটি,
বুকপকেটে কাচা হাতে লিখা এক টুকরো চিঠি নিয়ে ঘুরতো সে সবসময়,
শুধু একটুখানি মুহূর্ত পড়ন্ত বিকালের ওই মায়াবতীকে দেখার আশায় মাকড়শার বিনাশী জালে আঁটকে পড়া পোকাটির মতো তার চঞ্চল কিশোর মন ছটফট করতো,
ক্রিকেট ব্যাট হাতে বিকালগুলো বড় বেশি বিষণ্ণ লাগতো ওই কিশোরের,
মাঝে মাঝে তার প্রচণ্ড ইচ্ছা হতো সমস্ত জল্পনা-কল্পনার জাল ভেঙে বলে ফেলি- ভালোবাসি,ভালোবাসি,ভালোবাসি।
আমি ওই কিশোর বলছি,
যার পড়ন্ত বিকালগুলো সব হারিয়ে গেছে বটবৃক্ষের ছায়াতলে,
যার ভালোবাসাগুলি আজ ঘৃণ্য কোন অপয়াধের মামলায় সেজেছে,
যার কিশোর মন মিথ্যে অপরাধের ছায়ায় থেকে থেকে কারাগারের ওই রডগুলোর মতোই মরছে পড়ে গেছে।
অবুঝ মেয়েটি কিছুই বুঝল না, সবকিছু ভুল জেনে সে কখনোই বটগাছের ছায়ায় আসলো না, বুকপকেটে জমিয়ে রাখা ১১৩১ টি শব্দের মাঝে ছোট্ট একটি শব্দ শুনতে সে চাইলো না, শুধু তাকে একটিবার ভালোবাসি বলার অপেক্ষায় কোন এক কিশোর কত রাত ঘুমিয়েছে ইন্সমনিয়ার কোলে (?)-সে কখনোই জানতে চাইলো না।
পড়ন্ত বিকালের এলোচুলো কিশোরী,শুনো-
আমি না ইভটিজার নই,
বুকপকেটে ছোট্ট একটি চিরকুট হাতে বিকালের পর বিকাল যেসব ছেলেরা একনিষ্ঠ অপেক্ষা করে তারা ইভটিজার হতে পারে না,
স্রষ্টা তাদের ইভটিজার হওয়ার ক্ষমতা দেন নি।
মেয়ে আমায় ভেবে কষ্ট পেও না,
জেলের গরাদে আমি বেশ ভালো আছি।
শুধু কষ্ট পাই,
যখন শুনি- ক্লাসের শেষ বেঞ্চটিতে আজকাল কেউ আর বসে না,
বেঞ্চটি নাকি খালি পড়ে থাকে(?)।
শুধু কষ্ট পাই,
যখন শুনি- সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে এখন আর কেউ উদাস হয় না,
কেউ নাকি এখন আর ক্লাস ফাকি দিয়ে একটি মায়াবতী মুখ আঁকার চেষ্টা করে না(?)।
মেয়ে তোমার জন্য আরেকটি চিঠি লিখেছি,
আর একষট্টিটি দিন মাত্র,
কারাগারের দেয়াল থেকে বেরুলেই তমাকে দিবো এটি।
মেয়ে শুধু একটি পড়ন্ত বিকালে এসো,
ওই বটবৃক্ষের ছায়াতলে একটুক্ষণ দাঁড়িও, একটি সবুজ শাড়ীতে আর একটি নীল টিপে সাজিও,
একমুঠো কৃষ্ণচূড়া তোমার খোঁপায় এঁটে দেবো।