somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিজের ছেলে-মেয়েকে এভাবে মৃত্যুর মুখে ছেড়ে দিতে পারতেন?

১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি জানি না কেন এখানে লিখতে আসলাম।মনের মাঝে কিছু কথা জমে ছিল, কাউকে বলতে পারছি না। বার মাথায় একটা কথাই ঘুরছে, স্যার, আমার যদি কিছু হয় আমি কি চিকিৎসা পাব? আপনি কি আমার দায়িত্ব নিবেন? এ দেশে দিনের পর দিন মানুষকে বুঝানো হয়েছে চিকিৎসা মানেই ডাক্তার! তাই তো কয়েকদিন পর পর ৫-৬ হাজার ডাক্তার নিয়োগ দিয়ে আইওয়াশ করা হয়। আর সবাই খুশী হয়ে যায়। আজকে এই করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে চিকিৎসা ব্যবস্থা মানেই ডাক্তার না। একটা হাসপাতাল শুধু ডাক্তার দিয়ে চলতে পারে না। যে কোন শ্বাসকষ্টের রোগীর জন্য আমার প্রয়োজন এমন একটি হাসপাতাল যেখানে প্রচুর অক্সিজেন সাপ্লাই। সিলিন্ডার দিয়ে ৫-৬ লিটারের বেশি অক্সিজেন দেয়া যাবে না, এর জন্য চাই সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন। রোগী যখন খারাপ হয়ে যাবে তখন তার জন্য লাগবে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট। একেবারে শেষ পর্যায়ে লাগবে ইন্টিউবেট করার ব্যবস্থা। এখন করোনা রোগীদের চিকিৎসা করার জন্য আমার লাগবে একটা ডেডিকেটেড হাসপাতাল যেখানে অন্য রোগীদের রাখা যাবে না। সেখানে থাকতে হবে কার্ডিয়াক মনিটর যাতে আমি রোগীর খুব কাছে না গিয়েই তার পালস, ব্লাড প্রেসার, অক্সিজেন স্যাচুরেশন দেখতে পারি। আমার ডাক্তারদের জন্য লাগবে মান-সম্মত পিপিই, যে পিপিই পরলে জীবাণু ভেতরে ঢুকতে পারবে না। আমি লোক দেখানোর জন্য যেনতেন একটা কিছু দিয়ে দিলেই তো হবে না, যেটা একটু নড়াচড়া করলেই সেটা ছিঁড়ে যায়! আমাকে দিতে হবে airtight goggles, তা না দিয়ে যদি বাইকারদের জন্য তৈরি চশমা দেয়া হয় কী লাভ হবে? আমার দরকার ভাল মানের মাস্ক৷ এন৯৫ না দিতে পারে, তার সমমানের কিছু দেয়া যেত বা প্রচুর পরিমাণে সার্জিকেল মাস্ক দেয়া যেত। এসব কিছুই দেয়া হয়নি। যে গ্লাভস দেয়া হয়েছে সেটা পরতে গেলেই ছিঁড়ে যায়। লোক দেখানোর জন্য ২০০০ পিপিই দিয়ে কী লাভ যেটা আমার কোন সুরক্ষা দিবে না। পিপিই পরার জন্য একটা ডনিং রুম এবং খোলার জন্য একটা ডফিং রুম লাগে এবং দুটি রুম পৃথক জায়গাতে হতে হয়। ডফিং রুমে ক্লোটেক সলিউশন থাকে। গগলস খুলে সেখানে ফেলতে হয় আর পিপিই খুলে ডিটারজেন্ট মিশ্রিত পানিতে ফেলতে হয়। এরপর সেগুলো সেখানে ২০-৩০ মিনিট ধরে রেখে দিতে হয়। গগলস অটোক্লেভ করে আবার ব্যবহার করা যায়। কিন্তু পিপিই ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে সেটা বায়োহ্যাজার্ড ব্যাগে ঢুকাতে হবে, তারপর সেটা আবার ক্লোটেক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে, তারপরে সেটা পুড়িয়ে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। এত কিছু কি করা হচ্ছে? প্রথমে টেস্ট করা হচ্ছিল না। এখন টেস্ট করতে বলছে। কিন্তু স্যাম্পল কালেকশন করার জন্য swab stick, screw capped tube দেয়া হচ্ছে না। বলা হচ্ছে ম্যানেজ করতে। এগুলা স্থানীয়ভাবে কিভাবে ম্যানেজ করা যায়? SOP তে লিখা আছে wooden swab stick অথবা cotton bud দিয়ে পাঠানো যাবে না। কিন্তু সেভাবেই তো পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে সবাই! তাহলে সঠিক রেজাল্ট কিভাবে আসবে? এখন একটা পজিটিভ রোগী যদি নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে ঘুরে বেড়ায় আর রোগ ছড়াতে থাকে তো তার দায়ভার কে নিবে? আপনি লজিস্টিক সাপোর্টনা দয়ে কেন স্যাম্পল কালেকশনের কথা বলেন? আমার ডাক্তাররা ডিউটি করতে চায় কিন্তু তাদের এই নিরাপত্তাগুলো কে দিবে? আমি কি আমার সন্তানদের এভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারি? আপনারা একটা মানুষ করোনা আক্রান্ত হতে পারে শুনলে তাকে বাসা থেকে বের করে দেন। এলাকায় কোন করোনা হাসপাতাল বানাতে দিতে চান না। কোন রোগী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে কবরের জায়গা দিতে চান না। সেই আপনারাই কিভাবে আশা করেন মৃত্যু পরোয়ানায় সাক্ষর করে এই ছেলে-মেয়েগুলো ডিউটি করতে যাবে? এরা তো বিদেশে বড় হয়নি। এরা আপনারই সন্তান। আপনি যদি এত স্বার্থপর হন তো আপনার সন্তান কিভাবে ভাল হবে বলে আশা করেন? আমার এলাকায় একটা করোনা সেন্টার বানাবো। তার জন্য একটা প্রাইভেট হাসপাতালকে রিকুইজিশন করা লাগবে। সে হাসপাতালের মালিক আবার রাজনীতি করে। সে হাসপাতাল দিবে না। স্বাস্থ্য কর্মীদের থাকার জন্য একটা হোটেল রিকুইজিশন করা দরকার, সেই হোটেলও দিবে না। এরপরে একটা স্টেডিয়ামে ব্যবস্থা হল। সেখানে একটা এসি রুম আছে সভাপতি-সেক্রেটারি বসার জন্য। সেক্রেটারি যিনি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি তিনি ডাক্তারদের ব্যবহারের জন্য সেই রুমটা দিবে না! কারো পিপিই পরার অভিজ্ঞতা থাকলে বলতে পারবেন কী প্রচন্ড গরম লাগে, এই ড্রেস পরে এদেরকে আমি কিভাবে একটানা ৮ ঘন্টা থাকতে বলব? এই যে স্বাস্থ্যকর্মীরা ডিউটি করবে তাদের তো থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তারা ৭ দিন ডিউটি করবে আর ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকবে যাতে তাদের পরিবারের কেউ আক্রান্ত না হয়। তাদের খাওয়ার ব্যবস্থাটাও তো আপনারা করে দিচ্ছেন না। এরা তো আপনাদের জন্য কাজ করছে, এলাকার মানুষেরা কি পারে না চাঁদা তুলে এদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে? এটা যদি করতে না পারেন তাহলে আশা করেন কেন এরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনার চিকিৎসা করবে? স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আর অধিদপ্তরের বড় বড় হর্তাকর্তারা এসব কিছুর ব্যবস্থা না করেই জোর করে এদের ঠেলে দিচ্ছে ডিউটি করতে! এদের কি বিবেকে একটুও বাঁধে না? একটা দেশে কয়টা মেডিকেল কলেজ দরকার? রাস্তার মোড়ে মোড়ে প্রাইভেট হাসপাতালের কী দরকার? অন্যান্য ব্যবস্থা না করে শুধু ডাক্তার দিয়ে দেশ ভরে ফেললে হবে? স্বাধীনতার এত বছর পর এই দেশে ৬৪টা জেলা শহরে আইসিইউ ও অন্যান্য অত্যাধুনিক সুবিধাসহ ৫০০ শয্যার ৬৪টা জেলা হাসপাতাল বানিয়ে নেয়া যেত না? শুধু শহরেই উন্নতি লাগবে গ্রামের উন্নতি কে করবে? উপজেলা/ ইউনিয়ন পর্যায়ে যে সব হাসপাতালে এক্সরে, ইসিজি ব্যবস্থা নেই। যেখানে শ্বাসকষ্টের রোগী আসলে রোগীকে অক্সিজেন দেয়া যায় না, সে সব জায়গাতে আপনারা কেন ডাক্তারদের পোস্টিং দেন? শুধু রোগী রেফার করার জন্য কেন ডাক্তার নিয়োগ দেন? আগে infrastructure develop করেন তারপরে জনবল নিয়োগ দেন। সবার আগে কেন ডাক্তার পাঠান??????
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×