somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চুরি বিদ্যা (রম্যরচনা)

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কথায় আছে চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা যদি না পরে ধরা । আমরা কতিপয় বন্ধু তখন মহান এ বাক্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বড় বিদ্যা অর্জনে ব্যস্ত । গল্প পড়ে কেউ যদি মহান এই বিদ্যা অর্জন করতে উদ্বুদ্ধ হন সেই দায়-দায়িত্ব একান্তই তার নিজের, আমার নহে । এই গল্পের মাধ্যমে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু খতরনাক কাহিনী তুলে ধরব ।

তখন মাত্র মাধ্যমিক দিব, এলাকায় আমরা চার/পাঁচ বন্ধু একসাথে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি । বছরের তিনশত পঁয়ষট্টি দিন নামাজ না পরলেও মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা আসলেই সাধারণত ছাত্র-ছাত্রীদের নামাজ পরার হিড়িক লেগে যায় । আমরাও পিছিয়ে থাকার পাত্র নই , ধুমছে নামাজ রোজা পরা শুরু করেছি, পারিতো নামাজ পরে কপালে কহর ফেলে দেই (কালো দাগ) !

একদিন এশার নামাজ আদায়ের জন্য বের হয়েছি । আমাদের এলাকাটা তখন অনেকটা নির্জন ছিল । চারদিকে গাছপালা, বাড়ীর আশেপাশেই তখন ফসলের জমি এবং বাগান ছিল । পথের মধ্যেই বাল্য বন্ধু নাদিমের (সম্পর্কে চাচাত ভাইও হয়) সাথে মোলাকাত, নাদিম ছেলে ভাল কিন্তু কু-বুদ্ধি দেয়ার ওস্তাদ ! কু-বুদ্ধি কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি ওর সাথে না মিশলে বুঝা দুষ্কর । নাদিম লোভনীয় এক প্রস্তাব নিয়ে এসেছে , চাচার কলা বাগানের কলা সাবাড় করার প্রস্তাব । আমি নামাজ পরতে বেরিয়েছি, ন্যায় নীতিতে অটল, এহেন কর্ম করার পাত্র আমি নই । আমি দ্বর্থহীন ভাষায় নাদিমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলাম এবং সাথে বিনামূল্যে নীতি বাক্য ঝাড়ে দিয়ে বললাম “হোনেষ্টি ইজ দ্যা বেষ্ট পলেসি”। নীতি বাক্য শুনে কাবু হবার পাত্র নাদিম নয়, চাচার কলা বাগানের কলার বিবরন দিতে লাগল, এক একটা কলা নাকি হাতির সমান, এই কলা না খেলে নাকি গুনা হয়ে যাবে ! আমিও আর বেশীক্ষণ নিজের নীতিতে অটল থাকতে পারলাম না, ঝাঁপিয়ে পরলাম কলা চুরির এই মিশনে।

সেদিন রাতে তিনজন বন্ধু মিলে হানা দিয়েছিলাম চাচার বাগানে । কলা বাগানে গিয়ে দেখি বিরাট মসিবত, কলা গাছ গুলো উচ্চতায় আমাদের থেকে অনেক বড়, দাড়িয়ে ছোয়া যায় না । আমরা একজন আরেক জনের কাঁধে দাড়িয়ে আরামসে কলা ছিরে মাটিতে জমাতে লাগলাম । হঠাত কে যেন আমাদের দেখে টর্চ লাইট মেরে “কে রে ?” বলে তেড়ে আসে ! আমরা যে যেভাবে পারি পাশের জঙ্গলে লাফিয়ে পরি । কথায় আছে না ,বিপদ যেদিন আসে চারদিক থেকেই আসে, জঙ্গলে ছিল পানি, আমাদের প্রত্যেকের পা আটকে গিয়েছে আর বের হতে পারছি না । উপায় না দেখে সারান্ডার করে বললাম- “আমরাই” । যাইহোক টর্চ হাতে ব্যক্তিটি ছিল আমাদেরই এক ছোট ভাই । আমাদের চিনতে পেরে বলল “ও তোমরা ! আমি ভাবছিলাম চোর! যাক সমস্যা নাই, আমি কাউকেই বলব না !” পরে অবশ্য ওই আমাদের ধরিয়ে দিয়েছিল । এটা ছিল আমাদের জীবনের এক ব্যর্থ মিশন ।

আরেকদিন জুম্মার নামাজ পরে বেরিয়েছি, দেখি মসজিদে তোবারক হিসেবে গরুর গোশস বিতরণ করছে । যথারীতি আমরা তিন-বন্ধু আমাদের ভাগেরটা নিয়ে বিরাট চিন্তায় পরে গেলাম ! এই গোশত দিয়ে কি করা যায় এই চিন্তা, অবশেষে গোশত বুনা করে ছোটখাটো একটা পার্টির কথা চিন্তা করলাম । এখন অফিস থেকে অনেক বড়বড় পার্টি, কলিগদের সাথে যখন খুশী সিনেমা দেখা বা রেস্টুরেন্টে যখন খুশী খেতে যাওয়ার চেয়ে তখনকার সেই ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র পার্টিগুলোও কোন অংশে কম ছিল না! রাতে গোশত বুনা করে নতুন একটা কু-বুদ্ধি মাথায় এলো ! বুনা গোশত, মুরি আর সাথে ডাবের পানি হলে মন্দ হয় না! মুরি না হয় যোগার করা গেল, কিন্তু এত রাতে ডাব পাব কোথায় ! চিন্তাই মানুষকে যে কোন সমস্যার সমাধান পেতে সাহায্য করে, আমরাও চিন্তা করে সময় উপযোগী একটা উপায় পেয়ে গেলাম ! ডাব চুরি করলে মন্দ হয় না ! এবার আর অন্য কারো গাছ থেকে নয়, নাদিমদের গাছ থেকেই ডাব চুরির প্ল্যান করলাম । নাদিমের বড় ভাইয়েরা এত রাতে ডাব পারছি দেখলে সমস্যা আছে , তাই লোকচক্ষুর অন্তরালে নিজের গাছে চুরিতে নাদিমের দ্বিমত নেই । যেই ভাবা সেই কাজ, অত্যন্ত সফলতার সাথে ঘেরিলা স্টাইলে নাদিমদের গাছ থেকে ডাব সাবাড় করলাম । একটা মশা মাছি পর্যন্ত টের পেল না!

ডাব চুরির এই সফলতা থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে পরবর্তী আরও কিছু মিশন বাস্তবায়নে নেমে পরলাম । রাতে ধুমছে এক সাথে মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পড়াশুনা করি, ফাকে চলে বিরাট আড্ডা । এক দিন আরেক চাচার ডাবের দিকে আমাদের বদ-নজর পরল, আমাদের বদ নজর মানেই কেল্লা ফতে ! রাতে হানা দিলাম মিশন ইম্পসিবল বাস্তবায়নের উদ্দেশে । প্রায় রাতেই পড়াশুনার ফাকে ডাব সাবাড় করতাম ,মনে পরে চাচার গাছের সব ডাব আমাদের পেটেই যেত।

সময়টা তখন ডিলট-এডবেরেষ্ট (বিশেষ এক প্রকার ছোটদের খেলা ) , গোল্লা ছুট এবং ছোঁয়াছুঁয়ির ! আমরা তখন তাগরা বালক, রাতে লোড শেডিং হলেই বাড়ির পালানে (বাড়ির পাশে ছোট ফসলের জমিন) আমাদের ছুটাছুটি শুরু হয়ে যেত । এমনিই এক রাতে , এলাকার এক মহিলার কদু গাছ থেকে কদু চুরির পরিকল্পনা করলাম । মূল মিশনে ছিলাম আমি আর আরেক বন্ধু, বাকী দুজনকে রেখেছিলাম চারদিকে পাহারা দেবার জন্য যেন কেউ আসলেই আমাদের কানে খবর দিয়ে দেয় । অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কদু চুরি সমাপ্ত করলাম, সঠিক পরিকল্পনা এবং সেই মাফিক কাজ করলে যে কোন কাজে বিফল হতে হয় না সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম ।

বিকাল হলেই চার পাচ জন বন্ধুবান্ধব মিলে আড্ডা দিতাম এলাকার এক ছাদে । তখন বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাস, গাছে আমে ভরপুর । আমাদের এলাকায় তেমন একটা আম হয় না বললেই চলে। ছোট খাট আম ধরে গাছে , ছোট-খাট আম বলে যে সহানুভূতি দেখাব আমের প্রতি তাতো হতে পারে না ! পরিকল্পনা মাফিক কোটা (বাঁশের কঞ্চির মাথায় তার দিয়ে আম পারার বিশেষ প্রযুক্তি) বানালাম চুরি করে আম পারার জন্য । গল্পগুজব চলে ফাকে কোটা দিয়ে চেলচেলাইয়া আম সাবাড় করি, মানুষ দেখলেই মোলায়েম সুরে কথা বলি কেউ যেন বুঝতে না পারে কোন বনে কোন বাঘ !

শৈশব-কৈশোরের এরকম ছোট ছোট অজস্র গল্প আছে, যেগুলো মনে পরলে নস্টালজিয়ায় পরে যাই, আবারো ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই সময়টাতে । সেই দুরন্তপনা, সারাদিন ক্রিকেট খেলা শেষে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরেই আবারো বন্ধুদের ডাকে বাইরে বেরিয়ে পরা ! ভুলা যায় না , ভুলা যাবে না! (সমাপ্ত)

(পূর্ব-প্রকাশীত )
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৮
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

Testimony of Sixty- By Edward Kennedy বাংলাদেশের রক্তাক্ত সত্যের এক আন্তর্জাতিক স্বীকারোক্তি

লিখেছেন কিরকুট, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩




১৯৭১ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর বৈপরীত্যের বছর। এটি যেমন ছিল অন্ধকার ও রক্তাক্ত, তেমনি ছিল সত্যের প্রতি অবিচল এক সময়কাল। এই বছরের গণহত্যা, শরণার্থী স্রোত ও মানবিক বিপর্যয়ের বিবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×