somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কল্প-গল্প : আলফা-স্পেস

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের স্কুলের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক আলি আফসার স্যার । স্যার ষাটোর্ধ বয়স্ক মানুষ , এই বয়সে সাধারণত আমাদের দেশের মানুষ বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর জন্য ইন্তেজার করেন এবং মরার পরের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন কিন্তু স্যার তার উল্টো।আফসার স্যার বিজ্ঞান মনস্ক মানুষ, বাসায় ছোটখাটো একটা ল্যাবরেটরি বানিয়েছে গবেষণার জন্য। বর্তমানে তিনি একটা মাথা নষ্ট করা বিজ্ঞান প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছেন , তিনি বিশেষ এক ধরনের মহাকাশ যান বানাবেন বলে ঠিক করেছেন , এই যন্ত্রের বিশেষত্ব হল এটা দিয়ে মুহুত্যেই এক গ্রহ থেকে আরেক গ্রহে যাওয়া যাবে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই যন্ত্র এলিয়েনও খুঁজবে ।

আফসার স্যার আমাদের নবম শ্রেণির পদার্থ বিজ্ঞানের ক্লাস নেন। স্যার একটু রাগি মানুষ, স্যারের ধোলাই খায় নাই এমন বান্ধা স্কুলে খুঁজে পাওয়া মুশকিল , স্যার যাকে একবার ধরে তাকে পিটিয়ে পশ্চাৎ-দেশের ছালবাকল উঠিয়ে ফেলে । তবে স্যার পড়ান অসাধারণ , তার খ্যাতি আমাদের আশেপাশের কয়েক এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত ।আফসার সার চক এবং ডাস্টার নিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করলেন , বরাবরের মতই ব্ল্যাক বোর্ডে বড় বড় করে নিজের নাম লিখলেন ‘আলি আফসার কমা বি এস সি ব্র্যাকেটে পদার্থ বিজ্ঞান।’

স্যার আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন – ‘তোদের পড়ানোর জন্য আমার এইচ এস সি লেবেলের জ্ঞানই যথেষ্ট আর বি এস সি ডিগ্রিটা ফাও ,বুঝলি ?’

আমরা সবাই সমস্বরে মিনমিন করে বললাম ‘ঝি স্যার’ ।

স্যারের অভ্যাস হুট-হাট বিভিন্ন প্রশ্ন করে বসেন ক্লাসে। দেখা যাবে হয়ত পড়াচ্ছেন তাপবিদ্যা কিন্তু প্রশ্ন করলেন হয়ত গতি বিদ্যা থেকে।
আমি আর বল্টু পিছনের বেঞ্চে বসে আছি । স্যার আমাকে পণ্ডিত বলে ডাকেন , আমার দিকে তাকিয়ে বললেন ‘পণ্ডিত বলতো দেখি কারেন্টের একক কি ?’

আমি দাঁড়িয়ে বললাম ‘স্যার এম-পিয়ার’।

‘এর নাম এম-পিয়ার হল কেন ?’

এবার দরা খেয়ে গেলাম কারণ উত্তর কমন পরে নাই ! মাথা চুলকিয়ে বললাম ‘জানি না !’

‘বল্টু তুই বলতো দেখি?’

‘স্যার জানি না’ দাঁড়িয়ে জবাব দিল বল্টু ।

ভোল্টেজ কি এবং পৃথিবীতে সর্ব প্রথম ব্যাটারি কে আবিষ্কার করেছে এটা বল দেখি ?

বল্টু আন্তাজে গুলি মেরে বলল সার ‘নিউট্রন সাহেব’ । বল্টু স্যারের মুখের ভঙ্গি দেখে বুঝতে পারল হয় নাই তাই আবার বলল ‘না না স্যার আইনস্টাইন । এবারও হয় নাই বুঝতে পেরে বলল স্যার রবীন্দ্রনাথ!’ পুরো ক্লাস অট্টহাসিতে ফেটে পরল !

স্যার সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলল ‘নিউটনের মাথায় আপেল না কাঁঠাল পড়েছিল এটা জানিষতো! হাবারাম কোথাকার! তোদের নিয়ে যুদ্ধে যাওয়া যাবে না, তোরা হইলি পরাজিত সৈনিক।’

আলোর গতি কত জানিস নরম শুরে বললেন স্যার। বল্টুর দুখী চেহারা মোবারক দেখে আর বুঝার বাকি নেই সে পারে না। স্যার এবার রেগে আমার আর বল্টুর দিকে তর্জনী তাক করে বলল ‘তোদের না বলছি দুজন একসাথে বসবি না।’ স্যার আমাদের দুজনকে দুই বেঞ্চে বসিয়ে দিল। স্যার প্রায় সবসময় রুটিন মাফিক এই কর্ম করেন তবে যেই লাউ সেই কধুই হয় মানে পরের ক্লাসেই আবার আমরা এক সাথেই বসি।

স্যার ব্ল্যাক বোর্ডে ঘটঘট শব্দ করে আলোর সূত্র লেখে আমাদের দিকে তাকাল। বোর্ডের লেখা সূত্রের দিকে এক হাত দিয়ে ডাণ্ডা দিয়ে দেখিয়ে বলল এখানে যেই ‘সি' দেখতে পাচ্ছিস সেটা হল আলোর ধ্রুবক, আলোর গতি সেকেন্ডে এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল, বুঝলি? আমাদের দিকে তাকিয়ে গর্জন করে বলল স্যার।

আমরা বুঝি আর না বুঝি জ্ঞানী মানুষের মত মাথা নেড়ে বলি ‘ঝি স্যার।’ বুঝি না বলার মত হিম্মত আমাদের নেই, না বলে ডাণ্ডার বারি কে খেতে চাইবে!!

‘ধ্রুবক কাকে বলে জানিস তোরা?’ আমাদের সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন। তবে দাড় করালেন এই হতভাগা আমাকে, আমি মাথা চুলকে বাচার জন্য মিথ্যে করে বললাম ‘স্যার, গত দুই দিন পড়াশুনা করতে পারি নাই, আমার ছোট মামার বিয়ে ছিল!’

বিয়ের কথা শুনে স্যার মনে হল কিছুটা হতাশ হল! আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল ‘বিয়ে-টিয়ে গবেষণার জন্য খুবই ক্ষতিকর ব্যাপার, কোন দিন বিয়ে শাদী করবি না। লাইফটা হেল হয়ে গেল!’ কিছুটা উদাসভাবে বলল স্যার!আরও কত কথা যেন মনে মনে বিড়বিড় করতে লাগল স্যার। আমরা তার আগা-মাথা কিছুই ধরতে পেলাম না। স্যার নিজে বিয়ে করলেও সবসময় তাকে বিয়ে বিরোধী মনে হয়, বিয়ের কথা শুনলেই কেমন জানি অন্যমনস্ক হয়ে যায়!

যাইহোক শোন ‘যেই জিনিসের মান পরিবর্তন হয় না তাকে ধ্রুবক বলে। আলোর গতি হল ধ্রুবক কারণ স্থানভেদেও আলোর মান পরিবর্তন হয় না। ধর আমাদের এই পৃথিবীতে আলোর গতি যত মোঙ্গল গ্রহেও তাই, এর জন্যই একে ধ্রুবক বলে।’

আজ আর পড়াতে ইচ্ছে করছে নারে। সবাই যার যার হোম-ওয়ার্ক জমা দে। কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয়, এবারও ধরা খেলাম আমি আর বল্টু। আমরা ক্লাসের মধ্যে দুই পাপী ছাড়া সবাই হোম-ওয়ার্ক জমা দিল।

‘তোদের হোম-ওয়ার্ক কোথায়?’ কঠিন গলায় বলল স্যার।

আমরা মাথা নিচু করে রইলাম। ‘তোরা দুইজন চতুর্থ অধ্যায় সবগুলো উদাহারন দেখে করে আজ বিকেলেই আমার বাসায় আসবি। তোদের দুজনকে এক্সটা ভিটামিন দিতে হবে। আমি স্পেস-যান নিয়ে কাজ করছি , আমার দুইজন সহকারী দরকার । বল্টু আর পণ্ডিত তোরা দুইজন আমার সাথে কাজ করবি । দেখি তোদের মানুষ করা যায় কিনা ! ক্লাস শেষে বিকেলে আমার বাসার ল্যাবে আসবি ।’
প্রস্তাবটা শুনে আমি আর বল্টু খুশিতে বাঘবাকুম করে উঠলাম । আমাদের যেন তর সইছে না স্যারের সাথে স্পেস-যান নিয়ে কাজ করার জন্য ।

২.
স্যার মধ্যবয়সী হলেও বিয়ে করেছেন কম বয়সী মেয়েকে, বয়স বড়জোর ত্রিশ হবে হয়ত। ঠিক বয়সে বিয়ে করলে এই বয়সী একটা মেয়ে থাকত , সেটা তার ধবধবে সাধা চুল দেখলেই বুঝা যায়। স্যারের বাসাটা চমৎকার দুই রুমের একতলা বিল্ডিং, এক রুমে সে থাকে এবং পাশের রুমটাকে বানিয়েছে ল্যাবরেটরি। বিকেলে ক্লাস সেরে হুড়-মুরিয়ে ঘরে ঢুকেই বাথরুমে ঢুকল ফ্রেশ হতে, বাথ রুম থেকে গলা উঁচিয়ে খানা খাদ্য দেবার জন্য বললেন। বউ ঘরের ওয়ারড্রবের সামনে বসে চেহারা পালিশ করছিল। স্যার কয়েক বার ডেকেও সারা শব্দ না পেয়ে ‘খেই মেরে বললেন কথা কানে যায় না? মেকআপ ফেকাব কবে আগুন ধরিয়ে দেই তার ঠিক নেই।’ গরগর করতে করতে বললেন।

মেকআপকে অবমাননার ফল যে ভাল হবে না স্যার তা ভাল করেই জানেন তাই পাটকিল খাবার জন্য অনেকটা প্রস্তুত হয়েই রইলেন। মেকআপের অবমাননা নাড়ি সমাজ খুব ভালভাবে নেয় না, স্যারের বউ রাহেলাও তার ব্যতিক্রম নয়। যেই ভাবা সেই কাজ বউ তেড়ে উঠে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল।

‘খবরদার আমার মেকআপ নিয়ে কথা বললে তোমার কিন্তু খবর আছে দাঁত দাঁত কড়মড় করে বলল।’ ফিনফিনে শরীর হলেও যখন রেগে যায় রাহেলা তখন মুখ দিয়ে যেন কামান, গোলা বারুদ বের হয়।

‘কত বার ডাকছি তোমার কথা কানে যায় না।’ বলে উঠল স্যার। আড় চোখে রাহেলার দিকে তাকিয়ে পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করে।

‘ইচ্ছে করে জবাব দেই নাই। তোমাকে যে মার্কেট থেকে এক জোড়া হাই-হিল জুতা আনতে বলছিলাম মনে আছে! এক সপ্তাহ ধরে বলছি।’

স্যার এবার নরম সুরে বলল ‘হাই হিল জুতা দিয়ে কি করবে? ’

‘মাথায় দিব, তোমাকে আনতি বলছি আনবো।’

কথায় আছে ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙে স্যারও তার ব্যতিক্রম নয়। বউকে নিজের ছাত্রী ভেবে বুঝাতে লাগলেন।

‘সব কিছুর ভিতরেই ফিজিক্স আছে! হাই হিল জুতার ফিজিক্স তুমি জানো? উত্তরের অপেক্ষা না করেই বলতে শুরু করলেন হাই-হিল পরলে মেয়েদের পশ্চাদ দেশ উঁচু হয়ে থাকে, এটা কোমরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। হাই-হিল পরার কারণে এক সময়ে কোমর ব্যথা, হাড় ক্ষয় এর মত ঝটিল রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। এই জুতা পরলে যেহেতু মেয়েদের পশ্চাদ দেশ উঁচু হয়ে থাকে, তাতে তাদের অনেকটা আবেদনময়ী লাগে, এই হাই-হিল আবিষ্কার হয়েছে মূলত মেয়েদের যাতে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা যায়, সেই জন্য। বুঝলে ব্যাপারটা ? ’ গর্বিত স্বরে বলল স্যার।

স্যার রাহেলার কাছ থেকে এই জ্ঞানী বাক্য নিক্ষেপের জন্য কিছুটা প্রশংসা আশা করেছিল।স্যার বাক্যটা শেষ করতে পারলেন না রাহেলা হাতের কাছে থাকা গ্লাসটা মাটিতে আছাড় মারল। স্যার রাহেলাকে নিয়ে মোটামুটি বিপদে আছেন, স্যারের সাথে রাগ করলেই হাতের কাছে যা আছে তাই ছুড়ে মারে, কিছুদিন আগে স্যার পিঠ চুলকে দেবার জন্য দুইটা রবোটিক হাত বানিয়েছিলেন, হাত দুটিকে তিনি তার চেয়ারে লাগিয়ে ছিলেন, রাহেলা স্যারের সাথে রাগ করে এক হাত খুলে এনে ফেলেছিল, তাছাড়া ঘর পরিষ্কার করার রোবট বানিয়েছিল গত বছর, রাহেলার রোবটের মাথার ঘিলু মানে প্রসেসর টেনে খুলে ফেলেছিল, স্যারের সাথে ঝগড়া মানেই স্যারের অবর্তমানে ল্যাবে হানা দিয়ে জিনিষ পত্রের বারটা বাজিয়ে দেয়া।

রাহেলা রাগে ফুসতে ফুসতে বলল ‘কতবার না বলেছি আমার সামনে ফিজিক্স ফিজিক্স করবে না, আমি দেখেই তোমার-মত পাগলের সংসার করছি। অন্য কেউ হলে দুদিনও টিকত না এই সংসারে। আমার চাচাতো, ফুফাতো বোনরা কত ভাল আছে, ওদের জামাইরা কত ভাল, আর তুমি একটা বুইড়া খাটাস!’

আমি আর বল্টু ততক্ষণে স্যারের দরজার সামনে এসে চুপচাপ দাড়িয়ে ঝগড়া শুনছিলাম আর খিক খিক করে হাসছিলাম। ঝগড়া শুনার মাঝেও যে আনন্দ আছে সেটা আগে বুঝিনি। স্যারের বিয়ে বিদ্বেষী মনোভাবের শানেনজুলটা কিছুটা আচ করতে পারছিলাম।

আমাদের দেখে বলল ‘তোরা আমার ল্যাবে যা আমি আসছি।’

৩.
ল্যাবরেটরিটি দেখতে সাধারণ মনে হলেও ভিতরে ঢুকে ছোটখাটো একটা ধাক্কা খেলাম। গবেষণাগারের ভিতরের সব গুলো দেয়ালে বুকশেলফ রাখা, তাতে প্রচুর বই-পত্র মজুদ করে রেখেছেন স্যার। দরজার দিয়ে ঢুকে হাতের বামে একটা ভাঙ্গা টেবিল তাতে ছোট তিনকোনা প্রিজম এবং ছোট একটা মাইক্রোস্কোপ রাখা আছে। রুমটার মাঝখানে একটা টুলের উপর একটি ছোটখাটো স্বচ্ছ-কাচের তৈরি যান, ভিতরে এক জনের বসার মত আসন তার সামনে ছোট একটা মনিটর রাখা তাতে। ‘এটা একটা স্পেস-যান বুঝলি?’ পিছন থেকে বলল আফসার স্যার।

আমি আর বল্টু দুজন দুজনের দিকে চাওয়াচাওয়ি করলাম।

‘স্পেস-যান কি তাও জানিস না? হাঁদারাম কোথাকার। স্পেস-যান হল এক ধরনের মহাকাশ যান যেটা দিয়ে মহাকাশে ঘুরে বেরানো যায়। বুঝলি?’

আমরা সমস্বরে বললাম ‘ঝি স্যার।’

স্যার এই স্পেস-যানে করে কি সত্যিই পৃথিবীর অন্য গ্রহে যাওয়া যাবে? উৎসুকভাবে বললাম আমি।

‘অবশ্যই পণ্ডিত। চোখের চশমাটা ঠিক করতে করতে বললেন স্যার। আমার ইচ্ছে আছে হাইপার জাম্প করে আলফা –স্পেসে যাওয়া।’

‘আলফা-স্পেস কি স্যার?’ বললাম আমি

‘আলফা-স্পেস এমন একটি স্পেস যেখানে ঘণ্টা খানেক হাঁটলে আমাদের এই মহাজগতেই হাজার হাজার মাইল সমান দুরুত্ব যাওয়া যায়। আমি যান দিয়ে হাইপার জাম্প করে সেই আলফা-স্পেসে যেতে চাই। যাতে মুহুত্যেই এই ছায়া পথ থেকে আরেক ছায়া পথ যেতে পারি। বুঝলি ব্যাপারটা?’

আমরা আগা-মাথা কিছুই বুঝলাম না কিন্তু বুঝার নিখুঁত অভিনয় করলাম।

‘স্যার আপনি কি কখনো গিয়েছেন আলফা স্পেসে এই যান করে, এই যান কি যেতে পারে আলফা-স্পেসে?’ বলল বল্টু।
‘আমি এখনো জানি না একটি দ্বির্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল স্যার।’

‘কয়েক দিন আগে একটি বই পড়েছিলাম এলিয়েনদের নিয়ে, বুঝলি। আমার সখ এলিয়েনদের সাথে কথা বলা, তাদের দেখা, তাই এই যন্ত্র দিয়ে এলিয়েন দেখার উপযোগী করে তৈরি করব বুঝলি? ’

মাঝখান থেকে বল্টু বলে বসল ‘আমারও সখ এলিয়েনদের সাথে একটি সেল্ফি তোলা, ফেইসবুকে দিতে চাই, তাদের সাথে চা খাইতে…. ’

বল্টুর কথা শেষ না হতেই স্যার একটা ঝারি দিয়ে বলল ‘তরে না বলছি কথা কম বলবি। ’

আমি বল্টুকে নিজের কাঁধ দিয়ে মৃধ ধাক্কা দিয়ে বললাম ‘এলিয়েনরা সম্মানিত ব্যক্তি, তর সাথে সেল্ফি তুলতে বয়েই গেছে, আমি হইলে না হয় কথা ছিল।’

‘ভিজিবল তরঙ্গ কি জানিস?’

আমাদের উত্তরের অপেক্ষা না করেই স্যার বললেন ‘আলোর তরঙ্গের বিভিন্ন মান আছে , যেমন ৩৯০ ন্যানোমিটার থেকে ৭০০ ন্যানোমিটারের মধ্যকার তরঙ্গগুলোকে বলা হয় ভিজিবল কারণ এই তরঙ্গগুলো আমরা দেখতে পারি। এর নিচে এবং উপরের তরঙ্গ আমরা দেখতে পারি না। আমার ধারনা এলিয়েনরা হয়ত অন্য মাত্রায় বা আমাদের ভিজিবেল রেঞ্জের বাহিরে তাই দেখতে পারি না। আমি এই যানে এমন ক্যামেরা লাগাতে চাই যেটা আমরা খালি দৃষ্টিতে যেই বস্তু না দেখি এই যন্ত্র দেখতে পাবে। এভাবে আমি বিভিন্ন গ্রহে ঘুরে বেরিয়ে এলিয়েন খুঁজব। বুঝলি ?’

‘ঝি স্যার।’ না বুঝেই বললাম আমরা দুজন। এমন ভাব ধরলাম যেন সব বুঝে গেছি।

স্যারের সাথে আমরা টানা ছয় মাস কাজ করলাম, আমাদের কাজ শুধু স্যারকে যন্ত্র বানাতে সাহায্য করা, জিনিশ পত্র এগিয়ে দেয়া, সিগারেট কিনে আনা, বই পত্র যোগাড় করা ইত্যাদি।অবশেষে তৈরি হয়ে গেল আমাদের এলিয়েন খুঁজার বিশেষ যান।

স্যার একটি তৃপ্তির হাসি দিয়ে বলল ‘অবশেষে আমাদের কাজ শেষ হল।’

গর্বে আমার বুকটা ফুলে উঠল, নিজের বুকের মাঝে থাবা দিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে ‘এই যন্ত্রটা বানাতে আমারও কিছুটা অবধান আছে, হোক সেটা যত ছোট অবধান।’

আমাদের কথা বলার মাঝ খানে স্যারের সহ-ধর্মিণী প্রবেশ করল খানা খাদ্য নিয়ে। স্যারের জন্য সাধা ভাত, আলুর ভর্তা, আলু বাজি এবং রুটিও এনেছে।

স্যারের খাবারের প্রতি খুব একটা আগ্রহ দেখাল না, বউ এর দিকে তাকিয়ে বলল ‘ভাত, আলু সিদ্ধ, আলু ভাজি এবং রুটি এই সবগুলোই কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য। তিনটাই কার্বোহাইড্রেট খাবার আনতে কে বলেছে তোমাকে? সব কিছুর মুলে ফিজিক্স আমাদের বায়োলজিক্যাল বডি কিভাবে….’

স্যার কথা শেষ করতে পারলেন না রাহেলা হাতের আঙুল নাচিয়ে বলল ‘বেশী লেকচার দিবা না বলে দিলাম।তোমার লেকচার শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত!’

‘না মানে আমি বলছিলাম কার্বোহাইড্রেট খাবার বেশী খাওয়া ভাল না!’ মিন মিন করে বলল স্যার ।

‘কেন, সমস্যাটা কি, বল শুনি?’ মুখ শক্ত করে বলল রাহেলা

জিব দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে প্রবল উৎসাহ নিয়ে বলতে শুরু করলেন ‘কার্বোহাইড্রেট বেশী খেলেতো লাভ নেই, আমরা কার্বোহাইড্রেট মানে ভাত বেশী খাই কিন্তু তরকারি কম খাই। বিদেশীরা দেখবে তরকারি বেশী খায়, ভাত কম খায়। কার্বোহাইড্রেট বেশী খেলে হাগু করবে বেশী শরীরের কোন উপকার..... ’

এবারর রাহেলা অগ্নিমূর্তি রূপ ধারণ করল, গলার রগ টানটান হয়ে গেল, দূত নি:শ্বাস নিচ্ছে। হাতের কাছে থাকা জগ ধপাস করে মেঝেতে ফেলে দিল, পরবর্তী মিনিট দশেক মনে হল রাহেলার মুখ দিয়ে গোলা বারুদ বের হল। ঘটনার আকর্ষিকতায় আমি আর বল্টু রুম দূত প্রস্থান করলাম , স্যারও আমাদের অনুসরণ করে বের হয়ে গেল।

রাহেলা রাগে গরগরর করতে করতে সিদ্ধ আলু যানের ধোয়া নির্গমনের পথ দিয়ে গোগ্রাসে ঢুকিয়ে দিয়ে বিড়বিড় করে বলল ‘কার্বোহাইড্রেট তুমি না খাও তোমার এই শয়তানের বাক্সকে খাইয়ে দিলাম।’

৪.
যান সম্পূর্ণ প্রস্তুত। শুভ কর্মে আর দেরি কেন। আজ আমাদের সিদ্ধান্ত অনুসারে বল্টু রাজি হয়েছে অচিন গ্রহে যাবার জন্য। স্যার আর আমি একটি ছোট মনিটর দিয়ে সার্বক্ষণিক যানের সাথে যোগাযোগ করব। যানে ভিতরে ট্রান্সমিটার ডিভাইস আছে , সেখানে বৃও আকৃতির একটি বাটনে টিপ দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই যান পুনরায় যেখান থেকে যাত্রা শুরু করেছে সেখানে চলে আসবে। বল্টু ঘণ্টা দুয়েক আলফা-স্পেসে ঘুরে ট্রান্সমিটার ডিভাইসের সেই বাটন টিপে পুনরায় চলে আসবে, এই হল আমাদের প্লান।

বল্টু যানে বসে প্রস্তুত আলফা স্পেসে যাবার জন্য। আলফা স্পেসে ঘণ্টা দুয়ে যাওয়া মানে আমাদের স্বাভাবিক স্পেসে ৫/৬ আলোকবর্ষ যাবার সমান দুরুত্ব অতিক্রম করা।

স্যার নিজের খাতার চেক বক্স দেখে ভ্রু কুচকে পড়তে লাগলেন

‘ইঞ্জিন?’

আমি চেক করে বললাম ‘ঠিক আছে’

‘যানের অক্সিজেন ? ’

‘ঠিক আছে’

‘রিসিভার এবং ট্রান্সমিটার এন্টেনা? ’

‘ঠিক আছে’

‘যানের ভিতরের তাপ /চাপ? ’

‘ঠিক আছে’

‘বল্টু প্রস্তত? ’

বল্টু ঢোক গিলে সম্মতি সরূপ মাথা ঝাঁকালও।

স্যার একটা বাটন চাপ দিতে আমাদের ল্যাবেরটরির ছাদ চিচিংফাঁক হয়ে যান যাবার জন্য কিছুটা ফাকা হল। পুরো যানটা থরথর করে কাঁপছে, হঠাৎ বিকট শব্দ হয়ে ‘ভ’ করে আকাশে মিলিয়ে গেল যানটি।

স্যার এবং আমি দুজনেই উল্লাসিত, স্যারকে এই প্রথম দেখলাম হাত দিয়ে চোখ মুছতে। স্যারের মনযে এত নরম আগে যানতাম না। চারদিকে কাল ধোয়ায় ভরে গেল, এতটা ধোয়া হবার কথা ছিল না। আমরা হাত দিয়ে ধোয়া তাড়ায়ে মনিটরে তাকিয়ে আছি। প্রায় আধা ঘণ্টা হয়ে গেল কোন সিগনাল আসছে না।

স্যারের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরই গবেষণাগারে স্যারের বউ ঢুকে হাত দিয়ে ধোয়া পরিষ্কার করে বলল ‘এত ধোয়া কেন? শয়তানের বাক্সটা কোথায় গেল? এই নেও সেদিন রাগে শয়তানের বাক্স থেকে এই বাক্সটা বের করেছিলাম।’ স্যার বাক্সটা দেখে ফ্যাকাসে মুখে আমার দিকে তাকাল। এটা ট্রান্সমিটার বক্স!
(শেষ)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৬
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×