somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যেমন চলছে জীবন

২৪ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমেরিকার ছোট একটি শহরে থাকি, মূলত একটি ইউনিভার্সিটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এই শহর। অবশ্য পশ্চিমা দেশগুলোয় শহরগুলো সাধারণত কোন ইউনিভার্সিটিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠে!! এই ইউনিভার্সিটিতে জয়েন করেছি বেশী দিন হয়নি, আমার বাসা থেকে ডিপার্টমেন্ট হেটে যেতে বড়জোর পনের মিনিট লাগে। এই ইউনিভার্সিটিতে প্রচুর বাঙালি আছে যারা বেশীর ভাগই পিএইচডিতে অধ্যয়নরত, আর সবাই থাকেও প্রায় পাশাপাশি।

আমি দোতলা বিশিষ্ট ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকি, ভবনটি বৃত্তাকার, উপরে উঠার সিঁড়িগুলো কাঠের কিন্তু এপার্টমেন্টগুলো কনক্রিটের । আমার বাসার বারান্দা ঘেঁষে বাম দিকের এপার্টমেন্টে একজন কালো আমেরিকান থাকে, তার পরের পরপর দুটি এপার্টমেন্টে দুই বাঙ্গালী ফ্যামিলি, আমার বারান্দা থেকে সামনে মুখ ঘুরালেই দেখা যায়। তাছাড়া এই ভবটিতে আরও অনেক বাঙ্গালী স্টুডেন্ট থাকে।

গত সপ্তাহে আমাদের স্প্রিং ব্রেক ছিল তাই অফিসে যেতে হয়নি, অবশ্য এখনো যেতে হবে না পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত। আমি আড্ডা প্রিয় লোক, কোথাও আড্ডার সুযোগ পেলেই শিকড় গাড়ার চেষ্টা করি তবে আজকাল দরকার না হলে বাসা থেকে খুব একটা বের হইনা। এখানে বাঙ্গালীরা মিলে নিয়মিত ফুটবল খেলতাম তবে পরিস্থিতি খারাপ তাই কয়েক সপ্তাহ ধরে খেলতে যাই না, এই সুযোগে ভূরি না আবার সামনের দিকে সিজদা দেয় এই ভয়ে আছি। আপাতত বাসা থেকে কাজ করছি, জুম মিটিং হয় গ্রুপের। এমনিতে ঘরে বসে অফিসের কাজ করি, বাকি সময়টাতে ধুমছে বই পড়ছি (পড়তে পড়তে হাফেজ হয়ে যাওয়া বাকি আছে আরকি), ইসলামিক হুকুমত মেনে চলারও চেষ্টা করি।

সম্প্রতি ব্রিটিশ লেখক হারবার্ট জর্জ ওয়েলস এর বিখ্যাত টাইম মেশিন উপন্যাসটি পড়ে ফেললাম, অসাধারণ এক উপন্যাস। লেখকের জন্ম ১৮৮৬ সালে, বুঝাই যাচ্ছে পুরানা আমলের লোক, তবে লেখক পুরানা হলে কি হবে তার কল্প কাহিনী লেখার হাত অসাধারণ, সুনিপুণ লেখনীতে পাঠককে লেখায় আটকে রাখার অসামান্য ক্ষমতা তার। টাইম মেশিন উপন্যাসে তিনি একজন সময় পর্যটকের গল্প বলেছেন, যেখানে সময় পর্যটক উপন্যাসের নায়ক, যিনি একটি টাইম মেশিনের সাহায্যে হাজার লক্ষ্য বছর পরের পৃথিবীতে ঘুরে এসে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন তার সাঙ্গোপাঙ্গোদের সাথে, যদিও তার শ্রোতারা তার গল্পকে ঠিক বিশ্বাসও করেনা আবার অবিশ্বাসও করে না।

উপন্যাসে তিনি দেখান হাজার লক্ষ বছর পরের পৃথিবীতে মানুষ দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়, এক গ্রুপ মাটির নিচে থাকে, এবং আরেক গ্রুপ মাটির উপরে। লেখক উদাহারন দিয়েছেন লন্ডন শহরের, লন্ডন শহরে প্রচুর শ্রমিক আছে যারা মাটির নিচে মেট্রো রেলের কাজ বা খনির শ্রমিক হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। লক্ষ্য বছরের ব্যাবধানে এই নিচের মানুষগুলোই, মাটির নিচেই বসবাসের উপযোগী হয়ে উঠে, সূর্যের তাপ আর তাদের সহ্য হয় না, আলোতে চোখে কিছু দেখতে পায় না বরং মাটির নিচেই তারা সাবলীল।

এক সময় যেই মাটির নিচের মানুষগুলো উপরের তলার মানুষের জন্য কাজ করত, সময়ের বিবর্তনে তারা আজ উপরের মানুষের জন্য হুমকির কারণ হয়ে উঠে। উপরের মানুষগুলো বসে খেতে খেতে আরাম প্রিয় হয়ে উঠে, আকারে ছোট এবং দুর্বল হয়, তারা অন্ধকার ভয় পায়। এক সময় মাটির নিচের এবং উপরের এই দুই প্রকার মানুষের মাঝে শুরু হয় ধন্ধ। চমৎকার এই কাহিনীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে এই উপন্যাস, শব্দের বুনন, শব্দ চয়ন, ঘটনার বর্ণনা কাহিনীকে করেছে প্রাণবন্ত। তবে এই উপন্যাসকে আমার কল্পকাহিনী থেকে বেশী ফ্যান্টাসি বলেই মনে হয়েছে, অথবা বলা যেতে পারে খুব সফট ধাঁচের সাইফাই।

প্রখ্যাত লেখক জাফর ইকবালের ত্রাতুলের জগত উপন্যাসটাও পরে শেষ করলাম কিছুদিন আগে, ভবিষ্যতের পৃথিবীকে ঘিরে তৈরি হয়েছে এই উপন্যাসের গল্প। গল্পের নায়ক পৃথিবীর এই আধুনিকতা, রোবট, এন্ডোয়েট, সাইবর্গ এসব কিছুই পছন্দ করে না। প্রত্যেকটি মানুষের হাতে একটি করে ডিভাইস লাগানো থাকে যেটা দিয়ে তার উপর সব সময় নজরদারি রাখা হয়, কিন্তু গল্পের নায়ক ত্রাতুল এটা পছন্দ করে না তাই সে নিজের ডিভাইসটি খুলে ফেলে বাদাইম্যা জীবন যাপন করে। যার ফলশ্রুতিতে তাকে ধরে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং মস্তিষ্কের ম্যাপ নিয়ে ছেড়ে দেয় তাকে।

ত্রাতুলের মস্তিষ্কের ম্যাপ নিয়ে, সেই ম্যাপকে একটি পরা-বাস্তব বা সিমুলেশোন জগতে তার ছেড়ে দেয়া হয়। পরা-বাস্তব জগতে তার সাথে পরিচয় হয় রিয়া নামের একটি মেয়ের। এই পরা-বাস্তব জগতেই দুজন দুজনের প্রেমে ইশকে দীওয়ানা হয়ে যায়, কিন্তু তারা যে পরা-বাস্তব জগতে আছে তখনও বুঝতে পারে না। এক সময় বুঝতে পারে তারা আসল ত্রাতুল এবং রিয়া নয়, তারা তাদের অরিজিনালের একটি স্মৃতি-মাত্র! তারা কোনভাবে যোগাযোগ করে বাস্তব জগতের তাদের প্রতিলিপির সাথে! তার পর কি হবে এর কাহিনী, যারা তাদের এই সিমুলেশোন জগতে ছেড়েছে তাদেরই বা উদ্দেশ্য কি, এরকম বিষয়বস্তু নিয়েই গড়ে উঠেছে এই উপন্যাসের কাহিনী।

অদ্রীশ বর্ধনের প্রফেসর নাটবল্টূও শুরু করলাম যদিও শেষ করিনি একটি গল্পও। যেহেতু বাহিরে যাওয়া হয়না হাতে সময় প্রচুর তাই অবসরে ইউটিউবে যাতায়াতও বাড়িয়ে দিয়েছি, মাঝে বেশ কয়েকটি অডিও বই শুনলাম ইউটিউব থেকে, বিশেষ করে হুমায়ুন আহমেদের, জাফর ইকবাল এবং ওপার বাংলার কয়েকজন লেখকের গল্পের বই। কিন্তু আমার অডিও কেন জানি ভাল লাগে না ততটা, পড়ে যেমন গল্পে ডুবে যাই, শুনলে ততটা জোশ পাই না।

সম্প্রতি রকিব হাসানের বিদেশী কাহিনী অবলম্বনে স্টার ওয়ার্স বইটি পড়া শুরু করেছি। এই ক্যাটাগরির লেখা আমার খুব একটি পছন্দের না তবুও অনিচ্ছা স্বত্বেও পড়া শুরু করেছিলাম। লেখকের দুর্দান্ত শব্দ চয়ন, কাহিনীর বুনন, এবং চরিত্র এবং পারিপার্শ্বিক বর্ণনা এত চমৎকার ভাবে করেছেন, মনে হচ্ছে প্রতিটি দৃশ্যই যেন চোখের সামনে ভাসছে, এত সুন্দর বর্ণনা সম্পতি কোন বই এ পড়েছি বলে মনে পরছে না। নিজেকে সমৃদ্ধ করার জন্য বইটি সত্যিই অসাধারণ। বইটি না পড়লে জীবন বৃথা হয়ে যেত মনে হচ্ছে! গত মাস একটি সাইন্স ফিকশন উপন্যাস লেখায় হাত দিয়েছিলাম। গত সপ্তাহে উপন্যাসটি লেখা শেষ করেছি, এখন ফেলে রেখেছি পরে রিভিশন দিতে হবে কয়েক বার।

এবার ভিন্ন প্রসঙ্গে বলছি, বর্তমান এই সময়ে আমাদের দেশের এক শ্রেণির মানুষ বেশ মোজ-মাস্তিতে আছে দেখলাম ছুটিছাটা নিয়ে। তামাম দুনিয়া যেখানে চিন্তিত সেখানে বাঙ্গালী নো চিন্তা ডু ফুর্তি মুডে আছে, আজ দেখলাম জামায়াতের সহিত ট্রেন টিকিট করে আনন্দ ভ্রমণে বের হয়েছে। তবে ফেইসবুকে এই নিয়ে ব্যাপক আন্দোলন হচ্ছে খুব। অবশ্য আমি তাদের দোষ দেই না, আমাদের দেশের আদমের জীবনের খুব একটা মূল্য নাই, হয়ত গাড়ি এক্সিডেন্টে, লঞ্চ ডুবিতে, নয়ত ডেঙ্গুতে বহু আদম এমনিতেই ঝরে পরে, এখন না হয় নোবেল রোগে আদম খতম হবে!! তাই হয়ত বাংলার মানুষ থোড়াই কেয়ার করছে!!

যাইহোক ছোট একটি উপদেশ দিয়ে লেখার ইতি-টানা যাক, সবাই ঘরের মধ্যে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকুন, বাইরে বের হবেন না, উহ আহ করা যাবে না, হাঁচি-কাশিতো আরও না, হাঁচি-কাশি আসলেও দাতে দাঁত চেপে চিৎ হয়ে বিছানায় শুয়ে থাকুন, মনে রাখবেন মানব জাতীর বৃহত্তর কল্যাণের স্বার্থে কয়েক মাসের জন্য হাঁচি-কাশিকে আলবিদা জানাতে হবে।

সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।


সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৯:৪৭
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×